বিশিষ্ট বিক্ষোভকারী
পর্ব ১ | পর্ব ২ | পর্ব ৩
সকাল থেকে নিজামী তার টুপি খুঁজে পাচ্ছে না! একি যন্ত্রণায় পড়া গেল! কাকে সন্দেহ করা যায়? নিজামী আসার পর থেকেই বলা নেই কওয়া নেই, তার দিকে হঠাৎ হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠা ওই সমবয়সী লোকটাকে? কি নাম যেন লোকটার? ছোকরাটা তো মনসুর কাকা বলেই ডাকে। ছোকরাটার নাম কি? ওহ! সবুজ। মনে পড়েছে। আজকাল অনেক কিছুই মনে থাকে না। বয়স হয়ে গেছে, এক পা কবরে।
৭১ থেকে এ পর্যন্ত ইসলামের সেবায়, দেশের সেবায় পুরো জীবন ব্যয় করেও লাভ হল না, শেষ পর্যন্ত জেলের ভাত খেতে হচ্ছে!
ফজরের আযানের সাথে সাথে প্রতিদিন নিজামীর ঘুম ভেঙ্গে গেলেও আজ ঘুম ভাঙ্গে নি। ভাঙ্গল যখন তখন দেখে মনসুর কাকা নামায পড়ছেন। নিজামীকে টুপি খুঁজতে দেখে মনসুর কাকা হাসেন।
- কি ব্যাপার? হাসছেন কেন? আরেকজন বিপদে পড়লে খুশি লাগে? নিজামী প্রশ্ন করে।
- আর কত ভন্ডামি করবি? মনসুর কাকা ঘৃণাভরে প্রশ্ন করেন।
- মানে? কি আজেবাজে কথা বলছেন? নিজামী স্পষ্টত রেগে উঠে।
- নামায পড়স ভালো কথা। দেশের মানুষের কাছে তোর পাপের লাইগ্যা মাফ চাইছস?
- কিসের পাপ? হুমম? আমাকে শাসানো হচ্ছে? কত্ত বড় সাহস?
- শুন মইত্যা, ইহজীবনে তোর বিচার দেশের মানুষ করতে না পারলেও পরকালে আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবি? মানুষ তোরে মাফ না করলে তো আল্লাহও তোরে মাফ করবো না। কোরান-হাদিস কি পড়ছস? এইটাও জানোস না?
নিজামী কি বলবে ভেবে পায় না। মনসুর কাকা নিজামীর হাত টেনে নিয়ে নিজের টুপিটা হাতে দিয়ে বলেন, “ধর টুপি।
যা, নামায পইড়া সেজদায় পইড়া আল্লাহর কাছে হেদায়েত চাহ্!”
অন্যদিকে আমাদের গল্পের সহজ সরল প্রেমিক ছেলে সবুজের ঘুম এই বাকবিতন্ডায় ভেঙ্গে গেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সে ভাবল – টুপি নিয়ে গ্যাঞ্জাম লেগেছে কিনা। চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। নিজামীর টুপিটা প্রথম দিনই ভাল লেগেছিল, পছন্দের জিনিস নিজের কালেকশন এ থাকবে না এটা কি করে হয়? তাই গতরাত সুযোগ বুঝে টুপিটা নিয়ে নিজের বালিশের কভারের নিচে ঢুকিয়ে রেখেছে।
নিজামী নামায শেষে তার বিছানায় আবার শুয়ে পড়ে।
এবার সবুজ ভয়ে ভয়ে বিছানায় উঠে বসে। টুপি চুরির জন্য তাকে আবার সন্দেহ করছে নাতো! তাকে টুপির জন্য ধরলে কি করা যায়। সে সুযোগ দেয়া যাবে না। আড়চোখে সবুজ নিজামীকে লক্ষ্য করছে। নিজামী তাকে কিছু বলতে যাবে, এমন সময় সে গান শুরু করে দিল-
যদি বুকটা চিড়ে দেখাতে পারি
কতটা হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছি!
কি যে আর্তনাদে একাকার আমি।
একলা স্মৃতির খোলা মাঠে, অন্ধকারের মহাউৎসবে
হারানো দীর্ঘসময়, খুঁজে বেড়াই আমি....
স্মৃতি! সময়! আর কিছু অন্ধকার, আরো ঘোর অন্ধকার।
সবুজ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে গাইছে। একি গান বারে বারে। প্রথম দিকে নিজামীর সাথে কথোপকথন এড়ানো গানের উদ্দেশ্য থাকলেও, ভোদাই ছেলেরা যেমন সব কিছুতে প্রেমিকা খুঁজে, তেমনি তারও পুরনো প্রেমিকার কথা মনে পড়ল। গানের প্রতিটি শব্দ যেন তার নিজের মনের কথা বলে দিচ্ছে।
আমাদের মনসুর কাকা তখন জেলরুমের দরজার পাশে দাঁড়ানো। করিডোরের দিকে তাঁর সেই বিখ্যাত শুন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। গানের কথাগুলো যে তার জীবনের সাথেও মিলে গেল!
[ আগামী পর্বে গল্প শেষ হবে
শেষ পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।