আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারনেট সভ্যতায় ফোন বিলুপ্ত হবে

দেশের তরে অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম, আপনারাও অবশ্যই শুনে আসছিলেন, ইন্টারনেটে ফোন কল করা হয় বিনামূল্যে। যদিও এটি জানা যে, এটি শোনাশুনির বিষয় নয়-বাস্তবতা, তবুও ২০১১ সালের জানুয়ারীর আগে নিজে কখনও এই কাজটি করার চেষ্টা করিনি। কারণ প্রথমত মোবাইল ফোনটাকে এখনও আমরা খুব প্রিয় একটা যন্ত্র বলে মনে করি। নিজের হাতে একটি কলম পাবার পর এতো আদর করে আর কোন যন্ত্রকে আমি রক্ষা করিনি। এটি যখনই চুরি হয় বা হারিয়ে যায় তখন ভীষণ কষ্ট হয়-সমস্যাও হয়।

এই যন্ত্রটি না থাকলে যে বেদনা, সেটি সম্ভবত আর কোন যন্ত্রের সাথে তূলনা করা যায়না। এর একটি কারণ হতে পারে; এর কার্যকারিতা ও এতো সহজে আর কোন ডিজিটাল যন্ত্র বহন করতে না পারা। এরই মাঝে এর দাম এতো কমে এসেছে যে, শুরুতে যে পরিমাণ কথা বলতাম তার পাঁচগুণ কথা বলেও এখন বিল হয় আগের চাইতে কম। প্রথম যখন আমি আমার সংযোগটি নিই, তখন এর দাম ছিলো সাড়ে আট হাজার টাকা। এর আগেতো সোয়া লাখ টাকা ছাড়া এমন একটা ফোন পাওয়া যেতোনা।

এখন সেটি হাজার টাকায় নেমে এসেছে। দিনে দিনে এর ক্ষমতাও বাড়ছে। সম্ভবত সেই কারণেই বিনে পয়সার ইন্টারনেট ফোন ব্যবহার করা হয়ে ওঠেনি। এছাড়া বিদেশের কারও সাথে বেশি দামে আমার কথা বলার দরকার হয়না। অর্থাৎ আমার তেমন কোন আন্তর্জাতিক কল নেই।

বেশির ভাগ কল আমি বাইরে থেকে পাই। দেশের ভেতরে যাদের সাথে কথা বলি তাদের অনেকের হাতে মোবাইলের ইন্টারনেট থাকে, তবে মোবাইল বা কম্পিউটারের ইন্টারনেটে স্কাইপে ব্যবহারের সুযোগ হয়তো সব সময় থাকেনা। অন্যদিকে যখন কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে ইন্টারনেটে যোগাযোগ করি তখন ফোন কল বা ভিডিওর কথা না ভেবে ডাটা নিয়ে কাজ করি। কিন্তু দুনিয়াটা কি ওখানেই আছে? আমরা কি এমন একটি সময়ে এসে যাইনি যখন ফোন প্রযুক্তিকে বিদায় দেয়া যায়? কেবল তাত্ত্বিকভাবে নয়, বাস্তবেই সেই কাজটা করা যায়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এভাবে আমার মতো কাজ করতেই অভ্যস্ত।

ফোন ছাড়া কথা বলা যায়, এটি আমরা এখনও ভাবতে পারছিনা। তবে আমার সাথে চীনের যে কোম্পানীটি ব্যবসা করে তার কনটাক্ট পারসন সিন্ডি মেইলের মাঝে একটি স্কাইপে আইডি প্রদান করে। একদিন ফোন করে আমাকে বলেছিলো, আমরা স্কাইপেতে বিনে পয়সায় কথা বলতে পারি। দুনিয়ার সব দেশের বন্ধুদের সাথে সে স্কাইপেতে কথা বলে সেটিই বলেছিলো। আমাকে অনুরোধ করেছিলো, আমি কেবল যেন একটি স্কাইপে আইডি নিয়ে নিই।

