আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেনার ধর্ষন এবং ইস্লামী বিধান



যৌনতা নিঃসন্দেহে মানুষের সামাজিক সম্পর্কগুলোকে সবচেয়ে বেশী অনুপ্রাণীত করে এবং প্রভাবিত করে। সামাজিক নৈতিকতা ও সম্মিলিত শুভবোধ কিংবা সামাজিক সংস্কারের তুলনায় অনেক বেশী প্রকট সম্ভবত মানুষের যৌনসংস্কার। সামাজিক মানুষের একত্রবাসের শর্ত মানুষের নিজস্ব প্রয়োজন। প্রয়োজন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, শাররীক নিরাপত্তা এবং এইসব প্রয়োজন অনুভুত হয়েছিলো বলেই একত্রবাসের কোনো একটা সময়ে গোত্রভিত্তিক অনুশাসন প্রণীত হয়েছে। অবশ্যই সেখানে অনেকগুলো শর্ত বিদ্যমান ছিলো, বৈধতা এবং অবৈধতার স্পষ্ট সংজ্ঞা ছিলো, এবং যেকোনো সামাজিক শর্ত বরখেলাপ হয়ে যাওয়ার মতো সেখানেও অসংখ্য ফাঁক-ফোকর ছিলো।

সামাজিক অনুশাসন কিংবা সম্মিলিত নৈতিকতা কোনো সময়ই ততটা কঠোর ছিলো না, এমন কি এখনও তেমন নেই, মোটা দাগের বিধি-নিষেধের উপস্থিতি সব সময়ই ছিলো, তবে সেসবের প্রয়োগে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং সামাজিক অবস্থান সবসময়ই প্রভাবকের ভুমিকা রাখতো। একই অপরাধে কঠোর এবং কোমল শাস্তির বিধান নতুন নয়। একই অপরাধে কারো গর্দান কাটা পড়লেও সেই একই অপরাধ করে অন্যের জন্য বরাদ্দ ছিলো শুধু ভৎর্সনা। আইন কোনো সময়ই সবার জন্য সমান ছিলো না, এবং এখনও আইনের প্রয়োগ হয় আদিম নিয়মেই। মোটা দাগের অপরাধ বিবেচিত হয়েছে প্রাণহরণ কিংবা বঞ্চনা।

গোত্রের নারীর প্রতি প্রভুত্বের ভঙ্গিটা সব সময়ই ছিলো। নারী গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতো তার প্রজননসক্ষমতা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় যোদ্ধা কিংবা কর্মী সরবরাহের একমাত্র যন্ত্র হিসেবে। এবং সে কারণেই যৌনতার অসংখ্য বিধান উপস্থিত ধর্মে। বৈধ যৌনসম্পর্ক, যা বর্তমানের সময়ে আমরা স্বীকার করে নিয়েছি, বৈশ্বিক ভাবে স্বীকৃত বৈধ সম্পর্কগুলো সামাজিক যোগাযোগের অন্তর্গত সকল দেশেই প্রায় একই রকমের। বাকি যা থাকে, অবৈধ যৌনসম্পর্কসম্পর্কিত বিধান, সেসব নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত নারীকে একটা অবস্থানেই রেখেছে ধর্ম। তার প্রজননসক্ষমতার বাইরে তেমন ভাবে নারী বিবেচিত হয় নি কোথাও। নারীর 'শাররীক শুদ্ধতা' কিংবা আমাদের সমাজের অতিপ্রচলিত ' সতীত্ব' এর ধারণাটুকু কিছুটা সামাজিক সংস্কার কিছুটা ধর্মীয় সংস্কার এবং এই সংস্কারের উৎস পুরুষাশাসিত সমাজ ব্যবস্থা। নারী দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক উৎপাদনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও তার যোগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক এবং সামাজিক স্বীকৃতি পায় নি কখনও। ধর্মশাসিত কিংবা ধর্মীয় অনুশাসনশাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীকে বিভিন্ন উৎপাদনে সরাসরি নিযুক্ত দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত নারীর শ্রমোৎপাদিত সম্পদের দাবিদার ছিলো পুরুষ।

