হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় প্রতিদিন বিকেল ঠিক পাঁচটায় রবি বাসা থেকে বের হয়। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা ছুলে বাসার ভিতর তার যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। বাসাটাকে কারাগারের মত মনে হয়। অসম্ভব অস্থির হয়ে ওঠে সে। যেন তার অক্সিজেন নিতে কষ্ট হয়! তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হয় সে।
লক্ষ্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে। মোড়ের দোকানে এসে একটা সিগারেট কেনে। সিগারেটটা জ্বালিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকে। সিগারেটটা জ্বলে যতই ছাই হতে থাকে তার হাঁটার গতিও ততই কমতে থাকে। একসময় সে স্থবির হয়ে দাড়ায়।
একই রকম ভাবে প্রতিদিন। সূর্য আস্তে আস্তে হেলে পড়তে থাকে। রবি ঝিম মেরে বসে থাকে আর ভাবে।
দুই বছর আগের কথা।
বাসা থেকে খুব সেজেগুজে রবি বের হচ্ছে দেখে বোদি বললেন, কি ব্যাপার কই জাচ্ছ? আর তর সয় না, তাই না?
- কি যে বল না বোদি?
আগামী মাসের দশ তারিখ রূপার সাথে তার বিয়ে।
পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ে ঠিক হলেও রূপার সাথে তার জানাশোনা আট বছরের। না ওদের মাঝে প্রেম ছিল না। তবে ভাল বন্ধুত্ত ছিল। আসলে পাশাপাশি বাসা থাকলে যেমনটা হয়। হঠাৎ করে রবির বাবার ইচ্ছেতেই ওদের বিয়েটা ঠিক হয়েছে।
আজ বিকেল পাঁচটায় রূপার সাথে দেখা করার কথা। তারপর শপিং করবে। পূজা দেখেবে। একসাথে ঘুরবে খাবে। বিশাল প্রোগ্রাম ওদের।
- তোমার আসতে এত দেরি হল! আমরা কখন ঘুরব আর কখনইবা শপিং করব?
রবির দেরি দেখে খেপে যায় রূপা।
- আরে একটু দেরিই তো ভাল। রাতেই তো পূজা দেখার মজা!
আজ বিজয়া দশমী। দুর্গা পূজার শেষ দিন। তাই মন্দিরে মণ্ডপে লোকের অভাব নাই।
ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি করে সবাই মণ্ডপের সামনে যাবার চেষ্টা করছে। এত ভিড় দেখে রূপা বলল, থাক ভিতরে যাবার দরকার নাই আমরা এখান থেকে মাকে প্রনাম করে চলে যাই।
- কি যে বল না বিয়ের আগে প্রথম পূজাতে মাকে কাছে না গিয়ে কিভাবে আশীর্বাদ নেই?
অনিচ্ছা সত্তেও ভিড়ের মধ্যে গেল রূপা। রবি সামনে সামনে যেতে থাকে আর তার হাত ধরে পেছন পেছন এগুতে থাকে সে। হঠাৎ সে অনুভব করে কে যেন পেছন দিক দিয়ে তার বুকের উপর হাত দিয়েছে।
সারা শরীরে যেন বিদু্ৎ খেলে যায় তার। ঘুরেই হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দেয় বদমাশটার গালে।
- যা হারামজাদা তোর মায়ের গায়ে হাত দে!
রাগে কাঁপতে থাকে রূপা! রবি শার্টের কলার ধরে বখাটেটাকে ঘুষি মারতে থাকে। এরই মাঝে পুলিশ চলে আসে। আর এক মুহূর্তও ওরা ওখানে দাঁড়ায় না।
মায়ের আশীর্বাদ নিতে গিয়ে অসূরের অপচ্ছায়া দেখে বেশ বিমর্ষ হয়ে পড়ে দুজনে। কিন্তু ওরা জানে না যে অসূরের অপচ্ছায়া তখনও ওদের পিছু ছাড়েনি।
রিকশাতে কারোর মুখে কোন কথা নাই। দুজনেই একদম চুপ। জড়তা ভাঙল রবি, সরি।
তুমি ভিতরে যেতে চাওনি আমার জন্যই। সরি।
- বাদ দাও। চল আজকে আর ভাল লাগছে না। আমাকে বাসায় দিয়ে আস।
রিকশা এগিয়ে যেতে থাকে। আস্তে আস্তে মন্দিরের ঢাকের শব্দ হাল্কা হয়ে আসতে থাকে। কানে ভেসে আসে, ইয়া দেবি সর্বভুতেশূ নমঃতশ।
আকাশে মেঘ করেছে। একটু পর পর বিদুৎ চমকাচ্ছে।
বাতাসের তিব্রতাও কম নয়। হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বাতাস বৃষ্টি মিলে রিকশার গতি যেন অর্ধেক হয়ে গেল। রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। রিকশাটা রূপাদের বাসার গলির মুখে পৌছতেই একটা মাইক্রোবাস এসে ওদের পথ আটকাল।
কয়েকটা ছেলে এসে রূপাকে টেনে হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিল। ওদের বাধা দিতে যেয়ে মাথায় শক্ত কিছুর বারি খেল রবি। বিজলির আলোয় একটা পাংশু মুখ বলে, ‘মর শালা!’ আরে এ তো সেই বখাটে! তারপর রবির আর কিছু মনে নাই।
তারপর রূপাকে খুঁজে পাওয়া যায় নাই।
হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রবির প্রতিটা বিকেল এভাবেই কাটে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।