আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

~মিষ্টি~

স্বপ্ন জগতের গোলাপী আকাশে ডানা মেলা মুক্ত বিহঙ্গ ! না ভয় আর না পিছুটান ....

-রশিদা , এগুলো কি ? -কি তাতো দেখতেই পাচ্ছ । -না , পাচ্ছিনা । মানে কি এর ? এই অসময়ে মিষ্টি কেন ? -কেন হবে , খাওয়ার জন্য । -খাওয়ার জন্য মানে ? তোমার কি ধারনা মিষ্টি খাওয়ার মুডে আছি আমি এমুহূর্তে ? -আহা , মুডে থাকতে হবে কেন ? পেপার দেখছ , দুটো মুখে দাও । -এসব ঢং বন্ধ কর বুঝলে ? কার ছেলের কি প্রমোশন হয়েছে না ডিমোশন হয়েছে ওটা তাকেই ভাবতে দাও ।

আমাদের অবস্থাটা এখন কোথায় ভেবেছ একবার ? -তুমিই তো ভাবতে ভাবতে বয়স বাড়িয়ে ফেলছ , আমি আর কি ভাবব ? আর আমি কারও ছেলের প্রমোশন নিয়ে লাফাচ্ছি না । -তো এগুলো কি ?? -এটা উপরতলার ভাবির পাঠানো মিষ্টি না ! ওগুলো বুয়াকে দিয়ে দিয়েছি । -তো কিসের মিষ্টি ? -কিসের মিষ্টি তুমি জানো । এর মধ্যে দুবার ওকথাটা তোমার কানে দেয়া হয়েছে । -এতোসব মনে থাকে না ।

-মনে থাকবে কেন ? ঘরের মানুষগুলোর কতটুকু তুমি দেখ ? সারাদিন ওই আজগুবি হিসেব নিকেশ । কি দরকার এতো হিসাবের ? খুব কি খারাপ আছি আমরা ? অন্তত হাত তো পাতা লাগছে না কারো কাছে । -না না , তা দরকার হবে কেন ? আজকে এই হিসেব টুকু না করলে টের পেতে ভাল থাকা আর খারাপ থাকার কি তফাৎ । এইটুকু করি দেখেই এখনো ওই মিষ্টি বিতরনের সাহস কর । যে গুনধর ছেলে মেয়ে বানিয়েছ একেকটা , হাত পাতার আর কয়দিন বাকি সেটা দেখ ! -তুমি দেখ বসে বসে ! মিষ্টি দিয়েছি খেলে খাও নইলে চুপ করে বসে থাক ! এক কথা বারবার ভাল্লাগেনা ।

আর এটা কারো পাঠানো মিষ্টি না । তোমার মেয়ের রেজাল্টের মিষ্টি । তুমি আনতে না জানি , আমিই আনিয়েছি রাতে রাফসানকে দিয়ে । মেয়েটা যে এরকম ভাল একটা রেজাল্ট করল , একবারো একটা শব্দ করেছ মুখ দিয়ে ?? খালি হিসেবের ষোলআনা উদ্ধার করে চলেছ ! তাইতো ! কালকে রামিয়ার রেজাল্ট হয়েছে এইচ এস সির । গোল্ডেন পেছেছে মেয়েটা – সম্পুর্ণ নিজের চেষ্টায়ই পড়েছে বলতে হবে ।

রায়হান সাহেবের কড়াকড়িতে প্রাইভেট টাইভেট পড়েনি তেমন একটা । আসলেই, মেয়েটাকে কিছু বলা হয়নি এপর্যন্ত । আসলে বলার সুযোগ পাননি রায়হান সাহেব । কিভাবে পাবেন , ইদানিং দিনগুলো কোনদিক দিয়ে যাচ্ছে ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না । শুধু পেনশন আটকে যাওয়ার চিন্তা টা প্রতি মুহূর্তে অস্থির করে তুলছে তাকে ।

ব্যাংকেও তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই । সামান্য সঞ্চয়ের টাকা যা জমিয়েছিলেন , গত মাসে তার সবটাই ঢেলে দিতে হয়েছে রশিদার কিডনির চিকিৎসায় ! আর এখন এক পুরোনো ঝামেলার জের ধরে পেনশনটাও আটকে গেছে ! কিভাবে কোন দিক সামলাবেন বুঝে পাচ্ছেন না রায়হান সাহেব । মেজাজটা কারনে অকারনেই উঠছে নামছে ইদানিং ! -রামিয়া কোথায় ? -কোচিং এ গেছে । -আসবে কখন ? -সন্ধা হবে । - সন্ধা হবে কেন ?! -কোচিঙের পরে দুটো প্রাইভেট আছে ।

