চলনা ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে। আবার এলো যে সন্ধ্যা, শুধু দু’জনে . . .
শ্রদ্ধেয় লাকী আখন্দের একটি নোটে জেনেছিলাম, “গানটি বিটিভি-তে প্রচারের পর বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল”। গানটি প্রথম যখন বিটিভি’তে প্রচার পেয়েছিল সে সময়টাতে এই পৃথিবীর আলো-বাতাসের উর্ধ্বে ছিলাম এই আমি। অদ্ভুত সুন্দর এই পৃথিবীর প্রাণ-স্পন্দন তখনও আমায় স্পর্শ করেনি। তবে আমি সৌভাগ্যবান, আমি এই বাংলা মায়ের কোলে ধীরে ধীরে পৃথিবীর আলোয় বেড়ে উঠার সুযোগ পেয়েছি।
এও আমার সৌভাগ্য, বাংলার অসম্ভব প্রতিভাবান শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে আমার অসহিষ্ণু অতৃপ্ত মন খুঁজে পেয়েছিল সৃজনশীল সঙ্গীতের এক নতুন দিগন্ত যার সুনিবিড় ছায়ায় আজও আমি নির্মল স্নিগ্ধতা খুঁজে পাই।
‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটির পেছনের অসম্ভব সুন্দর ও মজার গল্পতে আমি যাব না। প্রয়াত এস.এম হেদায়েতের লেখা ও লাকী আখন্দের সুর করা রোমান্টিক ঘরানার চমৎকার এই গানটি যারা হতভাগা হয়ত তারাই কেবল শুনেন নি। শুধুই কি রোমান্টিক? আমার কাছে দারুণ আমুদে মনে হয় এবং মুহুর্তেই মন ভালো করে দেয়ার মত একটি গান।
শহরের ব্যস্ততা ঝেড়ে ফেলে সবুজ ও নীলিমার মিলন মেলায় নিঝুম প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার যে আহ্বান গানের কথা, সুর, যন্ত্রসঙ্গীত কিংবা গায়কীতে তাকে কিভাবে অগ্রাহ্য করি!
অগণিত শ্রোতারা হয়ত শুনে থাকবেন বাংলা সঙ্গীতের এই কালজয়ী সৃষ্টিটি। রাইসুল ইসলাম আসাদ ও সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনীত ‘ঘুড্ডি’ (১৯৮০) নামক বাংলা সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে গানটি। বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্ন সময় টেলিভিশনে গেয়েছেন যার মাধ্যমেও প্রচার পেয়েছে গানটি। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েও প্রচার পেয়েছে। ২০০২-০৩ সালের দিকে বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় গান নিয়ে তৈরী রিমিক্স অ্যালবাম ‘চুমকি’-তে স্থান পেয়েছিল অসাধারণ এই গানটি (অবশ্য এটা কোন খুশির খবর না!)।
‘চুমকি’ নামক রিমিক্স অ্যালবামে গানটি কাভার করেছিলেন ‘সানবীম’ (যদিও এটা খুব একটা ভালো প্রয়াস ছিলনা)। তবে উঠতি তরুণ তরুণীদের মন কেড়ে নিয়েছিল সে সময়। মন মণিকোঠায় জায়গা করে নিলেও অনেকেই জানতো না গানটির প্রকৃত শিল্পী কে, এই চমৎকার গানটির পেছনের মানুষগুলো কারা। সত্যি বলতে কি, বর্তমান সময়েও অনেকেই জানেন না গানটির প্রকৃত শিল্পী কে! কি তার পরিচয়? এমনকি অরিজিনাল গানটিও হয়ত অনেকেরই শুনে দেখার সৌভাগ্য হয়নি!
‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটির প্রকৃত শিল্পী প্রয়াত হ্যাপী আখন্দ। গানটি হ্যাপী আখন্দের সঙ্গীতায়োজনে সংকলিত হয়েই প্রচার ও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
‘হ্যাপী আখন্দ’, বাংলাদেশের মেধাবী সঙ্গীতপরিচালক, সুরকার ও শিল্পী লাকী আখন্দের ছোট ভাই। লাকী আখন্দের চেয়ে প্রায় দশ বছরের ছোট ছিলেন অসম্ভব প্রতিভাবান এই সঙ্গীতপরিচালক-গায়ক। বাংলাদেশের সঙ্গীতের বরপুত্র বলা হত অকাল প্রয়াত এই ‘হ্যাপী আখন্দ’কে। তার এই অকালে চলে যাওয়া যে শূন্যতা আর হাহাকারের সূচনা করেছিল, তার প্রতিটি সৃষ্টিতে তা প্রতিধ্বনিত হয় আজও। আর দুঃখটা এখানেই সবচেয়ে বেশী।
হ্যাপীর গান গেয়ে সানবীম প্রচার পায়, বিজ্ঞাপন জনপ্রিয় হয়, আনিলা-ফুয়াদ সুপারতারকা খেতাব পায়; প্রচার পায় না শুধু ‘হ্যাপী আখন্দ’!
কেমন ছিলেন হ্যাপী আখন্দ? বাংলাদেশের সঙ্গীতে উনার অবদান কি কিংবা কি এমন সৃষ্টি করেছেন যা আজও দাগ কেটে যায়?
এই প্রশ্নগুলোর গৎবাঁধা কোন উত্তরে যেতে চাইনা। তাছাড়া হ্যাপীকে মূল্যায়ন করার মত যোগ্যতা কিংবা সাহস কোনটাই আমার নেই। যা লিখেছি কিংবা সামনে যা লিখবো তার সবটাই কিছু গানের প্রতি ইঙ্গিত করা মাত্র। যার মাধ্যমে হ্যাপী আখন্দের ব্যক্তিত্ব, বাংলা সঙ্গীতে তার অবদান ও গ্রহণযোগ্যতা এবং তার এই অকালে চলে যাওয়ায় সঙ্গীতাঙ্গনে যে শূণ্যতার সৃষ্টির হয়েছিল তার কিছুটা হয়ত অনুধাবন করা সম্ভব হবে। এর বেশী কিছু নয়।
ফিডব্যাকের প্রয়াসঃ ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় ফিডব্যাকের বহুল জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘মেলা’। ‘মেলা’, ‘মৌসুমি-পর্ব ২’, ‘গোধূলি’, ‘স্বদেশ’, ‘ময়ূরী আকাশ’, ‘জীবন জ্বালা’ কিংবা ‘জন্মেছি এই যুগে’-র মত শ্রোতাপ্রিয় গানের পাশাপাশি ‘পালকী’ শিরোনামে একটি গান সংকলিত হয়েছিল ‘মেলা’ অ্যালবামে। আহমেদ ইউসুফ সাবের ও মাকসুদুল হকের যৌথ রচনায় ‘পালকী’ গানটি ছিল ‘হ্যাপী আখন্দ’-র স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ।
“
সেদিন ছিল ফিডব্যাকের শীতকালীন মহড়া।
তারিখ ২৮-শে ডিসেম্বার, ১৯৮৭।
এক হিমেল সন্ধ্যা।
হঠাৎ একটি খবর চমকে দিল আমাদের।
হ্যাপী নেই। থেমে গেল মহড়ার উচ্ছ্বাস।
শিল্পীর মৃত্যু নেই।
আমাদের বিশ্বাস হ্যাপী আখন্দের মৃত্যু নেই।
তার এই চলে যাওয়া মৃত্যু যাত্রা নয়।
অন্য সুরের ভুবনে বর বেশে এ যেন হ্যাপীর পালকী চড়ে মহাপ্রস্থান।
কানে এখনো বাজে তার শেষ যাওয়ার সুর” – এই ভূমিকা দিয়েই শুরু হয়ে ফিডব্যাকের ‘পালকী’।
ভূমিকা শেষেই কণ্ঠে ভেসে আছে -
“
তাকে বলে দাও আমি সেদিনের কথা ভুলিনি
তাকে বলে দাও সেই মণিহার আজও খুলিনি
তাকে বলে দাও তারই কারণে এত যন্ত্রণা
তাকে বলে দাও তারই বিহরে এত বেদনা ....”
