ৈদনিক ইেওফাক
লেখক: এম এম আকাশ | শুক্র, ৬ মে ২০১১, ২৩ বৈশাখ ১৪১৮
আধুনিক পুঁজিবাদের একটি অনিবার্য অনুষংগ হচ্ছে স্টক অ্যান্ড শেয়ার মার্কেট। পুঁজিপতিরা প্রথমে শুরু করেছিলেন নিজেদের পুঁজি দিয়ে, যদিও এই তথাকথিত নিজেদের পুঁজিটা প্রাথমিকভাবে সংগৃহীত হয়েছিল ঔপনিবেশিক ও দেশীয় লুণ্ঠনের মাধ্যমে। এই যুগকে কার্ল মার্কস নাম দিয়েছিলেন পুঁজির আদি সন্চয় পর্ব বা প্রাগৈতিহাসিক পর্ব। আধুনিক শেয়ার মার্কেট গড়ে উঠেছে আরো অনেক পরে। বাণিজ্যিক পুঁজি শিল্পপুঁজিতে রূপান্তরিত হয়েছে, শিল্পপুঁজি এবং ফিন্যান্স-পুঁজির (ব্যাংক) মিলন ঘটেছে এবং অবশেষে পুঁজির সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মেটানোর জন্য শেয়ার মার্কেটের জন্ম হয়েছে।
শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে অসংখ্য ক্ষুদে সঞ্চয়কারী তার টুকরো সঞ্চয় ব্যবহার করে একটি বৃহত্ কোম্পানির মালিকানায় অংশিদারিত্ব পেতে পারেন। এর একটি আদর্শ উদাহরণ হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা। ৩০ লাখ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে এই মালিকানা বিস্তৃত। কিন্তু এটি যেহেতু শুধু ভূমিহীন দরিদ্রদের মালিকানায় সীমাবদ্ধ, সেহেতু এই শেয়ারগুলো নিয়ে শেয়ার মার্কেটে ফাটকাবাজি বা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ধনী লোকেরা এই শেয়ারের মালিক হতে পারবে না, অবশ্য সরকারের আংশিক মালিকানা স্বীকৃত (আদিতে তা ছিল ৩০%-এর সমান, যা এখন ৩%-এ নেমে এসেছে) কিন্তু আমরা যে শেয়ার কোলেঙ্কারির কথা বলছি তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে একটি মুক্ত শেয়ারবাজার।
যেখানে রাঘব বোয়াল থেকে শুরু করে পুটি মাছ পর্যন্ত অবাধে সাঁতার কাটার অধিকার রাখেন। পুঁজিবাদের কোনো কোনো ভক্ত একেই বলেছেন পিপলস্ ক্যাপিটালিজম বা জনগণের পুঁজিবাদ।
কিন্তু আমরা সবাই জানি, এই উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির নিময় অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত শেয়ারগুলো কেন্দ্রিভূত হয় গুটিকতক বৃহত্ শেয়ার ব্যবসায়ীর হাতে। যেসব কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছাড়ে তারাও সর্বদাই অর্ধেকের বেশি শেয়ার ব্যক্তি-মালিকানায় রেখে দিতে চেষ্টা করেন, যাতে কোম্পানির মূল নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই কেন্দ্রিভূত থাকে। শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে তত্ত্বগতভাবে সবাইকে পুঁজির মালিক করা সম্ভব এবং পুঁজির একটি গণপ্রসারিত ভিত্তি তৈরি করে পুঁজির দুর্নাম দূর করা সম্ভব; কিন্তু উন্মুক্ত বাজারে বাস্তবে তা সুদূর পরাহতই থেকে গেছে।
বিষয়টি অনেকটা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মহত্ সম্ভাবনার মতো। যা একটা চমত্কার গল্প দিয়ে কমরেড ভবানী সেন ১৯৭২ সালে ঢাকায় দেয়া এক বকতৃতায় বর্ণনা করে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একবার হোটেলে গিয়ে আমি খরগোসের মাংস খেতে চাইলাম, হোটেলওয়ালা আমাকে বলল, খরগোসের মাংস নেই, আছে খরগোস ও ঘোড়ার মাংসের মিশ্রিত কারি। সমান সমান অনুপাতে এই কারি তৈরি হয়েছে। অগত্যা আমি সেটাই খেতে চাইলাম।
খেতে বসে দেখি প্রায় সবই ঘোড়ার মাংস, খরগোসের মাংস পাওয়াই যাচ্ছে না। তখন জিজ্ঞেস করলাম, কিহে ভাই, সমান সমান অনুপাতের কী হলো? হোটেলওয়ালা সহাস্যে বললেন, সমান সমানই তো আছে। একটি ঘোড়ার সঙ্গে একটি খরগোস মিশিয়েছি ঠিক যেমন বুর্জোয়া গণতন্ত্রে বুর্জোয়া হচ্ছে ঘোড়ার সমান আর গণতন্ত্র হচ্ছে খরগোসের সমান। এই গল্প অনুসরণ করে শেয়ার মার্কেটকে যারা জনগণের পুঁজিবাদ বলে চালাতে চান, তাদের উদ্দেশে আমি বলব, ঐখানে পুঁজিপতির অংশ ঘোড়ার সমান, আর জনগণের অংশ খরগোসের সমান।
