অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলেন তিনি। এটুকুই তার সম্বল। এখন তিনি বনে গেছেন বিশেষজ্ঞ সার্জন! কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেন না। নিজেরও কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। গ্রামে গ্রামে ঘুরে চিকিৎসা করেন।
বিভিন্ন রোগের অস্ত্রোপচারই তার প্রধান কাজ। এ জন্য অপারেশন থিয়েটার প্রয়োজন হয় না, নির্দিষ্ট সরঞ্জামেরও ধার ধারেন না। শেভিং ব্লেড, সুচ-সুতা হলেই চলে। মনে করলে অ্যানেসথেসিয়া দেন, না হলে ব্যথানাশক ওষুধই যথেষ্ট। এই হচ্ছে 'বিশেষজ্ঞ সার্জন' দাবি করা লালমনিরহাট জেলার কাকিনা ভোটমারি গাগলারপাড় এলাকার শহীদুল ইসলামের কাহিনী।
এ পর্যন্ত ২০০ ছোট-বড় অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি। এসব রোগীর অধিকাংশই পরে নানা সমস্যায় ভুগেছেন। শহীদুল ইসলাম অবশ্য দম্ভ করে বলেন, 'অপারেশন করতে গেলে দু-একটা দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। '
সম্প্রতি গাগলারপাড় এলাকার জাকির হোসেন নামে এক দরিদ্র কৃষকের হার্নিয়া অপারেশন করতে গিয়ে তার মূত্রথলিসহ পেটের ভেতরের কিছু নাড়ি কেটে ফেলেন ভণ্ড চিকিৎসক শহীদুল ইসলাম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাকিরকে রংপুরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
জাকির হোসেনের স্ত্রী আফরোজা বেগম বলেন, বেশ কিছুদিন থেকে হার্নিয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন তার স্বামী। এরপর শহীদুল ইসলামকে দেখানো হয়। দু-একদিন তার ওষুধ খেলেও কাজ হচ্ছিল না। এরপর শহীদুলের পরামর্শে জাকিরের অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আফরোজা বেগম বলেন, অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে চাপাচাপির কারণে কোনো কিছু না ভেবে তারা রাজি হয়ে যান।
এজন্য ধার করে আড়াই হাজার টাকা জোগাড় করে গত শনিবার সকালে শহীদুলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বিকেলে জাকিরের বাড়িতে যান শহীদুল ইসলাম। সঙ্গে নিয়ে যান অপর ভণ্ড শাহ আলমকে। এরপর জাকিরের শোবার ঘরে সবাইকে বের করে দিয়ে শুরু হয় অপারেশন। ব্লেড দিয়ে তার নিম্নাংশ কেটে ফেলা হয়।
অপারেশন চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বের হয়ে শহীদুল বলেন, অপারেশন ভালো হয়েছে, দু-একদিনের মধ্যেই জাকির সুস্থ হয়ে উঠবেন।
সুস্থ না হয়ে জাকিরের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পেট ফুলে যায়, রক্তপাত হতে থাকে। প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়।
এ সময় অসহায় আফরোজা শহীদুলকে তার বাড়িতে গিয়ে জাকিরকে দেখার অনুরোধ জানান। চতুর শহীদুল সেই অনুরোধ উপেক্ষা করেন। অবশেষে দু'দিন পর জাকিরের বাড়িতে যান শহীদুল। জাকিরের শরীরের অপারেশনের অংশ ব্লেড দিয়ে আবার কেটে দেন এবং ফোলা অংশ সিরিঞ্জ দিয়ে কয়েক জায়গায় ফুটো করে দেওয়া হয়। এরপর জাকিরের অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে।
চারদিন পর জাকিরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে পরীক্ষার নাম করে শহীদুল জাকিরকে রংপুরের স্বদেশ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল কাদের তালুকদার জাকিরের অপারেশন করেন। আফরোজা বেগম জানান, তিনি প্রতারক শহীদুলের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এলাকাবাসী জানান, শহীদুল খুব প্রভাবশালী। তার কবলে পড়ে অনেক অশিক্ষিত মানুষের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে।
টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে নেন শহীদুল। গ্রামের মানুষ অজ্ঞতার কারণে এবং সরল বিশ্বাসে বারবার শহীদুলের কাছে যান বলে এলাকাবাসী জানান।
ডা. আবদুল কাদের তালুকদার বলেন, জাকিরের মূত্রথলি ও পেটের ভেতরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। ব্লেড দিয়ে অপারেশনের পর জাকিরকে টিটেনাস ইনজেকশন দেওয়া হয়নি। ডা. কাদের তালুকদার বলেন, জাকির এখনও আশঙ্কামুক্ত নন।
শহীদুলের মতো ভণ্ড ও প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
প্রতারক শহীদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, 'আমি বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারিনি। প্রাইমারির গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল পর্যন্ত গিয়েছি। এরপর কোনো প্রশিক্ষণ না নিয়েই শুরু করি চিকিৎসা। ' শহীদুল ইসলাম জানান, গ্রামে-গ্রামে নামডাক ছড়িয়ে পড়লে ছোটখাটো অপারেশন শুরু করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।