আমি পেশায় একজন সাংবাদিক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখালেখির শুরু। আমার লেখার উপজীব্য সামাজিক অসঙ্গতি।
মহান স্বাধীনতর স্বপ্নদ্রষ্টা, সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষক, এফ্রো-এশিয়ার মহান মজলুম জননেতা মাও. আব্দুল হামিদ খাঁন ভাষাণী, স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এখনও সমানতালে উপেক্ষিত। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দান থেকে শুরু করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন এই মহান নেতা।
ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের বজ্রকন্ঠি ভাষণ, পল্টন ময়দানে যিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হয়ে বলেছিলেন, ’’দেশবাসী তোমরা মুজিবকে ভুল বুঝ না। ’’ শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী যেকোন রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় দুর্যোগেও এগিয়ে গেছেন এই মানুষটি। কেউ সঙ্গে আছে কি নেই, তা নিয়ে মোটেও চিন্তিত ছিলেন না এই অকুতোভয় বয়োবৃদ্ধ মজলুম জননেতা। দেশ স্বাধীনের আজ ৪০ বছর হলো। মাওলানা নেই।
কিন্তু তাঁকে কী দিয়েছি আমরা? এখনও বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখতে হয় আলেমা ভাষাণীর চিকিৎসায় সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা....ব্যাংক। ভাষাণীর পরিবার এখন কেমন আছেন? আরও কতো কী।
সাধারণ নিপীড়িত, নির্যাতিত, লাঞ্ছিত মানুষের চোখে এসকল লেখা পড়লেও, দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা। আজ যারাই স্বাধীনতার পর থেকে দেশ পরিচালনা করছেন, কে নয় মাওলানার শীষ্য। জাতির জনক থেকে শুরু করে যারা এখন রাষ্ট্রের কর্ণধার এদের তো প্রায় সবারই রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু ও অভিভাবক এই মজলুমনেতা।
দেশে অনেক সরকার এসেছে। চলেও যাচ্ছে। কিন্তু ভাষাণীর খবর কে রাখে? তার পরিবার বর্তমানে কীভাবে দিন কাটাচ্ছে কেউ কি তাঁর খবর রাখে? অথচ মাওলানাকে সেদিন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ’’সব তো রাষ্ট্রকে দিলেন, ওদের দেখবে কে?’’
উত্তরে মাওলানা বলেছিলেন রাষ্ট্র দেখবে।
জাতি আজ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন-
আমরা কী দেখছি? অবাক হতে হয়েছিল ফখরুদ্দীনের কাণ্ড দেখে। তিনি বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে জিয়ার মাজারে গেলেন তাদের জন্ম ও মৃত্যু দিবসে।
জানালেন রাষ্ট্রীয় সম্মান। কিন্তু যার এই সম্মান সর্বাগ্রে প্রাপ্য, সেই মাওলানার মাজার টাঙ্গাইল সন্তোষে তিনি একবারও যাননি। শুধু ফখরুদ্দিন কেন মাওলানার ইন্তেকালের পর কেউ কি গেছেন রাষ্ট্রীয় এই অবিসংবাদিত নেতার মাজারে? গেছেন কি খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা? গেলেও বেড়াতে গিয়ে মোনাজাত করেছেন। মাওলানার যেদিন জন্ম বা ওফাত দিবস আসে, তখন জাতি কাঁদে। কাঁদে তাঁর অগণিত ভক্ত মুরিদানগণ।
কিন্তু বিষয় যাই হোক মাওলানা মজলুম জননেতা। গরিব, মেহনতী খেটে খাওয়া মানুষের নেতা। যে নেতার একটি হুংকারে আইয়ুব, ইয়াহিয়াসহ ইংরেজের সিংহাসন কেঁপে উঠতো, সেই নেতার প্রতি আজ উদাসীনতা দেখে অবাক লাগে। তাঁর পরিবারের খবর কেউ নেয়না। এখবর এখনও পড়তে হয় খবরের কাগজে।
মাওলানার প্রতি এভাবেই যদি উদাসীনতা চলতেই থাকে তাহলে বঙ্গবন্ধুরস্বপ্নবাস্তবায়ন সম্ভব নয় কিংবা জিয়ার নতুন বাংলাদেশ গড়াও সম্ভব নয়।
তাই এই দেশের ২ নেত্রীর নিকট বিনম্র নিবেদন, মাওলানাকে অবহেলা করবেন না। এখনও সময় আছে, টুঙ্গিপাড়ায় অবশ্যই যাবেন, কিন্তু সন্তোষকে বাদ দিয়ে নয়। সোরওয়ার্দি উদ্যানে অবশ্যই যাবেন, কিন্তু টাঙ্গাইলকে উপেক্ষা করে নয়। সামনের ভাষাণীর জন্ম ও ওফাত দিবসে জাতি দেখতে চায় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় সম্মান ভাষাণীর মাজারে।
তাঁর জন্ম জয়ন্তী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হোক রাষ্ট্রীয়ভাবে। অনেকের অনেক মত থাকতে পারে। কিন্তু মাওলানা ভাষাণী ইতিহাসের কিংবদন্তি। কিংবা কিংবদন্তির ইতিহাস। তিনি অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে দল মতের উর্দ্ধে।
বিভিন্ন সরকারের সময় বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয় নেতাদেরকে পাঠ্য পুস্তকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অবশ্যই এটি একটি ভাল দিক। কিন্তু মাওলানা ভাষাণীকে পাঠ্য পুস্তকে কেন যেন উপেক্ষা করা হয়। মাওলানার স্বপ্ন ছিল জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এখনও সেটা সম্ভব এবং তা মাওলানা ভাষাণীকে মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে।
অপেক্ষায় থাকলাম বাংলাদেশের অগণিত ভক্ত ও দেশপ্রেমিক জনতার সাথে, যেদিন দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে বাংলাদেশের পুরা মন্ত্রী পরিষদ ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানগণ যাবেন সন্তোষে। জানাবেন মহান নেতার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান।
লেখকঃ বার্তা সম্পাদক, দৈনিক উত্তরবাংলা, মালদহপট্টি, দিনাজপুর।
মোবাইল ঃ ০১৭১৮৮৮০১৭৮।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।