র্যাবকে খুনিবাহিনী আখ্যা দিয়ে এটাকে ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
গতকাল ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এ দাবি জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান অবস্থার উন্নতি না হলে আগামী ৬ মাসের মধ্যে র্যাব ভেঙে দিতে হবে। বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। র্যাবের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে বলে মনে হয় না। র্যাব এখন অপরাধ সংঘটনে ভাড়া খাটছে।
তিনি বলেন, র্যাবের পদস্থ কর্মকর্তারা সরকারকে কোনো পাত্তাই দেয় না।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান উপস্থিত থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ পর্যন্ত আসেননি। সংবাদ সম্মেলন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি আসবেন না বলে জানান। ব্র্যাড অ্যাডামস সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এ কাজে সরকার সমর্থন দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর র্যাবের বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে ২ বছরের বেশি সময় পেয়েছে। একটি খুনিবাহিনী বাংলাদেশের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অথচ সরকার তাদের থামাতে কোনো ধরনের চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত আগামী ৬ মাসের মধ্যে র্যাবের দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়া এবং সংস্কার সাধন করা অথবা এ বাহিনী ভেঙে দেয়া। দাতাদেশগুলোর উচিত র্যাবকে দেয়া সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রত্যাহার করে নেয়া। তিনি আরও বলেন, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র র্যাবকে আর কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ দেবে না।
তাদের কাছে এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে তাদের প্রশিক্ষণ র্যাবের কর্মকাণ্ডে কোনো প্রকার প্রভাব ফেলছে না। মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে র্যাবকে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তা কোনো কাজে আসেনি। তাই এ বাহিনী ভেঙে দেয়া উচিত।
অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কতটা আস্থাশীল এমন এক প্রশ্নের জবাবে ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, আমরা কোনো আস্থা রাখতে পারছি না। লিমনের ঘটনার পর আমরা আর কীভাবে আস্থা রাখতে পারি।
বিরোধী দলে থাকার সময় আওয়ামী লীগ বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর এখন তাদের অনেকে এর পক্ষে সাফাই গাইছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি জাতিসংঘে বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত কেউ পার পাবে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজনকেও বিচারের আওতায় আনা তো দূরের কথা কোনো প্রকার পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত ২০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে র্যাব।
র্যাবের এই বেপরোয়া মনোভাবের কথা তুলে ধরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, র্যাবের কর্মকর্তারা সরকারকে কোনো পাত্তাই দেয় না। র্যাবের ডিজির চেয়ে তার অধীনস্থ কর্মকর্তারা বেশি ক্ষমতাধর। কারণ তারা সেনাবাহিনী থেকে এসেছে। র্যাবের অধিকাংশ কর্মকর্তা সেনাবাহিনী থেকে এসেছে বলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে চায় না বলে মনে হয়।
তিনি বলেন, র্যাব গঠনের প্রথমদিকে তাদের প্রতি এখানকার সাধারণ মানুষের সমর্থন ছিল। এখন আর নেই। র্যাব আজ একটি বেআইনি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গুম করার মতো জঘন্য অপরাধের সঙ্গে র্যাব এখন যুক্ত। বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনে র্যাবকে এখন টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্র্যাড অ্যাডামস এ অভিযোগের সত্যতা আছে বলে মন্তব্য করে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে একজন পদস্থ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, র্যাব এখন ভাড়া খাটছে। বিভিন্ন পক্ষ এখন র্যাবকে ভাড়া করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বাপ্পীর ভগ্নিপতি মঞ্জুরুল কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাপ্পীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছে র্যাব। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত করেছে। কিন্তু সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে দিচ্ছে না র্যাব।
যে র্যাব নিরীহ মানুষ হত্যা করে সেই র্যাব থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের চেয়ে র্যাব বেশি শক্তিশালী বলেই মনে হয়। বিচার বিভাগও আজ ধ্বংসের পথে। র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করেন না আদালত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।