আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যি ঘটনা নিয়ে লেখা একটা গল্প

মানুষের ভালোবাসাই তো মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি,সফল হওয়ার পেছনে। " ঘটনাটা ঘটেছিল ২০০৭ সালের মে মাসে; উত্তরাঞ্চলের কোন এক নির্জন জায়গায়। পুনম আর রাখি দুই প্রাণের বান্ধবী। একে অপরের সেরা বন্ধু। তারা এতটাই প্রাণের বান্ধবী যে যতটা সময় তারা এক সাথে থাকে, অন্য কেউ তাঁদের ধারে কাছে আসে না।

একসাথে বসে, একসাথে গ্রুপ স্টাডি করে। ক্লাসের সবাই তাঁদের এই বন্ধুত্ব দেখে হিংসে করে। এরকম সোনায় সোহাগা নাকি দেখতে পাওয়া খুব বিরল। রাখি একটু দুরন্ত টাইপের মেয়ে ছিল। আর পুনম ছিল ক্লাসের সবচেয়ে সেরা ছাত্রী।

কবিতা আবৃতি, গান গাইতে পারা, আরও অনেক গুণ ছিল পুনমের। আর তাই, পড়াশোনায় রাখি তার প্রাণের বান্ধবী পুনমের কল্যাণে বেশ ভালোভাবেই পার পেয়ে যাচ্ছিল। রাখির আবার একটু শখ আহ্লাদও বেশি ছিল। তাঁর জোরাজুরিতে ওর বাবা ওকে মোবাইল সেট কিনে দেয় অনেকটা অপরিণত বয়সেই। রাখি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী।

২০০৬ সালে দশম শ্রেণীর একজন ছাত্রীর কাছে ব্যক্তিগত মোবাইল থাকা মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা না । নতুন মোবাইল পেলে যা হয় আর কি! রাখি ভয়ংকরভাবে এর অপব্যবহার শুরু করে। দুষ্টুমি করে বিভিন্নজনকে মিসডকল দেয়। এভাবে হঠাৎ একদিন একটা কল ব্যাক আসে। অদ্ভুত সুন্দর কণ্ঠ ছেলেটার।

রাখি মুগ্ধ হয়ে যায় ছেলেটার কথা শুনে। রাখি ঘোরের মাঝে পড়ে যায়। তাঁদের মাঝে পরিচয় হয়ে যায়। ছেলে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। এভাবে একটু একটু করে কথা বলতে বলতে ওদের মাঝে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় এবং এক সময় ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

পুনম সবকিছুই জানতো। পুনম অবশ্য ওই ছেলের সাথে কখনো ফোনে কথা বলে নাই। রাখির কাছে সব শুনত। ছেলেটার নাম ছিল ডেভিড। রাখির মুখে সবসময় শুধু ওই ছেলের নামই থাকতো।

অবশ্য এতে রাখি আর পুনমের বন্ধুত্বে কখনো চিড় ধরে নাই। তারা আগে যেমন ছিল, তেমনই রয়ে গেলো। একবছরের মধ্যেই তাঁদের মাঝে অদেখা প্রেম খুব গভীরভাবেই দানা বেধে উঠলো। কথা ছিল রাখির এস এস সি পরিক্ষার পর ওরা দেখা করবে। ততদিনে রাখি আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে ওই ছেলের প্রতি।

ধীরে ধীরে এস এস সি পরিক্ষা শেষ হয়। ওদের দেখা করার দিনও ঘনিয়ে আসে। রাখি অনেক উত্তেজিত আর আবেগী হয়ে পড়ে। শুধু অপেক্ষা করে, কখন তাঁর রাজপুত্রের দেখা পাবে। পরিক্ষার পর পুনমেরও ব্যক্তিগত মুঠোফোন হয়।

যেদিন রাখি আর ডেভিডের দেখা করবার কথা, ঠিক তার দুদিন আগে রাখির নাম্বারে একটা অপরিচিত ফোন আসে। ফোন করে পরিচয় দেয় যে সে ডেভিডের বন্ধু। ফোন দিয়ে বলে যে তুমি আসলে ভুল করেছ রাখি। ডেভিড সর্বহারা গ্রুপের আঞ্চলিক কমান্ডার। অনেক বড় সন্ত্রাসী।

