বাধা পেলেই সৃষ্টি হয় গণজোয়ার। জাফর ইকবাল নিঃসন্দেহে আলোচিত একটি নাম একটি ইতিহাস। গত দু তিনদিনে শুধু এক জাফর ইকবালের নাম যতবার উচ্চারিত হয়েছে, হয়েছে আলোচিত তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কিংবা হালের ক্রেজ নাম্বার ওয়ান, অনলি ওয়ান নায়ক চাকিবা খানমেরও হয়নি। কারন একটাই তার অবদান। জাফর ইকবালের অবদান লেখতে গেলে হয়ত ব্লগের পৃষ্ঠা হ্যাং করবে, হয়ত ব্লগের সার্ভার ক্রাশো করতে পারে।
তবুও আমি থামবোনা, ক্ষান্ত হবোনা এই কীর্তিমান বাঙ্গালীর কির্তি প্রকাশে। আসুন একে একে জেনে নেয়া যাক জাফর ইকবালের সুমহান কির্তি সুমহ।
আজো লাখো তরুণী বুকে এই ছবি নিয়ে ঘুমায়
মূলত জাফর ইকবালের যদি কির্তি খুজতে হয় আমাদের চলে যেতে হবে ৮০ এর দশকে। মূলত সেই সময়েই এই কীর্তিমান বাঙ্গালীর আবির্ভাব। মিঃ জাফর ১৯৭২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তার যে কীর্তি স্থাপন করেছেন সেটা অবাক করার মতোই ব্যাপার।
একসময় এই আলোচিত জাফর ইকবালকে বলা হতো ‘রাজপুত্তুর’। কেউবা বলত রোমিও। কিন্তু কেন? আসুন সেটাও জেনে নেয়া যাক
জাফর ইকবালের সেই আলোচিত গানের এল্ব্যামের সিডি
জাফর ইকবালের জন্ম ঢাকাতে। শৈশবে গান-বাজনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এসএসসি পাস করার আগেই তিনি গিটার বাজাতেন।
গিটারে ইংরেজি গান তুলতেন। এলভিস প্রিসলি ছিল তার বড়ই প্রিয় তারকা। স্কুলে কোনো ফাংশন হলে তিনি গিটার বাজিয়ে এলভিস প্রিসলির গান গাইতেন। অভিনয়ের চেয়ে তিনি প্রেমিক-পুরুষ হিসেবে নামধাম করেছিলেন ১৯৭২ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে। জাফর ইকবাল আর ববিতা জুটি হিসেবে ঝড় তুলতে না তুলতেই এদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
মন দেয়া-নেয়ার কথাও তখনকার সিনে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
অনেকে এখনো জাফরের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নিজেকে হিট খাওয়াতে চাই।
কিন্তু ক্ষণজন্মা প্রতিভাধর এই মানুষটি শুধু একটি প্রতিভায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। তাই জাফর ইকবাল ভাবতেন, কি করে সংগীত তারকা হওয়া যায়। তখন তার বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ সুরকার হিসেবে খ্যাতির তুঙ্গে।
ওদিকে তার বোন শাহনাজ বেগম (বর্তমানে শাহনাজ রহমতউল্লাহ) সিনেমায় গান করে বেশ নাম করতে শুরু করেছেন। ওদের বাবা-মা ছিলেন গান-বাজনার প্রতি বড্ড দুর্বল। এক অনুষ্ঠানে জাফর ইকবালকে স্টেজে গান করতে দেখলেন চিত্র পরিচালক খান আতাউর রহমান। জাফরের চেহারাটা তার চোখে ভালো লেগে যায়। অনুষ্ঠান শেষে খান আতা জাফরের হাতে একটা কার্ড দিয়ে বললেন, ফিল্মে অভিনয় করবে কিনা! কথা শুনে জাফর ইকবাল একটু ভাবলেন।
নম্রভাবে জানালেন, ‘ইচ্ছে আছে। সুযোগ পেলে অভিনয় করব। ’ সেটা ছিল ১৯৬৯ সালের কথা। জাফর ইকবাল ১৯৬৯ সালেই ‘আপন পর’ ছবিতে প্রথম অভিনয় শুরু করেন। ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন কবরী।
সাধারণ মেয়ে, একই অঙ্গে এত রূপ, ফকির মজনু শাহ ছবি তিনটি রিলিজ হতেই তার ব্যাপক পরিচিতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ‘ফকির মজনু শাহ’ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি গানও গেয়েছিলেন। তার গাওয়া গানগুলো সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়, যা কি না ছিল তরুণ-তরুণীর মুখে মুখে। এর পরে জাফর ইকবাল দিনের পর দিন, সূর্য সংগ্রাম, বেদ্বীন, অংশীদার, আশীর্বাদ, অপমান, পরিবর্তন, সি আইডি, গৃহলক্ষ্মী, ওগো বিদেশিনী, ফুলের মালা, মর্যাদা, সন্ধি, ছোবল, প্রেম বিরহ, বন্ধু আমার প্রভৃতি ছবিতে অভিনয় করেন। জাফর ইকবাল কবরী, শাবানা, ববিতার বিপরীতে বেশি অভিনয় করেছেন।
জাফরের সুরে সেই অমর গান, যা এখনো আমাদের মনে তার প্রতিভাকে স্মরন করিয়ে দেয়।
জাফর ইকবালের মৃত্যু হয় ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি। সে দিন তার মৃত্যু সংবাদ শুনে কিংবা দীর্ঘ ১৯ বছর পরেও চলচ্চিত্র জগতে তার মতো রোমান্টিক নায়কের শূন্য আসন কিন্তু পূরণ হয়নি। একদা বাংলা ফিল্মে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন (১৯৩০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত) জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তিনিও জনপ্রিয় থাকা অবস্থায় মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন।
দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন বড়ই রোমান্টিক নায়ক, জাফর ইকবালও তদ্রূপ। কতই না মিল এই দুই নায়কের মধ্যে।
অবশেষে বলতেই হয়, ক্ষণজন্মা অসাধারণ রোমান্টিক এই নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল মরেও অমর হয়ে রইলেন ঢাকার ফিল্মে তথা পুরো বাঙ্গালীর হৃদয়ে।
*** কাকতালীয় ভাবে কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী থাকবেনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।