আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলাসবহুল গাড়ি কেনার মহোত্সব : ভিআইপি প্রটোকলের নামে কেনা হচ্ছে ৩০ কোটি টাকার পাজেরো জিপ

নাজমুল ইসলাম মকবুল বিলাসবহুল গাড়ি কেনার মহোত্সব : ভিআইপি প্রটোকলের নামে কেনা হচ্ছে ৩০ কোটি টাকার পাজেরো জিপ কাদের গনি চৌধুরী সরকারি টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কেনার মহোত্সব চলছে। মন্ত্রীদের, উপদেষ্টা, সচিব-যুগ্ম সচিব, উপজেলা চেয়ারম্যান, ডিসি, এসপি, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য গাড়ি কিনতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ গাড়ি কেনা থেকে প্রচুর কমিশন পাচ্ছেন সরকারের প্রভাবশালীরা। সরকারি যানবাহন অধিদফতর ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানদের জন্য ৪৭১টি পাজেরো জিপ, মন্ত্রীদের জন্য ৫০টি প্রাইভেট কার, বিভাগীয় কমিশনারদের জন্য ১০টি পাজেরো জিপ, জেলা প্রশাসনের প্রটোকলের জন্য ৬৪টি জিপ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের জন্য ৭৬টি জিপ, জেলা প্রশাসনের জন্য ৬৪টি মাইক্রোবাস, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারদের জন্য ১৪টি জিপ কেনা হয়েছে। এর অধিকাংশ ডেলিভারি নেয়া হলেও কিছু গাড়ি এখনও সরকারের হস্তগত হয়নি।

প্রজেক্টের গাড়িসহ এসব গাড়ি কিনতে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। মন্ত্রী ও প্রাধিকারপ্রাপ্তদের জন্য ২৫টি কার, জেলা প্রশাসনের জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকার ৮৫টি কার, ১৩৪টি জিপ, ৯১টি পিকআপ ও ৬৪টি মাইক্রোবাস ক্রয় প্রক্রিয়াধীন আছে। এসব হিসাব কেবল সরকারি পরিবহন অধিদফতরও স্থানীয় সরকার বিভাগের। এছাড়াও গাড়ি কেনা বাবদ বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং এলজিইডি। সরকারি পরিবহনপুল সূত্র জানিয়েছে, জেলা পর্যায়ে সফরকারী ভিআইপিদের প্রটোকল দেয়ার নামে প্রতিটি জেলার জন্য একটি করে প্রটোকল জিপ কেনা হচ্ছে।

বিলাসবহুল এসব গাড়ি কেনার জন্য সরকারের ব্যয় হচ্ছে ২৯ কোটি ৬১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। পরিবহন কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রটোকল জিপের সবগুলো এখনও ডেলিভারি পাওয়া যায়নি। তবে ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে। এছাড়াও এসব গাড়ি এসি করার জন্য ৪০ হাজার, রেজিস্ট্রেশন বাবদ ৮০ হাজার এবং সিএনজিতে রূপান্তর করার জন্য ৬৬ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। এ গাড়ি চালানোর জন্য ৬৪ জন ড্রাইভার নিয়োগ দিতে হচ্ছে।

গাড়িপ্রতি মাসিক ২০০ লিটার করে জ্বালানি তেলও সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া নবগঠিত রংপুরসহ সাত বিভাগীয় কমিশনারের জন্য আরও ১০টি গাড়ি কেনা হয়েছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিনিয়োগের চেয়ে গাড়ি কেনাকে অগ্রাধিকার দেয়ায় প্রশাসনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, প্রটোকলের কাজে ব্যবহারের জন্য সরকার প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে গাড়িগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নেয় দেড় বছর আগে। তখন একটি মিতসুবিশি পাজেরো জিপের দাম ছিল ৪২ লাখ টাকা।

৬৪টি গাড়ির জন্য ২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় এই গাড়ির দাম বেড়ে গেছে। পরে সরকারি যানবাহন অধিদফতরের পরিবহন কমিশনারকে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, জাপানি মুদ্রা ইয়েনের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় পুরনো দামে তাদের পক্ষে গাড়ি সরবরাহ করা সম্ভব না। প্রতিটি দাম বেড়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। এ অবস্থায় পরিবহন কমিশনার জেলা প্রশাসনের প্রটোকলের গাড়ির জন্য দুই কোটি ৮৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান।

