সত্য ও সুন্দরের জন্য
এই যে তুই বার বার ফুঁসে উঠেছিস, এশিয়াতে, উত্তর আমেরিকাতে; বিপন্ন করেছিস আমার অস্তিত্ব বারে বারে; হাজারো সংসার তছনছ করেছিস। বালি তটের কথা মনে আছে তোর; কত কাঁচা অভিসার যে আর পাকা হয়নি। তবু পারিসনি আমার নজর কাড়তে। এ যেন এক অবাক উপলব্ধির মাঝখানে বসে আছি। দিবসের ঘটা দিয়েই মনে হল আজ: তুই কে? তোকে ছাড়া আমি কী? কেমন আছিস তুই? কেন আমার ঘরে চলে আসিস অযাচিত ভয়ংকর অথিতি হয়ে? কিসের অভিমান তোর?
তোরে ছাড়া আমি কে?
তুই বিশাল।
তোর জাতেরা আমার তিন ভাগের দুই ভাগই দখল করে আছে । আমার শিরায় উপশিরায় তোরই যে অস্তিত্ব। তুই ছাড়া আমার পাক চলে না; তুই ছাড়া আকাশ পাতাল দুটোই যে অসহায়। খাওয়ার পরের যে পান, বাতাসে যে বাস্প; এসব তো পানি-বৃত্তে তুই আছিস বলেই যেন ঘটে। আমার জীবমন্ডল যেন তোকে ঘিরেই ঘুরছে।
জ়েনেছি আমার জন্মেরও আগে তোর জন্ম। শত জীব ধরেছিলি তুই, সেই তিন বিলিয়ন বছর আগে। তোর প্রাণের কাছে যেন আমি প্রাণহীন। দখিনা সমীরণ কে নিয়ে কত লিখেছি; যে সমীরণ আমার কানে প্রেমের গীত গেয়েছিল; ভুলেছি ওটা তোরই নিয়মের কলকাঠি ছিল। ওই যে লেকের পারে বসেছিলাম; গুন গুন গলায় ছিল মোর পীরিতের গানটি; একবারও ভাবিনি পানিচক্রে তুই না থাকলে আমার লেকের পারে আর বসা হতো না; কত গুনগুন হতাশায় জন্ম নিতো।
নদীর বহমান স্রোতে কত প্রেমের চিঠি ছেড়েছি; কতবার ভাবনার পাল তুলেছি; ভাংগা গড়ার সংগ্রামের গল্প বলেছি; কিন্তু সেই স্রোতও যেন তোর ইশারায় ঘুরছে।
পিচ্চি বয়সে “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর” আর যৌবনে এসে বৃষ্টির কান্নায় বিরহের সংগীত কিংবা অবারিত জয়গানের কথা শুনেছি। সেও বলেছে তোর কথা; টের পাইনি। তোর সৃষ্টি বৃষ্টি দেখি তোর চেয়েও অনেক বড় ভাবের কবি। এখন বুঝি, পুরোটা কীনা জানিনা।
তুই ছাড়া যেন আমার কবিতা বৃষ্টিহীন ধু ধু মরু; যেও অবশেষে বৃষ্টি চায়, চাতকের মত।
বাংলা লিখি আমি; বাংগালী তাই, সেই “মাছে ভাতে বাংগালী” বটে। ছোট ছিলাম যখন, ঠিকমত কাঁটা বাছতে শিখিনি, তবু মাকে বলেছি “মাগো রুইটা চাই”। সেই মা’কে আজ রুইয়ের কাঁটা বেছে দিতে হয়।
ভাবিনি তোর জোয়ার ভাটার টানে নদী থেকে খাল, খাল থেকে বিল, আর বিল থেকে পুকুরে পরা পানিতে মিটেছে আমার ঘরের পুকুরখানিতে যে রুইয়ের পিয়াস, তাতে তোর ভালবাসাও দুফোঁটা ছিল।
তোর ভালবাসাই খেয়েছি, হাড্ডি মাংস গড়েছি। সেই পোয়া, ছুরি, লইট্যা বাবার বাজার ব্যগ ভরে থাকত, তার কথা বললে তো আমার বেড়ে উঠার কথাও বলতে হবে; সেটা তো সবারই কথা, সবাই জানে। যেই লবণ জুড়ে আছে বাংগালীর অস্থি মজ্জায় তাও তোর বুকের রক্ত পানি করেই ধুয়ে মুছে শুকিয়ে কাঠ করে পাওয়া।
কেমন আছিস তুই?
