আমি ভালবাসি আমার আল্লাহকে, প্রিয় রাসুল এবং আমার দেশকে। খোলামেলা কথা পছন্দ করি। অল্পতে কষ্ট পেয়ে বসি, আবার অল্পতেই ভুলে যাই সব দুখঃ। তবে কারো উপকার-অবদান ভুলতে পারিনা জীবনভর। পছন্দ করি উদার, স্বচ্ছ ও খোলামনের মানুষকে, ঘৃণা করি গোঁড়া ও অহংকারীকে।
গত হওয়া পরশু ছিল মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুদিবস। এ উপলক্ষে দেশের কোথাও হৈচৈ তো থাক, কোন টু-শব্দও শোনা যায়নি। মিডিয়াগুলোর ভাব ছিল যেন তাকে তারা চেনেই না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও বঙ্গদেশের জালিম জমিদার এবং সৈরাচারী পাকিস্তানী সরকার বিরোধী আন্দোলনের নির্ভিক সিপাহসালার ছিলেন তিনি। যে মানুষটি আজীবন নিপিড়িত এবং মেহনতি মানুষের অধিকার, স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য লড়াই-সংগ্রামে কখনো পিছু হটেননি; বরং এই সকল লড়াই-সংগ্রামের জন্য জেল, জুলুম, হুলিয়াসহ নানা নির্যাতনের শিকার হন-তাকেই এদেশের মানুষ এত সহজে ভুলে গেল? একারণেই হয়তো তিনি মজলুম! বাংলার ইতিহাসে নানা প্রেক্ষাপটে নানাজন ক্ষনিকের জন্য জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও আজীবন জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে অধিষ্ঠিত থেকেছেন একমাত্র মাওলানাই।
আমাদের ইতিহাসে দেশ ও মানুষের জন্য যে যতটুকু অবদান রেখেছেন, তাদের সবাই একসময় ক্ষমতার মসনদে আরোহন করে কড়ায় গন্ডায় বরং তারচে বহুগুনে উসুল করে নিয়েছেন। আর কিছু না হলেও মন্ত্রীত্ব প্রধানমন্ত্রীত্ব কিংবা প্রেসিডেন্টগিরির স্বাদ আস্বাদন করে মোজ করেছেন সবাই। এমনকি বংশানুক্রমিকভাবে সেই জৌলুস ধরে রেখেছেন। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধুই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী।
জাতীয় রাজনীতিতে এই মহানায়কের কোন গুরুত্ব না থাকার অনেক কারণ থাকতে পারে এবং আছে।
কিন্তু সাধারণ মানুষও তাকে এস সহজেই ভুলে গেল?
যে দেশে হাইব্রিড ও সেজে বসা নেতা-নেত্রীর আগমনে তোরণ নির্মান করে ব্যয় করা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা, সেদেশ তার তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব প্রিতষ্ঠা করা নির্লোভ ও নির্মোহ একজন ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর পরও তাকে সম্মান দেখাতে পারেনি? সত্যিই এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!
মাওলানা ভাসানীর এই অহবেলার পিছনে অনেক কারণের মধ্যে প্রধান হলো-
১/তিনি রাজনৈতিক ও পারিবারিক কোন তোষক তৈরি করে যান নি। রাজনৈতি চামচারা নিজের হালুয়া রুটির সুবিধা আদায়ের জন্য জনতার কাছে বিন্দু নেতাদেরকেও সিন্ধু আর তেঁতুলের বিচিতুল্যদেরও তাল বানিয়ে দেখায়। মাওলানা ভাসানীর মতো মানুষেরা তাই এই প্রতারণার সমাজে অবহেলিত।
২/গভীর জ্ঞানের কোন আলেম এবং সঠিক ইসলামী চেতনায় চৈতন্য ততটা না হলেও ভাসানী ছিলেন একজন গতানুগতিক ধর্মপালনকারী এবং লেবাসে পোষাকে একজন চরম ধার্মিক। তিনি জীবনের শুরুতে ''খেলাফত আন্দোলন'' ও মাঝে ''খোদায়ী খেদমতগার'' নামে (আজকের সমাজের চোখে সাম্প্রদায়িক) সংগঠন গড়েছিলেন এবং জীবনের শেষ বয়সে এসে ''হুকুমাতে রাব্বানিয়া'' গঠন করেন।
আজকের নাস্তিক্যের জয়জয়কার ও ইয়াহুদী এজেন্টদের দৌরাত্বের এই যুগে তাই তিনি পর্দার অন্তরালে।
৩/বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি রাজনীতি শিখিয়েছিলেন হাতে কলমে। তিনিই তার রাজনৈতিক গুরু। কিন্তু আজকের মুজিব অনুসারী বা তার পরিবার যদি মাওলানাকে গুরুত্ব দেয়, তবে নিজেদের খেলটা অনেক নিছে নেমে আসবে, সে কারণেই হয়তো অবজ্ঞা।
৪/সংবাদ মাধ্যমগুলোর আসলরূপ এদেশের মানুষ এখনো জানে না।
তাদের কাছে আদর্শ বলতে একটাই। আর সেটা হলো, যে যখন ক্ষমতায় থাকে, যেদিকে যখন হাওয়া বইতে থাকে, সেদিকে ছাতা ধরে একনিষ্ঠ সেবকে ভুমিকা পালন করে জনগনকে আবেগের বাগবাকুম বাগবাকুমে বুদ করে ফেলা। সেজন্যই ভাসানীর মতো লেকেরা তাদের কাভারেজ পায় না।
ইসলামী ঘরাণার লোকেরা তাকে নিয়ে মাতামাতি না করার পিছনে অনেক কারণই পেশ করতে পারেন। কিন্তু যারা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের খৈ ফুটায় মুখে, তাদের কাছে তো মাওলানা ভাসানী একজন প্রবাদপুরুষ হওয়ার কথা, কিন্তি রাজনৈতিক ফায়দা বলে কথা।
আদর্শ টাদর্শ আজকের রাজনৈতিক জুয়াড়ী ও মিডিয়া ব্যবসায়ী অর্থলিপ্সু দালালদের কাছে একটি বানিজ্যিক বুলি মাত্র। একথাটি আবারো প্রাণিত। কিন্তু এদেশের বোকা জনগণের চোখো সেটা কতখানি ধরা পড়বে, তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।