মাধ্যমিক পাস করার পর একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেছেন আকরাম হোসেন (৪৫)। আর এভাবেই তিনি ‘অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ হয়ে গেছেন। তবে নিবন্ধন ছাড়া চিকিৎসা পেশা চর্চা ও প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের মরিয়ম অর্থোপেডিক ও জেনারেল হাসপাতালে রোগী দেখার সময় আকরামকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আদালতের হাকিম এ এইচ এম আনোয়ার পাশা বলেন, এর আগে গত ২০১০ সালের ২১ জুলাই একই অপরাধে তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ছয় মাসেই জামিনে বেরিয়ে আবারও হাসপাতালে রোগী দেখা শুরু করেন তিনি।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসনকেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) কাছে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মরিয়ম অর্থোপেডিক ও জেনারেল হাসপাতাল। ভেতরে অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধ। একেকটি কক্ষে গাদাগাদি করে বিছানা পাতা। সরকারি হাসপাতালের ওষুধ, সিরিঞ্জ, স্যালাইন, জীবাণুনাশক, গজ দিয়ে ওষুধের গুদামভর্তি।
জীবাণুনাশক পভিসেপের বোতলে লেখা ‘এনআইসিভিডির (জাতীয় হূদেরাগ ইনস্টিটিউট) সম্পদ’। আর সব ওষুধের গায়ে সিল মারা ‘সরকারি সম্পত্তি, বিক্রয় শাস্তিযোগ্য অপরাধ’। এসব ওষুধ আশপাশের সরকারি হাসপাতাল থেকে চুরি করা।
আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পঙ্গু হাসপাতাল ও এনআইসিভিডির কিছু কর্মচারী তাঁকে এসব ওষুধ সরবরাহ করেন। সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা একেকটি ট্রাইজন ইনজেকশন তিনি কেনেন ৭০ টাকা করে, বাজারে এর দাম ১৪০ টাকার মতো।
এভাবে ৩৫ টাকায় পভিসেপ, ৪০ টাকায় হার্টসল স্যালাইন, তিন টাকায় সিরিঞ্জ আর ৪০ টাকা দরে গজ কেনেন। ওই সব কর্মচারী আর দালালেরাই সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী পাঠান তাঁর কাছে।
আকরাম বলেন, এর আগে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন আদালত। জামিনের জন্য এক আইনজীবীর সঙ্গে ৪০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। ছয় মাস পরেই তাঁর জামিন হয়।
জামিন পেয়ে তিনি কিছুদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। এরপর মরিয়ম হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন।
হাসপাতালে দেখা যায়, ব্যবস্থাপকের কক্ষে শ্রী দুলাল নামে হাতে আঘাত পাওয়া এক ব্যক্তি বসে রয়েছেন। দুলাল জানান, গত সপ্তাহে তাঁর কেটে যাওয়া হাতের সেলাই দিয়েছিলেন আকরাম। এ জন্য তাঁর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন।
আর গতকাল এসেছিলেন ব্যান্ডেজ খোলাতে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে ছিলেন র্যাব-২-এর মেজর হিমাদ্রি শেখর রায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক যোগেশ চন্দ্র রায়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।