আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গনজাগরন ও ব্যাক্তি ভাবনার দায়

স্বাধীনতার প্রায় বিয়াল্লিশ বছর পর বিচারের কাঠগড়ায় ৭১ সালের স্বাধীনতা বিরোধীরা। প্রশ্নাতীতভাবে এদের বিচার করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার এদেশের সকল মানুষের আছে। বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সমর্থনে দেশের মানুষ এখন একটি নন-পার্টিজান কিন্তু রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরী করে এই বিচারকে এগিয়ে নিয়ে একটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ার আকাঙ্ক্ষা করে। রাজপথে তাদের দাবী ফাঁসি কিন্তু বিচার বিভাগ কতটুকু এই রায়ের পক্ষে যেতে পারবে বা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কতটুকু গুরুত্ব সহকারে তথ্য প্রমানাদি দিয়ে প্রমান করছে রাষ্ট্রপক্ষ সেই বিষয়টা নিয়ে রাজপথে কথাবার্তা কম। বিচার প্রক্রিয়ার জটিল সরুগলি পেরিয়ে রাজপথের দাবী সাথে একাত্ন রেখে বিচারের রায় দেবার বাধ্যবাধকতা আছে এমনটি বলা যায় না।

কারন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবেই তার রায় দেবে এই নিশ্চয়তা বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত কিন্তু কতটা কার্যকর তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবিদের মধ্যে অনেকেই বিচার বিভাগের রায়কে প্রভাবিত করার যে কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থি মনে করেন। শাহদিন মালিক ইতিমধ্যেই মন্তব্য করেছেন যে ফাঁসি দাবি তোলার মধ্যদিয়ে বিচার বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করা হয়েছে, একি কথা বলেছে মানবাধিকার সংগঠন। অন্যদিকে ফাঁসির বিরোধীতা করে জামাতের দাবিও বিচার বিভাগের উপর একি হস্তক্ষেপ করবার শামিল বলতে হবে। কিন্তু এখনো সব রায় হয়নি।

কিন্তু রাজনৈতিক মেরুকরন হয়েছে মাত্র। একদিকে রায়ের ফাঁসির আদেশ আকাঙ্খাকারীরা অন্যদিকে একে বিরোধীতাকারীরা। বিচার বিভাগ এখন যে রায় দিক না কেন সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে না, হবার দরকার আছে সেটা বলা ঠিক না। রায় কাওকে খুশি অথবা কাউকে অখুশি করবে। দুই পক্ষের আন্দোলন যেহেতু মুখোমুখি অবস্থানে আছে তাই সংঘর্ষ অনিবার্য হিসেবে ধরে নিতে হবে।

একপক্ষ ইতিমধ্যেই গৃহযুদ্ধের কথা বলেছে। আসলে এই যুদ্ধতো অবশ্যই গৃহযুদ্ধই বটে! মুখোমুখি অবস্থানকারী সবাই এদেশের নাগরিক। চাইলেই এই সত্য কথাটি অনেক আবেগ আর অতীত ইতিহাস ঘেটেও ভুল প্রমান করা সম্ভব না। অতীতে একপক্ষ তৎকালীন রাষ্ট্রশক্তির পৈশাচিক মদদ নিয়ে এদেশের নিরীহ সাধারন মানুষের উপর পৈশাচিক নির্মমতা চালিয়েছিল। কিন্তু সাধারন মানুষের বিজয় রুখতে পারেনি।

তাদের উপর বিজয়ী হয়ে এই ক্রিয়াকর্মের পুনরাবৃত্তি ঘটায়নি এদেশের মানুষ। এদেরকে ধরে নিয়ে গ্যাস চেম্বারে ভরে মেরে ফেলেনি। তবে কিছু আপোষকামী মানসিকতা সে সময়কার রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে দেখি। সেই সু্যোগ এমন লোকদেরও নিতে দেখা যায় যে তারা স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি। সিমলা চুক্তিই সেই আপোষকামীতার নিদর্শন।

পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর বিচার করবার ক্ষমতাও নিজের হাতে রাখেনি তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব, তার বদলে পাকিস্থানকেই সেই বিচার করবার দায়িত্ব দিয়েছে!!! এটা নিশ্চয় দেউলিয়াপনা ছাড়া কিছু না। ইতিহাসে ভুল ভ্রান্তি করেনি এমন জাতি নিশ্চয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই বলে ভুল শোধরানো যাবে না এটাও বলা ঠিক না। আজকের এই বিচার নিশ্চয়ই সেই ভুল শোধরানোর প্রক্রিয়া। কিন্তু নতুন ভুলের শুরু হলে এর মাশুল আমাদের অতীতের অন্য সবকিছু থেকে বেশী দিতে হবে।

এমনও হতে পারে যে আমরা যে প্রক্রিয়ার শুরু করতে পারলাম কিন্তু তার শেষ হলো না। জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ প্রধান করব নাকি এই বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পাদনের চেষ্ঠাই থাকবে আমাদের লক্ষ্য? ইতিমধ্যে জাগরন মঞ্চ নিজের জাতীয়তাবাদকে অন্যসব জাতীয়তাবাদ থেকে অনেকবেশী ক্ষমতাবান হিসেবে প্রমান করতে চেষ্ঠা করছে, যার কারনে ধর্মের নামে প্রচলিত জাতীয়তাবাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একাই সিদ্ধান্ত নেবার মনোপলি গেমে সে প্রবেশ করেছে। তাই এই বিচারকে বাঙালী জাতিয়তাবাদ বনাম ইসলামী জাতিয়তাবাদের প্রশ্নে নামিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে কারা লাভবান হবেন তা বোধকরি অজানা থাকার কথা না আমাদের। সর্বোপরি জয় হবে বিশৃংঙ্খলার ও নৈরাজ্যের।

আজকের যে জাতীয়তাবাদ জাগরন মঞ্চের মধ্যদিয়ে নিজের সম্পদের পাহাড় গড়বার ন্যায্যতাকে স্বীকৃত করে নিতে চায় তার বিচারও অবশ্যই হতে হবে। সেখানেও আমাদের হতে হবে কঠোর। উদাহরন টেনে বলতে চাই, বাঙালী জাতীয়তাবাদের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছে একটি দল। এদের নির্লজ্জ কৃতকর্মের নজির এতটাই কুৎসিত যে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতৃত্ব থাকাকালীন সময়ে এই দেশের হাজারো মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে আত্নসাত করে বিদেশে পাচার করেছে (ডেসটেনি)। দেশের শেয়ার মার্কেটের টাকা লোপাট করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে।

টেন্ডারবাজি,লুটপাট, হত্যা ছাড়াও আজকের এই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে বিভিন্ন সময় ক্ষমতার মসনদে আসার জন্য আপোষকামীতার আশ্রয় নিয়েছে। শুধু তাই নয় নিজের দলের অনেক যুদ্ধপরাধীদের আশ্রয় দিয়েছে। সরকার দলের ভেতরকার রাজাকারদের ব্যাপারে সম্প্রতি শাহরিয়ার কবির মুখ খুলেছেন। এমনও অনেকের নাম আসছে যারা সম্পর্কে শাসকদলের বেয়াই হন!!দেশের শেয়ার বাজারের অর্থ লুটে যাদের নাম এসেছে তারা এসেছেন স্পন্সর হয়ে এই আন্দোলনে!! আজকে যারা আন্দোলন করছি রাজপথে এই ইতিহাস ভুলে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বিপদ আমাদের উপর কম আসবেনা। এদের কিছু অঙ্গ সংগঠন আছে যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে অনেকের সম্পদ বেআইনীভাবে দখল করে দখলবাজী করে আসছে।

