shamseerbd@yahoo.com
নিজের পছন্দের একটা তারিখে বিয়ে করব সে উপায় নেই। সব দিক চিন্তা করে যে তারিখটা ঠিক করলাম ঐদিন সুবিধামত কোন কমিউনিটি সেন্টার খালি নেই !!!! শেষমেষ পছন্দমত একটা কমিউনিটি সেন্টার জানাল তাদের ক্যালেন্ডারে দুইটা দিন ফাঁকা আছে।
এমনই দিনকাল !!! আফসোস , কিছু করার নেই, তাদের রুটিন ফলো করা ছাড়া। তারা জানাল তাদের হাতে ফাঁকা যে দুটি দিন আছে তা হল ২৫শে মার্চ শুক্রবার আর ২৬শে মার্চ শনিবার।
আমার হবু শ্বাশুড়ি জানালেন তিনি শুক্রবারে করতে আগ্রহী।
আমার মা ও তাতে নাকি সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন। ঘোষনা দিলাম আমি ঐদিন বিয়ে করতে রাজি না। প্রতি বছর ম্যারিজ ডের দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে " আজ সেই ভয়াল কালো রাত " পেপারের এই হেডিং দেখতে আমি রাজি না। প্রস্তাব দিলাম ঠিক আছে তাহলে ২৬শে মার্চ শনিবারে হউক। এই বার আপত্তি জানালেন আমার মা- শনিবারে তিনি ছেলে বিয়ে করাতে ইচ্ছুক না।
শেষ পর্যন্ত আমাকেই সমাধান বের করতে হল। জানালাম ,ঠিক আছে ২৪শে মার্চ বৃহঃস্পতিবারে বিয়ে করে ফেলব, মানে আকদ হয়ে যাবে, আর ২৫শে মার্চ অনুস্ঠান হবে !!!!!
বিয়ে ব্যাপারটা আসলে কঠিন কিছু না আসল কঠিন ব্যাপারটা হচ্ছে শপিং, যেখানে আমার কাজ ছিল মানিব্যাগ থেকে কার্ড বের করে দেয়া আর একটা সিগনেচার দেয়া। একটা জিনিস শিখলাম- শাড়ি পছন্দ হইছে মানেই এই না যে ঐটা তৎক্ষনাৎ কিনে ফেলা হবে। এইটা আসলে আপাত বিবেচনায় রাখা হল, পরবর্তী পছন্দগুলোর সাথে তুলনা করে তারপর ফাইনাল ডিসিশান নেয়া হবে এবং সেটা অবশ্যই একদিনে না !!!! আর কোন কারনে যদি আমি বলি যে এত ঘোরার কি আছে তখন এমন একটা রিপ্লাই দেয়া হবে যে আসলে আর কিছু বলার থাকনো। "বিয়েত তুমি জীবনে একবারই করবা, তাইনা- সো দেখে শুনে তারপর কিনব" - মজার ব্যাপার হচ্ছে সময়ে সময়ে এই একই কথা শুনতে হল বউ , মা আর বোনের কাছ থেকে- কি সুন্দর অটো সিনক্রোনাইজেশন।
তারা নিজের জিনিসতো নিজের পছন্দেই কিনবে - এইটা কোন ইস্যু না , মূল পেচকিটা হচ্ছে আমার কিছু কিনার সময়ও তারা তাদের টেকনিক ফলো করতে চায় অর্থ্যাৎ শেরওয়ানি আমার পছন্দ হলেও সেটা তৎক্ষনাৎ কিনা হলনা কারন আরোও দেখা হবে, যদি !!!!!!
