জীবন কবিতার মত। আর কবিতাগুলো দুর্বোধ্য। রাতে খেয়ে দেয়ে সিগারেটের প্যাকেটে হাত দিয়ে দেখি প্যাকেট খালি। হলে থেকে থেকে বহুদিনের অভ্যাস রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে চায়ের কাপে শব্দ করে চুমুক দেয়া। একটা সিগারেট ধরানো।
সবসময় সবকিছু নিজের ইচ্ছামত পাওয়া যায় না। নতুন চাকরি। পোস্টিং সিলেটে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা। বাসা নিয়েছি বাজারের সাথেই পৌরসভা অফিসের পাশে।
নতুন জায়গা ভালভাবে চিনে উঠতে পারিনি। আগে আমার ধারনা ছিল, সিলেট যেহেতু চায়ের শহর সারা সিলেটে বোধ হয় চা চা একটা গন্ধ পাওয়া যায়। কিসের কি? এখানে এককাপ চায়ের দাম সারা বাংলাদেশে যে দাম তার চেয়ে মিনিমাম একটাকা বেশি।
রাত বারটার মত বাজে। এত রাতে দোকান পাঠ খোলা থাকার কথা না।
তবু কিছু খুচরা টাকা হাতের মুঠোয় নিয়ে বাইরে বের হলাম। পৌরসভার নাইটগার্ড প্রবল নাসিক্য গর্জনে চোরদের সাবধান করে যাচ্ছে। কাছাকাছি কোথাও শিয়াল ডাকাডাকি করছে। সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা সুর। তিন শব্দ মিলে অদ্ভূত মেলোডি তৈরি হয়েছে।
দুরে দেখতে পাচ্ছি একটা দোকানে আলো জ্বলছে। সিগারেটের তৃষ্ণা আরো বেড়ে গেল। দোকানে তের চৌদ্দ বছরের একটা ছেলে ঝিমোচ্ছে। চোখ লাল।
‘একটা সিগারেট দাও।
’
‘কি জাত?’
সিগারেটের আবার জাত আছে নাকি? জাত থাকে প্রাণিকুলের, মানুষের। তার উপর মানুষের জাত বিভেদও প্রশ্নসাপেক্ষ। লালন গেয়েছেন, সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে? প্রথম প্রথম এমন প্রশ্ন শুনলে অদ্ভুত লাগত। এখন শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। বললাম, বেনসন জাত।
দিয়াশলাইয়ের লোহিত ফসফরাস ঘষে আগুন জ্বালালাম। সিগারেট ধরালাম। আহ।
‘তুমিতো ঘুমে কাহিল। কটা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখবা?’
‘আস্তা রাইত।
’
‘আস্তা’ শব্দটির এরূপ ব্যবহারে আমি যারপরনাই মুগ্ধ। মাথা তুলে তৃপ্তির ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে খেয়াল করলাম, মারাত্মক একটা চাঁদ উঠেছে। আদর্শ লিপিতে পড়েছি, ঊর্ধ্ব গগণে পথ চলিও না। এই রকম চাঁদ থাকলে মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটা যায় না। আমি ঊর্ধ্ব গগণে বাসার দিকে রওয়ানা হলাম।
নাইট গার্ডের নাসিক্য গর্জন প্রবলতর হচ্ছে। শিয়াল ডাকছে। ঝিঁ ঝিঁ ডাকছে। এই চমৎকার চাঁদের আলোয় তিন শব্দের মেলোডি অপার্থিব আবহ সৃষ্টি করেছে।
তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া দরকার।
সকালে অফিস। আমি ডায়রি নিয়ে বসলাম। নতুন বছর উপলক্ষে ইন্সট্রুমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের পক্ষ থেকে আমাকে ডায়রিটি উপহার দেয়া হয়েছে। বছর ঘুরে যাচ্ছে অথচ ডায়রিটি এখনো নতুন। চাঁদের আলোয় যে ভাবের উদয় হয়েছে তা লিখে রাখা দরকার।
আস্তা রাইত কাঁটা ছেড়া করে লিখলাম। কি লিখলাম জানিনা। এটা কি কোন সাহিত্য? কি জাতের সাহিত্য? জানিনা। তবু লিখলাম।
রাতের আহার সাঙ্গ করে পূর্ণ তৃপ্তির আশায়
ঘরের পোশাকে রাস্তায় নেমে আসে যুবক।
আলোয় ভরে গেছে চারিপাশ,
ফিকে হয়ে গেছে জোনাকিরা।
লাল আলোর মশাল জ্বেলে ঠোঁটে চুষে
ঊর্ধ্বমুখে ধোঁয়া ছাড়ে যুবক। মুগ্ধ সে।
ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এক সুরে গেয়ে যায়,
শিয়ালেরা হাক ছাড়ে-
‘ওরে দেখে যা, কী অপরূপ জোসনা!’
গোল চাঁদ চুপচাপ চেয়ে থাকে।
মুগ্ধ যুবক থেকে থেকে মাথা তোলে।
নির্লজ্ব চাঁদ আরো রূপবতী হয়ে ওঠে।
বড় বেহায়া জোসনা!
প্লেটোর গল্প। অতঃপর মিয়াবিবি রাজি কেয়া করেগা কাজী ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।