এদের এই আন্দোলনের সম্পৃক্ত থাকার উদ্দেশ্যও আগামী নির্বাচনের আগে নিজের নতুন ভোট ব্যাংক তৈরী করা, বিচার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘস্থায়ী করে আরেকবার ক্ষমতায় আসার জন্য বিচারকে ব্যবহার করা। এদের ধোকা সম্পর্কে শাহবাগে আন্দোলনকারীরা সর্বদা সচেতন থাকবে এটা অনেকেই আশা করে। তাছাড়া আরো অনেক ব্যাক্তি এখানে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা করছেন যারা নিজেরা তাদের ভাবনা চিন্তার মধ্যদিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে বেড়ান। এদের সবাইকে এই আন্দোলন ও জাগরনের আইকনিক ফিগার বানানোর কোন কারন আমি দেখিনা। তাদের এই আন্দোলনে আসা নিয়ে প্রশ্ন না করলেও তাদের উদ্দেশ্য যদি বিচার ব্যতিত অন্যকোন স্বার্থ হাসিলের ব্যাপার হয় তাহলেও প্রতিরোধ জরুরি।

বাইরে ও ভিতরে থেকে বহু শক্তি এই আন্দোলনের উদ্দেশ্যকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে আসছে। এই আন্দোলন স্বাধীনতা বিরোধীদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করে। তার সাথে নতুন করে সংযোজিত ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার আগে আমাদের ভাবতে হবে এই লাইনগুলো নিয়ে এদেশে অনেক রাজনৈতিক দল রাজনীতি করে আসছে। তাই সেটা গনতান্ত্রিক চিন্তা চর্চার মধ্যে পড়ে কিনা সেটা আমাদের ভাবতে হবে। ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসার প্লাটফর্ম শাহবাগ কিনা সেটা শাহবাগের আন্দোলনরত সবাইকে ভাবতে হবে।

কারন যদি এই বিচার থেকে শুরু করে আমরা রাজনীতি ও ধর্মের ব্যাপারেও সিদ্ধান্তে নিতে চাই তাহলে অনিবার্যভাবে শাহবাগ আন্দোলনের সীমানা বিচারকে ছাড়িয়েও রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের প্রশ্নে আমাদের নামিয়ে আনতে হবে। কারন এদেশে ধর্ম নিষিদ্ধ নয়। ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়। ধর্ম ও রাজনীতি একি ব্যাপার এই মতানুসারীর সংখ্যা কম নয়। তাছাড়া প্রশ্ন উঠবে রাষ্ট্রের চরিত্র নিয়ে।

যদি এই রাষ্ট্র শাহবাগের আন্দোলনকে প্রশ্রয় দেয় তাহলে অপরাপর যত রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবেলার পথ কি হবে? সত্যি বলতে কি এ ব্যাপারগুলো নিয়ে শাহবাগ জাগরন মঞ্চের কোন কথাকে দিক নির্দেশনা মনে করব সেটা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে বিপাকে পড়ি। এই ব্যাপারগুলোকে যেহেতু শাহবাগ আন্দোলনকারীরা সামনে নিয়ে আসছেন তাই তাদের পলিটিক্যাল পলিমিক্সগুলো জানাতে হবে। শুধুমাত্র শ্লোগান দিয়ে সেটা হবেনা। “শিবির ধর মার, জবাই কর” এই শ্লোগান সাময়িকভাবে রক্ত গরম করবে, রাস্তায় হাজারখানেক লাশ পড়বে কিন্তু ধর্ম নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসার ক্ষেত্রে এটা নিশ্চয়ই যথেষ্ঠ নয়। তাছাড়া এই ব্যাপারকে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের একচেটিয়া আইন তৈরীর পার্লামেন্টারী ক্ষমতা ব্যবহারের মধ্যদিয়ে পার করে দেবার চিন্তা করাও ঠিক কিনা ভাবতে হবে আন্দোলনকারীদের।

