আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গেরিলা এবং মুক্তিযুদ্ধ



মুক্তিযুদ্ধের মুভি ‌‌' গেরিলা ' দেখলাম, ভালো লাগল। কিন্তু পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই বুকের ভেতর একধরনের আতঙ্ক অনুভব করি, চোখের সামনে ধর্ষণ আর জবাইয়ের দৃশ্যগুলি ভাসতে লাগল, মনে হচ্ছিল আমি বড় ভাগ্যবান এইজন্য যে ১৯৭১ সালের আগে জন্ম হয়নি। কী ভয়ঙ্কর আতঙ্ক নিয়ে এক একটা মেয়ে দিন কাটিয়েছে ভাবলে দিশেহারা বোধ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মা-খালারা সবাই ছিলেন আমার নানাবাড়িতে। খালারা, মামীরা সবাই অল্পবয়সী, কেউ কিশোরী, কেউ তরুণী।

শোনা গেল গ্রামে মিলিটারি ঢুকেছে, মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, নানা চিন্তিত হয়ে পড়লেন, বললেন, পাকিস্তানিরা বেশিদিন টিকতে পারবে না, এরা মেয়েদের গায়ে হাত দিয়েছে, এদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। ঐদিনই নানা হার্টফেল করে মারা যান। আমার নানীর চোখের সমস্যা ছিল, ডাক্তার দেখানোর পরপর যুদ্ধ শুরু হয়, যুদ্ধের সময় নানা মারা যাওয়ায় নানীর আর পরবর্তী তারিখে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় না। ফলে তিনি দৃষ্টি হারান। যুদ্ধের পর ২৩ বছর তিনি দৃষ্টিহীন চোখ নিয়ে বেঁচে ছিলেন।

আমার খুব কাছের একজন বন্ধু মন্ঞ্জু আপা, বয়স ৫৬, অসমবয়সী এই বন্ধুর মুখে শুনি মুক্তিযুদ্ধের কথা, উনি বলেন, যুদ্ধের সময় প্রাণের ভয় যতটা না ছিল, তারচে' বেশি ছিল ইজ্জতের ভয়। প্রতিটা মুহূর্ত কাটতো আতঙ্কে। তার মুখে বিভিন্ন গল্প শুনেছি, একদিন কেউ একজন এসে খবর দিল, মিলিটারি আসতেছে, অমনি সবাই পালাতে শুরু করলো, মন্ঞ্ঝু আপাদের বুয়ার হাতে ছিল পানির কলস, উনি সবে কলসিতে পানি ভরেছেন, ঐভাবেই ছুটেছেন, একবারও মনে হয়নি পানি ফেলে দেয়া যায়, এমনই আতঙ্ক ভর করেছিল মনে। নানাবাড়িতে একদিন রাজাকারদের সাথে এলো পাকিস্তানি সেনা, আমার বড় ভাইদের ধরে নিয়ে গেল, যাওয়ার সময় আমার মা ওদের পিছে ছুট দিলেন, রাজাকারটা ছিল আমার নানারবাড়ির কামলা, আম্মা তাকে বললেন, আমার ছেলেদের নিতে দিস না, লোকটা মিলিটারি স্টাইলে মাটিতে পা ঠুকে আমার মাকে চোখ রাঙিয়ে উর্দুতে বলল, আমি কি তোমার চাকর? গেরিলায় যুদ্ধের সার্বিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। জবাইয়ের দৃশ্যগুলি এতো সরাসরি না দেখিয়ে অন্যভাবে দেখানো কি যেত না? নাসিরউদ্দিন ইউসুফ একজন প্রতিভাবান পরিচালক, তার কাজে ফাঁক থাকার কথা না, কিন্তু আমি কিছুতেই জবাইয়ের দৃশ্যগুলি ভুলতে পারছি না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।