সাম্প্রতিক শেয়ার কেলেঙ্কারি
সম্প্রতি আমাদের শেয়ার মার্কেটে মূল্যসূচক অতি দ্রুত গতিতে অস্বাভাবিক হারে একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে আবার অতি দ্রুত গতিতে ধপাস করে নিচে নেমে গিয়েছে, এখন আর তাকে উঠানো যাচ্ছে না।
দেখা গেল এই অস্বাভাবিক উত্থান এবং অস্বাভাবিক পতনের মাধ্যমে ৩০ লাখ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ’ লোকই হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, না হয় সীমিত লাভ করেছে। সব মিলিয়ে তাদের নিট ক্ষতির পরিমাণ কেউ কেউ বলেন ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। এর সিংহভাগ নাকি জমা হয়েছে বাদ বাকি ৩শ’ উপরের বড় খেলোয়াড়দের হাতে। এই ৩শ’ জনের একটি নামের তালিকা ইব্রাহিম খালেদ সাহেব তার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যা অগ্রিম বাজারে ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তাকে মানহানির মামলার সম্মুখীন হতে হয়।
অবশ্য পত্রিকার নানা খবর থেকে মনে হয় তার রিপোর্টে যথেষ্ট সত্যতা রয়েছে। কেউ বলতে পারেন, বাকি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭শ’ খেলোয়াড় দ্রুত টাকা বানানোর অভিলাষে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে লোভের বশবর্তী হয়ে শেষ সম্বলটুকু-ও শেয়ারবাজারে ঢেলে দিয়েছিল বলেই শেয়ারের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ঘটেছিল। তারা ঠিক সময়ে শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় তাদের এখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। এ কথা ঠিক, শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত টাকার প্রবাহ না এলে দাম আদৌ বৃদ্ধি পেত না।
কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, দাম যখন এ রকম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়, তখন সিকিউরিটি এক্সচেঞ্চ কমিশনের বা শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহের একটি দায়িত্ব হচ্ছে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা অথবা ক্রেতাদেরকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা সংকেত প্রদান করা। এছাড়া প্রাইমারী মার্কেটে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য নানা পদ্ধতিতে যখন অভিহিত মূল্যের অনেকগুণ বেশি মাত্রায় নির্ধারিত হলো তখনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন কোন উচ্চবাচ্চ্য করলেন না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। ম্যানোপুলেশনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে অল্প ক’জন পরিচিত বৃহত্ ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের তথ্যটি। কেন এই কেলেঙ্কারী থেকে শীর্ষ লাভকারী হিসেবে তিনজনের নাম চলে আসলো? যাদের অতীত ইতিহাসও ভাল নয়। লক্ষণীয় যে, তাদের বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে।
যেহেতু তারা ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধান বিরোধীদলের মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এজন্য অনেকেই মনে করেন তাদের ম্যানোপুলেশনের ব্যাপারটি কখনো প্রকাশ পাবে না, প্রকাশ পেলেও প্রমাণিত হবে না, প্রমাণিত হলেও শাস্তি হবে না। কেউ কেউ আরও বলতে চান, শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম খালেদকে এজন্য শাস্তি পেতে হবে, দুঃসাহসের মাশুল দিতে হবে।
অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত
আমি শুধু অতীত থেকে দু’টো ঘটনার উল্লেখ করবো। ১৯৯৫ সালের শেয়ার মার্কেট সংকট এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনের কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ঐ প্রতিবেদনে যাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়েছিল, তাদের কোন শাস্তি তখন হয়নি, তারা তখনো ছিলেন ক্ষমতাসীন সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী অংশ।
এতটাই তারা প্রভাবশালী ছিলেন যে, তদন্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের পর দেশ ত্যাগ করে আফ্রিকায় চলে যেতে হয়েছিল। তিনি নিজেই তা আমাকে জানিয়েছিলেন। এবার এটুকু উন্নতি হয়েছে যে ইব্রাহিম খালেদ এখনও দেশ ত্যাগ করেননি।
আগেও সাহসী সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে বহু গোপন এবং দুরূহু তথ্য খবরের কাগজে ছেপে দিয়েছিলেন এবং এখনো দেয়া হচ্ছে। সৌভাগ্যবশত আজও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকদের ক্ষমতাবান মানুষরা ভয় পায়।
তাদের একটা ইউনিটি আছে বলেই আজও আমরা সত্যের আলো দেখতে পাই। তবে যেহেতু সংবাদপত্রে ব্যক্তি মালিকানার কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছে সেহেতু সত্য জানতে হলে অনেকগুলো পত্রিকা পাঠ করতে হয়। সবগুলোর অর্ধসত্য যোগ দিলে পূর্ণ সত্য পাওয়া যায়। বিরোধী দলের সমালোচনা ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকায় পাওয়া যায় আবার ক্ষমতাসীন সম্পর্কে খবর বিরোধী দলের পত্রিকায় পাওয়া যায়!
২৫ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত খবর থেকে এই প্রসঙ্গে দুটো তথ্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল। সেটা ছিল খালেদা জিয়া সরকারের আমল।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৭-এর অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশি পুঁজিপতিরা শেয়ার মার্কেটে ৭৭৯’৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এই বিদেশি বিনিয়োগ মূলত হয়েছিল শেয়ার বাজারে প্রাইমারি শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এবং এর বেশিরভাগ ক্রয়মূল্য ছিল অভিহিত মূল্যের সমান। অনেক অর্থনীতিবিদ তখন খুব খুশি হয়েছিলেন এই ভেবে যে, আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগের অন্তঃপ্রবাহ বাড়ছে। এবারও যেমন শেয়ার মার্কেটের বাজারদর যখন উপরে উঠছিল তখন সবাই খুব হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি ঘটলো।
ঐ একই সময়ে এই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের কেনা ৬৯২ কোটি টাকার শেয়ার মওকামতো ১০৫৪.৭৩ কোটি টাকায় বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অর্থাত্ তাদের কেপিট্যাল গেইনের মাত্রা ছিল ৩৬২.৭৩ কোটি টাকা। অর্থাত্, বিনিয়োগের উপর শতকরা প্রাপ্তি হার ৫২.৪২ শতাংশ! অক্টোবর, ১৯৯৭-এর মধ্যে বিদেশিরা তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের ৯০ শতাংশ আবার প্রত্যাহারও করে নেন। অর্থাত্ বিদেশী পুঁজির অন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহই শেষ পর্যন্ত বেশি হয়ে গেল।