ঢাকা শহরের সব শাড়ির দোকানদার মনে হয় এখন আমারে দেখলেই চিনবে, অবলা একটা পুরুষ নির্লিপ্ত ভাবে দোকানে বসে আছে, তারপাশে মা, ভাবী, হবু বউ একের পর এক শাড়ি দেখে যাচ্ছে। ঘুরে ফিরে শেষে ঐ শাড়িই কেনা হল যেটা প্রথমেই দেখা হয়েছিল, যেটা হল সেটা হচ্ছে এর মাঝে শহরের সব মার্কেট ঘোরা হয়ে গেল- দিন শেষে এই নিয়ে একটু ক্ষেদোক্তি করতে গেলে শুনতে হল সেই পুরোনো কথা- বিয়েত তুমি একবারই করবা !!!! আরে আমিত ভাবি পরবর্তী দিনের কথা- আগামীতে যেসব শাড়ি কিনা হবে তার জন্যও কি !!!!
এর মাঝে একদিন বসুন্ধরা সিটিতে দেখা হয়ে গেল আমার শ্বাশুড়ির সাথে । কিছুক্ষন কথা বার্তার পর হঠাৎ করে তিনি ফতোয়া দিয়ে বসলেন আমার পরনে যে জিন্সটা আছে সেটা সহ আরো যেগুলো এটার মতন সেসব আর পরা যাবেনা। এমন রং চটা , তলা ছিড়া, শেষ কবে ধোঁয়া হয়েছে বোঝা না যাওয়া এসব কাপড় আর পরা যাবেনা !!!! বিয়ের পরে বউ একদিন জানালো আমার কাপড় চোপড় নাকি ওয়াশিং মেশিনেও দুইবার করে ধুইতে হইছে । দোষটা আমার না এটা কোন মতেই বোঝানো গেলনা, আগেও বুয়া ধুইছে , এখনও- ব্যাপারটা হচ্ছে আগে টেক কেয়ার করার কেউ ছিলনা এই কথা তারে কেমনে বোঝায় !!!! পোলারতো সবই ছিল ৯৯% ওকে খালি ঐ ১% - বউ ছিলনাতো তাই !!!
যাই হউক দিন যে কেমনে কেমনে কেটে যায় বোঝা টাফ ।
হঠাৎ করে দেখি অরিন্দম কহিল বিষাদে- তুমি আর ব্যাচেলর নাইরে। কাজি সাহেব যখন নানা কথা বলিয়া যাইতেছেন তখন সামনে বসে আমার দুই দোস্ত বিরতীহীন ভাবে হাসিয়া প্রতিশোধ নিতেছে। এইবারই প্রথম আমি এমন আসনে, তার আগ পর্যন্ত যে আমি এমন করিয়া হাসিয়া গেছি, আফসোস আজকে ধরা খাইয়া গেলাম। ওদের হাসি দেখে আমারও হাসি পাইতেছে, কোন মতেই কন্ট্রোল করতে পারতেছিনা। এক বড় ভাই আর ভাবী এসে বললেন , তুমি একটু কম হাসো, আর কেউ কি কখনো বিয়ে করে নাই নাকি, এত হাসি কেন।
আমার কাছে ব্যাপারটা নরমাল মনে হইলে আমি কি করতে পারি
সিগনেচার করার সময় নাকি সবারই কেমন কেমন লাগে। পাশ থেকে এক বন্ধু কয়- কি দোস্ত টেনশন। আমি আবার নির্লজ্জের মতন সব মুরুব্বীদের সামনেই রিপ্লাই দিয়া বসলাম , নারে দোস্ত আমার কোন টেনশন লাগতেছেনা, বলেই সাইন করে ফেললাম- আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম
পোলাপানের বিয়াতে যত খোছাখুচি করছি- সব কিছুর শোধ দিতে হইল , কত কথা সব কি আর বলা যায়
দুই ঘন্টার একটা অনুস্ঠান এর জন্য যদি সাজতে চার ঘন্টা লাগে তবে কেমন লাগে। ব্লগার পারভীন আপু মেসেজ পাঠালেন পারসোনায় যাইয়া সেজে আসতে। মনে মনে ভাবলাম একদিনের জন্য চেহারা সুন্দর কইরা আর কি হইব,তার চেয়ে পাড়ার সেলুনে যাইয়া সেভ করে আসি।
আমি সময় বাঁচাইলেও বোনদেরকে এই সব কে বোঝাবে। হাজারো তাড়া দেয়াতেও তাদের নড়নচড়ন নাই। এরমাঝে একজন ঘোষনা দিল বিয়ের আগে ছেলেকে কাঁচা হলুদ দিয়ে গোসল করাতে হয়।
কাঁচা হলুদের অবর্তমানে ছোটখালা উপটান নামক এক জিনিস নিয়ে আসলেন আর বাসার সবাই মিলে চলল পরম আনন্দে সে জিনিস আমার গায়ে মাখা- বসে বসে দেখলাম , সহ্য করা ছাড়া যে উপায় নেই।
বিয়ে আমার।
তাই যেন তাড়াও আমার, কাওরেই দেখতেছিনা রেডী হইতে, সবাই খালি ঘোরাঘুরি করে । অবশেষে একসময় বিয়েটা করেই ফেললাম , তারপর সবাই মিলে চলল হলুদ দিয়ে ঘষামাজা !!!!