ওগুলো শেষ করে আসবে । -প্রাইভেট মানে ? আশ্চর্য ! কোচিং এর পরে আবার প্রাইভেট লাগে ? আমাদের সময়য় আমরা কোচিং ই করিনি ! আর তাদের এখন আট দশ হাজার টাকার এক্সট্রা প্রাইভেটও পড়া লাগে ?!? -তোমার সময় আর এখনকার সিচুয়েশন এক না । এখন কম্পিটিশন অনেক । যে যেদিক দিয়ে পারছে পড়ছে । ওর বান্ধবিদের সবার বাসায় স্পেশাল টিউটর রেখেছে এডমিশন টেষ্টের জন্য ।

আর সে একটা প্রাইভেটে গেছে আর তোমার ঘেন ঘেন শুরু হয়েছে ! রেজাল্ট এমনি এমনি আসে , না ? -রেজাল্ট করেছে ওর নিজের জন্যই তো করেছে । নিজের ভালোটা বোঝার মত বয়সটাও তার হয়েছে এখন । যেটুকু করবে , তা তার জীবনের পুঁজি হয়েই তো থাকবে , তাই না ? -জানি না আমি । আমি সব কিছু তোমার মত করে দেখি না । ভাত দিচ্ছি , টেবিলে আসো ।

(কথা বাড়ননা রশিদা পারভিন ) :::::::::::::::::::::::::::::::: ___ :::::::::::::::::::::::::::::::: -রাফসান কোথায় ? খাবে না ? -ঘুমাচ্ছে । উঠলে খাবে । -ঘুমাচ্ছে ?? কটা বাজে এখন ? এই ভর দুপুরে ঘুমাচ্ছে মানে ?!! -রাতে দেরি করে শুয়েছে । -দেরি করে শুয়েছে মানে কি ?? বই খাতার পাঠ চুকিয়েছে বলেই কি সব ল্যাঠা চুকে গেল ?? তার যা ইচ্ছা করবে । যেভাবে খুশি চলবে ।

আর আমরা তাকে মাথায় নিয়ে নাচব ? - আশ্চর্য! নাচানাচির কথা আসছে কেন !! -শোন, তোমাকে আমি আগেও বলেছি । ওর মধ্যে অহংকার ঢুকে গেছে অনেক আগেই । যেদিন সে ভার্সিটিতে পা দেয় সেদিনই সবাইকে তুচ্ছ করে দেখতে থাকে । তাকে এতোগুলো দিন যা শেখানো হয়েছে , তার বিন্দুমাত্ররও কি প্রতিফলন এখন আছে ওর মধ্যে ? সংসারটা কিভাবে চলছে , একবারো ভেবেছে ?? একবারো চিন্তায় এনেছে ? যে তার কিছু করার আছে ! এইরকম একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কে নিয়ে এতো আশা করেছিলাম ? এমন উচ্চবিলাসী একটা গবেট মাকাল ফল হবার জন্য ওকে বুয়েটে পড়িয়েছিলাম ? -আচ্ছা তোমার হল কি বলতো ? সাধারন একটা বেপার তুমি এভাবে নিচ্ছ কেন ইদানিং ? -আমার কিছুই হয় নি । শুধু আফসোস বৃথাই সারাটা জীবন খেটে গেলাম , ছেলেমেয়েগুলোকে বাস্তবটা চেনাতে পর্যন্ত পারলাম না ! - আহা ! ১ মাসও হয়নি সে বেরিয়েছে ।

এখনি নগদ বেতন প্রসব করতে হবে এটা কেমন কথা ? আর আমি যদ্দুর জানি সে , চাকরী খুঁজছে । পেয়েও যাবে , দেরি হবে না তেমন । -চাকরি খুজছে না ?? সারাদিন কম্পিউটারের উপরে উপুত হয়ে থেকে কি চাকরী উদ্ধার করবে আমার জানা আছে ! -কত কিছুই তো তোমার জানা । -এই বাজে নেশাটাই ওকে ধ্ধংস করেছে ! ওর ওই থার্ড ক্লাস মার্কা রেজাল্টের জন্য দায়ী ওই হারাম নেশাটাই ! আর ওই বেহায়াপনার ফেসবুক ! তোমাকে বলে রাখি, আজ থেকে এসব বন্ধ এঘরে ! যতদিন একটা গতি না করতে পারছে , ততোদিন তার এসব ডিজিটাল চিন্তাভাবনা এঘরে দেখতে চাই না ! -চাকরী এখন মামার বাড়ির আবদার না । যথেষ্ট লিংক লাগে ।

প্রতিষ্ঠানের নাম বেচে চাকরী হয় না এখন । আর তোমার এসব কথা ওর সামনে বললেই পার ! আমাকে শোনাচ্ছ কেন ? -লিংক লাগে মেরুদন্ডহীন গুলোরই । যেগুলো ভার্সিটি থেকে শেখার নামে এসব নষ্টামি শিখে আসে ! মাথায় ঘিলু থাকলে ওই মামা চাচার তেল না হলেও হয় । আমরা আর চাকরী করিনি মনে হয় , আমার মামা চাচা দূরে থাক দাদাও ছিল না চোদ্দগুষ্ঠিতে ! আমাকে চাকরী দিয়েছিল কে ? আর আমার বলা লাগে কেন ? সে কই বোঝে কম ?? ::::::::::::::::::::::::::::::::::::: সন্ধারাত ::::::::::::::::::::::::::::::::::::: আকাশে ঝুলছে একফালি চাঁদ – হলদেটে রং । যেন কিসব রহস্য ঘিরে আছে চাঁদ টাকে ।

