নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!! CSR (Corporate Social Responsibility) নামক ১টি 'গালভরা' শব্দ ইদানীং বাংলাদেশের আধা-সভ্য সমাজে চালু হয়েছে। দেশী, যৌথ বা বিদেশী বড় ব্যবসায়িক প্রতিস্ঠান বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে কুড়িগ্রামের কোন এক পাড়ায় শীতার্ত মানুষদের হাজারখানেক কম্বল দিচ্ছে। পরদিন সবকটি দৈনিক পত্রিকায় সে প্রতিস্টানের কর্তা ব্যক্তি, তার কর্মী ও হতভাগ্য শীতার্তের গ্রুপ ছবি। এ ধরনের খবর, ছবি, বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তি টিভি ও পত্রিকায় এখন নিয়মিত আইটেম। (তলার খবর হল: তুচ্ছ এসব দান খয়রাতের চেয়ে এসব কর্ম 'প্রচার' করাই প্রতিস্টানগুলির কর্তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য।
এবং তা যেন ভালভাবে হাইলাইট হয় তজ্জন্য কনসার্ন স্টাফরা ব্যাপক দৌড়ের উপর থাকেন মিডিয়া ম্যানেজে!)
প্রচারের জন্য 'মোক্ষম' ও 'ব্যতিক্রম' সিএসআর উপাদান বের করা প্রথমসারির কোম্পানিগুলোর রিলেটেড স্টাফদের অন্যতম কাজ। তাই তালু কাটা রোগী, শিক্ষাবৃত্তি, গাছের চারা, সেলাই মেশিন, গাভী বিতরন, নৌ-হাসপাতাল, কম্বল, মিঠাপানি সরবরাহ নানান ব্যতিক্রমধর্মী প্রোগ্রাম এ তালিকায় দেখা যাচ্ছে। গ্রামীনফোন, এক্সিয়াটা, লিভার, বিএটেবি, ডাচবাংলা ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিস্টান সিএসআর কাজে মোটামুটি নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে অবস্থান নিয়েছে। তবে কমবেশী সকল ব্যাংক, আর্থিক প্রতিস্টান, বড় কোম্পানি কিছু না কিছু খয়রাতি কাজ করে।
দু:খ থাকত না যদি এসব প্রতিস্টান সবার আগে তাদের ঘরের বাসিন্দান্দের দিকে নজর দিত।
এসব অফিসের সদর দরজায় ২৪ ঘন্টা যে লোকগুলো দাড়িয়ে থাকে তারা থার্ড পার্টি ডেপ্লয়েড সিক্যুরিটি। মাসে বেতন ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা (স্বাস্থ্য ও চেহারা ভেদে); অফিসে সবার আগে আসে ক্লিনার- সে ও থার্ড পার্টি। বেতন ৪-৫ হাজার। যায় সবার পরে। পিয়নও বেশীরভাগ থার্ড পার্টি।
বেতন ৪-৬ হাজার। এদের মানব জীবন মোদ্দাকথায় নিম্নরূপ:
যা বেতন পায় তা অতিতুচ্ছ
পেট ভরে ভাত খেতে পায়না
অস্বাস্থ্যকর বস্তির মেসে রাতে ঘুমায়
প্রস্রাব পায়খানা করার কোন স্থান নেই
কেউ তাদের ভালো সম্বোধন করেনা
কারণে-অকারণে গালিগালাজ খেতে হয়
অসুখ হলে চিকিৎসা পায়না
২/১ দিন অনুপস্থিত থাকলে চাকরি নট
পেনশন, গ্র্যাচুইটি, পিএফ, ইন্সুরেন্স কিছুই নাই
তাদের আসল এমপ্লয়ার 'থার্ড পার্টি' তাদের কোন খবর নেয়না
কর্মরত কোম্পানি ২৫ তারিখ পেমেন্ট করে দিলেও তারা ৭/৮ এমনকি ১০ তারিখে বেতন পায়
কস্ট কাটিং এর রব উঠলে এরাই প্রথম হতভাগ্য হয়
তাদের জীবনে আছে শুধুই অতীত- নেই কোন বর্তমান বা ভবিষ্যৎ।
অথচ- তাদের কর্মস্থল কতইনা ঢাকঢোল পিটিয়ে সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি পালন করছে। হায়রে বাংলাদেশ!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।