সামুকে অনুরোধ প্লীজ লেখাটি সরাবেন না, এর আগে একবার কিন্তু সরিয়ে ফেলেছেন। দেশের সমস্ত কৃষিবিদদের উদ্দেশ্যে এই লিখা--
লেখনির শুরুতেই বিদ্রোহীকবি নজরুলের কিছু চরন মনে পড়ে গেলঃ
“উদয়ের পথে শুনি কার বানি,
ভয় নাই ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রান যে করিবে দান,
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই”। ।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ সেই ক্ষয়হীন একটি জীবনের নাম, একটি সমাজের সাহসী তরুনের নাম।
আতিকের মৃত্যু আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবীতে যুগে যুগে সাহসী পুরুষদের আসা-যাওয়ার মিছিলে আরও একটি নাম। সদা হাস্যময়, উদারমনা, চঞ্চল, পরোপকারী, ডাইনামিক,ইনোভেটিভ, দুঃসাহসী, ভোকাল, মটিভেটর, নেতৃত্বের সমস্থ বৈশিষ্ট্য গুলো ছিল আতিকের সাথে সম্পৃক্ত যা তাকে করে তুলেছে অন্য দশ জন থেকে টোটালি আলাদা ও সবার নিকট গ্রহণযোগ্য। তাই জীবনের এই অল্প সময়ের (৩৭ বসর) মধ্যে প্রখর বুদ্ধিমত্তা, ডাইনামিজম দিয়ে একইসাথে একজন সফল চাকরিজীবী, সংঘটক, নেতা, ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
দুর্ঘটনার সুত্রপাতঃ ২৭শে মে, ২০১১ ইং, রোজ শুক্রবার। সন্ধ্া সাড়ে ৬টা, ঢাকার মিরপুর এলাকায় আতিকের সমিতির (সমমনা অফিসারস সমিতি) অফিস।
সুইয়্যরেজ লাইন দিয়ে গ্যাস লিক হয়ে রুম ভর্তি হয়ে যায়। রুমে ঢুকে ফ্যানের সুইচ দেওয়ার সাথে সাথেই (স্পারকিং হয়ে) পুরা রুমে আগুন ধরে যায় ও প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আতিক সহ আর ও দুই জন (কৃষিবিদ কাইছার উদ্দিন আহাম্মেদ ও মোঃ ফোরকান, আতিকের আপন ভাগ্নে- তারা এখনো লালমাটিয়া সিটি হপিটালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন) মারাত্বকভাবে জখম হয়। এতে তাদের সারা শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে যায়। স্কয়ার হসপিটালে প্াথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর তাদেরকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
ওখানে আইসি ইউতে চিকৎসাধীন থেকে ৪ দিন পর আতিকেরঅবস্থা দ্রুত অবনতি হলে তাকে লালমাটিয়া সিটি হসপিটালে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়। পরদিন (১লা জুন’২০১১) সকাল ৭ টায় ডক্টর তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পেপার নিউজঃ
|এক্সিডেন্ট]
শিক্ষা জীবনঃ
বাল্যকাল থেকেই আতিক খুব মেধাবি ও জনপ্রিয় ছাত্র ছিল। স্কুল জীবনের প্রথম স্থানটি সে পাকাপোক্ত করে নিয়েছিল তার মেধার কারনে। পড়ালেখার পাশাপাশি সে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজ, যেমন ক্লাব, সমিতি ইত্যাদির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে পছন্দ করত।
সেই ধারাবাহিকতায় আতিক পরবর্তিতে বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক সংঘটনের নেতৃত্ব দিয়ে একইসাথে একজন সফল চাকরিজীবী, সংঘটক, নেতা, ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
এইচএসসি’র পাঠ চুকিয়ে মফঃস্বল থেকে ঢাকার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (তদকালিন ঢাকা কৃষি কলেজ) ১৯৯২-১৯৯৩ সেশনে ভর্তি হই। আমি থাকতাম শেরে বাংলা হলের ১০৫ নং রুমে আর আতিক থাকত ১০৩ নং রুমে। হটাৎ একদিন আমার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আতিকের সাথে আমার পরিচয়। দুইজনের বাড়ি বৃহৎ চট্টগ্রাম (আমার কক্সবাজার ও আতিকের বাঁশখালি) ও ইয়ারমেট হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই তার সাথে দারুন আন্তরিক সম্র্ক সৃষ্টি হয় যা সারাজীবন বজায় ছিল।
আতিকের পেশাদারিত্বের র একটি উজজ্বল ৃষ্টান্ত হল আমার বিয়ে। সে আমার বিয়ের ঘটক হিসাবে পেশাদার ঘটকদের ও হার মানিয়েছিল!
