টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর রোববার আবার শুরু হয়েছে ঘটনাবহুল শেয়ারবাজারের লেনদেন। তবে আবারও বিপদজনক উত্থানের দিকেই যাচ্ছে বহু ছোট বিনিয়োগকারীর সর্বনাশ ঘটানো পুঁজিবাজার।
বাজার শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই এক লাফে সূচক চড়ে গেলো চার’শ পয়েন্টের মতো। অবশ্যই খুশী ছোট বিনিয়োগকারীরা, গত দু’মাসের ক্ষতি তো কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে! যাক, স্বল্প মেয়াদের একটা সমাধান ত পাওয়া গেল।
শেয়ারবাজারের উপর গত প্রায় চার বছর রিপোর্টিং করার সুবাদে এইটুক বলতে পারি যে, যেভাবে বাজার নামছে আর উঠছে তা কোনভাবেই স্বাভাবিকতার লক্ষন না।
সংবাদপত্র-টেলিভিশনের সুবাদে এখন আমরা প্রায় সবাই জানি যে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী অর্থাৎ ব্যাংক জাতীয় বিনিয়গকারীদের অতিরিক্ত বিনিয়োগই বাজারের দর এতো চড়িয়ে দিয়েছে। ত্বাত্তিক ভাষায় যাকে বলে, ‘বাবল’ অথবা বুদবুদের সৃষ্টি হয়েছিল বাজারে আর এই বুদবুদ তার ধর্ম মতে যতই বড় হোক না কেনো একসময় তা ফাটবেই। সে জন্যই ডিসেম্বরেও যে বাজার এত চাঙ্গা ছিলো তা পড়ে যেতে জানুয়ারীর প্রথম দুই কার্যদিবসই যথেষ্ট ছিল।
সরকারের দিক থেকে টাকা ঢেলে বাজার স্থিতিশীল করার চেষ্টার কোন কমতি ছিল না এবং তারা যে সফল তার প্রমাণ গত দুই কার্যদিবসের সূচক। ৬০০ কোটি টাকার মতো দেয়া হয়ছে রাষ্ট্রায়াত্ত আইসিবি,সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক-কে ছোট বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ারগুলো কিনে নেয়ার জন্য।
সরকারের এই দৃশতঃ আন্তরিক প্রচেষ্টায় অবশ্য তাদের নিজেদের জন্য আরো একটা প্রণোদনা রয়েছে। যেকোন মূল্যে বিশ্বকাপের সময় কোন ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো।
ঢাকা শহরের ভিক্ষুকদের প্রতিদিনের জন্য দেড়’শ টাকা করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে নাকি ‘পূনর্বাসিত’ করা হয়েছে। ক’দিন আগে ফেসবুকে দেখলাম কার যেন স্ট্যাটাস মেসেজ... “ভিক্ষুক তুমি রাস্তায় এসো না, আমার দেশে বিশ্বকাপ ”। টাকা ধরিয়ে দেওয়া যদি পূনর্বাসন হয় তাহলে তো এই বাংলাদেশের শত শত নাগরিক প্রায় প্রতিদিন ভিক্ষা দিয়ে সরকারের এই মহান কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে!
বিনিয়োগকারীরা এই সেদিনও বিক্ষোভের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলছিলেন, সরকার ভিক্ষুকদের টাকা দিয়েছে বিশ্বকাপের জন্য আর ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য কিছু করতে পারে না।
তাদের সে ফরিয়াদ সরকার শুনেছে। দেড়’শ না প্রতি বিনিয়োগকারির জন্য পাক্কা দু’হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন (৬০০ কোটি/৩০ লাখ)!!
ভিক্ষুককে টাকা ধরিয়ে সরিয়ে দিলেও বিশ্বকাপের পর তাদের আবার এই ঢাকার রাস্তায় আমার-আপনার মত পথচারীর কাছ থেকেই হাত পেতে টাকা কামাই করতে হবে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদেরও ভিক্ষুকদের দেখে বুঝে নেয়া উচিৎ যে সরকারের এই উদ্যোগ কতখানি আন্তরিক।
দেখে মনে হচ্ছে ভিক্ষুক সমস্যা আর শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারী সমস্যা দু’টোর ব্যাপারেই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি একই।
মুড়ি আর মিছরির একই দর !!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।