হ্যাপীর চলে যাওয়ায় ফিডব্যাক ও মাকসুদুল হক ব্যথার তীব্র হাহাকার বুকে নিয়ে এভাবেই রচনা করেছেন বেদনা ও যন্ত্রণার কাব্য সঙ্গীত।
আর সেই কাব্য সঙ্গীতের পরতে পরতে আছে বন্ধু হারানোর বেদনা আর অস্ফুট যন্ত্রণা।
এবি-এল.আর.বি’র প্রয়াসঃ এবি বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের কিংবদন্তী ও সেরা লীড গীটারিস্ট। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস্ ছেড়ে ১৯৯১ সালে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল এল.আর.বি। ১৯৯২ সালে এবি-এল.আর.বি প্রকাশ করে তাদের ডিবাট ডাবল (বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকের ইতিহাসের প্রথম ডাবল অ্যালবাম, তাও আবার ডিবাট ডাবল!) অ্যালবাম এল.আর.বি-১ ও এল.আর.বি-২। ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’, ‘মাধবী’, ‘ফেরারী মন’, ‘পেনশন’, ‘রিটায়ার্ড ফাদার’, ‘মা’, ‘স্মৃতি নিয়ে’, ‘শেষ চিঠি’, ‘শেষ রাতের ডাক্তার’-র মত কালজয়ী গানের পাশাপাশি একটি গান ছিল ‘হ্যাপী আখন্দ’-কে নিয়ে।
এবি’র লেখা সেই গানটির শিরোনামও ছিল ‘হ্যাপী আখন্দ’। লিরিকের কিছুটা তুলে দিলাম-
“
আবার এলো যে সন্ধ্যা .........
যার মুখ ভরা ছিল মিষ্টি হাসি
যার চোখ জুড়ে ছিল সরলতা
যার কণ্ঠ জুড়ে ছিল এই নীল মণিহার
যার দুহাতে বেজে উঠতো পিয়ানো গীটার
যে ছিল এক সঙ্গীতপূজারী
সে হ্যাপী, প্রিয় হ্যাপী
আমাদের প্রিয় হ্যাপী
এই নীল মনিহার .........”
নিলয় দাশের প্রয়াসঃ প্রয়াত নিলয় দাশ ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা গীটারিস্ট। আমাদের এই বাংলাদেশে তিনিই প্রথম নিউক্ল্যাসিক্যাল, ব্লুজ, স্পীডমেটাল ও জ্যাজ মিউজিক চর্চার সূচনা করেন। অর্থহীনের কমল ভাই (প্রাক্তন ওয়ারফেজ সদস্য), সোলসের পার্থ দা ও দলছুটের বাপ্পা দা’র গীটারের হাতেখড়ি হয় প্রয়াত নিলয় দাশের হাত ধরেই। অন্যদিকে এবি যখন চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এলেন তখন নিলয় দা’র সাথেই থাকতেন এবং নিলয় দা’র গীটার ব্যবহার করতেন (এটা অবশ্য লোকমুখে শোনা।
সত্যতা যাচাই করে দেখা হয়নি)। ১৯৮৮ সালে রিলিজ হয় নিলয় দাশের প্রথম সলো অ্যালবাম ‘কত যে খুঁজেছি তোমায়’। ‘কত যে খুঁজেছি তোমায়’, ‘যখনই নিবিড় করে’, ‘যখন দেখি’, ‘সেই অচেনা’, ‘আমি মুক্তি পেয়েছি’র মত অসম্ভব চমৎকার গানের পাশাপাশি ‘হ্যাপী আখন্দ’কে নিয়ে গান করতে ভুল যাননি। আসিফ ইকবালের কথায় তিনিও কণ্ঠে তুলেছিলেন অকাল প্রয়াত হ্যাপীর স্মৃতি।
“
হ্যাপী তোকে মনে পড়লেই
একটা গীটার তোলে ঝংকার
পিয়ানোটা বেজে উঠে
তোর সেই নিপুণ হাতে
হ্যাপী তোকে মনে পড়লেই
‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’
মনে পড়ে যায় মাঝরাতে .........”