যদি তাই হয় তাহলে সেখানে গনতন্ত্রের বালাই কম। জনগনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার গনভোট ও সংবিধান সভার মত অতীব জরুরি বিষয়গুলো মাইনাস করা ঠিক হবে কিনা সেটা ভাবতে হবে আন্দোলনকারীদের। কারন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে শাহবাগ মঞ্চ তৈরী হয়নি। এদেশের অনেক বিদ্যমান সমস্যার জন্য আওয়ামী লীগ নিজে দায়ি। তারাও কোন গনতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়নি।

তাদের সময় মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে পারবে না কেউ। তাদের রাজপথে আন্দোলন দমনের প্রচেষ্ঠা কোন গনতান্ত্রিক আচরন বা শিষ্ঠাচারের মধ্যে পড়ে না। বিশেষ করে পুলিশ নামক “গোপালগঞ্জ গেস্টাপো” ব্যবহার করে গত চার বছরে কোন ধরনের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে জনগন জানে। এই আন্দোলন সমর্থনের মধ্যে দিয়ে তারা অনেক কিছু লুকাবার প্রচেষ্ঠা করছে। এই আন্দোলন যখন উত্তাল তখন সেই সু্যোগে নিজের দলের দুর্নীতিবাজদেরকে রক্ষার চেষ্ঠায় তারা সর্বাত্তক চেষ্ঠা চালাচ্ছে।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বলতে হবে পদ্মা সেতুর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের জামিন! এই আন্দোলনের ভেতরে থেকে এই ফ্যাসিবাদি সরকার যদি তার দ্বারা সম্পাদিত সকল দুর্নীতির ও অপকর্মের ঘটনা ধামাচাপা দেবার চেষ্ঠায় সফল হয় তবে এই আন্দোলন ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সবচেয়ে শংকার বিষয় হল ইতিমধ্যেই এই আন্দোলন নিজের আয়ত্তে নিতে তারা সর্বাত্তক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। তরুনদের প্রথমদিকে প্রতিরোধ বিশেষ করে জনজাগরন মঞ্চে উঠতে না দেবার কারনে কিছুটা হলেও মনে হয়েছে এখানে এখনও জনগনের শক্তি প্রবল। সেজন্য অবশ্য ছাত্রলীগের গত চার বছরের খাসিলতের বহিঃপ্রকাশ হতে দেখেছি। কোনভাবেই যাতে এই আন্দোলন আওয়ামীলীগের পকেটে চলে না যায় সেলক্ষ্যে সবার সচেতন থাকা জরুরী।

বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের কথার সাথে সুর মিলিয়ে যারা শাহবাগে কথা বলছেন তাদেরকে তাদেরকে সংযত হতে হবে, যাতে তাদের কথাকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে তারা সক্ষম না হন। এবার ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডগুলোর দিকে নজর ফেরাতে চাই। একদিকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারা গেল রাজীব, অন্যদিকে চোখ তুলে নেয়া, নির্বিচারে গুলি করা হচ্ছে বিচার বিরোধীদেরকে। এরা কারা? জামাতের ছাত্র সংগঠন শিবির। পুলিশ আমাদের রক্ষায় চারিদিকে নিরাপত্তা চাদরের ব্যবস্থা করেছে।

অন্যদিকে জামাত শিবিরের কর্মিরা পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে। আমাদের শ্লোগান “শিবির ধর, জবাই কর”। কার্যত সেটাই করা হচ্ছে। এটা গনতন্ত্রের নজির না। অস্ত্র আমাদের হাতে।