আমি জানি, এমন একটি আইডি পাওয়া একটি মেইল ঠিকানা পাবার মতোই সহজ। কিন্তু তেমন প্রয়োজন ছিলোনা বলেই কাজটি করা হয়নি। তবে এখন মনে হচ্ছে স্কাইপে ব্যবহারে নেমে পরা উচিত। আমার বাংলা সফটওয়্যার বিজয়-এর ভারতীয় পরিবেশক সনোলাইটের হায়দার হোসেন সাহেব নিজেও স্কাইপে ব্যবহার করেন। তিনি যখন ঢাকায় আসেন তখন তিনি কলিকাতায় কথা বলেন স্কাইপেতে।

তার ঢাকা অফিসের সাথে কলিকাতা থেকে যোগাযোগ করেন স্কাইপেতে। এমন অবস্থাতেই ২০১১ সালের জানুয়ারীর মাঝামাঝিতে স্কাইপে নিয়ে একটি খবর আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। খবরটিতে বলা হলো, এ্যাপল কম্পিউটারের আই প্যাড-আইফোনে এখন থেকে স্কাইপে ব্যবহার করা যাবে। আমি ধারনা করি, আরও যারা স্মার্ট ফোন বা ই-প্যাড বাজারে ছেড়েছে তারাও অচিরেই এমন ঘোষণা দেবে। কারণ খবরটির পেছনের খবর হলো, স্কাইপে কিউআইকে নামক একটি ছোট স্টার্ট আপ মার্কিন কোম্পানীর একটি সফটওয়্যার কিনে নিয়েছে যার সহায়তায় স্মার্ট ফোনে স্কাইপে ব্যবহার করা যায়।

এর ফলে সকল স্মার্ট ফোনেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার্য হবে এই বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। অন্যদিকে স্কাইপের জনপ্রিয়তা কতো ব্যাপক তার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। খবর অনুসারে স্কাইপের ব্যবহারকারী ২০১১ সালের জানুয়ারীতে ৭৬.৩ কোটি। এর বেশির ভাগ আবার চীনের বাসিন্দা। বোঝা যায় চীনে স্কাইপে খুব জনপ্রিয়।

২০১১ সালে জানুয়ারীতে স্কাইপের অনলাইনে সংযুক্তি ২.৭ কোটিতে ওঠেছে। অন্যদিকে শুধুমাত্র ২০১০ সালে বিশ্বজোড়া যেসব আন্তর্জাতিক ফোন কল হয়েছে তার শতকরা ২৪.৭ ভাগ স্কাইপেতেই সম্পন্ন হয়েছে। অনেকেই মনে করেন ২০১১ সালে এই হার অনেক বেড়ে যেতে পারে। কারও কারও মতে মোট আন্তর্জাতিক কলের শতকরা ৫০ ভাগ স্কাইপের দখলে যাওয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। এমএসএন ম্যাসেঞ্জার বা উইন্ডোজ লাইভ তাদের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩৩ কোটি বলে দাবী করে।

ইয়াহুর ২০০৮ সালের ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো ২৫ কোটি। এতোদিনে এটি হয়তো তিনগুণ হয়ে গেছে। ভাবুন দেখি, তখন আমাদের টেলিকম মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি এবং বিটিটিবির কি দশা হবে। তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার লাইসেন্স ফিস কোত্থেকে আসবে? যদি ফোনই না থাকে তবে মোবাইল কোম্পানীগুলো কেন হাজার হাজার কোটি টাকা ফিস দেবে? এই তথ্যের আড়ালে আরও একটি বড় তথ্য লুকিয়ে আছে। সারা দুনিয়াতে যখন ফোনে ভিডিও ব্যবহার এখন প্রায় স্বপ্নের মতো তখন স্কাইপেতে ভিডিওর ব্যবহার ব্যাপক।

