গ্যাংনাম নেচে অফিসের দুই নতুন কর্মচারীকে স্বাগত জানিয়েছেন পুরোনোরা। চমকপ্রদ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে পাশের দেশ ভারতের ট্যালেন্টিকা সফটওয়্যার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইউটিউবে খোঁজ করে চাইলে এই ‘স্বাগত নৃত্যের’ ভিডিওটা একনজর দেখে নিতে পারেন। স্যুট-বুট পরে অফিসের চেয়ারে গ্যাট হয়ে বসে কাজে ডুবে থাকা যাঁদের অভ্যাস, এমন ঘটনা বোধ হয় তাঁদের কাছে রূপকথার মতো!
একটু আয়েশ করে ও হেসেখেলে কাজ করার মতো পরিবেশ আমাদের দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেও আছে। যেখানে ঘড়ি ধরে নয়টা-পাঁচটা ফাইল আর কাগজপত্রে মুখ ডুবিয়ে থাকতে হয় না।
কাজের ফাঁকে একটু চা-বিস্কুট, একটু গল্প ও একটু হাসাহাসি—এসবে কড়া নিষেধাজ্ঞা নেই। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটা বাঁধনহারা জীবন কাটিয়ে অফিসের খোলসে ঢুকে পড়তে অনেক তরুণেরই মন সায় দেয় না। করপোরেট জীবনে মেপে কথা বলা, ধোপদুরস্ত পোশাকে নিজেকে বন্দী করে ফেলা, দিন শেষে কেমন হাঁসফাঁস লাগতে থাকে। চাকরিস্থল নির্বাচনটা তাঁরা একটু ভেবেচিন্তে করতে পারেন।
সাধারণত সৃজনশীলতা নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিজের মতো করে কাজ করার কিছুটা সুযোগ থাকে।
সফটওয়্যার, স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও নাটক বা চলচ্চিত্র নির্মাণপ্রতিষ্ঠান—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের সংস্থায় কাজের পরিবেশ একটু ভিন্ন। কাজের ক্ষেত্রে আপনি ছাড় পাবেন, তা নয়; ফাঁকে ফাঁকে হাসি, আড্ডা, গান হলেও কাজের সময় তাঁরা ষোলো আনা। টুকটাক বিনোদন সেখানে ভাবনার গাড়িটা চালু রাখার ‘ফুয়েল’ মাত্র! আবার অফিসে কাজের ধরনের ওপরও পরিবেশটা অনেকখানি নির্ভর করে। একই প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মচারী হয়তো কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে কাজ করছেন, অন্যজনের এতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা।
বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর কথাই ধরুন।
কপিরাইটার, ভিজুয়ালাইজারদের কাজটাই বেরিয়ে আসে গল্প-আড্ডা থেকে। অন্যদিকে, ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেনদরবারের দায়িত্ব যাঁর কাঁধে, তাঁর সে সুযোগ নেই। কথা হচ্ছিল বিজ্ঞাপনী সংস্থা অগিলভির কপিরাইটার ফারাহ সেরাজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা কাজের সময় কাজ করি, সুযোগ পেলে মজাও করি। অফিসে দুপুরের খাবারের সময়টা যেমন বেশ ভালো কাটে।
অফিসের ভেতর গান শোনা, আড্ডা, গল্পও চলে। অন্য কেউ হয়তো খুব কাজের চাপে আছেন, নিজেরা গল্প করতে গিয়ে আবার তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না। ’ বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর মতো অনেক অফিসেই আজকাল ফাইলপত্রের পাশাপাশি গিটার, হারমোনিয়ামেরও দেখা পাবেন। এগুলো তাদের মনকে চাঙা করার রসদ। ১০ মিনিটের একটা বিরতিতে যদি জম্পেশ কিছু গান হয়ে যায়, ক্ষতি কী?
ডিজিটাল প্রিন্টিংয়ের প্রতিষ্ঠান স্টেট মিডিয়ার তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপক এনামুল হক মনে করেন, মানসিকভাবে চাঙা থাকলেই একজন কর্মচারী অফিসকে তাঁর সেরাটা দিতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করি। অফিসের পরিবেশটাই এ রকম। বসেরও এতে সায় আছে। প্রতিদিন সাত-আট ঘণ্টা কাজ করলেও ক্লান্তি লাগে না। আমার মনে হয়, গল্প-আড্ডায় কাজের স্পৃহা বাড়ে।
কাজ তো অবশ্যই সবার আগে। অফিসে একটা জবাবদিহিও আছে। যদি সময়মতো কাজ শেষ করতে পারি, তাহলে আমি কাজের ফাঁকে একটু বিনোদন খুঁজলে ক্ষতি কি?’
‘অফিসের পরিবেশটা আসলে কাজের ওপর নির্ভর করে। যেভাবে কাজটা আদায় হয়, সেটাই রাখা উচিত। আমাদের অফিসে যেমন দুটার মিশেল।
অত কড়াকড়ি নেই, আবার কাজে ছাড়ও নেই। বাংলাদেশের খেলার সময় আমরা যেমন একটু পর পর স্কোরের খবর নিই, কখনো হয়তো খেলা দেখতে বসেও যাই। আবার পরদিনই কোনো ডেডলাইন থাকলে খেলা দেখাটা বাদ দিই। কারও পরদিন পরীক্ষা থাকলে যেমন খেলা না দেখে পড়ালেখা করেন, ব্যাপারটা অনেকটা তেমন। ’ বলেন অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহ্মুদুল হাসান।
তাঁর প্রতিষ্ঠানে ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে কাজের ক্ষতি হচ্ছে কি না, সেটা বোঝার দায়িত্ব কর্মকর্তাদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি মুহূর্তে কাজের চাপ ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে, গ্রাহকদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করতে হয়, কথাবার্তায় পুরোদস্তুর ‘অফিশিয়াল’ থাকাটা যেখানে কাজেরই অংশ, সেসব প্রতিষ্ঠানে থেকে আয়েশ করে কাজ করার সুযোগ খোঁজাটা বোকামি। নিয়মকানুন আর আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েই সে ক্ষেত্রে কাজে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।