মা মাটি মানুষকে ভালোবাসি-এই মিথ্যে কথাটা বলতে আর ভালো লাগে না! অনুচ্চাকাঙ্ক্ষী, দৃঢ়, সত্য প্রকাশে অনঢ়...
লক্ষ্মীপুর, মে ০৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- চাচার সঙ্গে 'অনৈতিক' সম্পর্কের অভিযোগ তুলে ফতোয়ার মাধ্যমে একঘরে করে রাখায় বিষপানে আত্মহত্যা করলেন লক্ষ্মীপুরের শাবানা বেগম (১৮)।
বিষপানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তার চাচা মো. রিপনও (২০)।
পুলিশ বলছে, সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের এই পরিবারকে গত ১৫ দিন ধরে একঘরে করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আগামী শুক্রবার তাদের বিচার করারও ঘোষণা দেওয়া হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার বিকালে বিষ পান করেন শাবানা ও রিপন।
রাতেই মৃত্যু হয় শাবানার...
ফতোয়া- একটি আরবী শব্দ যেটা ইসলামিক আইনে ইসলামিক ওলামাদের দ্বারা আরোপকৃত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় ইসলামিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা অবশ্যই ফতোয়া পরিচালিত হয় না। ফতোয়াবাজির কারণে সামান্য অপরাধকৃত গ্রাম্য গৃহবধূ থেকে শুরু করে অপরিণত কিশোরী মৃত্যুপথযাত্রী হচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষিতাও। ২০০৯ সালের ২২ মে নওগাঁর রহিমা আক্তারকে ১০০ চাবুকের ঘা সহ্য করতে হয় ফতোয়াবাজদের ফতোয়ার কারণে।
৩৯টি চাবুকের পর তিনি ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তারপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কী ছিলো তার অপরাধ? আব্দুল করিম/মতিন নামের তিন সন্তানের জনক বিবাহিত এক পুরুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তার চতুর্থ সন্তান রমজানের জন্ম হয়। কিন্তু আব্দুল করিম পিতৃত্ব অস্বীকার করে। গ্রামের ২০০-৪০০ লোকের সামনে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে রহিমা বলেন, আব্দুল করিম/মতিন তার সন্তানের বাবা কিন্তু পাষণ্ড আব্দুল করিম/মতিন তা অস্বীকার করে।
ফতোয়াবাজদের রোষাণলে পড়ে যান রহিমা। ২০১০ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশ হাইকোর্ট ফতোয়া অথবা ধর্মীয় বিচারাদির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইসলামিক আইনের এই অন্ধকার ফতোয়াবাজির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের 'অপরাধী' বলে গণ্য করা হয়। সেদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আকরাম হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ফতোয়া সম্পূর্ণ অবৈধ এবং এটি আইনত কর্তৃপক্ষ ব্যতিরেকে পরিচালিত। ফতোয়াকে বলা যেতে পারে, নারী-পুরুষ বৈষম্যের একটি অনন্য উদাহরণ। গত ফেব্রুয়ারিতে পাবনার শরীয়তপুরে হেনা নামের ১৪ বছরের এক কিশোরীকে এই ফতোয়াবাজি দিয়েই 'খুন' করা হয় ১০১ টা দোররা মেরে।
হেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মাহবুব নামে এক বিবাহিত পুরুষের স্ত্রী শিল্পী। তার অভিযোগ, হেনার সাথে তার স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক আছে। এবারও পুরুষতান্ত্রিক গ্রাম্যসমাজের তীর হেনার দিকেই যায়। হাইকোর্ট রুলের ৭ মাস পর হেনার মৃত্যু সবাইকে চমকে দেয়। সর্বশেষ মে'র ৯ তারিখে ফতোয়ায় একঘরে হয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করলো লক্ষীপুরের ১৮ বছরের কিশোরী শাবানা বেগম।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার চাচা রিপনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক। তার চাচা রিপনও (২০) বিষ পান করেছে। রিপনের বাবা মো. ছফি উল্লাহ অভিযোগ করেন, জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় মসজিদ কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমদ এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের নিয়ে শাবানা ও রিপনকে জড়িয়ে অপবাদ ছড়ায়।
তিনি বলেন, একঘরে ঘোষণা করায় গ্রামের কোনো দোকানদার গত ১৫ দিন তাদের কাছে মালামাল বিক্রি করেনি। তাদের বাড়ি থেকেও বের হতে দেওয়া হয়নি।
ফতোয়ার নামে নারীদের উপর এই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন কতকাল চলবে? অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করা পর্যন্ত এই ব্যধি ছড়াতেই থাকবে। সুশিক্ষা, উন্নত জীবনব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আমরা যে শুধু পিছিয়ে আছি তা নয়, মানবিকতা থেকেও যে পিছিয়ে আছি এইসব ফতোয়াবাজির নেপথ্যের কাহিনী সেটাই মনে করিয়ে দেয়। আইন থাকতেও আইনের প্রয়োগ নেই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঠিক সহযোগিতা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল ও ভয়াবহ।
এই ফতোয়াবাজির কারণে আর কত প্রাণ অকালে ঝরে যাবে? আর কত হেনা, রহিমা আক্তার, শাবানাদের মৃত্যু ঘটবে? বড় বড় অপরাধীরা কেন ধরা পড়ে না, কেন তাদের শাস্তি হয় না? সরকার কী এসব প্রশ্নের জবাবাদিহিতা করবে কখনো!
তথ্যসূত্র :
১. Click This Link
২. Click This Link
৩. Click This Link
ছবি : নিহত হেনার মা। দ্য গার্ডিয়ানের অ্যান্ড্রু বিরাজের সৌজন্যে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।