আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের কোন বিকল্প নাই -২৩

এক সময় রবীন্দ্রনাথকে আক্রমন করা একটা ফ্যাশান ছিল। কল্লোল যুগ থেকে শুরু, চলেছিল পঞ্চাশ দশকের শেষ পর্যন্ত। তিন জোড়া লাথির ঘায়ে, রবীন্দ্র রচনাবলি লুটোয় পাপোষে- এরকম লাইন লিখেছিল পঞ্চাশের দশকের কোনও এক ছোকরা কবি। এই রকম মনোভাবের শেষ হয় রবীন্দ্রনাথের শতবার্ষিকীর বছরে। শতবার্ষিকীর বছরের পর থেকেই যেন রবীন্দ্র সংগীতই হয়ে উঠল বাঙালির একমাত্র গান।

লেখক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ এতই বড় যে তাকে অন্য লেখক ঈর্ষা করলে সেই লেখক নিজেই ছোট হয়ে যাবেন, যেমন সাময়িকভাবে হয়েছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। আজও রবীন্দ্রনাথ এতখানি আনন্দের ভান্ডার, এজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকি। রবীন্দ্রনাথের কবিতা যথার্থই আমার খুব প্রিয়। রাত্রিবেলা হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি উঠে অনেকগুলো রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে নিতাম। সেই সব কবিতা ছিল আমার নির্জনতার সঙ্গী।

একাএকা গভীর রাতে রবীন্দ্র সংগীত শুনতে শুনতে অকস্মাৎ চোখে জল এসে যায় হিমির। এই অশ্রু মন ভালো করে দেয়। এক নজরে রবীন্দ্রনাথ- ১৭৮৪ সালে নীলমনি মেছুয়াবাজার(আজকের জোড়াসাঁকোতে)এক বিঘে জমিতে তৈরী করেন একটি আটচালার ঘর- এবং এইভাবেই রোপন করেছেন একটি জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির নামের বিশাল মহীরুহের প্রথম বীজটি,অপেক্ষামান ইতিহাসের দোড়গোড়ায়। দেবেন্দ্রনাথের পিতা,রবীন্দ্রনাথের পিতামহ,দ্বারকানাথ না জন্মালে 'ঠাকুরবাড়ি' ঠাকুরবাড়ি হতো না। ১৮০৯ সালে পনেরো বছরের দ্বারকানাথের সাথে বিয়ে হয় যশোর জেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের পিরালি ব্রাহ্মন রামতনু রায়চৌধুরী ও আনন্দময়ীর ৬ বছরের খুকি দিগম্বরীর সাথে।

১৮২৮ সালে দ্বারকানাথের উন্নতি হলো,তিনি দেওয়ান হলেন। ১৮৪২,জানুয়ারী ৯ দ্বারকানাথ বিলেত যাত্রা করলেন তার নিজের জাহাজে 'ইন্ডিয়া;-তে চেপে। ১৮৪৬-এর ১,আগস্ট কেনসিল গ্রিন সমাধিক্ষেত্রে সমাধিস্থল হলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। ** ** ** ** ** ** ** ১৮৮২ সালে অতি তরুন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ভগ্ন হৃদয়' নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ১৮৮৮ সালে রবীন্দ্রনাথ মায়ার খেলা'র মাধ্যমে বাংলা গানের মুক্তির বিশাল এক দরজা খুলে দেন।

১৮৯০ সালের দিকে পূর্ব বাংলায় পারিবারিক জমিদারি তদারক করতে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলাইদহে এসেছিলেন, ১৯০২ সালে মৃণালিনী দেবী মারা যান। তার বয়স তখন ২৯ বছর। ১৯১১ সালে রবীন্দ্র সুইডেনের প্রিন্স কার্ল উইলহেম লুদভিগ তার এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে কলকাতা সফর করেন। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথের প্রতি অনেকেরই প্রসন্ন দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ প্রথম যখন সিলেট আসেন তখন মনিপুরী নাচ দেখে তার খুব ভালো লেগেছিল।

১৯১৯ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হয়। যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বিশ্বপথিক,তিনি যুদ্ধের প্রভাবকে নানাভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ পরিস্কার উপলদ্ধি করতে পারলেন যে,মানব জাতির আদর্শ-মানা সত্যের পেছনে যে অসত্য লুকিয়ে আছে,শুভর পেছনে যে অশুভ,তা খুব প্রবল,খুব তীব্র। ১৯২০ সালে দু'জন মনিপুরী শিক্ষক নিয়ে গিয়ে শান্তিনিকেতনে মনিপুরী নৃত্যের প্রথম প্রদর্শন করেন। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বসংস্কৃতির মিলন কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বভারতীয় আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৩০ সালের মে মাসে রবীন্দ্রনাথের চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছিল প্যারিসে(গ্যালারি পিগালে)। ১৯৩৯ সালে সোমেন চন্দ্র, সতীশ পাকড়াশী, রণেশ দাশগুপ্ত, জ্যোর্তিময় সেনের উদ্যোগে প্রগতি লেখক সংঘ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এক সময় কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৯ সালের শেষদিকে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বেতারকে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রসংগীত চর্চার যথার্থ সূত্রপাত। ১৯৫৫ সালে বুলবুল ললিতকলা একাডেমী (বাফা)-এর প্রতিষ্ঠা রবীন্দ্রসংগীতের প্রসারে উল্লেখযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করে।

১৯৫৬ সালে বিশ্বভারতীয় যখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান নির্ভর হয়ে গেল এবং কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষিত হলো তখন রবীন্দ্রনাথের আর্দশের সাথে বলা যায় ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়-স্বজনরা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে তথ্য ও বেতারমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দিন এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী রবীন্দ্র সংগীতের প্রচার বেতার ও টেলিভিশনে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন। (চলবে...) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।