আমার নানার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থানায়। গ্রামটির নাম দিলালপুর। গতমাসের শেষের দিকে দিনদুয়েকের জন্য সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার নিজ মামা-খালাদের কেউই সেখানে থাকেন না। বয়সী নানী যিনি মূলত মামাদের সাথে রাংগামাটি থাকেন বছরে নিজ নিয়মে ২ বার বাড়ীঘর দেখাশুনার বাহানা করে দিন ১৫-এর জন্য সেখানে যান।
তো এবার যখন আসলেন, তার কিছুদিন পরই একটু অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন। খবর পেয়ে নানীকে দেখতে গেলাম। এর আগে আমার খুব প্রিয় নানা বাড়ি দিলালপুর-এ গিয়েছিলাম প্রায় ৩ বৎসর আগে। এখানে বলে রাখি, আরো অনেকের মত আমার ও শৈশবের প্রথম কয়েকটি বছর এখানে থাকা হয়েছিল। এবারের ভ্রমণে, আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য একটি চমৎকার আইডিয়া পেয়ে গেলাম।
ওই এলাকায় এমন কিছু মজার স্থানীয় শব্দ এখনো প্রচলিত আছে, যেগুলো জেনে যারা কখনো গ্রামে ছিলেন, তারা যেমন স্মৃতিকাতর হবেন (যেমনটা শব্দগুলো শুনে আমার বেলায় হয়েছিল) ঠিক তেমনি যাদের কাছে শব্দগুলো নতুন তারাও অনেক মজা পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।
কারো কারো কাছে কিছু শব্দ স্থূল বা অশালীন মনে হতে পারে। যাদের কাছে এমনটি মনে হবে আগেই তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
ব¯তুত, শব্দগুলোর পরিচিতি ও সংরক্ষণের লক্ষ্যে এখনকার এ প্রয়াস।
আরেকটি কথা বলে নেয়া ভাল, ওখানে বেড়াতে গিয়ে সবগুলো শব্দের মুখোমুখি হয়েছি তা নয়।
লেখার উদ্দেশ্যে কিছু শব্দ অনেক চিন্তা করে খুজে পেয়েছি, আরো কিছু শব্দ পরিচিত দুয়েকজনের (তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি) সাথে আলাপ করে বের করেছি।
আপনাদের ভাল লাগলে, লেখাটি আপডেট করার ইচ্ছে আছে। সেক্ষেত্রে, কেউ ঐ এলাকার কোন শব্দ যোগ করার বা অন্য কোন পরামর্শ দিলে ভাল লাগবে।
১. অইল্দা-হলুদ রং।
২. আড়া-ঝোপ-জঙ্গল।
৩. আড়ং-ছোট আকারের দৈনন্দিন বাজার।
৪. আক্কল- বুদ্ধি।
৫. আন্দার- অন্ধকার।
৬. আইল-বাঁধ।
৭. আজাইরা- অপ্রয়োজনীয়।
৮. আমের বইল- আমের মুকুল।
৯. উষ্টা খাওয়া-হাটার সময় কোন কিছুর সাথে পা বেধে পড়ে যাওয়া।
১০. উষ্টা দেওয়া- লাথি দেওয়া।
১১. ওম- উষ্ণতা।
১২. ওম- তা দেয়া।
১৩. কল- চাপকল-টিউবওয়েল।
