আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোটি টাকা বাসাভাড়া পাওনা ঢািবর ২০ শক্ষিকরে কাছে



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাসা ও বিভিন্ন সেবা সার্ভিসের ভাড়া পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে। বছরের পর বছর ধরে তারা থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায়। অথচ অবৈতনিকসহ নানা ধরনের ছুটি নিয়ে চাকরি করছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এসময় তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় অবস্থান করেছেন। চাকরিরত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাসা ভাড়াও নিয়েছেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে তা পরিশোধ করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব শিক্ষকদের কাছে মোট পাওনা ১ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪৭ টাকা। কর্তৃপক্ষ পাওনা আদায়ে বারবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দেননি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এখন এক রকম জোর করেই পাওনা আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটিতে (এফসি) এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা শেষে বিষয়টি সিন্ডিকেটে সুপারিশ করা হয়েছে। আগামীকাল সিন্ডিকেটের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এফসির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ। অন্যান্যের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে এ বিশাল অংকের বকেয়ার বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত। এসব শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে অনেক বেশি বেতনে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা পরিশোধ করছেন না। এসব শিক্ষকের কাছে কয়েকদফা চিঠি দিলেও তারা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব শিক্ষককে ১৫ জুনের মধ্যে সব পাওনা একত্রে পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যুগান্তরের হাতে আসা তথ্য-প্রমাণে দেখা গেছে, বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা এমন শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মোঃ মজিবুর রহমান। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট পাওনা ১০ লাখ ৪ হাজার ৪৪০ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পাওনা টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট, ২০০৮ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি, গত বছরের ২৪ ফেব্র“য়ারি ও ২০০৭ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ২৫ এপ্রিলসহ মোট ৫ বার চিঠি দিয়েছে। তবুও তিনি কোন ধরনের টাকা পরিশোধ করেননি। এ ব্যাপারে ড. মোঃ মজিবুর রহমান টাকা পাওনার কথা স্বীকার করে বলেন, তার কাছে পাওনা টাকা কিস্তিতে পরিশোধের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরিশোধে দেরি হয়েছে। তবে অতিসত্বর তিনি তার এ পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন। তালিকায় রয়েছেন ওয়ার্ল£ ইউনিভার্সিটির ভিসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮০৯ টাকা। তাকেও টাকা পরিশোধের জন্য ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই, ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি, একই বছরের ২৩ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ১৭ এপ্রিলসহ মোট ৪ বার চিঠি দেয়া হয়েছে।

কিন্তু তিনিও টাকা পরিশোধ করেননি। এ ব্যাপারে অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ৪ বার চিঠি দেয়ার কথা বললেও তিনি পেয়েছেন একবার (সর্বশেষ)। যেহেতু পাওনা সব টাকা একত্রে পরিশোধ করতে হবে, সেহেতু তিনি টাকা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খুব শিগগিরই টাকা পরিশোধ করবেন। পাওনা টাকা পরিশোধে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক (৭ বার) চিঠি দেয়ার পরও টাকা পরিশোধ করেননি মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলম।

তার কাছে মোট ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫৮ টাকা পাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০০৩ সালের ১০ অক্টোবর, ২০০৭ সালের ২৬ জুন, একই বছরের ১৭ নভেম্বর, ২০০৮ সালের ২৬ জুন, ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর, গত বছরের ৭ এপ্রিল এবং এ বছরের ২৪ এপ্রিলসহ মোট ৭ বার চিঠি দেয়। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ভাড়া বাবদ তার কাছে এ টাকা পাবে। তিনি এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পেনশনের যে টাকা পাবেন তার সঙ্গে পাওনা টাকা অ্যাডজাস্ট করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

কর্তৃপক্ষ আর যাদের কাছে টাকা পাবেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শাহজাহান মিনা। তার কাছে পাওনা ৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৭৪ টাকা। তাকে ২০০৩ সাল থেকে মোট ৬ বার চিঠি দেয়া হয়েছে। একই বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ বাকী খলিলীর কাছে পাওনা ৭ লাখ ৩১ হাজার ৭৬০ টাকা। তাকেও টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে ৬ বার চিঠি দেয়া হয়েছে।

একইভাবে মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামকেও ৬ লাখ ১২ হাজার ৬০৩ টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে ৬ বার চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে টাকা পরিশোধে ৬ বার চিঠি দেয়ার কথা বলা হলেও তিনি চিঠি পাননি। তবে খুব শিগগিরই তিনি তার পাওনা টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানান। মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মিসেস নাসরীন ওয়াদুদকে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৪ টাকা এবং ব্যস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রদানেন্দু বিকাশ চাকমাকে ৪ লাখ ২৬ হাজার ১৭১ টাকা পরিশোধে ৫ বার চিঠি দেয়া হয়। আর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সালেহ’র কাছে পাওনা ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৮৫ টাকা এবং ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. শওকত হোসেনকে ৪ লাখ ১২ হাজার ৩৮৫ টাকা পরিশোধের জন্যও ৪ বার চিঠি দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক জরিনা রহমান খানকে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৪ টাকা, ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমানকে ২ লাখ ৯০ হাজার ৯১৮ টাকা, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪২ টাকা এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ২৬৪ টাকা পরিশোধে ৩ বার করে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলাকে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৫ টাকা, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. একে মনোওয়ার উদ্দিন আহমদকে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪১২ টাকা পরিশোধে ২ বার করে চিঠি দেয়া হয়েছে। একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ হোসেনের কাছে পাওনা ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৭৬ টাকা। তাকে ২০০৯ সালের ২১ মে টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি দেয়া হয়। একইভাবে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদকে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৯ টাকা পরিশোধে ২০০৯ সালের ২৫ মে চিঠি দেয়া হয়।

শিক্ষকদের পাশাপাশি বকেয়া টাকা পরিশোধ করেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ নূর মোহাম্মদ। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাওনা ১ লাখ ১২ হাজার ৩০৬ টাকা। পাওনা টাকা পরিশোধে ওই কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি এখনো কোন টাকা পরিশোধ করেননি। এ মব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.