আর সেসব ধোঁয়াটে রহস্যের আড়াল থেকে কি যেন বলতে চাইছে চাঁদটা । রাফসান দাঁড়িয়ে আছে ছাদের কোনায় রেলিং এ হেলান দিয়ে । ঝিরিঝিরি বাতাস ক্লান্ত শরীরটাকে যেন দোলা দিয়ে যাচ্ছে । মাঝে মাঝে ঝলকে উড়ছে লম্বা হয়ে কপাল ছাড়িয়ে নেমে আসা পাতলা চুলগুলো । কেমন যেন মায়াবি একটা আবহাওয়া আর অদ্ভুত কিছু অনুভুতি ! মন যেন এ মুহূর্তে একটু বাঁধন হারা হতে আকুপাকু করছে ! দুষ্ট বাতাস কানে কানে কি যেন বলে যেতে চাইছে – সে বুঝেও ঠিক মনে গেঁথে নিতে পারছে না ।

আবার তাকালো সে হাতে ধরে থাকা মোবাইল সেটটার দিকে । এই মাত্র কথা হল দুটো ভিন্ন জগতের মানুষের সাথে । একজন তার প্রেম জগতের বাসিন্দা – যাকে বেঁধে নিয়েছে জীবন রথে , যদিও শুধুই মনের আকাশে । আর দ্বিতীয় জন ? দ্বিতীয় জন তার অসম্ভব প্রিয় একটা মানুষ ! – শিহাব ভাই ! তার জীবনের প্রকৃত দীক্ষাগুরু ! তার প্রেরনা আর উষ্ণ ভালোবাসায় সিক্ত শ্রদ্ধাবরণীয় ! যদিও দুজনের সাথে দু ধরনের আঙ্গিকে কথা হয়েছে , প্রথম জনের সাথে তিক্ত কিছু বাক্যালাপ ! যদিও উভয়ই জানে সেটা ক্ষনিকের । হ্যাঁ তার প্রেম জগতের বাসিন্দাটি বেশ অনেকদিন যাবতই তাকে কল্পলোক ছেড়ে মাটির পৃথিবীতে নেমে আসতে বলে যাচ্ছে ।

বলছে , একটা চাকরী ধর যেভাবেই হোক ! নইলে বাবার সামনে তোমাকে দাঁড় করাতে পারব না । আর যে বেশিদিন নেই ! সময় খুব দ্রুত যাচ্ছে ! -"এক কাজ কর না , আমার মামার একটা বড়সড় ওয়ার্কশপ আছে নিটল মটরস এর । মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নেবে । তবে, তোমার ওই নিম্ন মানের সি জিপি এ তে হবে না , মানে হত না যদি আমি না বলতাম । মামা আমাকে খুব ভালোবাসে ।

আমি তোমার কথা বলে একদম কনফার্ম কয়রে রেখেছি । বেতনও অনেক । কাল গিয়ে দেখা কর মামার সাথে । এএই সুযোগ ! ওটাতে জয়েন না করে আমাকে ফোন দিও না , কিন্তু । " আর শিহাব ভাই ? শিহাব ভাইয়ের কথা গুলি ছিল এমন, -“তোমার জন্য একটা খবর আছে পল্টু ! একটা মাল্টি ন্যাশনালের খবর পেলাম , আম্মার এক ফ্রেন্ড আছে ।

তবে সে কতটুকু হেল্প করতে পারবে জানি না । শধু এটুকু জানি যে , ওরা বেশ যাচাই করে নেবে তবে, গ্রেড আহামরি কিছু চাচ্ছে না । প্রথমে তেমন পাবে না । স্কেল ১৮ হাজার দিয়ে শুরু করতে হবে । তবে পারফরমেন্স ভালো হলে , তাদের বাইরের ব্রাঞ্চ গুলোয় ট্রান্সফার করবে ।

আর আমি জানি , যেহেতু যাচাই করেই নিচ্ছে , তোমার কাছ থেকে মিষ্টি এবার পাচ্ছিই ! কালকেই চলে যাও ! আমি কিন্তু মিষ্টির অর্ডার দিয়ে রাখছি !!” এমুহূর্তে একটা তাগাদা অনুভব করছে সে । নিজেকে প্রমান করবার তাগাদা । যাবে সে শিহাব ভাইয়ের বলা সোর্সটাতেই । স্কেল যাই হোক ! অন্তত রাকা বা তার বাবার সামনে নিজেকে ভেড়া হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় না ... ! দুধের ছানায় গড়া যে জিনিসটা আসলেই মিষ্টি , ওটা যে সন্দেশ তাকে ঠিক তাতে লাগানো দামি মোড়কে প্রতীয়মান করা যায় যায় না ...... !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.