নীলু,
বেশ কিছুদিন অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে ফিরে এলাম আবার সেই ইট-কাঠ-সিমেন্টের শহরে।
কোথায় ছিলাম? আসলে যন্ত্রের যন্ত্রণায় অস্থির হ’তে হ’তে
নিজের একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিলাম, তাই
বুক ভ’রে শ্বাস, চোখ ভ’রে সবুজ আর মন ভ’রে শুদ্ধতা নিয়ে এলাম আমার প্রিয় গ্রাম থেকে।
তুই, তোরা আমায় খুঁজে অস্থির হয়েছিস জেনে খুশি লাগছে।
মানুষের প্রবৃত্তিই বোধহয় এমন- নিজের জগতের মানুষগুলোর কাছে উপলক্ষ্য হ’তে ভালোবাসে। কী বলিস?
ধানক্ষেতের যে একটা আলাদা মিষ্টি গন্ধ আছে তা জানিস?
আরো মজার ব্যাপার- এই গন্ধটা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়।
ধান হওয়ার আগে একরকম গন্ধ, ধানের ভেতর দুধের মত সাদা হলে একরকম গন্ধ,
আর ধান পেঁকে যাওয়ার পর তো একেবারে অন্যরকম সুবাস।
এখন ধান পেঁকেছে, ধান কাটা চলছে -
যখন দুপুরের তপ্ত রোদ্দুর বেকেলের কাছে তার তেজের শেষবিন্দু সঁপে দিয়ে বিদায় নেবে নেবে
তখন মাঠে মাঠে যেন উৎসব চলে।
কৃষকের গায়ে ঘাম, আর চোখে সামনের দিনগুলোর সুস্বপ্ন যে আবহ তৈরি করে তা তোকে বোঝাতে পারবো না।
সেই মুহূর্তে মাঠের ক্ষেতের পাশ দিয়ে যেতে যেতে, পাঁকা ধানের গন্ধটাকে বুকের মধ্যে নিতে নিতে
বিষ্মিত হয়ে আবিষ্কার করলাম -
নাগরিক জীবনের পরতে পরতে মিশে থাকা অপ্রাপ্তি জনিত কষ্টগুলোকে নিতান্তই তুচ্ছ মনে হচ্ছে,
চতুর্পাশের ক্ষুদ্রতার সাথে লড়াই করতে গিয়ে বুকের মধ্যিখানের যে জায়গাটা ক্রমশঃ বিন্দুবৎ হয়ে যাচ্ছে
সেখানে মস্ত বড় আকাশের অস্তিত্ব টের পেলাম!
সেই আকাশটাকে বুকের মধ্যে সযত্নে নিয়ে আবার ফিরে এলাম তোদের মাঝে।
এখন আমি প্রস্তুত আছি হাসিমুখে অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা আর মানুষের নীচুতাকে মেনে নিতে।
শহরের ধুলোবালি-কালো ধোঁয়া, বোকা পেয়ে তরমুজওয়ালার ঠকানি, কিংবা
কবিতার পর কবিতা পাঠিয়ে পত্রিকার পাতায় নাম না পাওয়া আর অকাব্য-কুকাব্যে ঠাসা বিশেষ সংখ্যা দেখা –
কিছুতেই কিছু হবেনা আমার!
আমি বুঝে গেছি, জেনে গেছি ভালো থাকার বীজমন্ত্র।
নগরে থেকেও যদি নিজেকে অনাগরিক মনে হয়,
যন্ত্রের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে যদি নিজেকেই যন্ত্র মনে হয়,
শহুরে জটিলতার গোলকধাঁধায় নিজেকে নাজেহাল মনে হয়; আর
সব ছেড়েছুড়ে পালাতে ইচ্ছে করে তবে আমায় জানাস। আমার কাছে ওষুধ আছে!
আমার বাড়ির পাশের মাঠটা অনেক গাছ দিয়ে ঘেরা।
মাঠের ঘাস আর গাছের পাতাগুলোর সবুজ তোর চোখকে শান্তি দেবে।
রাত্তিরে মাঠের মাঝখানে ঘাসের উপর শুয়ে দেখবি
আকাশজুড়ে হাজার তারার হাসি, আর গায়ের আশেপাশে জোনাকির ছুটোছুটি।
সামনে তোর ছুটি কবে, আমার বাড়ি যাবি?
ইতি।
তোরই বন্ধু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।