বিভাগীয় কমিশনারদের প্রতিটি গাড়ির দাম ৪৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা দরে ১০টি গাড়ির জন্য চার কোটি ৬৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কয়েক মাসে বিভাগীয় কমিশনারদের ১০টি গাড়ির দামও বেড়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এদিকে সরকারি যানবাহন অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের ব্যবহারের জন্য আরও ৭৬টি গাড়ি কেনা হচ্ছে। এই গাড়িগুলোর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এসব গাড়িও প্রগতির মাধ্যমে কেনা হবে।

জেলা প্রশাসনের জন্য ৬৪টি মাইক্রোবাস কেনা হয়েছে ১৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যানদের জন্য এ পর্যন্ত ৪৭১টি পাজেরো জিপ কেনা হয়েছে। আরো ১০টি কেনা হবে। এ ৪৭১টি জিপ কিনতে সরকারের খরচ হয়েছে একশ’ ঊনসত্তর কোটি টাকা। প্রথম দফায় যে জীপগুলো কেনা হয়েছে সেগুলোর দাম পড়েছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে।

দ্বিতীয় দফায় কিনতে হয় ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামে। শেষ লটে ২১১টি পাজেরো জিপ কিনতে হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা করে। জিপ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৮০ হাজার টাকা, সিএনজিতে রূপান্তরের জন্য ৬৬ হাজার ৯৪৮ টাকা এবং সিঙ্গেল এসি সংযোজনে ৪০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দেশের ৪৮১টি উপজেলার মধ্যে ৪৭১টিতে পাজেরো জিপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা, অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন; সুনামগঞ্জের তাহেরপুর ও শাল্লা; রাঙামাটির বরকল, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর ও জুড়াছড়ি এবং নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি—এই ১০ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের জন্য নৌযান (স্পিডবোট) নাকি জিপ কিনবে তা নিয়ে সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় আছে।

সূত্র জানায়, স্পিকার আবদুল হামিদের অনুরোধে ১০টি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের জন্য নৌযানের পাশাপাশি ১০টি জিপ দেয়ার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ওই ১০টি উপজেলায় বর্ষাকালে নৌযান ব্যবহার করা সম্ভব হলেও শুকনো মৌসুমে তা ব্যবহার করা যায় না। তাই শুকনো মৌসুমের জন্য গাড়ির প্রয়োজন হয়। সে বিষয়টির প্রতি লক্ষ রেখেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব দেয়। বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি।

বরাদ্দ নেই তবু মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি : বাজেটে বরাদ্দ না থাকলেও মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের জন্য গাড়ি কিনতে চায় সরকার। কিন্তু এতে বাদ সেধেছে অর্থ বিভাগ। গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা জানতে চেয়ে অর্থ বিভাগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে প্রতিটি গাড়ি কিনতে সরকারি বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ৮৭ শতাংশ বেশি অর্থ চাওয়ার কারণও জানতে চাওয়া হয়েছে। অর্থবছরের শেষদিকে হঠাত্ করে গাড়ি কেনার আগ্রহের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না অর্থ বিভাগ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রী ও সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০টি কার কেনা হয়। এগুলোর বেশ কয়েকটি অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার তাগিদও রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় এনে সরকার গাড়ি কেনার চিন্তাভাবনা করছে। তবে সরকারি গাড়ি ব্যবহারে বিলাসী মনোভাবও রয়েছে এসব ভিভিআইপির কারও কারও।

অভিযোগ রয়েছে, বিলাসীরা প্রাধিকারে পাওয়া গাড়ি ব্যবহারের চেয়ে প্রকল্পের বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। আর ক্ষমতা খাটিয়ে সরকারি গাড়ি কোনো কোনো মন্ত্রী ও উপদেষ্টার পিএস এবং এপিএসরা ব্যবহার করছেন। কয়েকটি সংসদীয় কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ক্ষমতা খাটিয়ে সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি পরিবহনপুল সূত্র জানায়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের জন্য ২৫টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে সংশ্লিষ্টদের জন্য প্রতিটি গাড়ি কিনতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ২৪ লাখ টাকা।