বিয়ের দিনত এমন গেল, অনুস্ঠানের দিনও একই, এই দিনও যেন তাড়া খালি আমার । অবশ্য আমারই হবার কথা, আমি সেই সব হতভাগাদের একজন যার কিনা বিয়ে করে আসার পর প্রথম রাত কাটল এক বন্ধু সহ, অনুস্ঠান যেহেতু হয় নাই, তাই আমার বউ ও আমার কাছে নাই !!!!
বিয়ের পর এক বড় ভাই দুঃখ করে বললেন , ভাইরে আর বলিসনা, বিয়ে আর বউ ভাতের দিন মনে হইছে, জামাই এর চেয়ে বউ এর কাছে পার্লারে সাজাটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। জামাই আসল কি আসলনা, কি পরল কি পরলনা কোন ব্যাপারইনা , পার্লারই সব। ঘটনা আসলেই সত্য
পার্লারের গুস্ঠী কিলানো ছাড়া পুরুষদের আর কিছু করার নাইরে ভাই।
কি না কি দিয়া চুল বাইন্ধা দেয়, সে পেচকি ছাড়াইতেই দেখা যায় ফযরের আজান দেয় দেয় অবস্হা
জামাই আদর জিনিসটা যে লোকে দুঃখ নিয়া কয় আগে বুঝি নাই, এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাই । সামনে আস্ত খাসি থাকলেও ভদ্রতা কইরা বসে থাকতে হয়, হাতা গুটাইয়া ঝাপাইয়া পরার কোন চান্স নাই। সবই সামনে থাকব কিন্তু কিছুই ধরা যাইবোনা
এত এত মিস্টি, নানা রকমের- অন্য সময় হইলে , হায়রে এখন কিছুই করার নাই।
পরের অবস্হা আরোও ভয়াবহ - চর্বিবহুল এত খাবার খাইয়ে, কোলস্টেরল বাড়াইয়া আদরের জামাইয়ের সর্বনাশ করতে শ্বশুড় বাড়ীর লোকজনের জুড়ি মেলা ভার !!!
অবশ্য আমার এক দোস্তের উপদেশ হইল- বন্ধু জামাই আদর পাইবা প্রথম বছর, ইনদা মিন টাইম আরেকটা নতুন জামাই আইসা গেলেও ধরা খাইয়া যাইতে পার। সো যতদিন জামাই আদর পাইবা পুরাপুরি উসুল কইরা নাও।
কোলস্টেরল এর চিন্তা কইরা লাভ নাই।
বউ প্ল্যান করতেছে নেক্সট উইক মায়ের কাছে থাকবে। আমি মনে মনে ভাবি, এক কান গেলে আরেক কানত যাবেই
ইদানিং জামা কাপড় সবই টাইট হইতেছে, মানি ব্যাগটাও যে ফাঁকা সে কথাত আর কাউরে বলা যাইতেছেনা
বিবাহিত জীবন কিন্তু তীব্রভাবে প্রথম আলোর ফলোয়ার- বদলে দাও অথবা বদলে যাও ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।