আমি সুমাইয়া বরকতউল্লাহ। ছাত্রী। লেখালেখি করা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি ছড়া, গল্প লিখি। পত্রিকায় নিয়মিত লিখি।
লেখালেখি করে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও পেয়েছি। শিশু অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ (প্রিণ্ট মিডিয়া) পর পর ৩ বার জাতিসংঘ-ইউন এক বনে ছিল এক শিয়াল। তার কেন জানি ইচ্ছা হলো সে রাজা হবে। তাই সে ভাবতে থাকে কিভাবে বনের রাজা হওয়া যায়।
শিয়ালের আছে এক বউ।
সে বলল, বউ আমার রাজা হওয়ার খুব ইচ্ছে। বল তো আমি এই বনের রাজা হতে পারি কিভাবে।
শিয়ালনী বলে, ইশ, রাজা হওয়া এতো সোজা না। বুঝেছ এবার?
শিয়াল বলে, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি এ বনের রাজা হয়ে গেছি। কিন্তু কিভাবে যে বনের রাজা হবো, সেটাইতো বুঝতে পারছি না।
আচ্ছা শিয়ালনী তোমার না সাতছালা বুদ্ধি আছে? আমাকে একছালা বুদ্ধি ধার দাও। আমি কোনোমতে রাজা হয়ে যেতে পারলে পরে তোমার বুদ্ধি তোমাকে ফেরৎ দিয়ে দেব। বুঝেছ?
শিয়ালনী তার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসে। শিয়ালনী বলে, তুমি তো আমাকেই ঠিকমতো খাওয়াতে পার না। তো বনের রাজা হলে পরে এতো এতো প্রজাদের তুমি চালাবে কিভাবে, হেহ্?
শিয়াল বলে, একবার রাজা হয়ে গেলে পরে সেটা দেখা যাবে নে।
এখন আমাকে রাজা হওয়ার বুদ্ধি দাও তুমি।
শিয়ালনী বলে, আচ্ছা তোমাকে বুদ্ধি দিয়ে রাজা বানালে পরে তুমি রাজ্যটা চালাতে পারবে কি না সেটা আমার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তুমি রাজি?
শিয়াল বলে, দেখো, বনের রাজা হওয়ার জন্য আমি অনেক কিছুই করতে পারব। বলো, কী করতে হবে আমার।
শিয়ালনী বলে, ওই যে একটা গ্রাম দেখা যায়, ওই গ্রাম থেকে যদি তরতাজা হাঁস আর মুরগী এনে খাওয়াতে পার তবেই বুঝব যে তুমি রাজা হতে পারবে।
শিয়াল ওই গ্রামের দিকে তাকিয়ে বলে, যা থাকবে কপালে। আমি আজই হাঁস আর মুরগী নিয়ে আসব। আচ্ছা?
শিয়াল গেল গ্রামে। গভীর রাত। সবাই আছে ঘুমিয়ে।
চুপি চুপি মুরগীর খোপের কাছে গেল শিয়াল। সে অনেক কায়দা করে খোপের একটা ডালা ফাঁক করে ঢুকে পড়ল। একটা মুরগী খপ করে ধরে দিল এক দৌড়। অমনি টের পেয়ে গেল কয়েকটা কুকুর। তারা ঘেউ ঘেউ করে ছুটল শিয়ালের পিছে।
কুকুরের সাথে আর পেরে উঠছে না শিয়াল।
কুকুরেরা কামড়ে ধরল শিয়ালকে। শিয়ালের আছে বুদ্ধি। তাই শিয়াল বুদ্ধি করে বলে, দেখো, এভাবে কামড়াকামড়ি করে তোমাদেরও লাভ নেই, আর্মাও লাভ নেই। এরচেয়ে ভাল তোমাদের একটু মাংস দেই, তাই মজা করে খাও।
এ কথা শুনে কুকুরের জিহ্বায় পানি এসে গেল। কুকুর সুরুৎ করে পানি গিলে বলে, আচ্ছা তাই করো, দেও, দেও খাই। শিয়াল বলল, একটু না, পুরোটাই নেও। এই বলে শিয়াল পুরো মুরগীটাই দিয়ে দিল কুকুরকে। কুকুরেরা খুশি হয়ে বলে, তুমি তো পাকা শিকারী।
তুমি চুরি করবে আর আমাদের ভাগ দিবে। আমরা তোমাকে বাধা দিব না। কুকুরেরা টানাটানি করে মুরগীটা খাচ্ছে। এইফাঁকে শিয়াল চলে গেল গিরস্থের বাড়ি। সে এবার একটা মুরগী আর একটা হাঁস চুরি করে নিয়ে গেল বনে।
শিয়ালনী তো মহা খুশি! শিয়ালনী সবকিছু শুনল। সে বনের সকল শিয়ালকে খাওয়াল দাওয়াত করে। সবাই পেটভরে খেয়ে খুশি হয়ে গেল।
শিয়ালনী সবাইকে বলল, আমার স্বামী অনেক সাহসী আর বুদ্ধিমান। আজ তোমরা মজা করে যে তাজা হাঁস-মুরগীর মাংস খেলে তা কোথা থেকে এলো আর কে এনেছে, কীভাবে এনেছে, জানো?
সবাই চোখ বড় করে বলল, না, আমরা এর কিছুই জানি না।
শিয়ালনী গর্ব করে শিয়ালকে দেখিয়ে বলে, এগুলো এনেছে আমার স্বামী এই শিয়াল। পাশের যে গ্রামে তোমরা পাগলা কুকুরের ভয়ে ঢুকতেই পার না, সে সেই গ্রাম থেকে এনেছে এই হাঁস আর মুরগী। শুধু তাই নয়, এ বনে যখন খাদ্য সমস্যা দেখা দেয় তখন তোমাদের খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে এই সাহসী শিয়াল। বুঝেছ তোমরা?
সবার মুখ তখন আনন্দে চিকচিক করে উঠল। তারা বলল, আমরা এই সাহসী শিয়ালকে ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই।
শিয়ালনী বলে, শুধু ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা দিলেই তো হবে না। এই সাহসী আর বুদ্ধিমান শিয়ালকে উপযুক্ত সম্মানও দিতে হবে। কি বলো তোমরা?
ওরা বলল, ঠিক বলেছ তুমি, সম্মানও দিতে হবে।
শিয়ালনী বলে, এই সাহসী আর বুদ্ধিমান শিয়ালের সেবা পেতে চাই। আমরা নিরাপদে থাকতে চাই।
আর তাই এই শিয়ালকে বানাতে পারি আমাদের রাজা। তখন তিনি এ বনের সকল শিয়ালের বিপদে কাজে লাগবেন। আর প্রয়োজনে ওই গ্রাম থেকে তাজা হাঁস-মুরগী এনে আমাদের মজা করে খাওয়াতেও পারবেন। কী বলো তোমরা?
সবাই রাজি হয়ে গেল। তারা বলল, এখন থেকে আমরা তাঁকে রাজা মানলাম।
শিয়ালেরা আনন্দে নেচে নেচে ”আমার রাজা-তোমার রাজা, শিয়াল রাজা-শিয়াল রাজা” শ্লোগান দিতে দিতে চলে গেল যার যার বাসায়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।