বিশিষ্ট বিক্ষোভকারী
[ এই গল্পের কাহিনী ও চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। পাঠকের বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে সাদৃশ্য থাকলে তা নিতান্ত কাকতালীয়। কেউ মাইনাস দিলে দয়া করে বলে যাবেন গল্পের কোন ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে। নিজের নিকে বলতে লজ্জা পেলে অতিথি হিসেবে বলে যাবেন। ]
পর্ব ১
ছোট্ট একটা রুম।
তিন বেডের। ইংরেজি ইউ-প্যাটার্নে বেডগুলো ফেলা হয়েছে। রুমটা সচরাচর নোংরা হয়ে থাকে। গতকাল সাফসুতরোর কাজ করা হয়েছে। রুমের সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ২।
রুম হঠাৎ পরিষ্কার হওয়াতে তাদের কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। কারাগারের কোণার দিকের এই রুমটাতে আজকে বিশেষ কাউকে আনা হচ্ছে – এই ব্যপারটা তাদের অনুমান করতে অসুবিধে হয়নি। বিশেষ ব্যক্তির সাথে একই রুমে বসবাস বিশেষ ‘সুখকর’ হবে বলে তারা যারপরনাই বিরক্ত।
রুমের ২ বাসিন্দার একজন অল্পবয়সী। নাম – সবুজ।
নিতান্ত সহজ সরল ভোদাই ছেলে। চট্টগ্রাম শহরের ছেলে। ৬ বছর আগে ঢাকার কোন একটা কলেজে তার পড়তে আসা। একটা মেয়ের সাথে প্রেম। তারপর পালিয়ে যাওয়া।
মেয়ের পরিবারের অপহরণ মামলা দায়ের। গ্রেফতার। মেয়ের বিশ্বাসঘাতকতা। ফলাফল – ৭ বছরের জেল।
রুমের অপরজনের বয়স কম করে হলেও ৬০।
নাম – মনসুর আলি। সবুজ ডাকে মনসুর কাকা। সবুজ অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কি কারণে মনসুর কাকার হাজতবাস। মনসুর কাকা বিরক্ত হয় তখন। বলে – “ধুর! বাদ দাও।
” এই গল্পে তিনি আমাদেরও মনসুর কাকা।
এখন পা ঝুলিয়ে দুজনই খাটে বসে আছে। মনসুর কাকা করিডোরের দিকে তাকিয়ে আছেন। বেশির ভাগ সময় তিনি এটাই করেন। ফাঁকা দৃষ্টি, শুণ্য দৃষ্টি – এইটা কি জিনিস সবুজ মনসুর কাকাকে দেখেই বুঝেছে।
সবুজ তাকিয়ে আছে ফ্লোরের দিকে। একসময় কাকা সেটা খেয়াল করেন। সবুজকে জিজ্ঞেস করেন,
- সবুজ? কি অবস্থা? মন-টন উচাটন?
- কাকা, ভাল্লাগতেছে না।
- কেন্?
- কিছু না। এমনি।
- অ...............। বুঝছি। প্রেমিকার কথা মনে পড়ে?
সবুজ চুপ করে থাকে। প্রেম জিনিসটা সবার জন্য না। মনসুর কাকা খোঁচা দেন,
- কি? মেয়ে ভাল লাগে এখনো?
- কাকা চুপ করেন।
- শোনো। কোন মেয়েরে যদি তোমার ভাল লাগে, কিন্তু সে তোমার সাথে টালবাহানা করে, ছলনা করে, তাইলে তারে ভুলার জন্য কি করবা জানো?
- কি করমু? সবুজ মজা পায় কাকার কথায়।
- চোখ বন্ধ কইরা তারে টয়লেটে কল্পনা করবা। ইংলিশ না, বাংলা টয়লেটে। বুঝছো?
সবুজের গা ঘেন্নায় রিরি করে উঠে।
এই বৃদ্ধ লোকটা এমনিতে ভাল। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে!
করিডোরের কোলাহলে তারা কথা বন্ধ করে সেদিকে তাকায়। পুলিশ দেখা যাচ্ছে। সাথে একজন বৃদ্ধ লোক। তাদের দুজনেরই ভ্রু কুঁচকে যায়।
এই ফিটফাট বৃদ্ধ লোকটাই কি তাদের নতুন রুমমেট?
জেলরুমের তালা খোলা হয়েছে। নিজামী মাথা নিচু করে তার নতুন রুমে ঢুকল। ঢুকে সালাম দেয় পুরনো দুই বাসিন্দাকে। সবুজ বুঝে উঠতে পারে না এই বুইড়া কি আকাম করে এইখানে আসছে!
অন্যদিকে মনসুর কাকার চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছেন নিজামীর দিকে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে! চারপাশের ঘটনা নিয়ে তিনি মোটেই আগ্রহী নন।
তাই হয়ত খবরটা তাঁর জানা নেই।
মনসুর কাকা মুখ ফসকে বলে উঠেন, “মইত্যা, তুই?”
(চলবে, যদি পাঠকের ভাল লাগে) - পর্ব ৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।