প্লিজ, ভুল করিও না। তবে ইতোমধ্যেই তুমি ওর ফাঁদে পা দিয়ে দিয়েছো। ও তোমার ক্ষতি করবেই। আমি তোমাকে বলেছি এ জন্য ও আমারও ক্ষতি করবে। কিন্তু তবুও তুমি সাবধান হও।

তোমার কল্যাণ কামনা করছি। ভালো থেকো। এই কথা শুনে রাখির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ও ডেভিডকে ফোন দিয়ে এর সত্যতা জানতে চাইল। ডেভিড প্রথমে স্বীকার না করলেও পড়ে স্বীকার করলো।

তখন রাখি বলল যে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক শেষ। আর যেন আমাকে ডিস্টার্ব করা না হয়। এ কথা শুনে ডেভিড হুংকার ছেড়ে বলে, “ তুই জানিস না আমার ক্ষমতা। কাল আসছি। যেখানে আসতে বলেছি ওখানে সময়মতো চলে আসবি।

না হলে তোকে বাসা থেকে তুলে আনবো। তোর বাবা মাকে খুন করে ফেলবো যদি না আসিস। “ রাখি এখন কী করবে? এতো বড় বিষয়টা ওর বাসায় জানানো উচিত ছিল। কিন্তু জানালে যদি ওর বাবা মার বিপদ হয়। ও ভুল করেছে।

ভুলের মাসুল কীভাবে দিবে। শেষমেশ ও তাঁর ভুলের মাসুল দিয়েছিল তাঁর প্রাণের বন্ধু পুনমের জীবন নষ্ট করে। নিজের স্বার্থের জন্য ও পুনমের জীবন শেষ করে দিল। ও পুনমকে বলল, যে আমি ডেভিডকে সারপ্রাইজ দিতে চাই। ওই জায়গায় কাল ও আসবে।

তুই আগে যাবি। আমার ফোন নিয়ে। কোন কথা বলবি না। ও তোকে আমাকে ভেবে রোমান্টিক কথা বলবে। তুই হাসবি।

কিছু বলবি না। পরে আমি এসে ওকে সারপ্রাইজ দিবো। পুনম তো এক কথায় রাজি হয়ে যায়। ওর প্রাণের বান্ধবী একটা আবদার করেছে, সে না করে কী করে! সেদিন ওরা এক সাথেই সেজেগুঁজে বের হয়। দেখা করার জায়গাটা ছিল নীরব আর বখাটেদের আড্ডাখানা।

আর ডেভিড তো প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে। ওর পুরো টিম নিয়ে জায়গাটা ঘিরে ফেলে। যেন পুলিশ আসলে খবর দেয়া হয় তৎক্ষণাৎ। রিকশা থেকে নেমে পুনমকে রাখির ফোনটা দিয়ে বলে যে তুই যা। যা বলেছি তাই করবি।

কথা বলবি না। কথাগুলো রাখি হাসি নিয়েই বলেছিল। আমি একটু পর সারপ্রাইজ দিতে আসছি। এই কথা বলে পুনম হাঁটা ধরে আর ফোন দিয়ে ডেভিডকে খোঁজে। আর রাখি তৎক্ষণাৎ ওই রিকশা করে বাসায় চলে আসে।

পুনম তো কিছুই জানে না। ওদিকে ডেভিড প্রস্তুত হয়েই আছে । মোবাইল ফোন দিয়ে নিশ্চিত হয়ে ডেভিড পুনমকেই রাখি মনে করে। তাঁদের মধ্যে কোন কথা শুরু হওয়ার আগেই ডেভিড পুনমকে অনেক জোরে দুটো চড় মারে। এরপর পুনমকে মাটিতে ফেলে গণধর্ষণ করে এবং সেটা ভিডিও করে রাখে ডেভিডের দল।

কিছু বুঝে উঠার আগেই সব ঘটে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় পুনম বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে। ওরা বেশিক্ষণ থাকতে পারে নাই। কারণ পুলিশ ওদের সবসময় খুঁজে। ধর্ষণ শেষে পুনমকে শুধু একটা কথাই বলে ডেভিড, “যদি মুখ খুলিস, তাহলে এই ভিডিও ফাঁস করে দিবো।

এরপর পুনম কেমন জানি চুপসে গিয়েছিলো। খাওয়া দাওয়া করে না ঠিক মতো। কারো সাথে কথা বলে না। সারাক্ষণ কীসের যেন একটা ভয়ে থাকে। ওর বন্ধুমহলও চিন্তিত।

