এরা যত বেশী পড়ে, তত বেশী জানে, তত কম মানে। -_-
পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম ভ্যাম্পায়ারের প্রচলিত নাম হচ্ছে কেইন (Caine)। কেইনের সম্পর্কে বিভিন্ন সময় লেখালেখি হয়েছে, মিথোলজির ইতিহাসে বেশ কিছু বইয়ে বিভিন্নভাবে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কেইনকে সবচেয়ে বেশী হাইলাইট করা হয়েছে সম্ভবত এই বইগুলোতেই-
১) Book of Nod,
২) The Erciyes Fragments,
৩) The Lilithian, and
৪) The Luciferian.
কেইনের রেফারেন্স ক্যাইন(Cain) নামে পাওয়া যায় Book of Genesis এও। Book of Genesis হলো হিব্রু বাইবেল গ্রন্থের প্রথম বই এবং পুরাতন খ্রীষ্টানধর্মের একটি ভাগ বা দলিল।
এখানে কেইনের কথা এসেছে কয়েকবার। কথিত আছে, ভ্যাম্পায়ারদের কোন কোন গোত্র(যেমনঃক্যামারিলা) নিজেদের কেইনিটিস (Cainites) বলেও পরিচয় দেয় তাদের জাতির অরিজিনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে।
নড এর নগরী (The Land of the Nod):
এডাম এবং ইভ পৃথীবিতে নির্বাসিত হওয়ার আগে যেখানে বসবাস করতেন সেই জায়গাটাকে বাইবেলে ইডেন নামে সম্বোধন করা হয়, এই ইডেন এর পূর্বদিকে ছিলো নড এর নগরী। নড নগরীর বাংলায় অনুবাদকৃত নাম হবে “ঘুমের রাজ্য” । না, এখানে ঘুম না, মোহাচ্ছন্নতা কাজ করে, বাস্তব ও কল্পনার মাঝামাঝি জগতের মত যার পার্থক্য করা কঠিন।
কেইনের গল্পটি “ঠাকুরমার” ঝুলির রূপকথার মত শোনাবে অনেকটা। এডাম এবং ইভের অসংখ্য সন্তান-সন্ততির মধ্যে ছিলো ২ ভাই- কেইন এবং এবেল (Abel)। কেইন পেশায় একজন কৃষক ছিলো, এবেল ছিলো রাখাল বা শেফার্ড। একবার ২ জন ঠিক করলো তারা তাদের শ্রেষ্ঠ উপহার সামগ্রী ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করবে, ঈশ্বরকে খুশী করার জন্যে। কেইন তার চাষ করা সবচেয়ে ভালো ফল-ফলাদি এবং সবজি উৎসর্গ করলো, এবেল উৎসর্গ করলো তার লালন করা সবচেয়ে সুদর্শন পশুগুলো।
কেন জানা যায় নি, তবে ঈশ্বর এবেলের আন্তরিকতায় বেশী মুগ্ধ হলেন-বলা বাহুল্য উপহার সামগ্রী নেয়ার কোন দরকার ঈশ্বরের ছিলো না। তিনি তাদের কর্মেই খুশী ছিলেন।
এবেলের প্রাধান্য পাওয়াটা বড় ভাই কেইন মেনে নিতে পারেনি, ভেতরে প্রচন্ড হিংসা এসে গিয়েছিলো তার। তখন সে তার ছোটভাই এবেলকে হত্যা করে, এই অযুহাতে যে এবেলই ঈশ্বরকে তার দেয়া শ্রেষ্ঠতম উপহার। কিন্তু যেই অযুহাতই দেখানো হোক, আসলে যে প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয় তা বুঝতে কারো বাকি ছিলো না।
ঈশ্বর মারাত্নক ক্রোধিত হলেন, কেইনের পিতা তার উপর একটি চিহ্ন লাগিয়ে দিয়ে তাকে অভিশপ্ত করলেন। ফলে কেইন নড নগরীতে নির্বাসিত হলো।
Adam and Eve mourning over Abel's death
লিলিথের(Lilith) সাথে পরিচয়ঃ
নড নগরীতে অভিশপ্ত জীবন নিয়ে গন্তব্যহীন ভাবে চলার পথে কেইনের দেখা হয় লিলিথের(Lilith) সাথে। খিদে-পিপাসায় এবং শীতে জর্জরিত কেইনকে লিলিথ আশ্রয় দেয়। একসাথে থাকতে থাকতে একসময় তারা একে অন্যকে ভালোবেসে ফেলে।
এদিকে কেইন লিলিথের সাথে থেকে বুঝতে পারে যে লিলিথের অনেক ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিলো, এবং এটাও বুঝলো যে লিলিথ Dark Magic এর মাধ্যমে এরকম নানা ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে। কেইন এই ক্ষমতাগুলো পাওয়ার জন্য বার বার লিলিথের কাছে তাগিদ দিতে লাগলো, সে দিন দিন ক্ষমতাগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পরছিলো। লিলিথ কিছুটা ইতঃস্তত করছিলো তাকে অন্ধকার জগতে আনানোর ব্যাপারে, কিন্তু কেইনের আগ্রহে এক সময় লিলিথ রাজি হয়ে যায়।