রাষ্ট্র ক্ষমতা আমাদের পক্ষে ধরে নিচ্ছি। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছে। তাহলে এটা কি আমরা যারা শাহবাগে আছি তাদের প্ররোচনায় গুলি হচ্ছে? তাহলে আর বিচার কেন গুলি করে জামাতের নেতাদেরকে মেরে ফেলিনা কেন? কিসের বিচার আর কিসের আইন? আমাদের গনতান্ত্রিক আচরনের বাইরে অন্যকোনভাবে মোকাবেলার পথ বেছে নেবার ফলাফল কি ভাল হবে? নাকি এদের প্রতি জনগনের সমর্থন বাড়বে? গনতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়ে কোনভাবেই বিচারের পথকে প্রশস্থ করা যাবে না। যারা সেটা ভাবছেন তাদের উগ্রতার কারনে বিচার শুধু বাধাগ্রস্থই হবে না, তারাই বিচারের আওতায় চলে আসবেন। ব্লগার রাজীব কে? কি তার রাজনৈতিক আদর্শ? কেন এই নির্মম হত্যাকান্ড? কারা করল এই হত্যাকান্ড রাতে্র আধারে? অনুসন্ধান করে এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, বিশেষ করে তার ব্লগে লিখিত বিভিন্ন লেখা বিশ্লেষন করে অনেকে বলছেন তিনি নাস্তিক।

হ্যা তিনি নাস্তিক এটা অস্বীকার করে আমাদের কোন লাভ নেই। তিনি এসেছেন শাহবাগ আন্দোলনে, শ্লোগান দিয়েছেন বিচার চেয়েছেন। তার বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে তিনি ব্লগে লিখেছেন অনেক কথা। যার অধিকাংশ লেখা এই বিচারের জন্য জরুরি নয়, বরং ইসলাম আর মোহাম্মদ (সঃ) নিয়ে তার ভালগার বক্তব্যগুলো আমাদের ব্যথিত করেই শুধু না, এই ধরনের কোন কথার জন্য তাকে অনেক উন্নত গনতন্ত্রের দেশেও সাজা পেতে হত। ধরুন আমেরিকার সেই ইসলাম বিরোধী লোকটির কথা যিনি কোরান শরীফ পুড়িয়ে ফেলে এখন আমেরিকার কারাগারে আছেন।

যার জন্য আমেরিকার বিভিন্নদেশে কনসুলেটে বোমা হামলা হয়েছে। ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বে ইসলাম একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসেবে হাজির হয়েছে। ড্যানিস কার্টুন নিয়ে সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় হতে দেখেছি আমরা। সেখানে ব্লগার রাজীবের অনেক কমেন্ট পুরো রাজনীতির মাঠ উলট পালট করে দেবার মতই। তার জন্য অবশ্যই আমরা বিচার বাধাগ্রস্থ হোক সেটা চাই না।

কারন কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে বা তাদের উদ্দেশ্যই বা কি আমরা জানিনা। হতে পারে তার আগের পোষ্টগুলো কোন ইসলামি গ্রুপের নজরে আসায় মহানবী (সঃ) এর ব্যাপারে অবমাননাকর কথা বলায় তিনি খুন হয়েছেন। যদিও তাকে কে বা কারা খুন করেছে সেটা জানা যাবে গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তের পরে। শাহবাগে আন্দোলনকারীরা মহানবী (সঃ) নিয়ে কটুক্তি করার জন্য বসেন নি। রাজীব হত্যা আসলে কোন কারনে হয়েছে সে ব্যাপারে জানার পূর্বে কোন মন্তব্য করা সঠিক তো দূরের কথা, তাকে শাহবাগ আন্দোলনের জন্যই হত্যা করা হয়েছে এটা প্রমান করতে চাওয়াই মারাত্নক ভুল হয়েছে।

এই সু্যোগ নেয়ার লোকের যেহেতু অভাব নেই, তাই অতি উৎসাহীদের আমি বলব বিচারের আগে কারো ব্যক্তি মতামতের দায় যাতে শাহবাগ আন্দোলনকারীরা না নেন। এতে এই আন্দোলন থেকে ধর্মভীরু মানুষের সমর্থন কমবে। আর এই বিচার ইসলামের বিচার নয়। শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার। সেখান থেকে ধর্ম ও রাজনীতির সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার মত রাজনৈতিক দ্বন্দগুলোকে প্রধান করে শেষে এই বিচারকে আমরা ভন্ডুল যাতে না করি সেদিকে এখন লক্ষ্য রাখা আমাদের প্রয়োজন।