কী হয়েছে পুনমের? রাখি পুনমের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলো। ওর কাছে মাফ চেয়েছিল। কিন্তু পারে নাই। কিছু কিছু অপরাধ আছে যার ক্ষমা কখনো পাওয়া যায় না। পুনম শুধু রাখিকে একটা কথাই বলেছিল, “এরপর যদি আমার সামনাসামনি পড়িস, তাহলে আমি গলায় দড়ি দিবো।

“ পুনমের বাসার সবাই চিন্তা শুরু করে দিল। তাঁদের এমন হাসিখুশি থাকা মেয়েটার হঠাৎ কী এমন হল? কথা বলে না। কবিতা লিখে না। বই পড়ে না। সারাদিন শুধু রুমে শুয়ে থাকে আর কাঁদে।

অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পরও কিছুই বের করতে পারে নাই পুনমের বাবা মা। তাঁদের ধারণা, পুনমের পরিক্ষা হয়তো খারাপ হয়েছে। তাই বেশি ঘাটায় নাই তাঁরা। রাখির ভাই কানাডা থাকে। এই ঘটনার একমাস পর রাখি স্বপরিবারে কানাডা চলে গিয়েছিল।

রাখি পর্ব আপাতত এইখানেই শেষ। তবে, অনেকবার পুনমের কাছে মাফ চাওয়ার বৃথা চেষ্টা করেছিল রাখি। পারে নাই। সারাজীবন পুনমের কাছে সে অপরাধী থেকে গেলো। হয়তো যতদিন বাঁচবে রাখি, এই অপরাধবোধে সর্বদা দংশিত হতে থাকবে রাখি।

তবুও কিছু বলার নেই। ওদিকে ডেভিডের কিছু একটা হয়েছে। পুনম দেখতে অবশ্য অনেক সুন্দরী ছিল। সর্বহারাদের কারও জন্য কখনো মায়া থাকে না। কিন্তু, পুনমের জন্য কেন জানি ওর মায়া হল।

পুনমকে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করলো ডেভিড। এখানে বলে রাখা ভালো ওদের বিয়ে করার বিধান নেই। তবুও পুনমের প্রেমে পড়ে গেলো ডেভিড। এই প্রেমে নেই কলুষতা। বিশুদ্ধ প্রেম যাকে বলে।

পুনমকে প্রায়ই ফোন দিত ডেভিড। কিন্তু, আশ্চর্যরকমভাবে আর কখনোই পুনমের সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই ডেভিড। ওদিকে সেই সময় র‍্যাব এর সাথে চরমপন্থীদের সেইরকম যুদ্ধ চলছে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া আর পাবনার চর অঞ্চলে। ডেভিডও দৌড়ের উপর আছে। এর মাঝেও সে পুনমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

পুনম বলে যে সে মরে গেলেও ওর মতো পিশাচের সাথে সে ঘর করবে না। একথা শুনে কেন জানি ডেভিড কষ্ট পায় অনেক। বলে, “শুধু একবার আমার সাথে দেখা করবে তুমি, আগের জায়গায়। কথা দিচ্ছি, আর জীবনেও বিরক্ত করবো না। “ পুনম ডেভিডের কথা বিশ্বাস করে না।

কারণ ওদের বিশ্বাস করতে নেই। তবুও ডেভিডের কথা শুনতে হবে। কারণ, ওর সর্বস্ব যে ডেভিডের কাছে। তবে পুনম একটু একটু বুঝতে পেরেছে যে ডেভিড মনে হয় সত্যিই ওকে ভালবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু, করলে কী? সে তো ডেভিডকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে।

এরপরেও সে রাজি হয় শেষ বারের মতো দেখা করার। যদি ওর জীবন থেকে অভিশাপটা দূর হয়, ক্ষতি কী? নির্দিষ্ট দিনে পুনম হাজির। কিন্তু ডেভিড ওর কথা রাখে নি। কথা ছিল ডেভিড একা আসবে। কিন্তু না, সে দলবল নিয়েই এসেছে।

