আমি খুবই সাধারণ
আমি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল, আলোচনা অনুষ্ঠান,সেমিনায় গেলে যেসব প্রচলিত জাল হাদীস(?) শুনতে পাই। হাদীসের পরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়েছি কারণ এগুলো হাদীসও না,কারণ তাদের অধিকাংশই কোন হাদীস গ্রন্থে পাওয়া যায় না। আমি এসব জাল হাদীস বাদ দিয়ে সহীহ বা হাসান পর্যায়ের হাদীস বর্ণনা করার অনুরোধ করছি।
কারণ যেসব হাদীস সহীহ তাদের উপরেই আমল করতে ব্যর্থ হচ্ছি তার উপর আবার অন্যান্য জাল হাদীস বর্ণনা করার কি কোন প্রয়োজন আছে কি?
যা জাল হাদীস তা কোন দিনও রাসুলের বাণী ছিলো না, তা বর্ণনা করলে আল্লাহর রাসুলের উপর মিথ্যারোপ করা হয়, তাই এই কবীরাহ গুনাহ থেকে বিরত থাকা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
প্রথমে জানা যাক জাল হাদীস কি ও এর কুপ্রভাব কি?
জাল হাদীস:
জাল হাদীস হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের নামে চালিয়ে দেয়া মিথ্যা কথা যা আদৌ রাসুল (সাবলেননি।
জাল হাদীস হচ্ছে হাদীসের একটি পরিভাষা। হাদীসের পরিভাষা জানতে আমার পূর্বোবর্তী ব্লগ পড়ুন। “যে হাদীসের রাবী জীবনে কখনও রাসুল (সা এর নামে কোন মিথ্যা কথা রচনা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে এমন কোন লোকের থেকে সংগ্রহ করা হাদীসকে মওযু বা মাউদু বা জাল হাদীস বলে। (জাল হাদীস-খন্দকার আবুল খায়ের, খন্দকার প্রকাশনী, ১১পৃষ্ঠা)
এধরনের হাদীসকে বানোয়াট নামেও অভিহিত করা হয়।
যদি প্রমাণিত হয় যে কোন দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী ইচ্ছাকৃতভাবে বানোয়াট কথা রাসূলুল্লাহর (সা নামে সমাজে প্রচার করতেন, বা ইচ্ছাকৃতভাবে হাদীসের সূত্র (সনদ) বা মূল বাক্যের মধ্যে কমবেশি করতেন, তবে তার বর্ণিত হাদীসকে মাওযূ বা জাল বা বানোয়াট হাদীস বলে।
(হাদীসের নামে জালিয়াতি: প্রচলিত জাল হাদীস্ ও ভিত্তিহীন কথা,খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর,আস-সুন্নাহ পাবলিকেশন্স, ৪৩পৃষ্ঠা)।
এ ধরনের হাদীস জঘন্যতম দুর্বল হাদীস।
তবে এখানে উল্লেখ্য যে. অনিচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা বলা বা যাচাই বাছাই না করে বলা মিথ্যা কথাও জাল হাদীস হিসেবে গণ্য।
কথা হচ্ছে জাল হাদীস বর্ণনার কোন লাভ না থাকলেও ক্ষতি অনেক তা নিম্নে বর্ণিত হল:
জাল হাদীস এমন হাদীস যা কখনও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেননি।
তাই অন্য একজনের কথাকে রাসুলের কথা মনে করা কি অন্য ব্যক্তিকে রাসুলের কথার মর্যাদা দেয়া রাসুলের প্রতি অবমাননা নয় কি? আমরা রাসূলের একটু অবমাননা করলে ফেটে পড়ি, অথচ প্রতিনিয়ত জাল হাদীস বর্ণনাকারীদেরকে সুযোগ দিচ্ছি তাদের মাথায় তুলে রাখছি।
এর বিচার কি হওয়া উচিত?
জাল হাদীস বর্ণনা করার মাধ্যমে আমরা পরোক্ষভাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করি যে, আল্লাহর রাসুল (সাপ্রচারকৃত বিধান অসম্পূর্ণ। নাউযুবিল্লাহ।
জাল হাদীসের উপর আমল করে আমরা যা আমাদের জন্য করণীয় নয় তা আমরা নিজেদের উপর ওয়াজিব করে নিচ্ছি। তা কি মানব রচিত বিধান নয় কি?
