আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিষ্টি

শ্রাবনী খুঁজছে ভাবনার পথ...
১. সন্ধ্যামুখে একপশলা বৃষ্টিতে ভিজে গোসল হয়ে গেল বাড়ী ফেরতা মানুষগুলো। শাহেদ অফিস শেষে একটু বাজারে ঢুকেছিল মাছ কেনার উদ্দেশ্যে। বাজার শেষ করে বাড়ীর পথ ধরতেই ঝুম বৃষ্টি। এক হাতে মাছ অন্য হাতে শাক সবজি ভরা ব্যাগ দুটো হাতে নিয়ে নিরুপায়ের মত রিকশা খুঁজছিল। অনেকেই ওর সাথে দাঁড়িয়ে ছিল।

সবারই একটাই লক্ষ্য রিকশা পাওয়া। একে অফিস ছুটির সময় তায় আবার বৃষ্টি পড়ছে। রিকশাওয়ালারা সব জমিদার হয়ে গেল যেন মুহুর্তেই। বেশিরভাগ তো যাবেই না। কেউ কেউ যদিও বা যেতে চায় এমনই চড়া ভাড়া হাঁকাচ্ছে যে শুনে চোখ কপালে উঠে যেতে চায়।

শাহেদের বাড়ী শহরের একদম উপকন্ঠে। অতদুর যেতে কেউই রাজী হচ্ছে না। ঘন্টাখানেক ধরে চেষ্টা করে একজনকে রাজী করানো গেল। রিকশায় উঠে হাঁপ ছাড়ল মানুষটা। ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে গেল।

বাড়ীর উঠোনে পানি জমে আছে। গাছ গুলো সব ভিজে সপসপ করছে। জোর বাতাসে ভেজা আম গাছের পাতা গুলো নড়েচড়ে ভিজিয়ে দিল শাহেদকে আরো একবার। ' শাহানা!' জোরে হাঁক ছাড়ে শাহেদ। বাসার মধ্যে হুটোপুটির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

একটু পরেই শব্দ হলো সদর দরজা খোলার। শাহানা বেরিয়ে এলো হাতে গামছা। বাজার গুলো হাত থেকে নিতে নিতে বলে ' গোসল করে নেবে নাকি?' ' হুম। তাই করতে হবে। কাদাপানি মেখে এক্কেবারে যাচ্ছেতাই অবস্থা।

' 'ঠিক আছে। তুমি গোসল করেই এসো একবারে। আমি চা দিচ্ছি। ' বুবুনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। লুঙ্গি আর গেঞ্জি হাতে নিয়ে।

সাবান ডলা দিয়ে একটা ভাল মত গোসল দিল শাহেদ। টিউবওয়েলের ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং শব্দের সাথে মেঘের গুড়গুড় শব্দ মিলে কেমন জানি একটা অদ্ভুদ আবহ সৃষ্টি করেছে চারপাশে। দূরে কোথায় বিদ্যুৎ চমকালো। ব্যাঙের ডাকে কান ঝালাপালা হবার যোগার। শাহেদের দুটি মেয়ে।

বুবুনি আর তুনতুন। বুবুনি বড় বয়স সাত ক্লাস টুতে পড়ে। ছোটটার বয়স চার। সারাদিন বাড়ীটা মাতিয়ে রাখে হৈচৈ করে দুটিতে মিলে। 'বাবা মিষ্টি এনেছো?' বুবুনি জানতে চায়।

' নারে মা। মিষ্টির দোকানে যাবার আগেই তো বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। ' মাথা মুছতে মুছতে বলে শাহেদ। বুবুনির মনটা খারাপ হয়ে গেল দেখে শাহেদের খুব খারাপ লাগতে থাকে। ‘বাবা কাল আনবে তো?’ জানতে চায় মেয়েটা।

গভীর মমতায় মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে হেসে শাহেদ বলে মেয়েকে ‘আচ্ছা আনব। ’ ‘বাবা কোলে...’ তুনতুন দু’হাত তুলে দাঁড়ায় এসে দরজায়। মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করে দেয় শাহেদ। এইটার স্বভাব হয়েছে একদম বিড়ালের মত। সারাটাক্ষণ আদর চাই তার।

বাবার খুব ন্যাওটা। সারাটাক্ষণ লেগে থাকে বাবার গায়ের সাথে। আর বুবুনিটা একটু খেয়ালী ধরনের। ওর যখন মন খারাপ হয় তখন বাবার কোলের মধ্যে এসে বসে থাকে বাবাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে। রাতে খাবার পরে বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে শাহেদ বলল ‘ বউ তোমার মেয়ের বায়না শুনছো?’ ‘হুম।

মিষ্টি মিষ্টি করে আজ সারাদিন জ্বালিয়েছে। বিকালে একটু সুজি রান্না করে দিলাম। না সেটা সে খাবে না। তার মিষ্টিই চাই। ’ শাহানা বিরক্তমুখে জানালো।

শাহেদের বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে। মেয়েটা এত মিষ্টি খেতে ভালবাসে যে কদিন পরপরই বায়না ধরে মিষ্টির জন্য। সীমিত আয়ের সংসার। মেয়ের বায়না সবসময় মিটানো সম্ভব হয় না ওদের পক্ষে। তারপরেও মাসে দু’ তিনবার মিষ্টি আনতে হয় মেয়ে দুটোর জন্য।

