ছোটবেলা থেকেই কবুতর পোষেন সাহাবুদ্দিন। একবার তিনি বাজার থেকে দুটি মূল্যবান জার্মান রন্টি কবুতর কিনে আনলেন। একটা সময় কবুতর ডিম পাড়ল। সেই ডিম থেকে বাচ্চাও হলো। সাহাবুদ্দিন খুব খুশি।
একদিন দুপুরে তিনি খেতে বসেছেন। তাঁর মা মাংসের তরকারি দিয়ে ভাত খেতে দিলেন। খুব তৃপ্তি নিয়ে ভাত খেতে খেতে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা, কিসের মাংস দিয়ে ভাত খাচ্ছি?’ মা হেসে উত্তর দিলেন, ‘নতুন যে কবুতরটা বাচ্চা দিয়েছে, তার মাংস। ’ সাহাবুদ্দিনের গলা দিয়ে আর খাবার নামে না। ‘মা, তুমি কী করেছ! এর একটা কবুতরের দাম ৪০ হাজার টাকা, তুমি জানো, আমরা ৪০ হাজার টাকার মাংস খাচ্ছি।
’ অনেকটা কেঁদে কেঁদেই বলছিলেন তিনি। তবে তাঁর মা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, একটা কবুতরের দাম ৪০ হাজার টাকা হতে পারে।
এই ঘটনা জানালেন কোরেশী মুহম্মদ তানভীর হাসান। তিনি বাংলাদেশ ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। থাকেন নাখালপাড়ার ব্যাংকার্স রোতে।
তানভীরের বাড়িতে গিয়ে ৪০ হাজার টাকার চেয়েও বেশি দামের কবুতর দেখা গেছে। তিনি জানান, যখন তিনি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র, তখন থেকেই কবুতরের ভক্ত। পুরান ঢাকায় গিয়ে রেসার কবুতর দেখে তিনি প্রথম আকৃষ্ট হন। রেসারের পেছনে ছুটে ছেলের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাবে, এই ভেবে তানভীরের বাবা তাঁকে খাঁচায় পোষার জন্য কিছু শৌখিন কবুতর কিনে দেন। এভাবে শখের বশে কবুতর পোষা চলছিল।
তবে একবার ঈদের আগে তাঁর হাতে একেবারেই টাকা ছিল না, তখন তিনি ৯৫ হাজার টাকায় তিন জোড়া কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে খুব আনন্দ পেয়েছিলেন।
ফেন্সি কবুতরের বিশাল সংগ্রহ এখন তানভীরের বাড়িতে। ৩০ প্রজাতির দুই শতাধিক কবুতর এখন তাঁর খামারে রয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এসব কবুতরের মধ্যে আছে সেকশন পোটার, বোরবার্জ, হ্যানা পোটার, বুখারা, জ্যাকোবিন, শ্যালো, ফ্রিলব্যাক, বিউটি, হোমার, এক্সিভিশন হোমার, বার্গ হোমার, স্ট্রেচার, মালটেশ, হাঙ্গেরিয়ান ও কিং। এগুলো সব বড় জাতের কবুতর।
ছোট জাতের কবুতরের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: টেগারোলার, ফান্টেইন, শর্ট ফেইস, প্যারাগুয়ে, বার্লিন, হোয়াইট টামলার, কালার হেড ও হেলমেট।
দেশি কবুতরের মধ্যে সিরাজী, লক্ষ্যা ও মুক্ষি পছন্দ করেন তানভীর। তাঁর কাছে এখন নিকোবর প্রজাতির এক জোড়া কবুতর আছে। তিনি জানান, নিকোবর কবুতর সারা বিশ্বেই দুর্লভ। ঢাকায় আরও দু-একজন শৌখিন কবুতরপ্রেমীর কাছে আছে নিকোবর।
তাঁদেরই একজন ইন্দিরা রোডের আবদুল হক। তাঁর কাছে অন্যান্য শৌখিন কবুতরের পাশাপাশি আছে ছয়টি নিকোবর প্রজাতির কবুতর। কবুতর পোষা শুধু শখ হয়েই থাকেনি আবদুল হকের কাছে। তিনি অন্য ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে শৌখিন কবুতর আমদানি করে থাকেন।
আবদুল হক নিকোবর প্রজাতির কবুতর সম্পর্কে জানান, একসময় নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এসব কবুতরের বসবাস ছিল।
এ জন্য নামকরণে নিকোবর শব্দটি আছে। এখন এই কবুতর বিলুপ্তির পথে। রঙের বৈচিত্র্য দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে এই কবুতর। তীব্র আলোতে এদের রং সবুজ দেখায়, হালকা আলোতে হয় লাল আর অন্ধকারে নীল রং ধারণ করে।
২০০৮ সালে নিকোবর আবদুল হকের সংগ্রহে আসে।
প্রতি মাসে এরা ডিম পাড়ে। কখনো একটা, আবার কখনো দুটো। এরই মধ্যে আবদুল হক চারটি নিকোবরের ছানা পেয়েছেন। তাঁর ইচ্ছা, জঙ্গলে অনুকূল অবস্থা তৈরি করে এসব কবুতর একসময় জঙ্গলে ছেড়ে দেবেন।
দেশি কবুতরের বাজার আছে টঙ্গী, মিরপুর ও জিঞ্জিরায়।
টঙ্গীতে কবুতরের হাট বসে রোববার। আর মিরপুর ও জিঞ্জিরায় বসে শুক্রবার। বিদেশি শৌখিন কবুতরের সে অর্থে কোনো হাট নেই। শৌখিন কবুতর পালনকারীরা নিজেদের মধ্যে সেই কবুতর বিনিময় কিংবা বেচাবিক্রি করে থাকেন। বিদেশি এক জোড়া শৌখিন কবুতরের দাম প্রকারভেদে পাঁচ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো হয়ে থাকে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও অনেক বেশি। যেমন, নিকোবর বিরল প্রজাতির কবুতর। ঢাকা শহরে এক জোড়া নিকোবর কবুতরের দাম পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে বলে জানান তানভীর হাসান। এ বিষয়ে আবদুল হক বলেন, নিকোবর দুষ্প্রাপ্য, তাই টাকার অঙ্কে এর মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। যাঁর দরকার, তিনি পাঁচ লাখ টাকার বেশি দামেও নিকোবর কিনে নিতে চাইবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।