নারীর স্বাধীন সত্ত্বা কিংবা স্বাধীন ইচ্ছার অনুপস্থিতিতে নারীকে রমন সন্তানউৎপাদন এবং মাংনা শ্রমের উপাদানের বাইরে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে ভাববার অবকাশ তৈরি হয় নি। উনবিংশ শতাব্দীতে রাষ্ট্রে বিশেষত পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতে ধর্মীয় অনুশাসনের কঠোরতা কমে যাওয়ায় নারীদের সামাজিক উপস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি আরও বৃদ্ধি পায়। যন্ত্রযুগে নারী শ্রমিক হয়ে উঠবার পর নারীর শ্রমের মূল্য নির্ধারিত হলো, অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নারীর অংশগ্রহন নারীর সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা সীমিত পর্যায়ে হলেও বাড়িয়ে দিলো। সময়ের সাথে রাষ্ট্র এবং নীতি বদলেছে, অতীতে অনুপস্থিত অনেক ধারণাই বদলেছে কিন্তু ধর্মে নারীর অবস্থান বদলায় নি, নারীর শুদ্ধতা এবং যৌনবিশুদ্ধতাবাদী ধারণার বদল হয় নি। ধর্ম এখনও নারীকে তার অতীত পাপের দায় থেকে মুক্তি প্রদান করে নি।

পশ্চিমা রাষ্ট্র যখন নারীর শরীরে নারীর অধিকার মেনে নিয়েছে দ্বিধাহীন ভাবে ধর্ম সে অধিকার প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে কিংবা বলা যায় ধর্ম যুগের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে। নারীর শরীরে নারীর অধিকারের স্বীকৃতি দিতে গিয়ে যেকোনো শাররীক সম্পর্ক স্থাপনের আগে নারীর সম্মতির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে রাষ্ট্রীয় আইন, নারীর শরীরে নারীর অসম্মতিতে যেকোনো হস্তক্ষেপ শাররীক আগ্রাসন চিহ্নিত হচ্ছে যখন সেসময় ধর্ম কি ধর্ষণকে তার বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে বাংলাদেশে শহরের সামান্য কয়েকজন শিক্ষিত মানুষ এ ধারণাতে অভ্যস্ত হলেও সামাজিক ভাবে এ ধারণা এখনও গ্রহনযোগ্যতা পায় নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে এখনও তেমনভাবে রাষ্ট্র এবং শিক্ষার উপস্থিতি নেই, সেখানে নারীর জীবন সামাজিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে পরিচালিত হয়। কিশোরী হেনা ধর্ষিত হয়েছিলো, তার বাসার সামনে তারই পরিচিত মানুষের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলো হেনা, পরবর্তীতে গ্রাম্য ইমাম তাকে জেনার দায়ে অভিযুক্ত করে এবং এর শাস্তিস্বরূপ তাকে ভেজা গামছা দিয়ে আঘাত করা হয়, হেনা মৃত্যুবরণ করে, নারী ছলনাময়ী এবং তার শরীর দিয়ে পুরুষকে প্রলুব্ধ কওরে, তাদের বিপথগামী করে এবং সুযোগ পেলে ঘর ভাঙতে উস্কানী দেয়, 'জেনা' অপরাধ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ একারণেই, এখানে নারীকে যৌনআগ্রাসী কল্পনা করা হয়েছে, পুরুষের যৌনকল্পনা উস্কে দিতে পারা নারীরা পুরুষকে প্রলুব্ধ করে তারা নির্ভেজাল সামাজিক ও পারিবারিক জীবন ধ্বংস করছে, আমরা অপরাধী হেনার বয়ান জানতে পারি না, পরবর্তীতে হাসপাতালে হেনার মৃত্যু এবং সংবাদপত্রে এটার ব্যপক প্রচারণায় আমরা জানতে পারি দীর্ঘ দিন ধরেই এই অপরাধের পশ্চাতপট নির্মিত হচ্ছিলো,হাইকোর্ট এইসব ফতোয়ার বিরুদ্ধে তার অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করেছে এই ঘটনায়। পূর্বে ফতোয়া নিষিদ্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল হয়েছে, সেটার শুনানী চলছে বর্তমানে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের মনোনীত পাঁচ জন আলেম পাঠিয়েছেন শুনানীতে, যারা ফতোয়া এবং ইসলামী বিধি বিষয়ে আদালতকে অবহিত করবেন, তাদের একজন যা বলেছেন তার সারাংশ হলো ফতোয়া নিষিদ্ধ হলে ইসলাম বিপন্ন হয়ে যাবে, ফতোয়া কোনো আদেশ জারী নয় বরং এটা তথ্য জানানো, ফতোয়ার সারমর্ম জেনে যারা এই অপরাধের বিচার করছে তারা প্রকৃত অপরাধী।

