আমার খুব কাছের এক বন্ধু,সে হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী। একবুক হতাশা নিয়ে সে আজ আমায় বলল, “আর ভালো লাগেনা,দেশের যে কি অবস্থা শুরু হয়েছে-কদিন বাদে বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে”।
আমি বললাম, কেন হঠাৎ এই কথা ?
কি দেখনা?দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দুদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে,অনেকে তো ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া চলে গেছে। আমি তাকে বললাম, “আচ্ছা তোমাদের বাড়িঘর ঠিক আছে তো? বাবা-মা,আত্মীয়-স্বজন”। সে জবাব দিল, হ্যাঁ।
আমাদের বাড়ির এক কিলোমিটার জায়গার ভেতর এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নাই,তারপরও লোকজন রাত জেগে পাহারা দেয়।
আমি তাকে বলার চেষ্টা করলাম “আসলে একটি বিশেষ মহল-যারা কিনা দেশের ভালো চায়না-তারাই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি নষ্ট করার জন্য জামায়াত-শিবির তথা ইসলামী দলগুলোর এর উপর দোষ চাপানোর নিমিত্তে পরিকল্পিত ভাবে এই হীন কাজ করে যাচ্ছে"। ।
আমি কিছু বলব হঠাৎ আমার সেই হিন্দু বন্ধুটি বলতে লাগলো,যতদিন এক জামায়াত নেতা বেঁচে ছিল,ততদিন আমাদের এই এলাকায় হিন্দুদের উপর কোন আক্রমন হয় নাই,উনি তো এখন বেঁচে নেই তাই আমরা একটু চিন্তায় আছি। বাবার কাছে শুনেছি ১৯৭১ সালে ঐ জামায়াত নেতাই জীবন বাজি রেখে আমাদের আগলে রেখেছিলেন।
আমি বললাম কি বলছো জামায়াত নেতা?? যাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে কিনা এই অভিযোগ... বন্ধুটি বলল,হ্যা তিনি তার নিজের জীবন বাজি রেখে আমাদের রক্ষা করেছিলেন বাপ- দাদার কাছ থেকে তো এই কথায় শুনে আসলাম।
সত্যি বলতে কি একজন হিন্দু বন্ধুর কাছ থেকে কোন জামায়াত নেতার এধরনের আত্মত্যাগের বর্ণনা শুনে আমি সত্যি আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। জামায়াত-শিবির এর আদর্শিক রাজনীতির উপর আমার ব্যাক্তিগত বিশ্বাসের জন্য নয় বরং একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষুত ভূখণ্ডে অমুসলিমরা প্রত্যেকটি মুসলিম নাগরিকের কাছ থেকে প্রত্যাশা করতেই পারতো এমন ধরণের আচরণ। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাই,একটি নির্দিষ্ট আদর্শিক দলের দুতিয়ালি করতে হচ্ছে-তার একটাই কারন বাংলাদেশের একটি বিশেষ মহল এই নির্দিষ্ট আদর্শিক দলকে এই অপবাদে সবচেয়ে বেশি দায়ী করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা দাবি করছে,জামায়াতে ইসলামী তথা ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলসমূহ বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে চায়।
তারা ইসলামের নামে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ।
বাংলাদেশের পাশে বিশাল হিন্দু রাষ্ট্র “ভারত”। ভারতকে ক্ষেপিয়ে তুলে এরা কার স্বার্থ উদ্ধার করতে চায় আমি জানিনা। হিন্দু ভাইয়েরা তোমরা আমাদের ক্ষমা করো,সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতি হিসেবে সত্যিই আমরা আজ লজ্জিত,আমরা তোমাদের অধিকার আদায় করতে পারছিনা।
নষ্ট রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে তোমরা আজ লাঞ্ছিত হচ্ছো। তবে বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দল দুটিকে আমি খুব বেশি দোষ দেবনা,দোষ দেব আমি-ঐ জামায়াতে ইসলামি সহ অন্যান্য ইসলামী দলসমূহকেই। ইসলামের সৌন্দর্য বাস্তবায়ন করার রাজনীতি যারা করে,তারা আসলে পারেনি তোমাদের কাছে ইসলামের বাস্তব কল্যাণধর্মী আচরণ তুলে ধরতে। তোমাদের কাছে তাই এই বাংলার সকল মুসলিম ভাইবোনের পক্ষ থেকে একটি অনুরোধ। তোমরাও আমাদের পাশে এসে দাড়াও,সত্যকে এই জগতের সামনে তুলে ধর।
হাজার বছরের মায়া-মমতায় ভরা এই অসাম্প্রদায়িক জনপদকে রক্ষা কর। শুধু জামায়াতে ইসলামীর ঐ একজন নেতা কেন, কোন সত্যিকার মুসলিম নাগরিক তোমাদের বিন্দুমাত্র অধিকার হরণ করবে না এই কথায় বিশ্বাস রাখ। আজ যারা তোমাদের গায়ে আগুন দেয়,বাড়িতে আগুন দেয় এদেরকে যে ঐ ইসলাম ধর্মও মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে তুমি হয়ত জাননা। তোমাদেরকে যারা ঐ আতঙ্কের গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে কান ভারি করে দিয়েছে তাদের কানে কানে তোমরা এই সত্যকে তুলে ধর। গত ৪৩ বছরে হয়ত ঐ একজন মুসলিমকে তোমরা দেখেছ তোমাদের পাশে এসে দাঁড়াতে কিন্তু আজ চেয়ে দেখ লক্ষ মুসলিম তোমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
তোমরা আমাদের বিশ্বাসটুকু কর। তোমরা তোমাদের ভারতের হিন্দু ভাইদেরও এই সত্য তুলে ধর। আমাদের সাথে সুর মিলিয়ে চিৎকার করে বল, “সত্যিকার মুসলিম পারেনা কক্ষনো অন্যায় করতে,আজ যারা আমাদের সাথে অন্যায় করছে তারা আসলে দেশের শত্রু,ধর্মের শত্রু। আর তাই এসো,ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি সেই নষ্টদের বিরুদ্ধে। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।