আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ব ইজতেমা হয়ে উঠুক বিশ্ব-মানবতার মুক্তির দিশারী

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

বিশ্বের ধনী-গরিব, সাদা-কালো, উঁচু-নিচু সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মহামিলনকেন্দ্র এই বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম তথা মানব জমায়েত।

মুসলমানগণ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো জাতির পক্ষে এত বড়, শান্তিপূর্ণ ও স্বল্পব্যয়ী মহাসমাবেশ করা আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও সম্ভব নয়। কোনো রক্তপাত, মারামারি-কাটাকাটি দূরের কথা, সামান্য গালাগালি বা হিংসা-বিদ্বেষও এই বিশাল প্যান্ডেলের ভেতরে নেই। সর্বত্র আছে শুধু ‘এক আল্লাহর’ বুলন্দ আওয়াজ। এটা মহান আল্লাহপাকেরই এক অপার মহিমা, তাঁর কুদরতের জ্বলন্ত উদাহরণ। চোখে না দেখলে যা বিশ্বাস হবার নয়।



যদিও এই ইজতেমা মুসলমানদের একটা ধর্মীয় জমায়েত, কিন্তু এটা মানবজাতিকে কি বার্তা দেয়? এত লাখ লাখ মানুষ- এর মধ্যে হাজার হাজার সাদা দাড়িওয়ালা বৃদ্ধও আছেন- কেন এই কনকনে হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যেও নিজেদের জানমাল উৎসর্গ করে এককাতারে শামিল হন? কিসের টানে, কোন্ মহান শক্তির স্পর্শে-ভালোবাসায় অনুপ্রাণিত হয়ে সকলে এক সুরে আল্লাহ্ আল্লাহ্ ডাকতে থাকেন? এখানে কি মানবজাতির কোনোই চিন্তার বিষয় নেই?

ইসলামধর্মে ‘মানবতার’ শিক্ষা অনন্য। পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম পাঁচ আয়াত কোনো বিশেষ জাতি বা মুসলমানদের কেন্দ্র করে নাযিল হয়নি, হয়েছে সমগ্র মানবজাতি, মানবজাতির সৃষ্টি ও শিক্ষাকে উপলক্ষ করে। আমাদের আজকের পরিচিত এই মুসলমান তখন ছিল না, থাকার কথাও নয়। এমনকি সত্যের ঝাণ্ডাবাহী কোরআনকে গ্রহণকারীগণ পরবর্তীতে মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও কোরআনের বহু জায়গায় ‘মানুষ’ ও ‘মানবজাতিকে’ সম্বোধন এবং আহ্বান করা হয়েছে অত্যন্ত নম্র ভাষায়। এর মধ্যে কোনো কোনো জাতির নামও উল্লেখ করা হয়েছে সম্পূর্ণ ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে।

সুতরাং ইসলামধর্ম কখনোই ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করতে আসেনি। এসেছে চলমান শ্রেণি-বৈষম্য, বহুমুখি অত্যাচার-নিপীড়ন, দাম্ভিকতা, অমানবিকতা ইত্যাদি থেকে মানবজাতিকে মুক্ত ও পবিত্র করতে। পৃথিবীর প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলো মহান আল্লাহর একত্ববাদ ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য বহন করে; ইসলামধর্মের সত্যতার সাক্ষ্য দেয়। অথচ কেন আজ জগৎবাসী এই সত্য ধর্ম থেকে দূরে? ‘আসমানীধর্ম’ মানুষেরই প্রয়োজন, অন্য কোনো প্রাণীর নয়। কারণ অন্যান্য প্রাণীর ‘স্বভাবধর্মে’ সমস্যা নেই।