পুনমের একবার ইচ্ছেও হয়েছিলো যে পুলিশে খবর দিয়ে আসবে। কিন্তু কেন যে দিল না,সেটা পুনম নিজেও জানে না। পুনম ভেবেছে হয়তো ওর জন্য আরও একটা গণধর্ষণ অপেক্ষা করছে। কিন্তু না, সাথে কাজীকেও নিয়ে এসেছে ওরা। একরকম জোর করেই ডেভিড পুনমকে বিয়ে করে।

তখন পুনমকে বলা হল যে ও যেন ওর বাবা মাকে বলে স্কুলের কোন এক জরুরী কাজে ওকে এক বান্ধবির বাসায় থাকতে হবে। তাই রাতে ও আসবে না। পুনম কখনো মিথ্যা কথা বলে নাই ওর বাবা মার সাথে। বাবা মার একমাত্র মেয়ে, তাই আর বেশি কিছু বলল না ওর বাবা মা। এরপর পুনমের সাথে হোটেলে বাসর রাত সম্পন্ন করে পরদিনই আবার ঘাঁটিতে ফিরে যায় ডেভিড।

যাওয়ার আগে বলল শুধু, “পুনম বিশ্বাস করবে কি না জানি না, তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি। জানি, তুমি আমাকে ঘৃণা করো, তোমার জীবনটা নষ্ট করেছি। কিন্তু তুমি আমার বউ। অন্য কারও হতে চেয়ো না। সে বাঁচতে পারবে না।

জানি না। কবে আবার আসবো, তবে আসবো। “ এরপর কেটে গেছে অনেক সময়। পুনম আসতে আসতে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এস এস সির রেজাল্ট বের হয়।

ও গোল্ডেন এ+ পায়। সবাই খুশি। ওরও অনেক আনন্দ হয়। নতুন করে আবার সব শুরু করতে ইচ্ছে করে। জীবনের সব নষ্ট অতীত ভুলে যেতে চায় সে।

আর ডেভিডও ওকে আর ফোন দেয় নাই। কলেজে ভর্তি হয় পুনম। বলা যায়, বেশ ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিন। পুনম আস্তে আস্তে ওর আগের দুরন্তপনা ফিরে পেতে শুরু করে। কলেজের প্রথম বর্ষ এভাবেই কেটে যায় পুনমের।

দ্বিতীয় বর্ষে হঠাৎ একটা ছেলের সাথে পরিচয় হয় ওর। পুনম যে স্যারের কাছে পড়ে, সেই স্যারের কাছেই পড়তো ওই ছেলে। সেই সময় সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। নাম সৌরভ। সেদিন পুনম আগেই চলে এসেছিল।

সৌরভ পুনমকে জিজ্ঞাসা করলো স্যারকে কোথায়। পুনম বলল রুম এ। ঠিক এইভাবেই পরিচয়। প্রথম দেখাতেই সৌরভ পুনমকে পছন্দ করে ফেলল। এরপর পরিচয় পর্ব, মাঝে মাঝে কথা বলা, কঠিন বিষয়গুলো বুঝে নেয়া, এভাবেই কেটে যাচ্ছিল ওদের মাঝে।

পুনম বুঝতে পেরেছিল সৌরভ ওকে পছন্দ করে। কিন্তু, পুনম তো ভালবাসাকে ভয় পায় অনেক। একদিন সৌরভ সাহস করে বলেই ফেলে পুনমকে ওর মনের কথাগুলো। সেই সময় এইচ এস সি পরিক্ষা সন্নিকটে। তাই সৌরভ পুনমকে আর জোর করে নাই।

পুনমও অবশ্য সৌরভকে একটু একটু পছন্দ করা শুরু করেছে। বিশেষ করে, সৌরভের ব্যক্তিত্ব পুনমকে অনেক মুগ্ধ করেছে। তবে অবাক করা বিষয়, এতদিনেও ডেভিড পুনমের সাথে যোগাযোগ করে নাই। আর তাই, ডেভিডের কথা পুনম প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। পুনমের কপালে সুখ বেশিদিন সয় না।

ডেভিডকে সে আবারও আগের মতো নরপিশাচের রুপে দেখতে পায়। পরিক্ষার এক সপ্তাহ আগে ডেভিড পুনমকে ফোন দিয়ে বলে যে ওর দুই লক্ষ্য টাকা লাগবে। ভীষণ জরুরী। যেভাবে পারে পুনম যেন যোগার করে দেয়। না হলে ওর সর্বনাশ করবে।

