জ্যৈষ্ঠ মাস মধু মাস। এ মধু আবার যে সে মধু নয়, ফলের মধু। এত এত ফল এই মাসজুড়ে। রাস্তায় চলতে-ফিরতে ফলের দোকানে মাঝেমধ্যে ফল দেখে নিষম্ফলভাবে তাকিয়ে থাকতে হয়। কারণটাও সেই অর্থনৈতিক অবস্থার ফলাফল।
ইচ্ছা আছে, কিন্তু উপায় নেই। বেশি দাম দিয়ে ফল খেয়ে পকেটকে ফাঁকা করার ফল যে কি, তা তো আমার মতো হতদরিদ্ররা ঠিকই বুঝবেন।
তবে আমাদের জীবনটা ফলময়। যেখানেই তাকাই সেখানেই ফলের বড়ই আকাঙ্ক্ষা। এই যে দুই দিন আগে এসএসসির ফলাফল হলো, তাতেও তো সব পরীক্ষার্থীর ফল নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না।
আর যাদের ফলাফল ভালো হয়েছে, তাদের সেই ফল নিয়ে বাড়াবাড়ি রকম উচ্ছ্বাসটাও ছিল চোখে ‘ফল’ করার মতো মানে চোখে পড়ার মতোই। আর কৃতী সন্তানের গর্বে বুক ফুলিয়ে বাবা-মায়েরাও রসের ফল অর্থাত্ মিষ্টি কিনতে ভিড় জমিয়েছিল মিষ্টির দোকানগুলোতে। এর ফলাফল গাদাগুচ্ছের টাকা খরচা। আর যাদের ফল আশানুরূপ হয়নি, তাদের চোখ থেকে যে গ্যালন গ্যালন পানি ‘ফল’ করেছে, তা না দেখেও বলে দেয়া যায়।
এর মাঝেই আবার জনজীবনের সঙ্গে জড়িত আরেক ফলাফলের সুফল আমরা বুঝি প্রতি পল এবং অনুপলে।
কি সেই ফল? কী আবার হবে! আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত রাজনীতির ফল। আর এ কি যে সে ফল? এর ফলেই তো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এত সাধের জীবনটাকে নিয়ে কিছু নিষম্ফল ক্রন্দন থেকে যায়।
যাই হোক, এত ফল এবং ফলাফলের বিশ্লেষণে না গিয়ে সরাসরি ফল খাওয়া নিয়ে অভিজ্ঞতার কথাই বলি। গ্রামেই আমার ছোটো থেকে বেড়ে ওঠা। আর বাড়ির ঘিরে থাকা অর্ধবৃত্তাকার বাগানে ফলের গাছ খুব একটা কম ছিল না।
এর ফলাফলস্বরূপ এই জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই আমগাছের পাশ দিয়ে ঘোরাঘুরিটা তাই বেড়ে যেত। আর আম পাকার পর গাছে বসে পাকা আম পেড়ে খাওয়ার মজাটা তো আর বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে গাছে ঢিল ছুঁড়ে কাঁচা আম পাড়ার প্রতিযোগিতার ফলাফলটাও বেশ মধুরই ছিল। এতে কখনও সফল আবার কখনও বিফল হতে হয়েছে।
কিন্তু বড় হয়ে নিজে হাতে আম পেড়ে খাওয়ার সেই অনুভূতি আর পাওয়া হয় না।
তার বদলে রাসায়নিকের গুণে হাতের কাছে মেলে অকালপকস্ফ ফল। স্বভাবতই সেই ফলের রসায়নটা আর শৈশবের সেই টাটকা ফলের মতো হয় না। ফলাফল আবারও সেই নিষম্ফল আক্ষেপ। এর ফলে বিদেশি ফলের ওপরে আগ্রহ বেড়ে যায়। বলতে গেলে বিদেশি ফলের প্রেমে ‘ফল’ করি।
যতটা সহজে আপেল কমলা কিংবা আঙুরের দেখা মেলে, ততটা সহজে আর দেখা মেলে না আম-কাঁঠালের। দেখা মিললেও তার আবার একরাশ হ্যাপা। আর এই হ্যাপা সামলাতে সামলাতে মনে হয় হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু হাল না ছাড়ায় নিজের হাল হয় দেখার মতো। এক্কেবারে নাজেহাল হয়ে যখন হাতে মেলে রাসায়নিকযুক্ত ফলের রসায়ন, তখন মনে হয় বিদেশি ফলগুলোই ভালো।
কিন্তু আমার এই ভুল ভাঙতেও সময় লাগে না খুব বেশি।
কোনো এক মধু মাসে টাঙ্গাইলের মধুপুরের মধুমেলায় গিয়ে ফলের মধু আস্বাদন করার চেষ্টা করেছিলাম। সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু। আগে না দেখলেও সেই মধুমেলায় গিয়ে পরিচয় হলো বিদেশি পিচ ফলটির সঙ্গে। চোখে দেখার পর খুব ইচ্ছে হলো চেখে দেখার।
কিন্তু চেখে দেখার ফলাফলটা ভালো হলো না। এর চেয়ে আমাদের দেশীয় লিচু অনেক সুস্বাদু ফল বলেই মনে হলো। ঠিক একই ঘটনা ঘটল ড্রাগন ফল খেয়েও। যে বাঙ্গি খেয়ে মনে হয় কোনো স্বাদ নেই, সেই বাঙ্গিকেও মনে হলো অনেক সুস্বাদু। মানে বিদেশি ফলের রস আস্বাদন করতে গিয়ে দেশি ফলকেই আবিষ্কার করলাম নতুনভাবে।
ভেবে দেখলাম, নিরাপদ দেশি ফল পাওয়া বেশ শক্ত হলেও আমি আসলে ওতেই আসক্ত। কাজেই যত শক্তই হোক, ফল খেতে হলে দেশি নাহলে নয়। এগারো মাস যা হয় হোক, জ্যৈষ্ঠ মাসে এসে অন্তত দেশি ফলের স্বাদ নিতেই হবে। নাহলে এর ফলাফলটা অন্তত ভালো হবে না, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।