একটি Ritual করা হলো, লিলিথ তার হাত কেটে এক বাটি রক্ত কেইনকে পান করতে দিলো। কেইন তা পান করার সাথে সাথে ঈশ্বরের হয়ে ৩জন এঞ্জেল এর আগমন ঘটে।
প্রত্যেকবার একেক এঞ্জেল কেইনকে এবেল হত্যার অনুশোচনা করতে বলে এবং প্রত্যেকবার কেইন তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রত্যেকবার না বলার জন্য একটা একটা করে মোট ৩টা অভিশাপ তার উপর দেয়া হলো-
1) A weakness to fire,
2) Vulnerability to sunlight, and
3) The Beast Within that hungers for blood
অভিশাপগুলো পাওয়ার পর নিয়ন্ত্রন ছাড়া সত্ত্বা কেইনকে ভয়ানক অনুশোচনা দেয়, অনুতপ্ত হয়ে এবং অনিচ্ছায় কিছু হত্যাকান্ডের পর সে একসময় লিলিথের সাথে সব সম্পর্ক ভেঙ্গে আবারো নড নগরীতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে চলে যায়।
এক সময় আবারো একাকিত্ব চেপে ধরে তাকে, সে ঠিক করলো আবারো সে মানুষের মাঝে ফিরে যাবে। একটি কৃষিভিত্তিক জনপদে সে আবার বাস করা শুরু করলো যার নাম ছিলো Ubar, এই জায়গাটি সৌদি আরবের কোন একখানে, যা ধবংস হয়ে হারিয়ে গিয়েছে।
রাজ্যে কেইনের আগমনে King Enoch তার কতৃত্ব কেইনের উপর ছেড়ে দেয়, নিজে রাজদরবারে কেইনের সহযোগী হিসেবে ছিলো।
কেইনের অভিশাপের চিহ্ন দেখে সবাই সমীহ করে চলতো তাকে। অনেকে তো Worship করতো। আগের রাজা Enoch কেইনের মত হতে চাইতো, বারবার পীড়াপিড়ী করতে লাগলো তাকেও Dark power গুলো দেয়ার জন্যে। প্রথমে রাজি না থাকলেও একাকি থাকতে থাকতে একসময় কেইন রাজি হয়ে গেল একজন সঙ্গী পাওয়ার জন্য। Embrace করে Enoch কে ভ্যাম্পায়ার বানানো হলো।
অর্থাৎ মিথলোজি মতে Enoch হলো ভ্যাম্পায়ারের ২য় জেনেরেশান। Enoch কেইনের প্রথম সন্তানের মত হয়ে থাকলো, খুবই ভক্ত ছিলো সে কেইনের। দিনকাল বেশ ভালোই যাচ্ছিলো কেইনের, এরমাঝেই সে তার রাজ্যে এক জোড়া যুগল দেখতে পেলো। তাদের ভালোবাসা কেইনকে বড়ই মুগ্ধ করেছিলো, ফলে তাদের এই ভালোবাসাকে অমরত্ব দিতেই তাদের Embrace করে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দিলো। এই দম্পতি যখন পরবর্তিতে বুঝতে পারে যে অমরত্বের বদলে ওরা অভিশাপ কিনে নিয়েছে এবং তারা কখনো বাবা-মা হতে পারবে না- তারা এক সাথে সূর্যালোকে আত্নহুতি দেয়।
কেইন এতটা কষ্ট পেয়েছিলো এই দম্পতির কথা উচ্চারণ করাতেও Taboo লাগানো ছিলো। এরা ছাড়াও কেইন Zillah, Irad সহ আরো কয়েকজনকে Embrace করে ভ্যাম্পায়ার বানিয়েছিলো বিভিন্ন সময় যাদেরকে কমন ভাবে এন্টিডিলিউভিয়ান বলা হয়। সবশেষে নূহ(আঃ) এর মহাপ্লাবনের সময় কেইনের রাজ্যের সব কিছু ধবংস হয়ে যায়, হাতে গোনা এন্টিডিলিউভিয়ান ছাড়া কেউ সার্ভাইভ করতে পারেনি। সর্বশেষ এই আঘাতের এর পরে কেইন আর নিজেকে দাড়া করাতে পারে নি, সম্পুর্ণ ভাবে নিজের ভিতর নিজেকে গুটিয়ে ফেলে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় অজানা কোথাও। পরবর্তিতে বাকি রয়ে যাওয়া একেক সার্ভাইভিং এন্টিডিলিউভিয়ান নিজ ভাবে নানা মিথলোজিতে আত্নপ্রকাশ করতে থাকে।
রেফারেন্সঃ
১) https://en.wikipedia.org/wiki/Book_of_Genesis
২) Click This Link
৩) http://dictionary.reference.com/browse/Abel
৪) https://en.wikipedia.org/wiki/Cain_and_Abel
৫) http://en.wikipedia.org/wiki/Lilith
৬) http://www.newadvent.org/cathen/03142b.htm
৭) http://en.wikipedia.org/wiki/Ubar
৮) Click This Link
এবং আরো বিভিন্ন সংগৃহীত মিথলোজি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।