ওর ভিডিও বিক্রি করে টাকার যোগার করবে। পুনমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। পুনম এখন কী করবে? এতো টাকা কই পাবে সে? পরিক্ষা এক সপ্তাহ পর। উপায়ন্তর না দেখে হাজার ঝুঁকি নিয়ে এবার সে বাসায় সব খুলে বলল। শুনে ওর বাবা মা দুজনেই হার্ট অ্যাটাকের মতো অবস্থা।

কী শোনালো তাঁদের মেয়ে? এটা শোনার আগে তারা মরে গেলো না কেন? মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ের ইজ্জতই যে সব। কিন্তু এতো টাকা ওরা কই পাবে? পুলিশেও খবর দিতে পারছে না। পাছে মেয়ের চরম সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে। পরিক্ষা দেয় না পুনম। ওদিকে ডেভিড ফোন এর ফোন ফোন দিয়েই যাচ্ছে।

শেষমেশ পুনম আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সৌরভকে ফোন দিয়ে বলে যে সে যেন পুনমকে ভুলে যায়। সৌরভ কারণ জানতে চায়। অনেক জোরাজোরির পর পুনম বলে দেখা করলে সব বিস্তারিত বলবে। সৌরভ কাল বিলম্ব না করে চলে আসে।

পুনম সব কিছুই খুলে বলে। স্বাভাবিকভাবে এই সব ঘটনা শোনার পর যে কোনো ছেলেই পুনমকে রিজেক্ট করবে। কিন্তু সৌরভ ছিল ব্যতিক্রম। ও বলল, “চিন্তা করো না। আমি আছি তোমার পাশে।

এইসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দাও। ডেভিডের যা ইচ্ছা হয় করুক। তুমি যদি রাজি থাকো, আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি পুনম। তোমার দেহকে না, তোমার ওই মনকে।

যে আমাকে বিশ্বাস করে নিজের অতীতের কথা বলেছে। “ সৌরভের কথা শুনে পুনম নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখল। দুজনের মধ্যে ভালবাসা মজবুত হল। সৌরভ পুনমের বাসার জানালো যে পুনমকে সে বিয়ে করবে। পুনমের বাবা মা সম্ভিত ফিরে পেল কিছুটা।

এদিকে বিধাতাও ওদের দিকে মুখ তুলে তাকালেন। কারণ, পরদিনই ডেভিড ওর দলসহ র‍্যাব এর ক্রসফায়ারে মারা যায়। পুনমের জীবন থেকে শেষ হয় এক নারকীয় অধ্যায়। সৌরভের অসীম ভালোবাসা পুনমের এই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। পুনম নতুন উদ্যমে জীবন সাজায়।

নতুন করে ওর জীবনের রাস্তায় নামে। পরের বছর সে এইচ এস সি পরিক্ষায় অংশ নেয়। এবারও পুনম গোল্ডেন এ+ পায়। কঠোর শ্রমে বর্তমানে সে এখন বাংলাদেশের স্বনামধন্য এক মেডিকেলের ছাত্রী। আর পুনমের সফলতার পেছনে টনিক হিসেবে কাজ করেছে সৌরভের অসীম ভালবাসা, অনুপ্রেরণা, আর সাহস।

সৌরভ বর্তমানে নামকরা একটা কোম্পানির এম ডি। সৌরভ ওর বাসায়ও জানিয়েছে পুনমের কথা। দুই পরিবারই রাজি। সম্ভবত খুব শীঘ্রই পুনম আর সৌরভের বিয়ে হবে খুব ধুমধাম করে। আর ছয়মাস পড়েই সৌরভ বাংলাদেশে আসবে।

ওরা কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা যে করে রেখেছে ওদের ভবিষ্যৎকে ঘিরে। ভাবতেই ভালো লাগে। তবে রাখির খোঁজ এখনো জানা যায় নাই। কানাডায় ওরা কেমন আছে কেউ জানে না। পুনম খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করে নাই।

বেশই তো আছে। জানি না, পুনম রাখিকে ক্ষমা করেছে কি না। *** এই ছিল পুনমের জীবনকাহিনী। আপনারা সবাই পুনমের জন্য দোয়া করবেন। অবশ্যই সৌরভের জন্যও।

কারণ ওর মতো ছেলে সমাজে ভীষণ প্রয়োজন। *** ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.