ঐ সময় শেয়ার কেলেঙ্কারীর জন্য তিনজনের নাম ভোরের কাগজে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এদের মধ্যে দু’জন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। এর মধ্যে একজন বলেছিলেন, আমার এই পুনর্নির্বাচনই প্রমাণ করে যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু পরে তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, ঐ সময় নির্বাচনে ১৮১ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৯ জনকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কতখানি ক্ষমতা থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিটি সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হতে পারেন তা পাঠকদের অনুমানের উপরই আমি ছেড়ে দিচ্ছি।
প্রস্তাবনা
সাম্প্রতিক এক সেমিনারে এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দেয়ার সময় বলেছি যে, ইব্রাহিম খালেদকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে।
তার তদন্ত প্রতিবেদন আগে প্রকাশ হবার কারণে অথবা কোন কোন নাম তিনি নিজেই সংবাদপত্রে উল্লেখ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে হেনস্থা করার চক্রান্ত রোধ করতে হবে। এবার অবশ্যই অন্ততঃ তিন-চারজন রাঘব বোয়ালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আইনের ফাঁক দিয়ে তারা যাতে গলিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য সরকারকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আমার এই বক্তব্যের পর অন্য অনেক আলোচকই বলেছেন যে, বর্তমান সরকারের পক্ষে শেষ পর্যন্ত প্রচলিত আইন মেনে শেয়ার কেলেংকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়াই সম্ভব হবে না।
তাই আমার দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল অন্তত, এই শেয়ার কেলেংকারী থেকে অস্বাভাবিক অর্থ যারা উপার্জন করেছেন, (যে তিন’শ জনের তালিকার কথা বলা হচ্ছে) তাদের প্রত্যেকের টিন নম্বর এবং ট্যাক্স ফাইল তলব করা হোক।
যেহেতু এই অস্বাভাবিক মুনাফাটি অনুপার্জিত আয়ের মতই এক ধরনের উইন্ড ফল গেইন, সেহেতু এই লাভের উপর সরকার ইচ্ছে করলে বিশেষ সর্বোচ্চ কর বসাতে পারেন। এতে সরকারের যে বাড়তি আয় হবে তার অংশবিশেষ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার বিশেষ ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার পদক্ষেপও নিতে পারেন। বিশেষ করে যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এই ব্যবসায় এসে সর্বস্বান্ত হয়েছে তাদের ব্যাংক ঋণ সাময়িকভাবে পরিশোধ করে তাদের উপরে নিঃস্বকরণের চাপ লাঘব করা যেতে পারে। এছাড়া যারা সুস্পষ্টভাবে আইন ভঙ্গ করেছেন এবং কর্তব্যে অবহেলা করেছেন সেসব আমলা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ার মার্কেটের দিকে ধাবিত অর্থের প্রবাহ যথাসময়ে কেন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হল সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা উচিত।
আমার এই কতিপয় প্রস্তাব সেদিন সভায় উপস্থিত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দু’টি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকেরাও অনুমোদন করেছেন বলেই আমার মনে হল। উক্ত সভার সভাপতিও প্রস্তাব করলেন যে, পার্লামেন্টে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদের যে সাতজন এমপি রয়েছেন তারা আগামি অধিবেশনে এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য স্পীকারের কাছে আবেদন করতে পারেন। ঐ সভার এক নম্বর দাবী ছিল তদন্ত রিপোর্টটি অবিকৃতভাবে প্রকাশ করা। সুখের বিষয় সরকার অবশেষে তদন্ত কমিটির পুরো প্রতিবেদন সংশোধন ছাড়াই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবী জানাবো প্রভাবশালীদের সঙ্গে আপোষের পরিবর্তে এবার সংসদে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হবেন।
