বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ
গ্রিক মিথ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করছি, অথচ একেবারে গোড়ার কথাই বলিনি। কাজেই অনেক কিছুই ধোঁয়াটে থেকে যাচ্ছে। লিখি ‘জিউস’।
কিন্তু, কোত্থেকে এল জিউস ? গ্রিক মিথ উপলব্দি করতে হলে এসব গোড়ার কথা স্বচ্ছ হওয়া দরকার। এখানে বলে রাখি, উপকথা বা মিথ এর একটি গ্রহনযোগ্য সংজ্ঞা হল: A traditional story about heroes or supernatural beings, often attempting to explain the origins of natural phenomena or aspects of human behavior. বাক্যটির দ্বিতীয় অংশটিই গুরুত্বপূর্ন। মিথ মানুষের আচরণের ভিত্তিকে ব্যাখ্যা করতে চায়, এ কারণেই মিথ-এর প্রতি আধুনিক মানুষের এত আগ্রহ ।
হেসিয়দ।
গ্রিক পুরাণকথার মূল উৎস প্রাচীন গ্রিসের অস্টম শতকে কবি হেসিয়দ-এর একটি কাব্যগ্রন্থ, সে কাব্যগ্রন্থের নাম: ‘থিওগনি’।
‘থিওগনি’ শব্দটির অর্থ-‘দেবতাদের উৎপত্তি’। সুপ্রাচীন কাল থেকেই গ্রিসের মানুষের মুখে-মুখে উপকথা চলে আসছিল, হেসিয়দই প্রথম মিথ সঙ্কলনের জন্য উদ্যোগী হন।
থিওগনি।
কবি হেসিয়দ ‘থিওগনি’ কাব্যে গ্রিক উপকথার গোড়ার কথা বা সৃষ্টিতত্ত্ব লিখেছেন, পরবর্তী ভাষ্যের সঙ্গে যার গড়মিল বিস্তর । একটি বিবরণে দেখতে পাই পৃথিবীদেবী গেইয়া আর ইউরেনাস (আকাশ) ক্যাওস থেকে উদ্ভত।
অন্যত্র দেখি ইউরেনাস (আকাশ) পৃথিবীর দেবী গেইয়া থেকে উদ্ভূত। যা হোক। এখন এসব অসংগতি এড়িয়ে গ্রিক উপকথার গোড়ার কথা বা সৃষ্টিতত্ত্ব ছন্দে ছন্দে তুলে ধরছি :
আদিতে আছিল নাকি কেবলি আঁধার।
সে আঁধারে বিরাজ করতেন এক আদি দেব।
গ্রিসের পুরাণকথায় নাম তার ‘ক্যাওস’;
পুরাণকথক এঁকেই ‘আদি ঈশ্বর’ বলেন;
কেননা, ক্যাওস থেকেই উদ্ভূত সকলই
যেমন, প্রথম আলো, পৃথিবীর দেবী
এবং ইউরেনাস, যিনি আকাশদেবতা।
ক্যাওস
পৃথিবীর দেবীর নাম আছিল গেইয়া;
প্রেমের জন্ম হওয়ায় ঘটল নতুন ঘটনা,
গেইয়া আর ইউরেনাস-এর দূরত্ব থাকে না।
ইউরেনাস
অমোঘ প্রেমের টানে মিলল দু’জনায়-
ছ’ জোড়া সন্তান হল - এরাই ‘টাইটান’।
এদের ছিল সব বিদঘুটে নাম!
ওস্যানাস, দিথিস আর কোইওস-ফোবি,
হাইপেরিওন, দিয়া আর ক্রিওস-থেমিস,
আইয়াপেটোস, ক্লাইমেনি; আর ক্রোনোস-রীয়া।
গেইয়া
গেইয়া আর ইউরেনাস- এর মিলনের ফলে
একশ হাত আর পঞ্চাশ মাথার
তিনটি দৈত্যেরও জন্ম হয়-
এরাই পরিচিত ছিল ‘সাইক্লোপস’ নামে!