খবরে প্রকাশ, স্কাইপে ব্যবহারকারীরা নিজেদের মাঝে যেসব কল করেছেন তার শতকরা ৪০ ভাগই ভিডিওভিত্তিক। বিশেষজ্ঞরা এটিও মনে করেন যে, দুনিয়াতে ব্রডব্যান্ডের যতো বেশি প্রসার ঘটবে, ভিডিওর ব্যবহার ততো বেশি বাড়বে। শতকরা ৪০ এর হার খুব দ্রুত ১০০ তে পৌছাবে, এমন ভবিষ্যদ্বাণীই বিশেষজ্ঞরা করে থাকেন।  স্কাইপে ছাড়াও গুগল টকের কথাও বেশ সরব ভাবেই শুনে আসছিলাম। ২০০৫ সালের ৭ ফেব্র“য়ারী থেকে গুগল টক ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এটিও এখন মোবাইলে ব্যবহৃত হয়। এতে ভিডিও চ্যাটও যুক্ত রয়েছে। দিনে দিনে গুগল টকের ব্যবহারকারী বাড়ছে। এর বাইরে আছে অন্য ম্যাসেঞ্জার সফটওয়্যারগুলো। ইয়াহু, এমএসএন-এর নাম কে না জানে।

 ম্যাসেঞ্জারের ব্যবহারকারী আমি হাতের কাছেই পেলাম। আমাদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিনের মেঝো বোন যুথি আমেরিকার নিউইয়র্কে সপরিবারে থাকে। নিউইয়র্ক থেকে প্রতিদিনই বাংলাদেশে অন্তত দু’ জায়গায় তাকে যোগাযোগ করতে হয়; একটি মা’র বাড়ী, অন্যটি শ্বশুড় বাড়ী। শুরুতে সে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো যোগাযোগের জন্য। কলিং কার্ড ছিলো তার ভরসা।

কিন্তু এখন সে ও তার পরিবার আর ফোনে কথা বলেনা। ওদের প্রিয় প্রযুক্তিটি হলো ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার। ওরা মাঝে মধ্যে গুগল টকেও কথা বলে। তবে ইয়াহুতে ওরা অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য। তার ভাষ্য অনুসারে, ইয়াহুতে ওরা নিউইয়র্ক প্রবাসী বোনের ছেলে আজানকে প্রতিদিনই দেখে।

আজানের নানা-নানী, দাদা-দাদী তাদের ওয়েব ক্যাম দিয়ে আজানের হাটা চলা-আছাড় খাওয়া-ডলার খাওয়া সবই সচলভাবে দেখে। প্রতিদিনের বেড়ে ওঠা থেকে দুষ্টুমি পর্যন্ত সবই ওদের চোখের সামনেই ঘটে। রাত এগারোটা বা বারোটা হলেই দুই বাসাতেই ওয়েব ক্যাম চালু হয় এবং বুড়োবুড়িদের কাছে বারো হাজার মাইল দূরের নাতি হয়ে ওঠে জীবন্ত। ওরা জানিয়েছে, এক সময়ে মোবাইল ফোনই ছিলো তাদের একমাত্র ভরসা। তখন প্রচুর টাকা খরচ হতো উভয়পক্ষের।

এখন বড়জোর একটি ফোন কলে বলা হয়-যুথি ‘তুই অনলাইন হ’। এর পর ফোনের আর কোন ভূমিকা নেই। ওরা ম্যাসেঞ্জারে ছবি দেখে এবং কথা বলে। এজন্য তাদের সময়ের কোন হিসাব করতে হয়না। কারণ সময় ধরে ওদেরকে টাকা-পয়সা বিল দিতে হয়না।

