আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
রনির পিতা ফরিদপুরের সদরপুর এলাকার মো. সামসুদ্দিন মুন্সি জীবীকার সন্ধানে ১৯৭৪ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রতনদী-তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বন্দরে আসেন। উলানিয়াসহ গলাচিপা-দশমিনার বিভিন্ন হাটে গামছা এবং লুঙ্গি ফেরি করে বিক্রি করতেন তিনি। রতনদী-তালতলী ইউনিয়নের তত্কালীন চেয়ারম্যান মো. লাল মিয়া হাওলাদার সামসুদ্দিন মুন্সিকে পরিবার নিয়ে থাকার জন্য উলানিয়া বন্দরে এক টুকরো খাস জমিতে ঘর তোলার অনুমতি দেন। এরপর থেকে তিনি সপরিবারে সেখানেই বসবাস করেন।
সামসুদ্দিন মুন্সির সাত ছেলের মধ্যে সবার বড় গেলাম মাওলা রনি।
গোলাম মাওলা রনি ১৯৮৬ সালে উলানিয়া হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তার ভাষ্যমতে পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি বিয়ে করেন তার সহপাঠী গলাচিপার পূর্বপাড়ডাকুয়া গ্রামের মো. ফজলে আলী খানের মেয়ে কামরুন নাহার রুনুকে। তাদের এ বিয়ে কামরুন নাহারের পরিবার তখন মেনে না নেওয়ায় স্ত্রীসহ ১৯৮৮ সাল থেকে গোলাম মাওলা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ওই সময় জীবীকা নির্বাহ করার জন্য তারা দুজনেই বিভিন্ন বাসায় গৃহ শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন।
গোলাম মাওলার দাবি, তিনি জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক সংগ্রাম করেছেন। একটি চাকরির জন্য বিভিন্ন যায়গায় ধরনা দিয়েছেন। তিনি এও দাবি করেন এক সময় তিনি দৈনিক খবর, আজকের কাগজ এবং ভোরের কাগজে কাজ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজকের কাগজে গোলাম মাওলা কন্ট্রিবিউটর হিসাবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন।
গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা টিটো জানান, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে একজন কর্মী হিসাবে ঢাকায় অবস্থিত সেবোল্ট গ্রুপে তিনি কাজ শুরু করেন। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হিসাবে পদোন্নতি হয় তার। কয়েক বছর যেতে না যেতেই প্রতিষ্ঠানটির মালিক বনে যান গোলাম মাওলা রনি। কীভাবে তিনি প্রতিষ্ঠানটির মালিক হলেন সে প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। এরই মধ্যে এলাকায় বেশ ফলাও করে প্রচারিত হতে থাকে রনির রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠার গল্প।
তিনি আরো জানান, গোলাম মাওলা রনি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরের দিন থেকেই দলীয় শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তা বলতে শুরু করেন তিনি। এতে স্থানীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়তেই থাকে। এরই মধ্যে বখাটে কিছু লোকজন নিয়ে একটি পেটোয়া বাহিনী গড়ে তোলেন রনি। এ বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন তার শ্যালক বর্তমানে ডাকুয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো. মকবুল খাঁন।
গোলাম মোস্তফা জানান, মকুবুলের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই বাহিনী এলাকায় 'ভাইয়া বাহিনী' নামে পরিচিত। মকবুল খানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় পোড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ভাইয়া বাহিনীর হাতে শারীরীক নির্যাতনের শিকার হন উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সহসভাপতি ও পৌরসভার মেয়র আ. ওহাব খলিফা, মো. দুলাল চৌধুরী, আ.লীগের উপদেষ্টা কালাম মো. ইসাসহ শতাধিক নেতাকর্মী। দশমিনা উপজেলা যুবলীগের শাখাওয়াত হোসেনও রনির ভাইয়া বাহিনীর হাতে আওয়ামী লীগ কর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় গোলাম মাওলা গলাচিপার আড়তপট্টি এলাকায় রামনাবাদ নদীর তীরের প্রায় সাড়ে আট একর জমি দখল ও ভরাট করে বিপনী বিতান নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
অভিযোগ আছে, টিআর এর অর্থ এবং তার ব্যক্তিগত অর্থে এ জায়গা ভরাট করা হচ্ছিল। এ ঘটনায় ২০০৯ সালের ২১ আগস্ট 'গলাচিপায় নদী ভরাট করে চলছে মার্কেট নির্মাণ' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এমপি রনি তার লোকজন দিয়ে প্রথম আলোর গলাচিপা প্রতিনিধির বিরুদ্ধে পরপর চারটি সাজানো মামলা করেন। ২০০৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো করা হয়। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর একদল সাংবাদিক ঐ মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য গলাচিপা আসলে রনির ক্যাডাররা তাদের ওপর হামলা করে।
সুত্র
আবার সরকারি জমি এক বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করে দোতলা পাকা বাড়ি করেছেন পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। এরপর সেই বন্দোবস্ত আর নবায়নও করেননি। অবৈধভাবে দখলে রাখা ওই জমির ওপর তৈরি বাড়িতে বসবাস করছে তাঁর পরিবার। বিস্তারিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।