আলোকিত জীবনের একজন সহযাত্রী
সিলেটের বধূ স্বর্ণলতা রায়। বাবার বাড়ী হবিগঞ্জ জেলায়। মতিঝিল হাইস্কুলে লেখাপড়া। বিয়ের পর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বিএ। পরে এমসি কলেজ থেকে বাংলায় এমএ।
মাত্র ৫০ হাজার টাকার পুঁজির ব্যবসায়ীক সাফল্যের যাত্রা পথে তার অন্যতম অর্জন এসএমই ফাউন্ডেশন হতে বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি।
বাড়ীর মেয়ে, স্ত্রী ব্যবসা করবে, বাইরে যাবে এটা এখনো অনেকেই মেনে নিতে পারেন না বলে আমাদের সমাজে প্রতিশ্রুতিশীল মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারছে না। সিলেটে এর প্রভাব খুব বেশী। তার পরও নারীরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে সক্ষম হচ্ছেন। স্বর্ণলতা তাদেরই একজন।
চরম প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছেন সিলেটের স্বর্ণলতা রায়। নিজের ঘর-সংসারের কাজ, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো, স্বামীর প্রতি যত্ন সব কিছুতেই তার খেয়াল রয়েছে। এই সংগ্রামী নারীর নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির সাথে সাথে অবহেলিত নারীরা কিভাবে উন্নতি লাভ করতে পারে সে প্রচেষ্টাও রয়েছে। ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও একাগ্রতা তাঁকে লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করেছে। পেয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের স্বীকৃতি।
এসএমই ফাউন্ডেশন ২০০৮ সাল থেকে বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা ও বর্ষসেরা নারী সৃজনশীল নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করে আসছে। গত বছর ২১ ডিসেম্বর ঢাকায় এসএমই ফাউন্ডেশন কর্তৃক বর্ষসেরা নারী উদ্যোক্তা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের (রূপচর্চা কেন্দ্র উইমেন্স ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড) জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন সিলেটের স্বর্ণলতা রায়।
তার সাফল্যের পিছনে প্রবল ইচ্ছা আর স্বামীর উত্সাহ এতোদূর এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে বলে জানান। তিনি বলেন, ভালো কিছু করতে গেলে নানা দিক থেকে বাধা আসতে পারে। তাতে দমে গেলে চলবে না।
বিশেষ করে নারীদের বেলায় বাধা আরো বেশী। তবে কেউ না কেউ পাশে থাকলে ভরসা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে তিনি তার ব্যবসায়ী স্বামী শেখর দাসের কথা বিশেষ কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে স্বর্ণলতা এখন সিলেটে আলোচিত নারী।
২০০৪ সালের ৭ মে দোকান ভাড়া নিয়ে স্বর্ণলতা ব্যবসায় নামেন।
স্বামী ও দোকানের মালিকসহ অনেকেই প্রথমে ভেবেছিলেন কয়েক মাস ব্যবসা করে সখ ও মজা টের পেয়ে ঘরের বউ ঘরে চলে যাবে এমন ধারণা ছিল তাদের। “কিন্তু আমি ছিলাম প্রচণ্ড আশাবাদী। ভাবলাম আমাকে উইন করতেই হবে”, দৃঢ়তার সাথে বললেন স্বর্ণলতা।
তিনি জানালেন, প্রথমে মীরের ময়দানে স্বামীর সহযোগিতায় একটি দোকান ঘর ভাড়া নেন। তখন তার স্বামী কিছু টাকা দিয়ে তাকে ব্যবসায় সহায়তা করেন।
দোকান ঘরের মালিকও অসম্ভব ভালো। তার সহযোগিতা স্মরণ রাখার মত। ব্যবসা ভালো চলায় এক বছর পরই ২০০৬ সালের ২৫ জুন লামাবাজারে তার ব্যবসা সম্প্রসারন করেন। এ সময় বড় অংকের টাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে গিয়েও তিনি লোন পাননি।
পরে স্বামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তাকে সহায়তা দেন। ২০০৭ সালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সময় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে দারুণ প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েন তিনি। তবুও হাল ছাড়েননি স্বর্ণলতা।
শুরুতে মাত্র ১২ জন নারী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও উইমেন্স ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডেও কর্মী এখন ৫০ জন। মাত্র ৫০ হাজার টাকার পুঁজি এখন ১০ লাখ টাকার উপরে।
নিজে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার সাথে সাথে হাজারের উপরে নারী তার প্রতিষ্ঠান থেকে রূপচর্চায় কাজ শিখে এখন তারা নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়েছে।
স্বর্ণলতা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সবদিক বিবেচনা করে ব্যবসায় নামতে হবে। ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও একাগ্রতা লক্ষ্যে পৌঁছা যায়। স্বর্ণলতা জানালেন, রূপচর্চার দোকান খুলে বসলেই হয় না। স্কীন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহারের নিয়ম-কানুন জানতে হয়। তিনি জানান, তিনি স্কীন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দুবাই থেকে। সেখানে কয়েক মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া স্বর্ণলতা ঢাকা ও ভারতের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেছেন এ উদ্দেশ্যে।
স্বর্ণলতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ।
কোন পাতা নেই, লতাই এর দেহ কান্ড মূল সব। লতা হতেই বংশ বিস্তার করে। সোনালী রং এর চিকন লতার মত বলে এইরূপ নামকরন। ঔষধি গুন আছে। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয় দাতা গাছের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে।
কিন্তু সিলেটের এই সংগ্রামী নারী স্বর্ণলতা নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি হয়ে উঠেছেন সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল আর অন্যদের অনুসরণীয়।
সূত্রঃ View this link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।