অনুভুতিহীন জীবনের অপেক্ষায়... http://www.raatmojur.com/ সকাল থেকে একটা লোককে দেখছি পাড়ার গলিটায়, পরনে স্যুট, গলায় টাই, একদম ফিটফাট ওপরতলার বাবুদের মতন ভাব,পদক্ষেপে একটা দৃপ্ত ভংগী। দূর থেকে দেখছি, হাতে একটা প্লাকার্ড। কি আছে দেখা যায়না স্পষ্ট, তবে সে একটা করে বাড়িতে থামছে, দরজা নক করে বাসিন্দাদের কাউকে ডেকে এনে কিছু বলছে। তারপর আবার আরেকটা বাড়ীতে যাচ্ছে।
প্রতিটা বাড়ীথেকেই সে কেমন যেনো হতাশ হয়ে ফিরছে, সেটা স্পষ্ট হচ্ছে তার আচরনের ক্রমবর্ধমান ক্ষিপ্ত হাতপা ছোঁড়া দেখে।
অবশ্য পিছনে একদল লোক জমেছে এবং তাদের সংখা বাড়ছে। প্রতিটা দরজাতেই লোকটা ব্যার্থ হচ্ছে, আর জুটে যাওয়া লোকগুলো তাকে সান্তনা দিচ্ছে পিঠ চাপড়ে এটা বেশ বুঝতে পারছি দোতলার জানলার পাশের ডেস্কে বসে।
একসময় দরজার ঘন্টা শুনে নীচে নেমে দেখি সেই লোকটা। হাতের প্লাকার্ড দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট এখন, আঠেরো বাই কুড়ি সাইজের একটা ছবি সাঁটা তাতে, এক পূর্ন যুবতী নগ্নিকার ছবি।
সম্ভাষন করে লোকটি জানালো, সে বিচার চাইতে এসেছে।
ছবির নগ্ন যুবতী তার বোন, মানসিক ভাবে অসুস্থ। সে এতটাই অসুস্থ, শরীরে কাপড় রাখে না, ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলে। "এটা আসলে নষ্ট সমাজ আর নষ্ট রাজনীতির দোষ" - বললেন তিনি।
ডাক্তার দেখিয়েছেন? - জানতে চাই আমি।
"অবশ্যই না, ওকে কেন ডাক্তার দেখাবো? ডাক্তার দেখাতে হবে সমাজকে, রাজনীতিকে, ধর্ম হতে দুরে সরে যাওয়া কে, সমাজের প্রতিটি মানুষকে... " বলে চলেছেন তিনি।
এই পর্যায়ে থামালাম, "আপনার বোনকে চিকিৎসা করাচ্ছেন না, বুঝলাম আপনার মতে সমাজ - রাজনীতির দোষ, ধর্ম থেকে সরে যাবার দোষ, তবে নিজের বোনের নগ্ন ছবি নেয়ে পাবলিককে দেখিয়ে বেড়ানোর মানে কি?"
"আপনি বুঝতে চাইছেন না, আসলে আপনিও ওদেরই মতন, যারা নাবুঝ" আবার শুরু করলেন বক্তৃতা, "এই ছবি আমি দেখিয়ে বোঝাতে চাই নগ্নতার অশালীনতা, স্থুলতা..."
আবারো থামাই, "সেটা কি মুখে বললে হতো না? মেয়েটার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন আগে, আর এই ছবি সরান। "
লোকটা এবারে রেগে উঠতে থাকে, "আপনার মনে পাপ, আপনি খারাপ, আপনি আমার বোনের ছবিতে নগ্নতাই দেখছেন, সে অসুস্থ, এই দায়ভার সমাজের, মানুষের - সেটা দেখছেন না। "
"দেখছি, বুঝছি, তবে এটা বুঝছি না, কোন পর্যায়ের মানসিক অসুস্থতা হলে মানুষ নিজের অপকৃতস্থ বোনের চিকিৎসা না করিয়ে তার নগ্ন ছবি প্লাকার্ডে ছাপিয়ে মানুষকে দেখিয়ে ঘুরে বেড়ায়" - রেগে উঠি আমিও, বিরক্তিতে।
"ঐ শালা, বড় ভাইরে অপমান করছস!"