লেখক: এম এম আকাশ | শুক্র, ৬ মে ২০১১, ২৩ বৈশাখ ১৪১৮
আধুনিক পুঁজিবাদের একটি অনিবার্য অনুষংগ হচ্ছে স্টক অ্যান্ড শেয়ার মার্কেট। পুঁজিপতিরা প্রথমে শুরু করেছিলেন নিজেদের পুঁজি দিয়ে, যদিও এই তথাকথিত নিজেদের পুঁজিটা প্রাথমিকভাবে সংগৃহীত হয়েছিল ঔপনিবেশিক ও দেশীয় লুণ্ঠনের মাধ্যমে। এই যুগকে কার্ল মার্কস নাম দিয়েছিলেন পুঁজির আদি সন্চয় পর্ব বা প্রাগৈতিহাসিক পর্ব। আধুনিক শেয়ার মার্কেট গড়ে উঠেছে আরো অনেক পরে। বাণিজ্যিক পুঁজি শিল্পপুঁজিতে রূপান্তরিত হয়েছে, শিল্পপুঁজি এবং ফিন্যান্স-পুঁজির (ব্যাংক) মিলন ঘটেছে এবং অবশেষে পুঁজির সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মেটানোর জন্য শেয়ার মার্কেটের জন্ম হয়েছে।
শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে অসংখ্য ক্ষুদে সঞ্চয়কারী তার টুকরো সঞ্চয় ব্যবহার করে একটি বৃহত্ কোম্পানির মালিকানায় অংশিদারিত্ব পেতে পারেন। এর একটি আদর্শ উদাহরণ হচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা। ৩০ লাখ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে এই মালিকানা বিস্তৃত। কিন্তু এটি যেহেতু শুধু ভূমিহীন দরিদ্রদের মালিকানায় সীমাবদ্ধ, সেহেতু এই শেয়ারগুলো নিয়ে শেয়ার মার্কেটে ফাটকাবাজি বা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ধনী লোকেরা এই শেয়ারের মালিক হতে পারবে না, অবশ্য সরকারের আংশিক মালিকানা স্বীকৃত (আদিতে তা ছিল ৩০%-এর সমান, যা এখন ৩%-এ নেমে এসেছে) কিন্তু আমরা যে শেয়ার কোলেঙ্কারির কথা বলছি তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে একটি মুক্ত শেয়ারবাজার।
যেখানে রাঘব বোয়াল থেকে শুরু করে পুটি মাছ পর্যন্ত অবাধে সাঁতার কাটার অধিকার রাখেন। পুঁজিবাদের কোনো কোনো ভক্ত একেই বলেছেন পিপলস্ ক্যাপিটালিজম বা জনগণের পুঁজিবাদ।
কিন্তু আমরা সবাই জানি, এই উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতির নিময় অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত শেয়ারগুলো কেন্দ্রিভূত হয় গুটিকতক বৃহত্ শেয়ার ব্যবসায়ীর হাতে। যেসব কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছাড়ে তারাও সর্বদাই অর্ধেকের বেশি শেয়ার ব্যক্তি-মালিকানায় রেখে দিতে চেষ্টা করেন, যাতে কোম্পানির মূল নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই কেন্দ্রিভূত থাকে। শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে তত্ত্বগতভাবে সবাইকে পুঁজির মালিক করা সম্ভব এবং পুঁজির একটি গণপ্রসারিত ভিত্তি তৈরি করে পুঁজির দুর্নাম দূর করা সম্ভব; কিন্তু উন্মুক্ত বাজারে বাস্তবে তা সুদূর পরাহতই থেকে গেছে।
বিষয়টি অনেকটা বুর্জোয়া গণতন্ত্রের মহত্ সম্ভাবনার মতো। যা একটা চমত্কার গল্প দিয়ে কমরেড ভবানী সেন ১৯৭২ সালে ঢাকায় দেয়া এক বকতৃতায় বর্ণনা করে গেছেন। তিনি বলেছেন, ‘একবার হোটেলে গিয়ে আমি খরগোসের মাংস খেতে চাইলাম, হোটেলওয়ালা আমাকে বলল, খরগোসের মাংস নেই, আছে খরগোস ও ঘোড়ার মাংসের মিশ্রিত কারি। সমান সমান অনুপাতে এই কারি তৈরি হয়েছে। অগত্যা আমি সেটাই খেতে চাইলাম।
খেতে বসে দেখি প্রায় সবই ঘোড়ার মাংস, খরগোসের মাংস পাওয়াই যাচ্ছে না। তখন জিজ্ঞেস করলাম, কিহে ভাই, সমান সমান অনুপাতের কী হলো? হোটেলওয়ালা সহাস্যে বললেন, সমান সমানই তো আছে। একটি ঘোড়ার সঙ্গে একটি খরগোস মিশিয়েছি ঠিক যেমন বুর্জোয়া গণতন্ত্রে বুর্জোয়া হচ্ছে ঘোড়ার সমান আর গণতন্ত্র হচ্ছে খরগোসের সমান। এই গল্প অনুসরণ করে শেয়ার মার্কেটকে যারা জনগণের পুঁজিবাদ বলে চালাতে চান, তাদের উদ্দেশে আমি বলব, ঐখানে পুঁজিপতির অংশ ঘোড়ার সমান, আর জনগণের অংশ খরগোসের সমান।