মাত্র দেড় বছর আগে যারা ইন্টারনেটের সাথে কেবল পরিচিত হয় তারা তাদের প্রয়োজনে এখন ইয়াহুর দারুণ ভক্ত হয়ে গেছে। আমার ধারনা বিটিআরসি, বিটিটিবি এবং টেলিকম মন্ত্রণালয় কোনভাবেই জানতেও পারেনা যে, এমন পরিবার এদেশে কতোগুলো আছে। এই সংখ্যাও যে প্রতিদিন বাড়ছে সেটিও তারা আন্দাজ করতে পারছেনা। ওরা নিজেরা হয়তো জানেনা-এই ভিওআইপি তারা কেমন করে বন্ধ করবে।  ২০০৯ সালে আমরা বিসিএস থেকে যখন ব্যাঙ্কক সফরে যাই তখন আমাদের ইন্টারনেট চর্চা হতো সাইবার ক্যাফেতে।

আমাদের শফিক ভাই-এর মেয়ে তন্বী সুযোগ পেলেই সাইবার ক্যাফেতে চলে যেতো। আমাদের হোটেলের পাশেই ছিলো সাইবার ক্যাফে। ওকে দেখতাম ওয়েব ক্যাম ব্যবহার করতে। আমরাও মেইল চেক করতে যেতাম ওখানে। আমি তখন খুব বিস্মিত হয়েছিলাম এটি দেখে যে, ব্যাঙ্কক শহরের প্রায় প্রতিটি সাইবার ক্যাফেতেই শ’ খানেক করে কম্পিউটার রয়েছে এবং সেইসব কম্পিউটারের সবকটিতেই ওয়েবক্যাম আছে।

কোন একটি পিসিও খালি পাওয়া যেতোনা এবং প্রায় প্রতিদিনই দাঁড়িয়ে থেকে সিট পাবার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। মাঝে মধ্যে আশে পাশে তাকিয়ে দেখতাম-কম্পিউটার পর্দায় দুটি ভিডিও উইনডো রয়েছে। একটিতে থাকতো ব্যবহারকারীর নিজের ছবি এবং অন্যটিতে অন্য কেউ। ছেলে হলে মেয়ের ও মেয়ে হলে ছেলের ছবিই বেশি থাকতো। বলাবাহুল্য ওদের বয়স কখনও তিরিশের বেশি হতোনা।

 এসব বিষয় নিয়ে যখন ভাবছি, তখন ৯ জানুয়ারী ২০১১ বিকালে বৈশাখী টিভি থেকে এলো ভিওআইপি নিয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য। তারা জেনেছে যে, ভিওআইপি উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং সরকার ভিওআইপি লাইসেন্স দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার কাছে তাদের জিজ্ঞাসা-ভিওআইপি উন্মুক্ত করা বা লাইসেন্স দেবার ভবিষ্যৎ কি? বরাবরের মতোই আমি তাদেরকে বললাম-ইন্টারনেট একটি মুক্ত প্রযুক্তি এবং এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে যা করা হয় তার সবই কার্যত মুক্ত। আমরা কেবলমাত্র ইন্টারনেটের সংযোগ পাবার জন্য ব্যান্ডউইদথ পয়সা দিয়ে কিনি। একে ব্যবহার করে কথা বলা হোক আর ভিডিও দেখানো হোক কিংবা তথ্য আদান প্রদান করা হোক এর ওপরে এখনও কেউ চার্জ করেনা।

কিন্তু যেহেতু সরকারের টেলিকম মন্ত্রণালয় এবং বিটিটিবি আন্তর্জাতিক কলসমূহ টার্মিনেট করে চার্জ পায়, সেহেতু তারা মনে করে যে, ইন্টারনেট ব্যবহার করে কল টার্মিনেশন করা অবৈধ। যদি সেই অর্থে দেখা হয় তবে, টেলিকম আইনে হয়তো ইন্টারনেটও অবৈধ। আমি যতোদূর জানি বিদ্যমান আইনে যেমন বিনা অনুমতিতে ফ্যাক্স বা মডেম ব্যবহার অবৈধ, তেমনি ইন্টারনেটে কথা বলা বা ভিডিও আদান প্রদান করাও অবৈধ। তখন ইন্টারনেট শব্দটি প্রচলিত ছিলোনা বলে হয়তো আইনে এর উল্লেখ নেই। যাহোক ইন্টারনেট সহায়তায় কল টার্মিনেট করার সুযোগটিও বহুজন নিতে শুরু করে এবং অবৈধভাবে কল টার্মিনেট করতে থাকে।

