অনেক সত্য আছে যা বলা যায়না মুখ বুজে সহ্য করতে হয়
অমীমাংসিত রাজনৈতিক সহিংসতার অনিবার্য পরিণতি ছিল ওয়ান-ইলেভেন। দেশবাসীকে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে সেদিন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ এগিয়ে এসেছিলেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেদিন রাজনৈতিক দুর্যোগে দেশকে নিশ্চিত গৃহযুদ্ধ ও অসংখ্য প্রাণহানির হাত থেকে রক্ষায় রেখেছিল ঐতিহাসিক ভূমিকা। উত্তেজনায় টালমাটাল সহিংস রাজনীতি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। তাই ওয়ান-ইলেভেনে সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসায় অভিষিক্ত করেছিল।
সেদিন দেশে মার্শাল ল জারি হলে রাজপথে নেমে আসা সেনা ট্যাঙ্কে মানুষ পুষ্পবৃষ্টি দিয়ে সমর্থন জানাত, এমনই বক্তব্য নানা মহল দিয়ে আসছে। কিন্তু সেদিন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় সেনাবাহিনী তাদের ভূমিকা রাখতে কার্পণ্য করেনি, তারা সামরিক শাসন জারি করেনি। তাই ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হন এবং প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে নিজে যেমন বিদায় নেন তেমনি অন্য উপদেষ্টাদেরও করুণ বিদায় ঘটে। ১২ জানুয়ারি বিকালে বঙ্গভবনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ শপথ গ্রহণ করেন। একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিশ্বাস-আস্থা নেমে আসা শপথ অনুষ্ঠানে বিএনপি জোট ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত হয়ে সমর্থনই জানাননি রীতিমতো কুশল বিনিময়কালে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাতে ভোলেননি।
শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনাময় অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হওয়ায় সেদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল সেনাপ্রধান ও তার চৌকস সেনাকর্তাদের নাম। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে অনেক রাজনৈতিক নেতা, বড় বড় ব্যবসায়ীর ওপর কারা নির্যাতন, জোরপূর্বক টাকা আদায় ছাড়াও বিচ্ছিন্ন কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় সরকারের জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও এ কথা কেউ অস্বীকার করছেন না যে সেদিন দেশ বাঁচাতেই ওয়ান-ইলেভেনের বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হতে না হতেই তাদের আমলে অত্যাচার-নির্যাতনে ক্ষত-বিক্ষত আওয়ামী লীগ কর্মীরা সারা দেশে অগি্নমূর্তি ধারণ করে বিএনপির মুখোমুখি হয়। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিভিন্ন দল তার আগে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচনী সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল। বিএনপির শাসনামলে কারও অবসরের বয়সসীমা না বাড়িয়ে শুধু বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়ে দেওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন সন্দেহ আর অবিশ্বাসের কারণে বড় ধরনের ধাক্কা খায়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও তার শরিকরা নির্বাচন বর্জনই নয় প্রতিরোধের ডাক দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে তখন দেশ গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়। এমনি রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির মুখে জাতীয়, আন্তর্জাতিক সব মহলে প্রশংসা ও সমর্থনের মুখে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এগিয়ে আসে। বঙ্গভবনে দুই টুপি মাথায় দিয়ে বসে থাকা রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়তেই হয়নি, জরুরি অবস্থা জারি ও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে বাধ্য হন। তাই নয়, গঠিত হয় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নতুন ভোটার তালিকাই সমৃদ্ধ হয়নি দেওয়া হয় ভোটার আইডি কার্ড।
এক কোটি ২০ লাখ জাল বিতর্কিত ভোটার বাদ পড়ে। দুই বছরের নানা আয়োজনের পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই দুই বছর দুই-একজন কর্মকর্তার কারণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ কারও কাছে হলেও এর দায়দায়িত্ব কোনোভাবেই গোটা সেনাবাহিনীর ওপর বর্তায় না। বরং ভোটার আইডি কার্ডের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয়, যার প্রশংসা দেশে-বিদেশে। উন্নয়নেও তাদের ভূমিকা প্রশংসিত।
সময়ে সময়ে মানুষ বদলায়। বদলায় অনেক কিছুই। কিন্তু অপ্রিয় বা নির্মম হলেও সত্য, সবাই স্বীকার করতে কার্পণ্য করেন না যে, ওয়ান-ইলেভেন ছিল ক্ষমতায় থাকার মদমত্তে একটি রাজনৈতিক দলের উচ্চাভিলাষী, অবাস্তব, একগুঁয়ে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্মম চেষ্টা ও আরেকটি রাজনৈতিক শক্তির তা প্রতিরোধ করার সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগের ফসল। ওয়ান-ইলেভেন ছিল সংঘাত-সংঘর্ষ, রক্তপাত এড়ানোর একমাত্র বিকল্প পথ।
তথ্য সূত্র : বাংলােদশ প্রিতিিদন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।