মানুষের ‘স্বভাবধর্মে’ সমস্যা আছে। শুধু সমস্যাই নয়, মারামারি-হানাহানি-কাটাকাটি, হিংসা-বিদ্বেষ ও ধ্বংসাত্মক উপাদানও আছে। মানবজাতির এসব স্বভাবধর্মের সমস্যার সমাধান মানুষের বুদ্ধিপ্রসূত জ্ঞানের ভেতরে নেই। কেননা মানবিক ‘বুদ্ধিশক্তিও’ তার স্বভাবধর্মের ভেতরে। যে কারণে আজ দুনিয়াজুড়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বস্তুগত শক্তির চরম উন্নতি এবং বুদ্ধিপ্রসূত জ্ঞানের বৈপ্লবিক বিকাশ সত্ত্বেও মানবজাতির সমস্যার অন্ত নেই।

অতীতের যেকোনো যুগ ও সময়ের চেয়ে বরং বেশিই বলা যায়।

সর্বব্যাপী আজ মানবজাতির এতসব সমস্যার কারণ কি? মূলত সত্যধর্ম থেকে দূরে ছিটকে পড়াই এর প্রধান কারণ। তবে এর জন্য দায়ি মুসলমানরাই। তাই তাবলীগজামাত প্রাথমিকভাবে মুসলমানদেরই সংশোধনের তা’লীম দেয়। বিশেষ করে সাধারণ মুসলমানদের।

যাদের শিক্ষা ও সংশোধনের অন্য কোনো পথ খোলা নেই। এদিক থেকে তাবলীগ জামাত অনন্য, ইসলামের সহজ-সরল ও সর্বজনীনতার মডেল। এখানে কারও কোনো ক্ষমতার লোভ নেই, জাগতিক স্বার্থ নেই। বরং জানমাল খরচ ও পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকার কোরবানী আছে। বিশ্বের সমস্ত মুসলমান ও মানবজাতির প্রতি এক অখণ্ড কল্যাণকামী চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মধ্যে কাজ করে।



ইসলামের প্রথম যুগে যেভাবে এই ধর্ম মানুষের মধ্যে সততা, সমতা, মানবতা ও ন্যায়বোধ জাগিয়ে তুলেছিল, যেভাবে সর্বপ্রকার অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার বাস্তব নমুনা পেশ করেছিল, আজও এমন প্রমাণ বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করতে পারে এই তাবলীগ জামাত। তাই আমি মনে করি, আমাদের ইসলামি দলসমূহ ও আলেমগণের তাবলীগ জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও সমন্বিত হওয়া একান্ত জরুরি।

অপরদিকে তাবলীগ জামাতও নিজেদের বিচ্ছিন্ন না রেখে সমস্ত আলেমগণের সংস্পর্শে পুরোপুরি চলে আসা অপরিহার্য। বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে আমাদের এই বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে, আনাচেকানাচে তাবলীগের শিক্ষা ও মেহনত আরও ব্যাপক-বিস্তৃত ও ফলপ্রসু করে তুলতে পারলে সমাজের সর্বস্তরে শান্তির সুবাতাস বইতে পারে। এ জন্য যারা আল্লাহর রাস্তায় তাৎক্ষণিক বের হতে অক্ষম-মাজুর, তাদের জন্যও স্থানীয়ভাবে দীর্ঘমেয়াদি ইসলামি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ চালু করা ফরজ।

আর এ লক্ষ্যে প্রচলিত সবগুলো ইসলামি দল ও কার্যক্রমের সমন্বয় ঘটাতে নিজেদের ছোটখাটো মত-পার্থক্যগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের আমীর ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে প্রতিনিধিত্বের স্তরে দীর্ঘমেয়াদি আলোচনা-পর্যালোচনা ও উন্মোক্ত প্রশ্নোত্তরপর্ব অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই।

বিশ্ব ইজতেমা আমাদের অর্থাৎ এই বাংলাদেশের জন্য এক মহাসৌভাগ্য। বিশ্ব ইজতেমা মানবজাতির সাম্য, মৈত্রী, শান্তি, মুক্তি ও কল্যাণের দিশারী। তাই টঙ্গির তুরাগ পাড় থেকে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ুক শান্তির এই মহান বাণী, নবীজীর সুন্নতের ডাক; ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক কামিয়াবী- এক আল্লাহর দাওয়াত।



অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.