ভারতে নির্বাচন সামনে রেখে সম্প্রতি পরিচালিত দুটি জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।
সেন্টার ফর দি স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ পরিচালিত সিএনএন আইবিএন-দি হিন্দু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বলেছেন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইউপিএ জোট সরকারের মেয়াদে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে। তার এর সঙ্গে দ্বিমত পোষাণ করেছেন ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা।
অন্তত স্নাতক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন এমন ভোটরদের ৪৯ শতাংশই মনমোহন সিং নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এই জরিপে। আর ২৮ শতাংশ বলেছেন, এই সময়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের খুব একটা অগ্রগতি হয়েছে বলে তারা মনে করেন না।
কোন দেশের প্রতি ভারত সবচেয়ে বেশি আস্থা রাখতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতাই বাংলাদেশের নাম বলেছেন।
আস্থার দিক দিয়ে ভারতীয়দের কাছে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া। এ দেশটির কথা বলেছেন ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা।
এদিকে অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট এবং ল ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি পারিচালিত আরেক জরিপের ৫৪ শতাংশই উত্তরদাতা মনে করেন, পাকিস্তানকে ভারতের বিশ্বাস করাই উচিৎ নয়। তবে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ভারতের জন্য পাকিস্তান খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি পর্যায়ে দেশটির ওপর আস্থাও রাখা যায়।
এমন একটি সময়ে এই জরিপের ফল এলো যখন বিজেপিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অভিবাসনের অভিযোগ তুলে নির্বাচনী মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। বিগত সরকারগুলোর সময়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও জঙ্গিবাদী হামলার চেষ্টার অভিযোগও করা হচ্ছে।
এমনকি প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং অসম গণ পরিষদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের মতো কয়েকটি আঞ্চলিক দল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনেরও বিরোধিতা করে আসছে।
এরপরও বাংলাদেশের বিষয়ে জরিপে ভারতীয়দের মতামতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এক সময় ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জি দ্য হিন্দুকে বলেন, “গত পাঁচ বছরে নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ আমাদের উদ্বেগে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, যদিও আগের আমলে সমস্যা সৃষ্টিকারীদের উস্কানি দেয়া হয়েছিল। মূলত এই পাঁচ বছরের পরিস্থিতিরই প্রতিফলন ঘটেছে জরিপে।
”
দেব মুখার্জি বলেন, জনগণের মনোভাব সব সময় ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে না। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ ও নিকট অতীতের ঘটনাই তাদের প্রতিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
“আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে কিছু অপরাধরোধও কাজ করেছে। বাংলাদেশ ভারতের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার বিপরীতে তিস্তার পানি বণ্টন ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে প্রতিশ্রুতি ভারত এখনো পূরণ করতে পারেনি। ”
তাছাড়া দারিদ্র্য বিমোচনসহ সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরের অভাবনীয় সাফল্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির যে উন্নতি হয়েছে, ভারতীয় ভোটারদের জরিপের ফলাফলে তারও স্বীকৃতি এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘অ্যান আনসার্টন গ্লোরি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশনস’ বইয়ে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও তার সহকর্মী জ্যঁ দ্রজে লিখেছেন, বাংলাদেশের মানোবোন্নয়ন সূচক দেখে ভারতের অনেক কিছুই শেখার আছে।
আর ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব (পূর্ব) রাজীব সিক্রি সাম্প্রতিক এক সম্মেলনে প্রকাশ্যেই বাংলাদেশকে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।