সাম্প্রতিক শেয়ার কেলেঙ্কারি
সম্প্রতি আমাদের শেয়ার মার্কেটে মূল্যসূচক অতি দ্রুত গতিতে অস্বাভাবিক হারে একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়ে আবার অতি দ্রুত গতিতে ধপাস করে নিচে নেমে গিয়েছে, এখন আর তাকে উঠানো যাচ্ছে না।
দেখা গেল এই অস্বাভাবিক উত্থান এবং অস্বাভাবিক পতনের মাধ্যমে ৩০ লাখ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার সাতশ’ লোকই হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, না হয় সীমিত লাভ করেছে। সব মিলিয়ে তাদের নিট ক্ষতির পরিমাণ কেউ কেউ বলেন ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। এর সিংহভাগ নাকি জমা হয়েছে বাদ বাকি ৩শ’ উপরের বড় খেলোয়াড়দের হাতে। এই ৩শ’ জনের একটি নামের তালিকা ইব্রাহিম খালেদ সাহেব তার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যা অগ্রিম বাজারে ফাঁস হয়ে যায়। ফলে তাকে মানহানির মামলার সম্মুখীন হতে হয়।
অবশ্য পত্রিকার নানা খবর থেকে মনে হয় তার রিপোর্টে যথেষ্ট সত্যতা রয়েছে। কেউ বলতে পারেন, বাকি ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৭শ’ খেলোয়াড় দ্রুত টাকা বানানোর অভিলাষে ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে লোভের বশবর্তী হয়ে শেষ সম্বলটুকু-ও শেয়ারবাজারে ঢেলে দিয়েছিল বলেই শেয়ারের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ঘটেছিল। তারা ঠিক সময়ে শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় তাদের এখন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ জন্য তারা নিজেরাই দায়ী। এ কথা ঠিক, শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত টাকার প্রবাহ না এলে দাম আদৌ বৃদ্ধি পেত না।
কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, দাম যখন এ রকম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়, তখন সিকিউরিটি এক্সচেঞ্চ কমিশনের বা শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাসমূহের একটি দায়িত্ব হচ্ছে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা অথবা ক্রেতাদেরকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা সংকেত প্রদান করা। এছাড়া প্রাইমারী মার্কেটে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্য নানা পদ্ধতিতে যখন অভিহিত মূল্যের অনেকগুণ বেশি মাত্রায় নির্ধারিত হলো তখনো নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কেন কোন উচ্চবাচ্চ্য করলেন না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। ম্যানোপুলেশনের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে অল্প ক’জন পরিচিত বৃহত্ ব্যবসায়ীর অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের তথ্যটি। কেন এই কেলেঙ্কারী থেকে শীর্ষ লাভকারী হিসেবে তিনজনের নাম চলে আসলো? যাদের অতীত ইতিহাসও ভাল নয়। লক্ষণীয় যে, তাদের বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিচয়ও রয়েছে।
যেহেতু তারা ক্ষমতাসীন দল এবং প্রধান বিরোধীদলের মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এজন্য অনেকেই মনে করেন তাদের ম্যানোপুলেশনের ব্যাপারটি কখনো প্রকাশ পাবে না, প্রকাশ পেলেও প্রমাণিত হবে না, প্রমাণিত হলেও শাস্তি হবে না। কেউ কেউ আরও বলতে চান, শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম খালেদকে এজন্য শাস্তি পেতে হবে, দুঃসাহসের মাশুল দিতে হবে।
অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত
