জীবন কবিতার মত। আর কবিতাগুলো দুর্বোধ্য। অনেকদিন ফখরুদ্দিনের কাচ্চি বিরিয়ানি খাইনা। বস ছুটিতে গেছেন। যাওয়ার সময় পিঠে হাত বুলিয়ে বলে গেছেন সবকিছু যেন ঠিক মত দেখে রাখি।
বললাম, জ্বি স্যার।
বস চলে যাওয়ার বিশ মিনিটের মধ্যে অফিস খালি। সিলেট শহরের দিকে রওয়ানা দিলাম। ফখরুদ্দিনে যাব শুনে সাথেসাথে পাঁচজন রাজি হয়ে গেল।
ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে থামাল ফখরুদ্দিনে।
মেনু আগেই ঠিক, কাচ্চি বিরিয়ানি আর বোরহানি। আমাদের মধ্যে সাইফুল্লাহ ভাই ছাড়া সবাই ব্যাচেলর। সুতরাং আমরা কোথায় থাকি, কোথায় খাই এটা কোন বিষয় না। তেমন কোন জবাবদিহিতা নাই। সমস্যা সাইফুল্লাহ ভাইয়ের।
ভাবি যদি জানেন তাকে রেখে কাচ্চি খেতে আসা হয়েছে তাহলে সাইফুল্লাহ ভাইয়ের বিশেষ খবর আছে।
সাইফুল্লাহ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, বাসায় যেয়ে আপনি কি আবার খাবেন?
এক্সট্রা রাইস নিতে নিতে বললেন, আরে না যেভাবে সাটছি,আবার কিভাবে খাব?
‘তাইলে ভাবীরে কী বলবেন, ফখরুদ্দিন থেকে খেয়ে এসেছি?’
‘একথা বললে আমারে আস্ত রাখবে? বলব, শরীরটা ভাল লাগছে না। এ বেলা কিছু খাব না। ’
সবাই বিশেষ তৃপ্তি নিয়ে খেলাম। বিল আসল এগারশ টাকা।
হোটেলের মালিক আমাদের পরিচিত মানুষ। পঞ্চাশ টাকা ডিসকাউন্ট পাওয়া গেল।
ঢেকুর তুলতে তুলতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোলাম। একটা মধ্য বয়সী লোক আমার কাছে ভিক্ষা চাইল।
‘স্যার কয়টা টাকা দেন খুব ক্ষিধা লাগছে।
’
আমি লোকটার দিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে বাংলালিংকের বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডের দিকে তাকালাম। বিলবোর্ডের মডেল সারিকা চমৎকার একটা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা দিন যতযাচ্ছে তত সুন্দর হচ্ছে।
মধ্যবয়সী লোকটি হাল ছাড়েনি। সাইফুল্লাহ ভাইয়ের কাছে বলল, স্যার খুব ক্ষিধা লাগছে।
কয়টা টাকা দেন কিছু কিন্যা খামু।
সাইফুল্লাহ ভাই দয়ার সাগর। তিনি পকেট থেকে বের করে দশ টাকা দিলেন। লোকটা টাকাটা নিয়ে দৌড়িয়ে পাশের একটা খুপরি দোকানে গিয়ে পাউরুটি কিনে গোগ্রাসে খেতে লাগল।
সাইফুল্লাহ ভাই বললেন, আহারে লোকটার খুব ক্ষিধা লাগছিল।
নিজেকে খুব অপরাধী লাগল। মানুষটিকে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। যদি সাইফুল্লাহ ভাই লোকটিকে বিশ্বাস না করতে পারত? যদি কোনদিন কেউ লোকটিকে বিশ্বাস না করতে পারত?
অফিস খালি রেখে খেতে আসা ঠিক হয়নি। ড্রাইভারকে বললাম, আব্দুল কদর সরাসরি অফিসের দিকে চলেন।
আব্দুল কদর গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
বেহায়া জোসনা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।