জাল হাদীসের উপর আমল করেও আমার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আল্লাহ ও তার রাসুল যা বলেননি তা করে আমরা পন্ডশ্রম করছি।
উপরন্ত আমরা সহীহ হাদীসের উপর জাল হাদীসকে প্রাধান্য দিয়ে সহীহ হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছি।
সুন্নাতকে আমরা অবহেলা করছি।
জাল হাদীসের মাধ্যমে আমরা বিদআত-এর প্রচার করছি। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
জাল হাদীস বর্ণনা করা কবীরা গুনাহ।
কোন জাল হাদীস জানার পর কোন মুমিনের তা বলা বা পালন করা হারাম।
সমাজে জাল হাদীস চিহ্নিত করা ও এগুলোর খপ্পর থেকে সমাজকে রক্ষা করা আমাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
এখন আমি কতগুলো প্রচলিত জাল হাদীস উল্লেখ করছি:
• যদি তুমি না হতে আমি আকাশ মন্ডলি কিছু্ সৃষ্টি করতাম না।
• আল্লাহ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেছেন,তাহচ্ছে আমার নূর।
• দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।
• আমার সাহাবীগণ নক্ষত্র সমতুল্য্।
তাদের যাকেই অনুসরণ করবে, সঠিক হেদায়াত পাবে।
• আমি ইলমের বা জ্ঞানের শহর আর আলী হচ্ছে তার দরজা।
• আমার উম্মতের মধ্যে মতবিরোধ আল্লাহর রহমত স্বরুপ।
• যার কোন সন্তান জন্মাল আর বরকত পাওয়ার জন্য তার ছেলের নাম মোহাম্মদ রাখল তাহলে সে ও তার সন্তান উভয়েই জান্নাত থাকবে।
• প্রত্যেক নাবীর জন্যেই একজন করে তত্তাবধায়ক থাকে, আলী আমার তত্ত্বাবধায়ক ও ওয়ারীশ।
• যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল যে, সে তার যামানার ইমামকে চিনল না,সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।
• হযরত আদম (আ ভারত থেকে পায়ে হেটে ১হাজার বার হজ্জ করেছেন।
• তোমাদের দস্তরখানাকে সবজি দ্বারা সৌন্দর্যমন্ডিত কর,কারন তা বিসমিল্লাহ বলে আহার করলে শয়তানকে বিতাড়ন কারী যন্ত্র।
• .দুনিয়া হচ্ছে মু’মিন ব্যক্তির এক পদক্ষেপ।
• দুনিয়া হতে তোমরা বেচে চল,কারণ তা হচ্ছে হারুত ও মারুতের চেয়েও অধিক জাদুকর।
• দুনিয়া হচ্ছে আখেরাতের সতীন।
• যে আসরের পড়ে ঘুমাবে,তার জ্ঞান ছিনিয়ে নেয়া হবে। ফলে সে শুধুমাত্র নিজেকেই দোষারোপ করবে।
• নাবীগণ হচ্ছেন নেতা,ফাকীহগণ হচ্ছেন সর্দার আর তাদের মজলিসগুলো হচ্ছে অতিরিক্ত।
• যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ যিয়ারত করল,অথচ আমাকে যিয়ারত করল না,সে আমার ব্যাপারে রূঢ় আচরণ করল।
• যে ব্যক্তি আমাকে এবং আমার পিতা ইবরাহীমকে একই বছরে যিয়ারত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
• যে ব্যক্তি হজ্জ করবে,অত:পর আমার মৃত্যুর পর আমার কবর যিয়ারত করবে,সে যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে জীবদ্দশায় আমার সাথে সাক্ষাত করেছে।
• সন্তান তার পিতার উত্তম ভূমি।
• যে ব্যক্তি তার পিতামাতা উভয়ের কবর প্রত্যেক জুম’আর দিবসে যিয়ারত করবে। অত:পর তাদের উভয়ের নিকট সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে,প্রতিটি আয়াত অথবা অক্ষরের বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
• তোমরা বৃদ্ধদের ধর্মকে আকড়ে ধর।
• যখন কেউ শেষ যামানায় এসে যাবে এবং মতামতগুলো বিভিন্নরূপ হয়ে যাবে,তখন তোমরা মফস্বলবাসী ও নারীদের ধর্মকে ধারণ করবে।
• যদি নারী জাতি না থাকত,তাহলে সত্যিই সত্য আল্লাহর ইবাদাত করা হত।
• তোমরা তিনটি কারণে আরবী ভাষাকে ভালবাস। আমি আরবী,কুরআন আরবী এবং জান্নাতের ভাষাও আরবী।