কিন্তু প্রস্তাবে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪৫ লাখ টাকা করার জন্য বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্তমানে ২৪ লাখ টাকায় নতুন ভালো গাড়ি কেনা সম্ভব নয়। গাড়ি ক্রয়ে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত : এদিকে সচিবসহ জনপ্রশাসনে কর্মরত তিনস্তরের ৭৭০ কর্মকর্তাকে গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১৬ লাখ টাকা অগ্রিম ঋণ দেয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণলায়ের একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনে কর্মরত সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিপর্যায়ে গাড়ি ক্রয়ে সরকার সুদমুক্ত অগ্রিম ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাশাপাশি গাড়ি ক্রয়ের তারিখ হতে গাড়িসেবা নগদায়ন হিসেবে মাসে ৩০ হাজার টাকা হারে ভাতাও পাবেন। গাড়ি ক্রয়, রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ট্যাক্স-টোকেন, চালকের বেতন, জ্বালানি ইত্যাদি ব্যয় নির্বাহের জন্য এককালীন সুদমুক্ত অগ্রিম হিসেবে সর্বোচ্চ এই ঋণ দেয়া হচ্ছে। তবে এসব টাকা ওই কর্মকর্তার মাসিক বেতন বিলের সঙ্গে উত্তোলন করবেন। এ হিসেবে বর্তমান প্রাধিকারপ্রাপ্ত ৭৭০ জন কর্মকর্তা গাড়ি ক্রয় ও নগদায়ন সেবা নিলে সরকারের প্রায় ২৯ কোটি ২০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন অধিশাখা প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা, ২০১১ এর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফরমে গাড়িসেবা নগদায়নের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। তবে যদি কোনো কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণ বা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে না পারেন তবে তিনি কারণ ও তদসমর্থনে কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষ অনতিবিলম্বে আবেদন করতে পারবেন। কমপক্ষে এক বছর চাকরি অবশিষ্ট না থাকলে এ ঋণ পাওয়া যাবে না। অগ্রিম নেয়ার পর কোনো অবস্থাতেই পরিবহনপুল থেকে গাড়ি পাওয়া যাবে না। কর্মকর্তারা তাদের চাকরিজীবনে একবার এই সুবিধা পাবেন।

তাদের গাড়ির অগ্নি, চুরি ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতির জন্য ফার্স্ট পার্টি ইনস্যুরেন্স করতে হবে। যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের পিআরএল শুরু হলে ভাতা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে সচিবরা পিআরএল চলাকালেও মাসিক ভাতা পাবেন। নির্ধারিত সময়ে কোনো কিস্তি বকেয়া পড়লে তা কর্মকর্তার পেনশন গ্র্যাচুইটিসহ নানাবিধ পাওনা থেকে কেটে রাখা হবে। ঋণ শতভাগ পরিশোধের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গাড়ির মালিক হবেন।

সেক্ষত্রে পরিবহন পুলে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ অপচয় রোধ হবে। তবে পরিবহন অধিদফতর ‘দ্য মিনিস্টার্স, মিনিস্টার্স অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টার্স (রিম্যুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ নির্ধারিত ব্যক্তিদের গাড়ি সরবরাহ করবে। এছাড়াও যেসব প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাড়ি কেনার জন্য ঋণ নেবেন না, তাদের গাড়ি সরবরাহ করবে পুল। বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদেরও গাড়ি সরবরাহ করবে। এর ফলে পরিবহন পুল সরকারি গাড়ির সুষ্ঠু ব্যবহার যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে পারবে।

সূত্র জানায়, নীতিমালা জারির সময় পরিবহনপুল হতে গাড়ির সুবিধা ভোগকারী প্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা গাড়ি সেবা নগদায়নে ইচ্ছুক হলে, এ নীতিমালা জারির তারিখ হতে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে পারবেন। সুবিধা গ্রহণকারী কর্মকর্তাকে গাড়ি ক্রয়ের তারিখ হতে অনধিক ৩০ দিনের মধ্যে তদকর্তৃক ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি কেন্দ্রীয় পরিবহন পুলে জমা দিতে হবে। নীতিমালা জারির পর, প্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনও কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় পরিবহন পুল হতে গাড়ি সুবিধা গ্রহণের পর কমপক্ষে ২ বছর পূর্ণ না হলে তিনি এ নীতিমালার অধীন গাড়ি সুবিধা নগদায়নের আবেদন করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় পরিবহন পুল সূত্রে জানা যায়, প্রতি মাসে একটি সিএনজিচালিত গাড়িতে সরকারের কোষাগার থেকে ৬১ হাজার ৫৯৩ টাকা ব্যয় হয়। এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয়, অপচয়, রক্ষণাবেক্ষণ, চালকের বেতন ও সব ধরনের ভাতা রয়েছে।