বিষয়টি হচ্ছে এখন আমরা যদি ইন্টারনেট থেকে ইন্টারনেটে কথা বলি তখন সেটি অবৈধ হয়না। কিন্তু যখনই ইন্টারনেটের মধ্য দিয়ে আসা ফোন কল ফোন সেটে পাঠানো হয় তখন আমাদের সরকার একে অবৈধ বলে। ফোন সেটটা যদি এখানে যুক্ত না থাকে তবে সরকারের কাছে ভিওআইপি নামক কিছু থাকেনা। একে বৈধ বা অবৈধ বলার কোন সুযোগও নেই।  ভিওআইপি নিয়ে এদেশে কথাবার্তা কম হয়নি।

গ্রামীনের মতো আরও বেশ কিছু টেলিকম কোম্পানী পর্যন্ত ভিওআইপি করার জন্য জরিমানা দিয়েছে। মাঝে মধ্যেই ভিওআইপি যন্ত্রপাতি উদ্ধারসহ লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দেশের সবকটি পিএসটিএন কোম্পানী বন্ধ করার পেছনে কাজ করছে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা। এখন পর্যন্ত যেহেতু ফোন কোম্পানীগুলো আছে বা ফোন সেবা টেলিকম খাতে জবরদস্তভাবে বিরাজ করে সেহেতু ফোন কল টার্মিনেট করার ব্যাপারটি বেশ গুরুত্ব পেয়ে আসছে।  এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই সরকার আইপি টেলিফোনি নামক একটি প্রযুক্তির লাইসেন্স প্রদান করে।

প্রধানত আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো এসব লাইসেন্স পেয়েছে এবং তারা দেশজুড়ে তাদের সেবাও দিতে শুরু করেছে। আমরা এরই মাঝে আইটি ফোন নামক এক ধরনের যন্ত্রও দেখতে পাচ্ছি। এসব যন্ত্র মোবাইলের কাজের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্রাউজ করার কাজও করে। এই প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হতে থাকলে প্রচলিত পিএসটিএন বা মোবাইল কোম্পানীগুলোর বিদ্যমান বাজারের শেয়ার কিছুটা হলেও আইপি টেলিফোনির ভাগে চলে যাবে। আমি অন্তত একটি ব্যাঙ্ককে জানি যে, ব্যাঙ্কটি তাদের শাখাগুলোর মাঝে এক সময়ে মোবাইলে যোগাযোগ করতো।

সেজন্য তারা সময় হিসাবে টাকা গুণতো। কিন্তু এখন তারা আইপি ফোন ব্যবহার করে এবং সার্বক্ষণিক যোগযোগ করেও কোন সময়ভিত্তিক চার্জ প্রদান করেনা। আমি আইপি ফোন সেবাদাতাদের সাথে কথা বলে জেনেছি যে মোবাইল ও বিটিবিবির সাথে যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেই এখন পর্যন্ত তারা আইপি টেলিফোনিকে সীমিত করে রেখেছে।  কিন্তু যে বিষয়টি আমাদেরকে এখন ভাবতে হচ্ছে সেটি হলো ভবিষ্যতে কি ফোন কলের ভিওআইপি থাকবে? একজন টেলিকম বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, মোবাইল ফোন হোক আর পিএসটিএন হোক এখনকার ফোন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ হলো ইন্টারনেটভিত্তিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ। এর মানে দাঁড়াচ্ছে যে, আগামী দিনে বর্তমানের প্রচলিত টেলিকম প্রযুক্তি ইন্টারনেটের ওপরই নির্ভর করবে।

