আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফলের স্বাদে রুশ চুম্বন

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

আপু দ্যাখ দ্যাখ চেরী- ওমা এখানে চেরী পাওয়া যায়! আরে আপু দ্য--খ কি-উই ও আছে এখানে!! সদ্য উদ্ভোধন হওয়া আগোরায় ঘুরতে গিয়ে বিদেশী ফল দেখে মেয়ে দুটোর এমন আহ্লাদী আর ন্যাকা কথা শুনে গা জ্বলে গেল। অতি সযতনে থরে থরে সাজানো বিদেশী ফলের পাশে আমাদের আমাদের আতা কলা আনারস চালতা যেন লজ্জায় কুকড়ে আছে। আমদানী করা মহার্ঘ সেই ফলের দাম আর দাপটের কাছে এরা যেন অসহায়। আম কলা আনারসের মত ফল অনেক দেশেই মেলে তবে প্রবাসের বাজারে এইসব ফলের দেখা পেলে এখনো নিকটজনের দেখা পাওয়ার মত উৎফুল্ল হই। দেড় যুগ আগের কথা বলছি-রুশীয় গ্রীস্মে চেরী তখন যেন আমাদের বড়ই এর মত সহজলভ্য।

রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দু-চার থোকা পাকা চেরী ছিড়ে নিলেও কেউ ফিরে তাকাত না। বহু কিসিমের আপেল আঙ্গুর নাশপাতি আর মাল্টা সারা বছরই মিলত- কখনো টাটকা কখনো শুকনো কিংবা কাচের জারে প্রিজার্ভ করা। অন্য কোন ফল তখন নজরে পড়ত না খুব একটা। আমার শহরের সবচে বড় সপিং মলটায় এক সুদৃশ্য কাচের বাক্সে একবার একখানা মাত্র নিঃসঙ্গ আনারস যেটাকে এদের ভাষায় বলে আনানাস সেইটে দেখে চমকে উঠেছিলাম। বাপরে আনারসের কি সৌভাগ্য! বাইরে লেখা ছিল বিক্রির জন্য নহে।

তারমানে শুধু প্রদর্শনের এত আয়োজন! বেশীরভাগ রুশরাই তখনো হয়ত শুধু বইয়ের পাতায় আনারসের ছবি দেখেছে। তাজা একখান আনারস দেখার লোভ সংবরন করতে না পেরে সেই কাচের ঘরের উপর অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ত। এমনি করে মাস গেল- রুপের জেল্লাও তার গেল কমে। পুরোপুরি সম্মান হানির পূর্বেই কোন সহৃদয় হয়তো তাকে ভক্ষন করে বহুদিনের পূষে রাখা খায়েস মিটিয়েছিল। তবুও মাসখানেক তার কদর দেখে আমি ভীষন উৎফুল্ল হয়েছিলাম- মনে হচ্ছিল সে যেন আমারই স্বজাতি।

বছর দুই বাদে মস্কোর বাজারে প্রথম দেখা মিলল রসালো মোলায়েম কাচা হলুদ আর মাখনের রঙ্গে রাঙ্গানো দামী স্টিকার সাটানো সেই দেশে অতি দুস্প্রাপ্য সাগর কলা! ভীষন পরিচিত সেই ফল আমার দারুন সেজেগুজে দোকানীর কোলের কাছের ডালাটায় এমন ভঙ্গীতে বসে আছে যে তার কাছে যেতে বড় সঙ্কোচ আর দ্বীধা ছিল মনে। তবুও গেলাম। পুরোনো প্রেয়সীকে নবরুপে দেখে তার রস আস্বাদনের বড় স্বাধ হল। কিন্তু দাম শুনে এমন ছ্যাকা লাগল যে তার কাদির প্রান্ত ধরার সাহস হলনা। আসলে সস্তা খেতে খেতে আমার মনটাই ততদিনে ছোট হয়ে গেছে-একটাকার বিনিময় মুল্য দশ রুবল হলেও সেই দশটা রুবল আমার কাছে দশটা স্বর্ণ মুদ্রার মতই মহার্ঘ! ছুতে না পারি কিংবা খেতে না পারি তবুও দুর থেকে রুপ সুধা ভোগ করতে তো বাধা নেই।

নব্য এক প্রেমিক যুগল হাত ধরাধরি করে ঢলে ঢলে গলে গলে আসছিল ও পথ ধরেই –কাছে এসে কলার দ্যুতিময় রুপ দেখে থমকে গেল প্রেমিকা। প্রেমিকের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিগলিত হেসে অতি আহ্লাদী কন্ঠে কি যেন বলল। প্রেমিক তার স্ত্রস্ত পায়ে দু’কদম এগিয়ে কলার মুল্য জিজ্ঞেস করেই যেন আতকে উঠল। ভীষন বিব্রতকর তার চেহারা দেখে আমার মত কৃপনেরও মনে চাইল দশটা রুবল দিয়ে ওকে সাহায্য করতে। প্রেমিকার আব্দার বলে কথা- অবশেষে এ পকেট থেকে খুচরো পয়সা ও পকেট থেকে দু-চারখানা আধ ময়লা নোট বের করে বহুক্ষন হিসেব মিলিয়ে সাকুল্যে একখানা কলা কিনল।

কলার অবগুন্ঠন উন্মোচনের বাসনায় তাদের যেন তর সইছিল না। সামান্য দুরে গিয়েই আসন পেতে বসে পড়ল। তারপর … আমার দেশের সেই অতি তুচ্ছ কলার শত সহস্র বর্ষের জনম যেন সার্থক হল। ছেলেটা কি মোলায়েম ভঙ্গীতে যেন ব্যাথা না লাগে কলাটার মাথা থেকে একটু খানি ছিলে আলতো করে মেয়েটার ঠোটের ফাকে গুজে ধরল। মেয়েটার লোভাতুর চোখ তখন খুশীতে জ্বলজ্বল করছিল।

তবুও তার কামড় দিতে সংকোচ হল। একটু খানি চুষে ফিরিয়ে দিল ছেলেটাকে-ছেলেটাও ফের একটু চুষে বাড়িয়ে ধরল তার ঠোটের খাজে। চলল তাদের রোমান্সের নতুন পর্ব। উদ্দেশ্য যেন কলা ভক্ষন নয়- রুশ প্রেমের প্রথম দিনেই যে চুম্বন এলেবেলে কিংবা পানসে হয়ে যায় সেইটের আবার নতুন আমেজে আস্বাদ গ্রহন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।