পেট্রোল বা অকটেনচালিত গাড়ি জন্য আরও ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গাড়ি সেবা বাবদ ৩০ হাজার টাকা পেলে ৩১ হাজার টাকার বেশি সাশ্রয় হবে। সেই হিসেবে বর্তমানে সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব সমপর্যায়ের ৭৭০ জন কর্মকর্তা গাড়ি ক্রয় ও নগদায়ন সেবা নিলে সরকারের প্রায় ২৯ কোটি ২০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। জ্বালানি ব্যয় ১৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা : স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পরিবহনপুল সূত্রে জানা যায়, সরকারি যানবাহনের জ্বালানি বাবদ বছরে মোট ১৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ২০০৯-১০ অর্থ-বছরে সরকারি সড়ক পরিবহন (কেন্দ্রীয় পরিবহন পুল ও জেলা পুলসহ) খাতে ১৯ কোটি ২৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, সরকারি নৌ-পরিবহন (জেলা পুলসহ) খাতে ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, সরকারি যানবাহন মেরামত কারখানা (পেট্রোল ও গ্যাস) খাতে ১৭ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

নতুন করে আরো গাড়ি কেনা এবং জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছর যানবাহনের জ্বালানি খরচ আরো বাড়বে। সূত্র জানায়, জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়িতে মাসিক ২শ’ লিটার পেট্রোল/ডিজেল এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ১৮০ লিটার তেল দেয়া হচ্ছে। সিএনজিচালিত গাড়িতে মাসিক ৩০ লিটার পেট্রোলের (স্টার্ট আপ হিসেবে) স্থলে ২৭ লিটার এবং ৩শ ঘনমিটার গ্যাসের স্থলে ২৭০ ঘন মিটার গ্যাস ব্যবহারের সরকারি নির্দেশনা আছে। ২০০৯-১০ অর্থ-বছরে সরকারি যানবাহন অধিদফতরে ১৭০টি সরকারি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। নতুন গাড়ি ক্রয়ের সময় বর্তমানে সকল গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তরসহ ক্রয়ের কার্যক্রম বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।

এদিকে জাতীয় সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে আগের মতো নিজেদের পছন্দমতো গাড়ি আমদানির সুুযোগ দেয়া হয়নি । সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির জন্য বিদ্যমান আইনের আওতায় একটি গাইডলাইন তৈরির করে দেয়া হয়েছে। নতুন গাইডলাইনে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, হ্যামার, পোরশের মতো উঁচু দামের গাড়ি আমদানি নিরুত্সাহিত করা হয়েছে। সম্প্রতি সচিবালয় কার্যালয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী-সচিবরা সরকারি গাড়ির সুবিধা ভোগ করছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যানদেরও গাড়ি দেয়া হবে। তাহলে সংসদ সদস্যরা এ সুবিধা কেন পাবেন না। তারা শুধু সংসদ সদস্যই নন, তারা এক্সিকিউটিভদেরও ওয়াচডগ। কাজেই তাদের গাড়ি পাওয়ার ব্যাপারে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগটি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায়।

আমরা সংসদে তা অনুমোদন দিইনি। কাজেই আগের আইনেই সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারবেন। চারদলীয় জোট সরকারের সময় অনেক সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগে অনেক দামি দামি গাড়ি আমদানি করে তা নিজেরা ব্যবহার না করে দেশের প্রভাবশালী বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। যে কারণে ওই সময় চারদলীয় জোট সরকার বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যরা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। আর এ নিয়ে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বেশ ক’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাও হয়।

অনেকেই শুল্কমুক্ত করা এসব দামি গাড়ি লুকিয়ে ফেলেন। আবার কেউ কেউ রাস্তায় ফেলে রাখেন। একপর্যায়ে সরকার সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাতিল করলেও মহাজোট সরকার সে অধ্যাদেশের বৈধতা দেয়নি। ফলে ওই আইনেই সংসদ সদস্যরা আবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ পাচ্ছেন। সুত্র: আমার দেশ Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.