কিন্তু কোন কোন মাসে তাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। ২. বুবুনির খুব জ্বর। মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে উঠছে। তুনতুনের শরীরটাও খারাপ লাগছে। বাচ্চা দুটো কিছুই খাচ্ছে না সকাল থেকে।

শাহানা অনেক সাধ্য সাধনা করে শুধু একটু দুধ রুটি খাওয়াতে পেরেছে। শাহেদ আসেনি এখনও অফিস সেরে। সন্ধ্যার দিকে মেয়েটা ভুল বকতে শুরু করল। ‘ মা দেখছ কত্ত বড় বড় মিষ্টি! এত্ত বড়টা খাবো কি করে মা?!’ শাহানার টেনশন বাড়তে লাগল। ছোটটাও শুয়ে পড়েছে বড়টার পাশে চুপ করে।

গায়ে হাত দিয়ে দেখল জ্বরে পুড়ছে শরীর। ওদের বাবা আসছে না কেন এখনও? শাহেদকে ফোন দেবে ভাবতে ভাবতে শাহেদ চলে এলো। ঘরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে শাহানার উদবিগ্ন মুখের দিকে চেয়ে শাহেদ জিজ্ঞেস করল ‘ কি হয়েছে?’ ‘দুইটার গায়েই জ্বর। বড়টা তো ভুল বকছে। ’ ‘কখন থেকে? তুমি ফোন দিলে না কেন?’ দৌঁড়ে মেয়েদের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল ও।

‘সকাল থেকে তো ভালই ছিল। দুপুরের পর থেকেই জ্বর। ’ প্রবল তাপে ছটফট করছে বুবুনি। ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। জ্বরের ধরন দেখে মনে হচ্ছে আরো বাড়বে।

মাথায় পানি ঢালছে শাহানা। শাহেদ মেয়ের টকটকে লাল মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল ‘ তুমি গা’টা মুছিয়ে দাও। আমি বীরেণ কাকাকে ডেকে নিয়ে আসি। ’ বীরেণ ডাক্তারের চেম্বার কাছেই এক দুই বাড়ী পরে। বীরেণ ডাক্তার এসে বাচ্চা দুটিকে দেখে বলল ‘ ছোটটাকে নিয়ে ভয় নাই।

ওর জ্বর খুব বেশি না। কিন্তু তোমার বড়মেয়ের অবস্থা তো বেশ খারাপ। শাহেদ এই ঔষধগুলো এখনই খাইয়ে দাও। যদি ঘন্টা দুয়েকের মাঝে জ্বর না কমে তবে হাসপাতালে নিতে হবে। ’ অনেক কষ্টে বুবুনিকে ঔষধ খাওয়ালো শাহানা।

কিন্তু ওর অবস্থা যেন আরো খারাপ হচ্ছে যত সময় যাচ্ছে। ‘ বাবা মিষ্টি খাবো। ওই যে মেলার সাদা সাদা মিষ্টি গুলা। বাবা ও বাবা...’ শাহানা কেঁদে ফেলল। এত জ্বর! তারপরেও মেয়ে মিষ্টি মিষ্টি করছে।

ঘন্টাখানেকের মাঝেই বুবুনির শ্বাস্ কষ্ট শুরু হয়ে গেল। শাহেদ জ্বর মেপে দেখল ১০৫ ক্রস করেছে। আর এক মুহুর্ত দেরী না করে বাচ্চাকে কোলে তুলে নিল। ‘শাহানা তুমি তুনতুনের কাছে থাকো। আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।

’ ঘর থেকে একরকম ছুটেই বের হয়ে যায় শাহেদ। শাহানা ভীষন কাঁদতে থাকে। রাত বারোটা বাজে প্রায়। মফস্বল শহরটা শুনশান নীরব হয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা।

শাহেদ রিকশার অপেক্ষা না করে মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ছুটে যেতে থাকে হাসপাতালের দিকে। বুবুনির ভুল বকা দেখে হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার বেশ অবাক হয়ে শাহেদকে জিজ্ঞেস করল ‘ ও কি মিষ্টি খেতে চাইছে নাকি?!’ ‘হ্যাঁ । আমার মেয়েটার মিষ্টি খুব পছন্দের। ’ ধরা গলায় বলে শাহেদ। প্রায় পনের দিন জ্বরের সাথে যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত জিতেই গেল বুবুনি।

‘ বুবুনি শুধু মিষ্টি খেলেই হবে না। তার সাথে দুধ ডিমও খেতে হবে। নইলে কিন্তু আবারও হাসপাতালে আসতে হবে। বুঝেছো তো মামনি?’ বুবুনি মাথা ঝাকায়। এই কদিনে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে বাচ্চাটা।

৩. আজ বুবুনির জন্মদিন। বাবা অনেক অনেক রকম মিষ্টি এনেছে ওর জন্য। সেই সাদা মিষ্টিগুলাও আছে। দুই বোন মহা আনন্দে ভাগাভাগি করছিল কে কয়টা খাবে। শাহেদ বসে বসে দেখছিল ওদের কান্ড।

আহা! কি আগ্রহ করেই না খাচ্ছে মেয়েদুটা মিষ্টি!!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.