এমন আবেগী কথামালায় নিলয় দা’র কণ্ঠের ফ্রেমে বন্দী হন ‘হ্যাপী আখন্দ’।
(অন্যকোন লেখায় ফিরে যাব প্রিয় নিলয় দা’র কাছে)
লাকী আখন্দঃ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা সঙ্গীতপরিচালক, সুরকার ও গায়ক। অনেক কালজয়ী গান যেমন ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘এই নীল মণিহার’, ‘আমায় ডেকোনা’, ‘আগে যদি জানতাম’, ‘লিখতে পারিনা কোন গান আজ তুমি ছাড়া’, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে’, ‘হঠাৎ করেই বাংলাদেশ’ সহ অসংখ্য তুমুল জনপ্রিয় গানের সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক। ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের মৃত্যুর পর তিনি অনেকটাই নীরব হয়ে যান। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ সঙ্গীত থেকে দূরে সরে থাকেন।
লাকী আখন্দের সাথেই বাজাতেন হ্যাপী আখন্দ।
একসাথে গান করতেন দুই ভাই। হ্যাপী আখন্দের মৃত্যুর পরপর হ্যাপী আখন্দের একমাত্র সলো অ্যালবাম ‘শেষ উপহার’ অ্যালবামটি তিনি রিমেক করেন অকাল প্রয়াত ছোট ভাই হ্যাপী আখন্দের পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশ্যে। এবং জনপ্রিয় গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরীর কথায় একই অ্যালবামে সংকলন করেন ‘হ্যাপী হারায় নি’ এবং ‘একটি নিষ্পাপ ফুল’ শিরোনামের দুটি গান। প্রিয় ছোট ভাই হারানো লাকী আখন্দের কণ্ঠে গান দুটি শুনলে আমি কেমন যেন হয়ে যাই। এক অদ্ভুত এলোমেলো . . .
“
হ্যাপী,
আমি জানি হারাইনি তোমাকে
তুমি আজও দাঁড়িয়ে আছো
তেমনি হাসি মুখে, এক অন্য জগতে
আবার হবে দেখা ছোট ভাইটি আমার
আবার শুনবো গীটার তোমার
শুনবো তোমারই গান, সেই অন্য জগতে ....”
(কলকাতার অঞ্জন দত্ত তার ‘হ্যালো বাংলাদেশ’ নামের সলো অ্যালবামে ‘লাকী আখন্দ’ শিরোনামে একটি গান করেছেন।
গানটাতে একজন শিল্পী হিসেবে কিভাবে লাকী আখন্দ-কে মূল্যায়ন করেছেন এবং লাকী আখন্দের ব্যক্তি জীবনে হ্যাপীর চলে যাওয়া কতটা কষ্টের ছিল তার কিছুটা হয়ত বোধগম্য হয়ে উঠবে অঞ্জন দত্তের কথামালায়। গানটা অন্তত একবার শুনে দেখার অনুরোধ রইল। )
হ্যাপী আখন্দ অসম্ভব মেধাবী ও বিস্ময়কর প্রতিভাবান একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। একাধারে পিয়ানো, গীটার কিংবা তবলা-তে অসামান্য পারদর্শী ছিলেন। স্বয়ং আর ডি বর্মন, মান্না দে’র মত গুণী শিল্পীরা হ্যাপী আখন্দের প্রশংসা করতেন।
হ্যাপী আখন্দের সঙ্গীতায়োজনে করা ‘এমন একটা মা দেনা’, ‘ইশকুল খুইল্যাছে রে মওলা’ ঐ সময়ে ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। আমার জানামতে, হ্যাপী আখন্দের একমাত্র সলো অ্যালবাম হল ‘শেষ উপহার’। হ্যাপীর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘কে বাঁশি বাজায়রে’, ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘নীল নীল শাড়ি পড়ে’, ‘স্বাধীনতা তোমাকে নিয়ে গানতো লিখেছি’, ‘আমি আবার আসবো ফিরে’, ‘চল যাই চলে দূরে বহুদূরে’, ‘এই পৃথিবীর বুকে আসে যারা’, ‘একদিন ছিল উচ্ছল নদী’, ‘শোন নাকি শোন ঐ’, ‘সবাই যখন ঘুমে’ সহ আরও বেশ কিছু গান।
আসলে হ্যাপীর প্রতিটি গানই অসম্ভব ভালো লাগার। অসম্ভব চমৎকার কথার গাঁথুনি, নান্দনিক সুরের খেলা এবং যন্ত্রসঙ্গীতের নিপুণ ও শক্তিশালী ব্যবহার প্রতিটি গানে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে আবেগ ও ভালোবাসায়।