১৪. কদমা- একপ্রকার ছোট মিষ্টান্ন ।
১৫. কডা- লবণাক্ততা।
১৬. কুফি- বাতি।
১৭. কুইরা-অলস।
১৮. কাইল্লারা মাছ-কালবাউস মাছ।
১৯. কাছিম-কচ্ছপ।
২০. কুজারা-দুষ্টলোক।
২১. কোশ-দুইহাতের তালু একত্রে করে যে আকৃতি করা হয়।
২২. খোডা- লাঠি।
২৩. খোডা- গৃহপালিত পশু বেধে রাখার ছোট্ট লাঠি।
২৪. গাইল- চাল পক্রিয়াজাতকরণের যন্ত্রবিশেষ।
২৫. গাতা- গর্ত।
২৬. গাং-নদী।
২৭. গাট্টি-বোচকা- সবকিছু সহকারে।
২৮. চকম-মই।
২৯. চানচুরা-চড়–ই পাখি।
৩০. চোকা- টক।
৩১. ছক- ঘৃণা করা।
৩২. জিয়ল মাছ- কৈ জাতীয় মাছ পানিসহকারে পাত্রে বাচিয়ে রাখা হয়।
৩৩. জিআইয়া রাখা- বাচিয়ে রাখা।
৩৪. টোডা- ফল ইত্যাদি পাড়ার লাঠিবিশেষ।
৩৫. ধলা- সাদা/ফর্সা।
৩৬. হুলা-পাঠখড়ি।
৩৭. পেক- কাদামাটি।
৩৮. পেটকা- মোটা/ভুড়িসর্বস্ব মানুষ।
৩৯. পিছা- ঝাড়–।
৪০. পাপ্পোয়া-পেঁপে।
৪১. বগা-বক।
৪২. বদা- ডিম।
৪৩. বাস-গন্ধ।
৪৪. বুরিন্দা-একপ্রকার ছোট মিষ্টান্ন।
৪৫. বাইগুন- বেগুন।
৪৬. বালা তেল- সরিষার তেল।
৪৭. বিলাতী বাইগুন-টমেটু।
৪৮. বিলাতী দুধ- গুড়ো দুধ।
৪৯. হরা-সরা-পাত্রের ঢাকনা।
৫০. রসা-ঝোল।
৫১. মউ-ঝোল।
৫২. ততা-গরম/উষ্ণ।
৫৩. জার-শীত।
৫৪. ডবনারী-পেরেক।
৫৫. বেফতার-বোকা।
৫৬. বেক্কল-বোকা।
৫৭. হাঙ্গা- বিয়ে।
৫৮. ফোঢা- সজীবতা নষ্ট হয়েছে এমন।
৫৯. ঢেগা-কচি।
৬০. লাইন করা- প্রেম করা।
এ পর্যায়ে ব্লগার http://www.somewhereinblog.net/blog/fairuj একটি শব্দ সংযোজন করেছেন। সেটি হল হল:
৬১. গয়াম-পেয়ারা।
(ধন্যবাদ ফাইরুজ)
ব্লগার রাজীব ভাই আরো কিছু শব্দ সংযোজন করেছেন। যেগুলো নিচে দেয়া হল:
৬২. লট্টো মাইরা বসা- আরাম করে বসা
৬৩. উডা- সিড়ি
৬৪. হাইন্জালা - সঁন্ধ্যা
৬৫. বোগলে আয়- কাছে আস
৬৬. বাইত- বাড়ীতে
৬৭. হাবান- সাবান
৬৮. ওমতা - গরম
৬৯. হালুক- শাঁলুক
৭০. টেটনা- চালাক
৭১. বান্ডি-ম্যাচ বা দিয়াশলাই
(ধন্যবাদ রাজীব ভাই)
এবং ব্লগার http://www.somewhereinblog.net/blog/smnnijhum আরো কিছু শব্দ সংযোজন করেছেন। যেগুলো নিচে দেয়া হল:
৭২. কাডা- কাটা
৭৩. খাজুর- খেজুর
৭৪. খুম- রক্ত
৭৫. আত- হাত
৭৬. বাত- ভাত
৭৭. কিতা- কি
৭৮. খতো- কাথা
৭৯. ইশকল- স্কুল
৮০. দুয়ার- দরজা
৮১. সগিল- শকিল
৮২. হরকা- লক
৮৩. ডেংগা- বাশঝাড়
(ধন্যবাদ মেঘবন্ধু)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।