তারা এই ফতোয়া প্রদানকেও ইসলামসম্মত নয় বলছেন, কিন্তু সে সচেতনতা কি আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের আছে, তারা মসজিদের ইমাম, শুক্রবারের জামাতের সামণে দাঁড়িয়ে থাকা বুজুর্গকে ইসলামী আইনের দিকপাল ভাবে। এইসব গ্রাম্য ইমাম কিংব এদের পরিবর্তে যারা ধর্মবিধান এবং যে মোতাবেক শাস্তির বন্দোবস্ত করে তারা ' জেনা' এবং 'ধর্ষণ' আলাদা করতে পারেন না। ইসলাম ধর্মমতে ধর্ষণের কোনো শাস্তি নেই এটা হয়তো তারা এখনও জানেন না। ধর্ষণ ইসলাম ধর্মমতে কোনো অপরাধ নয় , সুতরাং পাত্র পাত্রী অবিবাহিত হলে তাদের বিয়ে করিয়ে দেওয়ার " ধর্মীয় বিধান", তাদের একশ বার বেত্রাঘাত করবার বিধান, যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাদের পাথর ছুড়ে মেরে ফেলবার বিধানটি কোন ক্ষেত্রে ধর্ষণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে এটা নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। একজন হেনার মৃত্যু এবং হাইকোর্টের সচেতনতার বাইরে এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারী নিষ্পেষণের জলন্ত উদাহরণ, ক্ষমতা এবং অন্ধত্বের , কিভাবে নারীদের মানসিকতায় পুরুষতান্ত্রিকতা গেড়ে বসেছে সেসব বৃত্তান্ত উঠে আসে হেনার মৃত্যুর ঘটনায়।

ধর্ম শুভ অনুগামী, আমাদের সুন্দর এবং সততার পথ শেখায়, ইতিহাস আমাদের শেখায় অতীতের ভুল শুদ্ধ করে সুন্দর আগামীর দিকে এগিয়ে যেতে, ইতিহাসলগ্নতা কিংবা ঐতিহ্য অনুসরণ কখনই অতীতের পূনরাবৃত্তি নয়, বরং সেখানে নতুন ভাবনাকে স্থান দিতে হবে, যারা এখন ধর্ম নিয়ে ভাবছেন তাদেরও বুঝতে হবে সময় এসেছে ধর্মের অনেক বিধিবিধানকে নতুন করে ব্যাখ্যা করতে হবে। সরকার ফতোয়া প্রদানের অধিকার সীমিত করতে চাইছে, সুপ্রীমকোর্টের বার এসোসিয়েশনের সভাপতিও কোন কোন ক্ষেত্রে ফতোয়া দেওয়া বৈধ এ বিষয়ে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা চান । সরকার অতীতে ঘোষণা করেছে তারা ফতোয়া বিরোধী নন বরং যোগ্য ব্যক্তি যেনো ফতোয়া দিতে পারেন এটা তারা নিশ্চিত করতে চান। কারা ফতোয়া দেওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন, প্রশ্নটা সামনে আসলে এর উত্তরে আমরা জানবো যাদের ইসলামী আইন ও জীবনবিধান সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান আছে তারাই ফতোয়া দেওয়ার উপযুক্ত, একজন ব্যক্তি ইসলামী জীবনবিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলেই কি তিনি পরিস্থিতি বুঝে কোনো নতুন নির্দেশনা দিতে সক্ষম হবেন, হেনার ক্ষেত্রে কি এমন কোনো সম্ভবনা ছিলো। অতীতের দৃষ্টান্তের আক্ষরিক অনুগমন করে তিনি হয়তো অপরাধীকে হেনাকে আর্থিক ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারতেন, অতীতে জোরপূর্বক সঙ্গমের প্রতিবিধান হিসেবে ইমাম মা'লিকী এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন " যদি কোনো নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উত্থাপন করে এবং অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করে তবে অভিযুক্ত তাকে তার মোহরের স্মপরিমাণ অর্থ প্রদান করবেন ক্ষতিপুরণ হিসেব। হাদিসে সঙ্গমে বাধ্য করবার বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবেন তিনি। কিন্তু কোরানে সেটা খুঁজে পাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই, পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শাররীক সম্পর্ককে আমলে এনেছে কোরাণ আর কোরানে নারীর অধিকার বিষয়ে সীমিত যতটুকু বর্ণিত আছে সেখানে কোথাও নারীর শরীরে নারীর অধিকারের স্বীকৃতি নেই। ফিকহ অধ্যায়ন করে তিনি হয়তো আর্থিক ক্ষতিপুরণ দেওয়ার বাইরে নতুন কিছু খুজে পাবেন না, বরং তিনি আরও একটু অধ্যায়ন করলে জানবেন আর্থিক ক্ষতিপুরণ প্রদান এবং জোরপূর্বক সঙ্গমলিপ্ত হওয়ার শাস্তিআদতে অভিযুক্তের উপরে জুলুম হয়ে যায়, তাকে একই অপরাধে দুইবার শাস্তি পেতে হচ্ছে। ইসলামী বিধানগুলো সম্পর্কে আমাদের উচ্চতর শিক্ষালয়গুলোতে যা পড়ানো হয় সেসব লেখা হয়েছে মধ্যযুগে, মানে পঞ্চদশ শরকের জ্ঞান দিয়ে তারা কতটুকু আধুনিক ভাবনার ধারক বাহক হবেন এ বিষয়ে সংশয় থাকলেও উচ্চতর বিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের জোরে তারা কিন্তু ঠিকই ইসলামী জীবন বিধান সম্পর্কে তার পারদর্শীতা দাবী করতে পারেন।