শেরে বাংলায় ভর্তি হওয়ার আগে আতিক ভারতে ব্যাংগালোরের একটি কলেজে আইটি বিষয়ে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছিল, কিন্তু সেই পড়ালেখার মান ভাল না লাগায় সে ওখান থেকে চলে আসে ঢাকায়। কৃষি বিষয়ের প্রতি আতিকের বরাবরই ঝোuকটা কম ছিল। তাই অনার্স কোর্স শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সে চাকুরিতে চলে যায়। পরবর্তীতে (চাকরিকালীন) চট্রগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা ক্াম্পাস) থেকে আতিক এমবিএ ডিগ্রি নেয়।
চাকুরি জীবনঃ আতিকের জীবনের প্রথম চাকুরি ছিল সিনজেনটা বাংলাদেশ নামক একটি বহুজাতিক কীটনাশক কোম্পানিতে। প্রায় ১ বছর মার্কেটিং-এ চাকুরির পর সে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনে যোগ দেয় এসিস্টেন্ট ম্যানেজার হিসাবে। প্রথম দিকে সুগার মিলে থাকলেও পরবর্তীতে তার যোগ্যতা বলে ঢাকায় হেড অফিসে চলে আসে। এবং মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সে কর্পোরেশনের একজন দক্ষ ও জনপ্রিয় কর্মকর্তা (ডেপুটি ম্যানেজার, আইটি ডিভিশন) হিসাবে কাজ করে যায়।
ডাইনামিজম রক্তের সাথে মিশে ছিল বলে চাকুরিকালিন বিভিন্ন ধরনের ব¨বসা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চালিয়ে সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছেছিল আতিক।
পারিবারিক জীবনঃ [/suআতিক খুব রসবোধ সম্পন্ন ছেলে ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে প্রেমের পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা। পারিবারিক জীবনে খুবই সুখি ছিল। ৫ বছরের ছেলে রাফি ও সাড়ে ৩ বছরের ছেলে সামি ছিল সুখের অন্যতম কারন।
অর্জিত সম্মানঃ বিভিন্ন প্রতিস্টানের সাথে জড়িত থাকায় আতিকের বহুমুখি প্রতিভার পরিচয় মেলে--
• ডেপুটি ম্যানেজার (আইটি বিভাগ), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন, মতিঝিল,ঢাকা।
• পরিচালক, কৃষিবিদ গ্রুপ, ঢাকা
• আজীবন সদস্য, কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন, ঢাকা
• জেনারেল সেক্রেটারি, সমমনা অফিসারস সমিতি, মিরপুর, ঢাকা
• কার্যকরী সদস্য, বাঁশখালি সমিতি, ঢাকা
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে অদ্ভুদ কিছু নিদর্শন দেখিয়ে তাঁর অস্থিতের জানান দেন। প্রিয় বন্ধু আতিক মারা যাওয়ার দিন আমার ২য় সন্তানের জন্ম হয়। ইবনে সিনায় আমার স্ত্রীকে অপারেশান থিয়েটারে দিয়েই আমি পাশের সিটি হসপিটালে গেলাম যেখানে আতিক চির নিদ্রায় শায়িত রয়েছে। কিছুক্ষণ ইবনে সিনায় ও কিছুক্ষণ সিটি হসপিটালে এভাবে কেটে যায় সেই মিস্র অনুভুতির দিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।