কারন এমনও তো হতে পারে, শেষে সাধু বেশে আওয়ামীলীগ পিছু হটে যাবে। নিজের পার্টির ব্যানারে এই বিচারের ট্যাগ লাগাবে ভবিষ্যতে আর বলবে আমরা চেয়েছিলাম কিন্তু অমুকে হতে দেয়নি। আবার সুযোগ দিন ক্ষমতা আসতে এসে করব বিচার! রাজনীতির হিসাবগুলো শুধু আবেগ দিয়ে বুঝার চেষ্ঠা নয়, নিজেদের দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে হবে। সাথে সাথে এটাও দেখতে হবে ট্রাইবুনালে বিচারিক প্রক্রিয়ার ভেতরে প্রসিকিউসন কিভাবে মামলা ফরমুলেট করছে। দুর্বলতার দিকগুলো কি? আমাদের দেশের মিডিয়া অনেক শক্তিশালী এটা অকপটে শিকার করতে হবে।

যেমন ধরুন সামু ব্লগের কথা। এখানে লেখালেখির মধ্যদিয়ে জনমত তৈরীর কাজটা করার ফলেই আজকে অনেক বড় আন্দোলনের সূচনা করা গেছে। সাথে ছিল প্রিন্ট এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। আন্দোলন বড় হয়েছে। সকল দলই আজ মিডিয়ার সব জায়গাতেই নিজের কতৃত্ব বজায় রাখার চেষ্ঠায় সক্রিয়।

আজ আন্দোলনকারী ও বিরোধী শিবিরের সবারই মিডিয়া আছে। সোনা ব্লগ আর সামু ব্লগ, একুশে ও দিগন্ত, প্রথম আলো ও আমারদেশ। সবার মত প্রকাশের নিশ্চয়তা আমরা দেব এটা সংবিধানে লিখেছি। কিন্তু আন্দোলনকারীদের এতে কেন অসুবিধা হচ্ছে আমার বুঝে আসেনা। সমাজের সবচেয়ে অগ্রসর মধ্যবিত্ত শ্রেনীর এই আন্দোলনকারীদের কেন অন্যের মিড়িয়া বন্ধের দাবী করতে হবে।

কি প্রমান করতে চাই আমরা সেটা করে? আমার দেশ, নয়া দিগন্ত ও দিগন্ত মিডিয়া চললে আমাদের ভয় পাবার কি আছে? এদের অপপ্রচার নিয়ে শঙ্কিত হবার কি আছে আমাদের? ওদের কাজ ওরা করবে, বিচার করবে আদালত। সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা উচিত আমাদের। কারো পোস্ট রাতারাতি গায়েব করে কি প্রমান করতে চাই আমরা। নিজেদের অসততা ঢাকার জন্য যারা চেষ্ঠা করি তাদের আচরন এরকম হয়। রাজীবের ব্লগ মুছে দেবার কারন অজানা আমার কাছে? তার ব্যাপারে জানবার ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? তার ব্যাপারে কেন এই গোপনীয়তা সামু ব্লগের কর্তৃপক্ষের।

তার চিন্তা চর্চার দায় তো সামু ব্লগের না। কেন সামু তার বিষয়ে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে। তার লেখা মুছে ফেলে কেন সে নিজের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে? রাজীবের লেখার কারনে বিচার বন্ধ হবে না। এই নিশ্চয়তা কি তাদের মনে কাজ করে না। নাকি তার উদ্দেশ্য ভিন্ন।