• ৫৯.যখনই তোমরা কিতাবুল্লাহ হতে কিছু প্রাপ্ত হবে তখনই তার উপর আমল করবে। তা ছেড়ে দিতে তোমাদের কারো ওযর চলবে না। যদি কিতাবুল্লাহতে (সমাধান) না থাকে,তাহলে আমার নিকট হতে প্রাপ্ত অতীত সুন্নাহকে গ্রহণ করতে হবে। যদি আমার পক্ষ হতে অতীত কোন সমাধান না মিলে, তাহলে আমার সাহাবীগণ যা বলেছেন তা গ্রহণ করবে। কারণ আমার সাহাবীগন আসমানের নক্ষত্রের ন্যায়।
অতএব তোমরা যে কোন জনের কথা গ্রহণ করলেই হেদায়াত প্রাপ্ত হবে। আমার সাহাবীগণের মতভেদ তোমাদের জন্য রহমত স্বরূপ।
• তওবাকারী আল্লাহর বন্ধু।
• মুমিনের উচ্ছিষ্টে রয়েছে আরোগ্য।
• খতীব যখন মিম্বারে উঠে যাবে:তারপর কোন সালাতও নেই কোন কথাও নেই।
• একমাত্র ঈসা (আ হচ্ছে মাহদী।
• তাকবীর (আযানের) হচ্ছে পৃথক পৃথকভাবে।
• আমি আরবী ভাষী, কুরআন আরবী ভাষায় এবং জান্নাতীদের ভাষা আরবী।
• জুমআহ ফকীর বা মিসকিনদের হজ্জ।
• মোরগ হচ্ছে আমার উম্মতের দরিদ্রদের ছাগল আর জুমআহ হচ্ছেআমাদের দরিদ্রদের হজ্জ।
• মসজিদ ছাড়া মসজিদের প্রতিবেশীর সলাত হবে না।
• পুরুষদের সৌভাগ্য রয়েছে তার হালকা পাতলা দাড়িতে।
• যে আমার কবরের নিকট আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করবে, আমি তা শ্রবণ করি এবং যে ব্যক্তি আমার প্রতি দূর হতে দরুদ পাঠ করবে: একজ ফেরেশতাকে তা আমর নিকট পৌছে দেয়ার জন্য দায়িত্ব দেয়া হবে এবং তা তার দুনিয়া ও আখিরাতের কর্মের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে এবং আমি তার জন্য সাক্ষী বা সুপারিশকারী হয়ে যাব।
• চোখের নীল বর্ণ মঙ্গলজনক, দাউদ (রা ছিলেন নীল বর্ণধারী।
• হজ্জ হচ্ছে বিবাহের পূর্ব কর্ম।
• যে ব্যক্তি হজ্জ করার পূর্বে বিবাহ করল সে গুনাহ করা শুরু করল।
• চিন্তা হচ্ছে ইবাদাতের অর্ধেক আর অল্প খাদ্য গ্রহণই হচ্ছে ইবাদাত।
• আদম (আ-কে সৃষ্টিকৃত মাটির অবশিষ্টাংশ হতে খেজুর গাছ আনার গাছ ও আঙ্গুর গাছ সৃষ্টি করা হয়েছে।
• যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা আল-ওয়াক্বিয়াহ পাঠ করবে তাকে কথনও অভাব গ্রাস করবে না।
• কুরবানী করা হয়েছিল ইসহাককে।
• তোমরা আলেমদের অনুসরণ কর,কারণ তারা হচ্ছে দুনিয়ার চেরাগ আর আখেরাতের প্রদীপ।
• জ্ঞান অনুসন্ধান করার মধ্য ছাড়া মুমিনের চরিত্রের মধ্যে হিংসা ও তোষামোদী থাকতে পারে না।
• যে সম্প্রদায়কেই তর্কশাস্ত্র দেয়া হয়েছে, তাদেরকে কর্ম (ইবাদাত) হতে বিরত করে দেওয়া হয়েছে।
• চীন দেশে গিয়ে ০হলেও তোমরা জ্ঞান অন্বেষণ কর।
• তোমরা মহিলাদের সাথে পরামর্শ কর এবং তাদের বিরোধিতা কর।
• কিয়ামতের দিন লোকদেরকে ডাকা হবে তাদের মায়েদের পরিচয়ে,আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য।
• কোন পাথরের উপর তোমাদের কেউ যদি বিশ্বাস স্থাপন করে তাহলে অবশ্যই তা তার উপকার করবে।
• নারীরা হচ্ছে খেলনার পাত্র অতএব তোমরা তাদের বাছাই করে নাও।
• আমার উম্মাতের আলেমগণ বানি ইসরাইলের নাবীগণের ন্যায়।
• যে ব্যক্তি মাগরীব এবং এশার মধ্যে বিশ রাকআত সলাত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন।
• প্রত্যেক প্রবাহিত রক্তেই ওযূ করতে হবে।
• বাদশা হচ্ছে আল্লাহর যমীনে তার ছায়া যে তাকে নসীহত করবে হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যে তার সাথে প্রতারণা করবে সে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
• পায়ে হেটে আগত হজ্জকারীর জন্য সত্তরটি হজ্জের সওয়াব। আর আরোহন করে হজ্জে আগত ব্যক্তির সওয়াব ত্রিশটি হজ্জের সমান।
• ধৈর্য হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক আর বিশ্বাস হচ্ছে পুরো ঈমান।
আমি কিছু জাল হাদীস লিখে দিলাম কিন্ত কেন তা জাল তা বর্ণনা করি নি। পরে সময় হলে তা বর্ণনা করব। কারও কোন হাদীস নিয়ে সন্দেহ থাকলে তা জানাবেন আমি জানানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।