আমি শুধু অতীত থেকে দু’টো ঘটনার উল্লেখ করবো। ১৯৯৫ সালের শেয়ার মার্কেট সংকট এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর তদন্ত প্রতিবেদনের কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। ঐ প্রতিবেদনে যাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়েছিল, তাদের কোন শাস্তি তখন হয়নি, তারা তখনো ছিলেন ক্ষমতাসীন সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী অংশ।
এতটাই তারা প্রভাবশালী ছিলেন যে, তদন্ত কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম চৌধুরীকে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের পর দেশ ত্যাগ করে আফ্রিকায় চলে যেতে হয়েছিল। তিনি নিজেই তা আমাকে জানিয়েছিলেন। এবার এটুকু উন্নতি হয়েছে যে ইব্রাহিম খালেদ এখনও দেশ ত্যাগ করেননি।
আগেও সাহসী সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে বহু গোপন এবং দুরূহু তথ্য খবরের কাগজে ছেপে দিয়েছিলেন এবং এখনো দেয়া হচ্ছে। সৌভাগ্যবশত আজও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকদের ক্ষমতাবান মানুষরা ভয় পায়।
তাদের একটা ইউনিটি আছে বলেই আজও আমরা সত্যের আলো দেখতে পাই। তবে যেহেতু সংবাদপত্রে ব্যক্তি মালিকানার কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছে সেহেতু সত্য জানতে হলে অনেকগুলো পত্রিকা পাঠ করতে হয়। সবগুলোর অর্ধসত্য যোগ দিলে পূর্ণ সত্য পাওয়া যায়। বিরোধী দলের সমালোচনা ক্ষমতাসীন দলের পত্রিকায় পাওয়া যায় আবার ক্ষমতাসীন সম্পর্কে খবর বিরোধী দলের পত্রিকায় পাওয়া যায়!
২৫ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত খবর থেকে এই প্রসঙ্গে দুটো তথ্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল। সেটা ছিল খালেদা জিয়া সরকারের আমল।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৭-এর অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশি পুঁজিপতিরা শেয়ার মার্কেটে ৭৭৯’৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এই বিদেশি বিনিয়োগ মূলত হয়েছিল শেয়ার বাজারে প্রাইমারি শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে এবং এর বেশিরভাগ ক্রয়মূল্য ছিল অভিহিত মূল্যের সমান। অনেক অর্থনীতিবিদ তখন খুব খুশি হয়েছিলেন এই ভেবে যে, আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগের অন্তঃপ্রবাহ বাড়ছে। এবারও যেমন শেয়ার মার্কেটের বাজারদর যখন উপরে উঠছিল তখন সবাই খুব হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি ঘটলো।
ঐ একই সময়ে এই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের কেনা ৬৯২ কোটি টাকার শেয়ার মওকামতো ১০৫৪.৭৩ কোটি টাকায় বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অর্থাত্ তাদের কেপিট্যাল গেইনের মাত্রা ছিল ৩৬২.৭৩ কোটি টাকা। অর্থাত্, বিনিয়োগের উপর শতকরা প্রাপ্তি হার ৫২.৪২ শতাংশ! অক্টোবর, ১৯৯৭-এর মধ্যে বিদেশিরা তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের ৯০ শতাংশ আবার প্রত্যাহারও করে নেন। অর্থাত্ বিদেশী পুঁজির অন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহই শেষ পর্যন্ত বেশি হয়ে গেল।
ঐ সময় শেয়ার কেলেঙ্কারীর জন্য তিনজনের নাম ভোরের কাগজে উল্লেখ করা হয়েছিল।
