সত্য বল সুপথে চল, ওরে আমার মন ...
লিমন। একটা নাম। বেশ কিছুদিন ধরেই খবর পাতার বহরে নামটা বেশ লেখালিখি হচ্ছে। কিন্তু কেন? কারণ লিমন নামের ছেলেটি রাষ্ট্রায়ত্ব উর্দিধারী সন্ত্রাসী বাহিনী র্যাবের হাতে নির্যাতিত হয়েছে। তবে হ্যা, লিমনই যে প্রথম ব্যাক্তি তা কিন্তু নয়।
লিমনের মতো আরো অনেক লিমন ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ (র্যাবের প্রতিষ্ঠা তারিখ) হতে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নির্যাতিত হয়ে আসছে। তেমনি একটি দৃশ্যপটের নায়ক হলো আমাদের লিমন। এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল সে। ছিল চোখে অনেক স্বপ্ন। গরীব ঘরের সন্তান তবু স্বপ্নপথের যাত্রী হবার স্বপ্ন তার চোখ থেকে সড়েনি একটুও।
বরংচ একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিল তার কাঙ্খিত স্বপ্নের কাছাকাছি। ঠিক সেই সময়েই আসলো তার জীবনে নিদারুন আঘাত। কালো পোশাকধারী র্যাব তার পায়ে গুলি করে কেড়ে নিলো একটি পা। তার বদলে রাষ্ট্র তাকে উপহার দিলো একজোড়া ক্রাচ। রাষ্ট্রই যে আমাদের স্বপ্ন পূরনের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তার জলজলে প্রমান লিমনের ঘটনা।
রাষ্ট্র এখানে নিজেই হন্তারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।
কি অপরাধ ছিলো তার? হ্যা তার অপরাধ ছিলো। তার অপরাধ ছিলো সে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়েছিলো। আর তখনই সেই পথ ধরে ব্যার্থ মিশন শেষ করে যাচ্ছিল র্যাব বাহিনী। আর তাই তাদের ব্যার্থতার দায় মেটাতে দাম দিতে হয় লিমনকে।
মিথ্যে আসামী করে লিমনকে গুলি করে তারা। শুধু মাত্র গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। উপরন্তু নিজেদের দোষ ঢাকতে গিয়ে অস্ত্র মামলা দায়ের করে লিমনের বিরুদ্ধে। হ্যা, কোর্ট তাকে মুক্তি দিয়েছে আইনের হাত থেকে। কিন্তু কোর্ট কি পারবে তার পা ফিরিয়ে দিতে? আইনের হাত থেকে মুক্তি পেয়েই লিমন যে কথাটা সবার প্রথম বললো তা হলো ‘’ আমার দুটি পা ছিলো।
র্যাব আমার একটা পা কেড়ে নিল। আমি সরকারের কাছে আমার হারানো পা ফেরত চাই ‘’। এ যে কতো বড় আহাজারি তা যার জীবনে না হয়েছে সে ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা।
১১ মে কালের কন্ঠে দেখলাম, আমাদের মাননীয় কালো(মনে তিনি কলুষিত) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘’ ক্রসফায়ার বলে কিছু নেই ‘’। অথচ তারাই ক্ষমতায় যাবার আগে মিছিল মিটিং থেকে শুরু করে অনেকগুলো সেমিনার করেছিলেন ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে।
তাদের ডিজিটাল দাবি ছিলো বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড কমিয়ে আনা। অথচ আমরা কি দেখতে পাই। এই সরকার আসার পর থেকে একের পর এক গুম হত্যাকান্ড, রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের গুম করে ফেলা যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সাহারা খাতুন ঢাকার যে অঞ্চল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই এলাকাতেই পিংক সিটি নামে এক দুর্বৃত্তায়নের আখড়া সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সেটা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যাথা নেই।
কেন নেই?
আজকাল আরেকটা ফ্যাশান শুরু হয়েছে। সেটা হলো ফুটবল খেলার বল পাস করার মতো। ও একে বল পাস করে, আবার ও আরেকজনকে বল পাস করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একদিকে বলছেন ক্রসফায়ার বলে কিছু নেই, আবার আরেকদিকে বলছেন ‘’ এমন ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে দেখা হবে ‘’। আজব, ইচ্ছে হয় কালো মন্ত্রীকে ধরে জিজ্ঞেস করি, লিমন যে পা হারালো তাও কি আপনার কাছে মিথ্যে নাকি ওটাও তদন্ত করে দেখতে হবে, আদৌ লিমন পা হারিয়েছে কিনা।
র্যাব মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেছেন, ‘’কোথায় বসে কে কী মন্তব্য করলো, বক্তব্য দিল; তাতে কিছুই আসে যায়না। ‘’ অথচ যে রিপোর্টর প্রেক্ষিতে তিনি এমন উদ্ধত বক্তব্য দিলেন। সেই রিপোর্টটি স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনাসামনি পেশ করা হয়েছে। তাহলে কি দাড়ালো, র্যাব নিজেই নিজের সরকার। তার কাউকে তোয়াক্কা করার দরকার নেই।
এমন নগ্ন দৃর্বৃত্তায়ন চলে আসছে অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশে। র্যাব নামক সেনা কর্পোরেশনকে আজই বন্ধ করে দেয়া উচিত। নয়তো দেখা যাবে আমি এই লেখা লেখার দায়ে কোনো এক বিলে বা মাঠের কিনারে মরে পড়ে থাকবো। আর আমি মরার পরে বিভিন্ন থানায় আমার গজিয়ে উঠবে নানা কেস। হ্যা, এটা হতেই পারে।
বাংলাদেশ এখন সব সম্ভবের দেশ। তাই এখনই সাধু সাবধান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।