সবাই গানের মাঝে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন না। হ্যাপী ছিল তাদেরই একজন যারা নিজেদের মেধা ও মননশীলতায় গানে আবেগের প্রলেপ দিতে পেরেছিলেন। তার সৃষ্ট প্রতিটি গান আমার কাছে জীবন্ত মনে হয়। তাইতো গানে গানেই আমাদের মাঝে বারবার ফিরে ফিরে আসেন হ্যাপী আখন্দ।
প্রায় পঁচিশ বছর হয়ে গেল, হ্যাপী নেই! স্মৃতির আকাশ কিছুটা ধূসর আর ঝাপসা হয়ে গেছে অনেকের।
বাংলাদেশের সঙ্গীত ছুটছে তীব্র গতিতে। লিরিকের পাশাপাশি সুরবিন্যাস যন্ত্রসঙ্গীত ও গায়কীতেও উঠে আসছে তীব্র গতির দ্যুতি। সঙ্গীতপ্রেমী নতুন যে প্রজন্ম দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে, সেখানে হ্যাপীর অবস্থান নেই। অথচ এমনটি হবার কথা ছিল না। আমরা আমাদের স্মৃতিময় উজ্জ্বল অতীত ভুলে সামনের উদ্দীপ্ত ভবিষ্যতকে মরীচিকার মত আঁকড়ে ধরতে চাইনা।
হারাতে চাইনা প্রিয় মানুষগুলোকে। হারাতে চাইনা প্রিয় হ্যাপীকে, যার দুহাতে বেজে উঠতো পিয়ানো-গীটার।
অনুরোধ করেই বলি, আপনারা যারা হ্যাপীর গানে মুগ্ধতা খুঁজে পান, দয়াকরে আপনার পাশে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের অন্তত একজনকে হলেও হ্যাপীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। আপনার, আমার আর আমাদের সবার ছোট ছোট প্রচেষ্টায় সঙ্গীতের বরপুত্রের বেশে হ্যাপী আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসুক। আর আমাদের ভালোবাসার সবুজ বনভূমিতে থাকুক হ্যাপীর অবাধ বিচরণ।
আসুন, সবাই মিলে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি আর বলি ‘হ্যাপীর জন্য ভালোবাসা’। নিশ্চয়ই ওপারে দাঁড়িয়ে আবারও হ্যাপীর গাইছে ইচ্ছে করবে ---
“
আমি আবার আসবো ফিরে
তেমনি কোন সন্ধ্যায়
বসে থেকো পথ চেয়ে
বসে থেকো দিনগুনে
আমার অপেক্ষায়
অনেক অনেক আশায় ..........
নির্জনতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে, আবার পথ চলবো দু’জনে
জমানো যত কথা, শুনবো আর বলবো তোমাকে
বিদায়ক্ষণে হাসিমুখে কষ্ট যত আড়াল করে
ডাকবো পিছু, শুধু, শুধু তোমায়
অনেক অনেক আশায় ..........
হয়না বলা সব কথা, কিছু রয়ে যায় আনমনে
সেই কথা নিয়ে ফিরে, অপেক্ষা আবার শুধু হবে
পাশে থেকো কাছাকাছি, তুমি ছাড়া একা আমি
যেওনা চলে, ডেকে ডেকে আমায়
অনেক অনেক আশায় ........”
* বেশ কিছু ব্যান্ডের সাথে হ্যাপীর সম্পৃক্ততা ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ‘স্পন্দন’, ‘উইন্ডি সাইডস অব কেয়ার’, ‘হ্যাপী টাচ্’। এমনকি জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের ফাউন্ডার মেম্বার ছিলেন হ্যাপী আখন্দ। তাছাড়া বিভিন্ন শিল্পীদের সাথেও বাজাতেন মেধাবী এই সঙ্গীতপরিচালক।
অন্যকোন পোষ্টে ফিরে যাবো হ্যাপীর সেইসব দিনগুলোতে।
-----------------------------
মোখলেছুর রহমান সজল
একটি রেডিও বিজি২৪ প্রকাশনা
www.radiobg24.com
হ্যাপির কণ্ঠের সর্বশেষ 'শেষ উপহার 'অ্যালবাম টি দীর্ঘ ২৫ বছর পর বর্তমান প্রজন্মের কাছে হ্যাপিকে তুলে ধরতে অনলাইনে এই প্রথম সম্পূর্ণ অ্যালবামটি প্রকাশ করা হলো -
হ্যাপি আখন্দ - 'শেষ উপহার'
লেখক ঃ মুখলেসুর রহমান সজল
ব্যবস্থাপক
তথ্য ও গবেষণা বিভাগ (বাংলা গান)
RaDiO bg24 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।