"ঐ শালা ওমুক পাট্টির। "
"তুই বিয়ার আগে পেরেম করতি।
"
"তর বউয়ের সাথে তর ঝগড়া হয়"
"তর বউ কাঁচা বাজারে যায় ক্যান। "
"তর বউ বোরকা পিন্দে না ক্যান। "
"আবে চিনছ? আমি তিনশো বছ্ছর ধইরা ঐ কোনার ডাষ্টবিনে থাকি, কর্নার হৈলে কি হৈব? ছমাজের মইদ্যের লুক আমি। "
- এরকম ঝাঁকে ঝাঁকে আওয়াজ হামলে পড়ে লোকটার সাথে থাকা বাউন্ডুলে নিস্কর্মার দলের। কাজ নেই, কাজ করার মুরোদও নেই, তাই ফাঁক তালে জুটে গিয়ে সদ্য পরিচিত "সমাজ উদ্ধারকারী বড়ভাইয়ের" পিঠ চাপড়ায়, চুক চুক করে সান্তনা দেয়, ফাঁকে ফাঁকে কামার্ত ঢোক গেলে, জিভ চাটে নগ্নিকার ছবির দিকে চেয়ে।
তবে সবাই করে পেছনের সারিতে আড়ালে বসে।
"পলাইয়া আওয়াজ কে দিলো? পুরুষ মানুষ হইলে সামনে আয়" - হেঁকে বলি।
সারিটা নড়ে চড়ে ওঠে, একে অপরের পেছনে লুকোতে লুকোতে আবার চাপা আওয়াজ দেয় কেউ কেউ, তবে হিজড়ার দল সামনে আসে না।
"আপনার আগে মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার, বোনের নগ্ন ছবি দেখিয়ে কেউ নিজের আখের গুছোতে চায় আপনার মতন দামড়া শুয়োরকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না, যান ভাগুন। " -মুখের ওপর দরজা এঁটে দেই।
সিঁড় বেয়ে ওপরে উঠে আসি।
জানলায় দাঁড়িয়ে দেখি, আমার নামে মূর্দাবাদ স্লোগান উঠেছে গালি দিয়েছি বলে। কেউ কেউ নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে ঢিলও ছোঁড়ে, আর ঢিল ছুঁড়েই চলিতে সরে যায়।
আধঘন্টা পরে পাশের বাসার ভদ্রলোক ফোন করে বললেন, শুয়োরটা তার কাছেও গিয়েছিলো, নগ্নিকার ছবি দেখিয়ে সহানুভুতি আদায় করতে পারেনি, তখন তাকে চার্জ করেছে, আমার মতন অসভ্য আর অভদ্র গালিবাজ মানুষের প্রতিবেশী হবার কারনে। হুমকিও দিয়েছে, আমাকে নাকি দুনিয়ার শেষমাথা দেখাবে।
হেসেই উড়িয়ে দেই আমরা দুজনে, জানি ছদ্মবেশে রাতের অন্ধকারে পিঠের পেছনে ছুরি মারা ছাড়া আর কিছুই পারেনা ওরা। হিজড়া বলতে গিয়েছিলাম, মনে হলো, হিজড়ারাও মানুষ, প্রকৃতির নৃশংসতার শিকার ওরা। ঐ সব তথা কথিত সুশিল যারা নিজের বোনের নগ্ন ছবি ফেরি করে ইমেজ গড়ে, তাদের চাইতে হিজড়ারা অনেক বেশী মানবিক আর পূর্ন মানব।
হ্যাঁ, আমি ওদের গালি দেই, সুশিল হবার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।