প্রয়োজন ছিল মহানবী (সঃ) নিয়ে কোন ধরনের ভালগার কথাবার্তার প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা। শাহবাগে একসাথে জোর দাবী তোলা যে এধরনের কর্মকান্ড শাহবাগ আন্দোলনেরও উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু সেটা না করে মিডিয়া যা করল তাতে নোয়াম চমস্কির “সম্মতি উৎপাদন” বইটির কথা মনে পড়ে গেল। তিনি বলছেন, “ আমাদের বিশ্বাস, অন্যান্য কার্য সম্পাদনের পাশাপাশি মিডিয়া ক্ষমতাধর সামাজিক গোষ্ঠীগুলোর-অর্থাৎ যারা তাদের নিয়ন্ত্রন করে ও অর্থ জোগায়-সেবা করে ও তাদের জন্য প্রচারনা চালায়। এসব স্বার্থগোষ্ঠীর প্রতিনিধিবর্গের কর্মসূচি ও নীতি থাকে, যেগুলো তারা বাস্তবায়ন করতে চায়, এবং মিডিয়া-পলিসি নির্ধারন ও নিয়ন্ত্রন করার মত অবস্থানও তাদের থাকে।

উলঙ্গ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নয়, তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে যথার্থ-চিন্তাকারী কর্মী বাছাই, এবং সম্পাদকবৃন্দ ও কর্মরত সাংবাদিকদেরকে প্রতিষ্ঠানানুগ পলিসি-অনুযারী সংবাদযোগ্যতার মূল্যচেতনা ও গুরুত্বায়ন-ভাবনা আত্নস্থ করানোর মাধ্যমে”। আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এটা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা না, কিন্তু তার উত্তর দিতে কারো চামড়া তুলে ফেলার প্রয়োজন কতটুকু সেটা কারো বোধগম্য না। নাকি এখানে বক্তব্যদানকারীরা এত মানুষের সামনে হিতাহিত জ্ঞান বিসর্জন দিয়ে বক্তব্য দানে নিজেদের ব্যস্ত রাখবেন। নতুন প্রজন্মের নামে পুরাতনের আবির্ভাব কারো কাম্য নয়, যদি সেটা ঋনাত্নক অর্থে হয়। পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা জরুরি আন্দোলনকারীদের, তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো বাইরের দেশে আমাদের ভাবমূর্তিকে অনেক আগে থেকেই ক্ষুন্ন করে আসছে।

বিশেষ করে এই বিচারকালীন সময়ে তাদের দমনপীড়নের কারনে অনেক ক্ষতি হবার আশংকা না করে পারছি না। কারো চোখ উপড়ে ফেলার দৃশ্য আমরা দেখতে চাইনা। বিচারের জন্য এটা জরুরি কোন বিষয় নয়। রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচটা লাশ না পড়লে বিচার হবে না এই মানসিকতার প্রশ্রয় কোন আন্দোলন কর্মীর হওয়া উচিত নয়। পুলিশকে সংযত আচরন করতে বাধ্য করা উচিত, কারন এই পুলিশই একটি বিশেষ দলের তল্পিবাহক হিসেবে আচরনে করে আসছে।

তাদের অসংযত হবার সাথে যাদের ইঙ্গিত কাজ করছে তারা কেউই বিচারকে এগিয়ে নেবার পক্ষে সহায়ক ভূমিকা রাখছেন না। এই বিচার হতেই হবে। ইতিহাসের ঘটে যাওয়া এই বড় নির্মমতার বিচার করার গুরু দায়িত্ব আমাদের কাধে। বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ যদি আমরা নির্ধারন করতে চাই তাহলে সকল অপরাধের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আর এর মধ্যদিয়েই ইতিহাসের ঘটে যাওয়া সকল অপরাধের বিচার করবার সু্যোগ তৈরী হবে এবং হয়েছে।

সেই বিচারের ক্ষেত্রে ভাবতে হবে আমাদের খুব প্রিয় প্রানের নেতাদেরও শাস্তি পেতে হতে পারে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.