এদের মধ্যে দু’জন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। এর মধ্যে একজন বলেছিলেন, আমার এই পুনর্নির্বাচনই প্রমাণ করে যে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু পরে তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা যায়, ঐ সময় নির্বাচনে ১৮১ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৯ জনকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কতখানি ক্ষমতা থাকলে অভিযুক্ত ব্যক্তিটি সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে পুনরায় ক্ষমতায় আসীন হতে পারেন তা পাঠকদের অনুমানের উপরই আমি ছেড়ে দিচ্ছি।
প্রস্তাবনা
সাম্প্রতিক এক সেমিনারে এ বিষয়ে আমি বক্তব্য দেয়ার সময় বলেছি যে, ইব্রাহিম খালেদকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে।
তার তদন্ত প্রতিবেদন আগে প্রকাশ হবার কারণে অথবা কোন কোন নাম তিনি নিজেই সংবাদপত্রে উল্লেখ করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে হেনস্থা করার চক্রান্ত রোধ করতে হবে। এবার অবশ্যই অন্ততঃ তিন-চারজন রাঘব বোয়ালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আইনের ফাঁক দিয়ে তারা যাতে গলিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য সরকারকে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আমার এই বক্তব্যের পর অন্য অনেক আলোচকই বলেছেন যে, বর্তমান সরকারের পক্ষে শেষ পর্যন্ত প্রচলিত আইন মেনে শেয়ার কেলেংকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়াই সম্ভব হবে না।
তাই আমার দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল অন্তত, এই শেয়ার কেলেংকারী থেকে অস্বাভাবিক অর্থ যারা উপার্জন করেছেন, (যে তিন’শ জনের তালিকার কথা বলা হচ্ছে) তাদের প্রত্যেকের টিন নম্বর এবং ট্যাক্স ফাইল তলব করা হোক।
যেহেতু এই অস্বাভাবিক মুনাফাটি অনুপার্জিত আয়ের মতই এক ধরনের উইন্ড ফল গেইন, সেহেতু এই লাভের উপর সরকার ইচ্ছে করলে বিশেষ সর্বোচ্চ কর বসাতে পারেন। এতে সরকারের যে বাড়তি আয় হবে তার অংশবিশেষ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পুঁজি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার বিশেষ ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার পদক্ষেপও নিতে পারেন। বিশেষ করে যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এই ব্যবসায় এসে সর্বস্বান্ত হয়েছে তাদের ব্যাংক ঋণ সাময়িকভাবে পরিশোধ করে তাদের উপরে নিঃস্বকরণের চাপ লাঘব করা যেতে পারে। এছাড়া যারা সুস্পষ্টভাবে আইন ভঙ্গ করেছেন এবং কর্তব্যে অবহেলা করেছেন সেসব আমলা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ার মার্কেটের দিকে ধাবিত অর্থের প্রবাহ যথাসময়ে কেন নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হল সে বিষয়েও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা উচিত।
আমার এই কতিপয় প্রস্তাব সেদিন সভায় উপস্থিত সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দু’টি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদকেরাও অনুমোদন করেছেন বলেই আমার মনে হল। উক্ত সভার সভাপতিও প্রস্তাব করলেন যে, পার্লামেন্টে ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জাসদের যে সাতজন এমপি রয়েছেন তারা আগামি অধিবেশনে এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য স্পীকারের কাছে আবেদন করতে পারেন। ঐ সভার এক নম্বর দাবী ছিল তদন্ত রিপোর্টটি অবিকৃতভাবে প্রকাশ করা। সুখের বিষয় সরকার অবশেষে তদন্ত কমিটির পুরো প্রতিবেদন সংশোধন ছাড়াই প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবী জানাবো প্রভাবশালীদের সঙ্গে আপোষের পরিবর্তে এবার সংসদে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তির ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।