তুই ভাল নেই। ঘর, অফিস, কারখানার শত পয়ঃকাম তোর বুকেই যে ঢালা হচ্ছে।
আমি যে বেড়ে চলেছি; আবিষ্কারে মেতেছি; প্রতিনিয়ত বানিয়ে যাচ্ছি সুখের নতুন সংজ্ঞা; তোকেই বলি দিচ্ছি আমার তৈলাক্ত বেড়ে চলার পথে। নিজেকে বিষমুক্ত করেছি বারবার; তোর মুখেই ঢেলেছি সেই বিষ, হজম করেছিস চুপিসারে। আমাদের চাওয়া যে তবু থামেনি।
কতবার তোর বুকে ছুটে গিয়েছি, প্রেয়সীর হাত ধরে। গড়াগড়ি দিয়েছি তোরই সাজানো মধুচন্দ্রিমা বিছানায়।
কিছুই চাসনি তুই, একটি ফুলও না। তবে আমি যে সভ্যতার প্লাস্টিক কাঁটায় সেই বিছানা ভরে দিয়েছি।
শুধু কী তাই? আমার রোগ পঁচন যে সেরেছি, তার সকল উচ্ছিষ্ট তোর বুকেই ফেলেছি। বাতাসে ছুঁড়ে দেয়া সভ্যতার শ্বাপদ নিঃশ্বাসে আজ তোর ফুসফুস ক্ষতবিক্ষত। আমার ফসলের বেড়ে উঠার উপাদানেরাও আমার উঠোনে ঠাঁই পায়নি।
তোর বুকে ঘর বেঁধেছে। এভাবেই আমার টিউমারগুলা তুই নিজ গায়ে ধরেছিস। আজ মানব ক্যন্সারে তুই আক্রান্ত। আমার শত ডাক্তারখানায় তোর জন্য তবু কোন পথ্য বানান হয়নি। ফ্যালফ্যাল করেই থাকিয়ে ছিলি, ভারাক্রান্ত বুক নিয়ে।
তোর অভিমান ও আমার ক্ষমাপ্রার্থনা
আমার সন্তানের ভালবাসার দিকে তাকিয়ে বলিদান করেছে তোর শত ছেলে মেয়েরা। মাঝে মাঝে তুই তাই ডুকরে কেঁদেছিস। তোর অশ্রু যে আমার বাছাদের কেড়ে নিয়েছে, তাই তোকে গালি দিয়েছি; বুঝিনি ওটা তোর কান্না ছিল। এত ভালবাসলি, কষ্ট দিলে তো তুই কাঁদবি; কিন্তু আমার কলকারখানায় যে তোর জন্য রুমাল বানান হয়নি, সৃষ্টিকরতাও যে বানান নি। আজ হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি।
তোকে আর কাঁদাতে চাইনা; আমার পুঁজিবাদী বিবেক আমাকে তাই বলল। তোর কষ্টের সহানুভুতির চাইতে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে মানব-বিনাশী কান্না তোর।
----------------------- উপসংহার অসমাপ্ত ---------------------------
সম্পর্কিত জরুরি কয়েকটি কথা
• “অয়েল স্পিল” সমুদ্রে নিক্ষেপিত তৈলের মাত্র তিনভাগের এক অংশ। বাকীটুকু সমুদ্রকে আমদের প্রতিনিয়ত ইচ্ছার উপহার। এটা আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেই পারি।
• শুধু আমেরিকাতেই ৬৫০০০ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হচ্ছে বানিজ্যিকভাবে। প্রতিবছর যোগ হচ্ছে এরকম আরো হাজার খানেক দ্রব্য। এগুলো সাগরে শেষ ঠিকানা গড়ছে। অথচ তার মাত্র ৩০০ টি যথাযথভাবে বিষক্রিয়ার জন্য পরীক্ষিত।
• সমুদ্রতটে পরিষ্কার অভিযানে সবচেয়ে বেশী পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্লাস্টিকের দ্রব্য।
• “ঘোস্ট নেট” নামক মতস ধরার জালে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত সীল।
• লক্ষ্য না করা মাছে পরিমান প্রতিবছর প্রায় বিশ মিলিয়ন পাউন্ডের কাছাকাছি (খোদ আমেরিকাতেই), যা পরে ফেলে দেয়া হয় বাতিল মাল হিসেবে। এই পরিমান লক্ষ্যের দুইগুণ।
• সমুদ্র ও সমুদ্র এলাকার দুষণের তিন ভাগের একভাগ দুষণদ্রব্য বায়দুষণ থেকেই আসে।
• কলকারখানার বর্জ্য, ডিটারজেন্ট, এবং সারের নাইট্রোজেন সাগরের পানিতে মিশে অক্সিজেন কমায় ভয়ংকরভাবে।
এক গ্রাম নাইট্রোজেন ভাংগতে পনের গ্রাম অক্সিজেন মারা পরে; আর এক গ্রাম সালফারে জন্য মরে শত গ্রাম অক্সিজেন। হাজারে হাজারে মরছে প্রতিদিন সাগরসন্তানেরা।
• সবার অভিভাবক জাতিসংঘের এক প্রকাশনাতে বলা হয় পৃথিবীর সতেরটি ফিশারীজ এর মধ্য চারটি চিরতরে খতম হয়ে গেছে; আর বাকীরা অতিমাত্রার মৎশিকারে কাতরাচ্ছে।
• তালিকা চলতেই থাকবে; গুগুলে একটু ঘাঁটলেই সব পাবেন। হয়ত আমরা সবি জানি, কিন্তু কিছু করব না।
এটা নিয়ে তো আজ রাজনীতি হবে না। কি দরকার আজাইরা পেঁচাল পাইরা?
---------------------------------------------------------------------
তথ্যসুত্রঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।