ধর্ষণ বিষয়ে ইসলামিক আইনের দুর্বলতা হলো এখানে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের দায় বাদীর, বাদী যদি কারো বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উত্থাপন করেন তবে তাকে এর প্রমাণ দিতে হবে। চারজন সাক্ষী রেখে ধর্ষণ করবার একটা ঘটনা হাদিসে বর্ণিত আছে কিন্তু সেখানে বেশ স্পষ্ট বর্ণনা না থাকায় ওমর ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্তকে অভিযোগ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত না হওয়ায় মুক্তি দিয়েছিলেন, যদিও তিনজন সাক্ষী নিশ্চিত ভাবেই ধর্ষণের কথা বলেছিলো। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত নারীর কোনো শাস্তি প্রাপ্য নয়, এ অভিমত দিয়েছেন ইবন হাজেম, যে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় এসেছে তাকে নিঃসংকোচে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে দেওয়া উচিত, কিন্তু এক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তাকে আদালতে হাজির করা হবে, যদি সে এই অভিযোগ অস্বীকার করে তবে ' ধর্ষিতা নারীর" বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপনের দায়ে অন্যান্য আইনপ্রনেতাগণ যে শাস্তি বরাদ্দ করেছেন সেটা প্রদান করা যথার্থ হবে না। একজন মুসলিম সদা সত্য কথা বলবেন এবং তিনি আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচে নিজের জেনার অপরাধ স্বীকার করে নিবেন, এই ভবনার ভেতরে একটা ইউটোপিয়া থাকলেও পাঁচশ বছর আগে মনীষিরা এমনটাই ভাবতেন। আপাতত প্রশ্ন হলো হেনা কি ইসলামী আদালতে ন্যায় বিচার পেতো সে কি চার জন সাক্ষ্য হাজির করতে পারতো আদালতে কিংবা গ্রাম্য সালিশে, ধর্মের পুরুষতান্ত্রিকতা যেভাবে প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে এই ঘটনায় তাতে হেনাকে ধর্ষণের অভিযোগ মেনে নেওয়ার সম্ভবনা ছিলো ক্ষীণ, বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞদের ভিন্ন ভিন্ন মতের কারণে এমন কি ধর্ষিত হেনা যে শাস্তি পেয়েছে সে শাস্তিই পেতো, ইসলাম তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতো না, কিন্তু শরীয়তের বিধান তাকে এভাবেই প্রকাশ্য জনসমক্ষে পিটিয়ে হত্যা করতে পারতো।

সরকার যোগ্য ব্যক্তিকে ফতোয়া এবং ইসলামী বিচারের ক্ষমতা দিয়ে হয়তো হেনার মৃত্যু এড়াতে পারতো কিন্তু তার ধর্ষণের ন্যায়বিচার করতে পারতো না, যদি ধর্ষণে ধর্ষণে হেনা কখনও গর্ভবতী হতো তাহলে হয়তো সেটাই জোরপূর্বক সঙ্গমের পরিচায়ক হতে পারতো ইসলামী মতে, কিন্তু নিজের ধর্ষণ শরীয়া মতে প্রমাণের জন্য এমন ধারাবাহিক ধর্ষণের শিকার হতে আগ্রহী কি হতো হেনা সরোকার বিভিন্ন ধরণের শঙ্কায় কখনই ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করতে পারবে না, তাদের ভোটের হিসেব আছে, ভোটার ধর্মের প্রতি মানসিকভাবে দুর্বল ধারণা নিয়ে তারা কখনই ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করবার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন না কিন্তু যদি ফতোয়া নিষিদ্ধ করা সম্ভব নাও হয় আমাদের উপলব্ধি করতে হবে ফতোয়া আদতে সামাজিক মানসে নির্যাতনপ্রবন পুরুষতান্ত্রিকতার উপস্থিতি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.