এমন একটি ভবিষ্যৎ যদি আমাদের সামনে থেকে থাকে তবে আমরা কি এটি ভাবতে পারিনা যে, আগামীতে বিদ্যমান টেলিকম ব্যবস্থাই থাকবেনা? এমন কি হতে পারেনা যে, মানুষ স্কাইপে, গুগল টক, ইয়াহু, এমএসএন ইত্যাদি বিদ্যমান প্রযুক্তির ভবিষ্যত বিবর্তিত প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করবে। কেউ একজন এমন একটি ডিভাইস হাতে নিয়ে ঘুরবে যাতে মোবাইল ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি থাকবে এবং ভয়েস, ডাটা বা ভিডিও এর যে কোন আদান প্রদানে তার ফোনের দরকার হবেনা-বরং শুধুমাত্র ইন্টারনেটই ব্যবহার করবে? এখন জেসমিনরা যেভাবে পরস্পর যুক্ত থাকে-সাইবার ক্যাফেতে যেভাবে তরুণ-তরুণীরা যুক্ত থাকে তেমনটি যদি সবাই করতে থাকে তবে পিএসটিএন এবং মোবাইল কোম্পানীগুলোর কি কেবলমাত্র কানেকটিভিটি বা ব্যান্ডউইদথ সেবা দেয়াই একমাত্র কাজ হবেনা। ভয়েস কলের জন্য বা ভিডিও কলের জন্য কোন সময়ভিত্তিক চার্জ করার বিষয়টি কি প্রথমে গৌণ ও পরে বিলীন হয়ে যাবেনা? আমি ধারনা করি টেলিকমের গুরুরা এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন এবং যথাসম্ভব প্রযুক্তির দিক নির্দেশনা মেনেই আগামী দিনের পরিকল্পনা করবেন।  আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, আমি এখন আমার যেসব বন্ধু কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং ওয়েবক্যাম সহ কম্পিউটার ব্যবহার করে তাদের সকলকে ইয়াহু ম্যাসেঞ্জার ১১ ডাউনলোড করার পরামর্শ দিই। তারা যখনই ইয়াহু ইন্সটল সম্পন্ন করে তখন আমি তাদের সাথে ভিডিও এবং ভয়েস দুই ধরনের কলই সেই ম্যাসেঞ্জার দিয়েই করি।

আমার যে ইন্টারনেট কানেকশন রয়েছে তাতে ২৫৬ কেবিপিএস শেয়ারড ব্যান্ডউইদথ রয়েছে। এই ব্যান্ডউইদথে ভিডিও কলে সেকেন্ড ৩/৪টি ফ্রেম পাওয়া যায়। কখনও কখনও ফ্রেম ফ্রিজ হয়ে যায়। আমার ধারণা যদি সেটি ১ এমবিপিএস করা যায় তবে একেবারে ফুল ফ্রেম (অন্তত সেকেন্ড ১২) ভিডিও দেখা যাবে। কেউ যদি ইন্টারনেটে সার্চ করেন তাহলে দেখবেন, এরই মাঝে ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারের এন্ডরয়েড, ব্ল্যাকবেরি ও আইফোন সংস্করণ রয়েছে।

এর মানে খুব সহজ। এসব অপারেটিং সিস্টেম চলে এমন ফোনে আপনি ইন্টারনেটে যুক্ত থাকবেন এবং বিনে পয়সায় ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে ভয়েস ও ভিডিও কল করবেন। আর এভাবেই বুড়ো আঙ্গুল দেখান আপনার ফোন কোম্পানীকে। আমারতো ধারণা ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের অন্যতম বৃহৎ ব্যবহার ক্ষেত্র হবে ভয়েস ও ভিডিও কল। আর এর সাথেই কবর রচনা হবে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের ফোন প্রযুক্তিরঘ ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.