‘তুমি যাকে মৃত্যু বল, তুমি যাকে বল শেষ, সমূল পতন
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বস্তি এনে দিলো আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু। আমেরিকার মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার শীর্ষে থাকা লাদেন একদিনে এই অবস্থানে উঠে আসেননি। জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেড়িয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন লাদেন। মুসলমানদের একাংশের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও আমেরিকার চোখে তিনি ছিলেন এক নম্বর শত্রু। বিতর্কিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সারা বিশ্ব জুড়েই আলোচিত ছিলেন আল কায়দার এই শীর্ষ নেতা।
১৯৫৭ সালে সৌদি আরবের রিয়াদে এক ধনাঢ্য পরিবারে দেশটির শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেনের ১৭তম সন্তান হিসাবে জন্ম নেন ওসামা। ওসামারা ছিলেন ৫১ ভাইবোন। তবে, কারো কারো মতে তিনি ছিলেন মোহাম্মদ বিন লাদেনের একমাত্র ছেলে।
ওসামার মা হামিদা আল আত্তাস মোহাম্মদ বিন লাদেনের দশম স্ত্রী ছিলেন। ওসামার জন্মের পর তার মা মোহাম্মদ আল আত্তাসকে বিয়ে করেন।
নতুন পরিবারে ওসামার ছিলো ৩ সৎ ভাই ও এক বোন।
লাদেনের নিজের পারিবারিক জীবন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ১৭ বছর বয়সে ওসামা প্রথমবারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সিরিয়ায় বসবাসরত এক দূর সম্পর্কের বোনকে তিনি বিয়ে করেন। পরে অবশ্য আরও চারবার তিনি বিয়ে করেছিলেন বলে জানাযায়।
ধারণা করা হয়, তার ছেলে মেয়ের সংখ্যা ২৫ থেকে ২৬ জন।
সৌদির কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি ও ব্যবসা প্রশাসনে ডিগ্রি নেন লাদেন। সেখানে পড়াশুনা করা অবস্থাতেই তার আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় জিহাদ। সেখান থেকে তিনি জড়িয়ে পড়েন উগ্র ধর্মীয় সংগঠনের সাথে।
১৯৭৯ সালে ছাত্র অবস্থাতেই ওসামা সর্বপ্রথম ধর্মীয় সংগঠন আবদুল্লাহ আজ্জামে যোগ দেন।
কিছুদিন পড়েই গড়ে তোলেন নিজের সংগঠন মাক্তাব আল খিদমাহ। ওই বছরের ডিসেম্বরে সেভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে হামলা চালায়। তিনি সেভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করেন। গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘ওই সময় ওসামাসহ মুজাহিদদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষন দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)।
১৯৮৮ সালের দিকে নতুন সংগঠন আল-কায়েদাকে সংগঠিত করতে থাকেন।
একসময় এ সংগঠনই হয়ে উঠে বিশ্ব সন্ত্রাসের অপ্রতিদ্বন্দী নাম। মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে আল কায়েদাকে।
১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় ওসামার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। রাশিয়া নয় তখন যুক্তরাষ্ট্র ওসামার শত্র“ হয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি মিশ্র যুদ্ধ কৌশল প্রয়োগ করেন।
আমেরিকানদের বিষয়ে তিনি বলতেন, ‘আমি সব সময় আমেরিকানদের হত্যা করি। কারণ, তাঁরা আমাদেরকে হত্যা করে। আমরা যখন মার্কিনিদের ওপর হামলা চালাই, তখন আমরা অন্যদের ক্ষতি করি না। ’
১৯৯৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধে নানাবিধ সন্ত্রাসী হামলা ও কর্মকাণ্ডের অভিযোগের পরিপ্রেেিত সৌদি সরকার তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে।
১৯৯৮ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে ওয়ার্ল্ড ফ্রন্টের পে ওসামা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বিপে জিহাদ ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘আমেরিকা ও তাঁর মিত্রদের হত্যা করা মুসলমানের দায়িত্ব। ’ এর ছয় মাস পর কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয়।
২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপি পরিচিত লাভ করে আল কায়েদা। একই সাথে লাদেনও পরিণত হন আমেরিকার এক নম্বর শত্র“তে। তিনি সকল মুসলিমকে আমেরিকা ও ইসরাইলের ইহুদিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আহ্বান জানান।
ব্যক্তিগতভাবে উগ্র ধর্মীয় পন্থায় বিশ্বাসী ওসামা মনে করতেন মোল্লা ওমরের নেতৃত্বাধীন তালেবান রাষ্ট্র আফগানিস্তানই বিশ্বের একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র। এই প্রেেিত আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর ওসামা মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর মোস্ট ওয়ান্টেট তালিকার শীর্ষে ঠাঁই পান। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দুই কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
তালেবান বিরোধী আফগান যুদ্ধে মার্কিনীরা একাধিকবার তাকে হত্যার চেষ্টা চালালেও প্রতিবার তিনি বেঁচে যান।
এমনকি তিনি ঠিক কোথায় অবস্থান করছেন তা বের করাও দুঃসাধ্য হয়ে উঠে মার্কিন বাহিনীর কাছে। তবে এতদিন ধারণা করা হতো, ওসামা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী পাহাড়ি কোন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
২০০১ সালের নাইন ইলেভেন এর ঘটনার পরে বিন লাদেন ও আল-কায়েদার দ্বিতীয় প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরির বক্তব্যসহ ৬০টির বেশি ভিডিও প্রকাশিত হয়।
২০০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হামলার ছয় বছর পূর্তিতে প্রকাশিত ভিডিওতে লাদেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনীতি ও সামরিক ভিত্তি সত্ত্বেও দেশটি বেশ ভঙ্গুর। আগের বিভিন্ন ভিডিওতে নানা হুমকি দেওয়া হলেও এ ভিডিওতে কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হয়নি।
’
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরা সচিব রবার্ট গেটস বলেন, ‘লাদেন কোথায় আছে তা যুক্তরাষ্ট্র জানে না এবং আগের কয়েক বছর ধরে লাদেনের অবস্থান ও কার্যক্রম সম্পর্কেও তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। ’
অবশেষে রবিবার যবনিকা ঘটে সবকিছুর। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের ১০০ কিলোমিটার উত্তরে এবোটাবাদ এলাকায় একটি বাড়িতে মার্কিন অভিযানে অন্য সদস্যসহ বিন লাদেন নিহত হন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।