সাইক্লোপস
ইউরেনাস তার বংশধরদের করত অপছন্দ
সন্তানদের সে ঠেলে দেয় মায়ের জঠরে।
মরণ যন্ত্রণায় গেইয়া চিৎকার করে ওঠে
ক্রদ্ধ হয়ে নিষ্ঠুর প্রতিশোধ কামনায়-
টাইটানদের সাহায্যের আহবান জানায়।
সবচে কনিষ্ট পুত্র- ক্রোনস যার নাম -
বীরদর্পে এগিয়ে এল মায়ের আর্তনাদে ।
মায়ের নির্দেশে সে কাস্তে তৈরি করে
পাষন্ড পিতার লিঙ্গ কর্তন করে ফেলে!
সমুদ্রে ছুড়ে ফেলায় সে বিচ্ছিন্ন লিঙ্গ
লাল হয়ে গিয়েছিল সমুদ্রের জল;
পিতাকে হত্যা করে সফল ক্রোনস
বিবাহের চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ।
রীয়াকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত সে নেয়
কেননা বোনটি তার দারুন রূপবতী!
একে একে ছ’টি সন্তান প্রসব করে রীয়া
প্রাচীন গ্রিসের যারা ছিলেন দেবদেবী;
দিমিটার হেরা হেডেস হেস্টিয়া পোসেইদোন
এবং জিউস তাদের নাম।
দৈববাণী হয়েছিল এক অতি ভয়ঙ্কর
ক্রোনস নাকি খুন হবে সন্তানের হাতে।
এই ভয়ে সন্তানদের গিলতে থাকে সে,
জিউসের পালা এলে রীয়া ছল করে;
জিউসের বদলে দেয় পাথর চাদর মুড়ে
বেকুব ক্রোনস সেটি গলাধঃকরণ করে!
জিউস-এর ঠাঁই হয় ক্রিট নামক দ্বীপে
(দ্বীপটির অবস্থান ভূমধ্যসাগরে
এই প্রথম সৃষ্টিতত্ত্বে পৃথিবীর উল্লেখ পেলাম )
বনদেবী নিম্ফরা জিউসকে লালন করে ।
জিউস
যুবক জিউস তার পিতাকে শাসায়
গিলে খাওয়া সন্তানদের উগড়ে দিতে বলে।
জিউস তখন শক্তিশালী বজ্রঅস্ত্রের বলে
ভয়ার্ত ক্রোনস তার সন্তান উগড়ে দেয়।
ক্রোনাস-এর বিরুদ্ধে জিউস যুদ্ধ ঘোষনা করে
ভাইবোনরা এসে তার পক্ষসমর্থন করে;
দশ বছর ধরে চলে পিতাপুত্রের লড়াই
অবশেষে পুত্রের কাছে পিতা কাবু হয়।
অলিম্পাস । মানচিত্র।
অলিম্পাস পাহাড়টি ছিল প্রাচীন গ্রিসে
সে পাহাড়ে শুরু হল এক নবযুগের;
যে যুগের অধিপতি হলেন জিউস-
জিউস এর পত্নী হলেন সুন্দরীতমা হেরা।
হেরা।
আকাশের অধিপতি হলেন জিউস।
সমুদ্রের শাসন পেলেন ভাই পোসাইদোন;
আরেক ভাই হলেন পাতালের পতি,
গ্রিক পুরাণ মতে যার নাম হাডেস।
বোন হেস্টিয়া হলেন অগ্নিকুন্ডের দেবী,
দিমিটার ভার নিলেন সোনালি ফসলের ।
মাউন্ট অলিম্পাস এর প্রাসাদ।
জিউস ও হেরার সন্তান দেবতা আরেস।
আরেস-এর বরেই লোকে যুদ্ধে জয়ী হয়।
হেরার নিজস্ব পুত্রের নামটি খটোমটো -
লোকে বলে: অগ্নিদেব খোঁড়া হেফেস্টাস-
আদি সব চারুকলার অধিপতি সে।
অ্যাপোলো ও আর্টেমিস-এর জন্মও দেবঘরে
এরা যমজ সন্তান ...জন্ম দেলোস দ্বীপে;
জিউস ও হেরার ছিল আরও দুটি সন্তান-
হারমেস হলেন বার্তাবাহক, আথিনা কুমারী;
এথেন্স নগরের নামটি আমরা জানি
সে নগরের দেবী ছিলেন আথিনা কুমারী।
বারো জন দেবদেবীর বাস অলিম্পাসে
এরাই পরিচিত ‘অলিম্পিয়ানস’ নামে।
তথ্যসূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।