বাঙলা কবিতা
কবিতা/ সাহিত্য প্রসঙ্গে ( অংশ বিশেষ) : মারিও ভার্গাস জোসা
------------------------------
..... আমাদের দেশগুলোয় সাহিত্যের প্রতি এই অবজ্ঞাই প্রবল- অথচ তবু লোকে লিখেছে, ছাপিয়েছে, এমনকী তাদের পড়েছেও অনেকে। সত্যি যে, অনাহার, বিস্মৃতি বা উপহার সবাইকে খতম করে দিতে পারেনি।
....আমাদের সমাজকে মনে করিয়ে দেয়া উচিত কী অপেক্ষা করে আছে তার জন্য। তাদের সাবধান করে দেয়া উচিত এই বলে যে, সাহিত্য হলো আগুন, যে সাহিত্য বুঝিয়ে দেয় বিদ্রোহ, আপোষ না-মানা রফা না-করা বিদ্রোহ, যে, সাহিত্যিকের অস্তিত্বের একমাত্র কারণই হলো প্রতিবাদ, বিরোধিতা, সমালোচনা। তাদের বুঝিয়ে দেয়া উচিত যে, অর্ধমাত্রা বলে কিছু নেই; যে, এ-সব সমাজ সব সময়ই শিল্পীকে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছে; আজ যদি তারা লেখককে সমাজের অংশ বলে মেনে নেয়, তাহলে তাদের মেনে নিতেই হবে অবিরাম বিক্ষোভের এক ঝড়, শ্লেষ পরিহাস ঠাট্টা বিদ্রুপ টিটকিরি- আর তার পরিধি হবে বিশাল, বর্ণনামূলক থেকে শুরু করে যা একান্ত জরুরি, সাময়িক থেকে শুরু করে যা মনে করা হয়তো চিরস্থায়ী, সামাজিক পিরামিডের ডগা থেকে ভিৎ অব্দি কিছুই বাদ যাবে না তার আক্রমণ থেকে।
এই অবস্থা , আর এই দশা থেকে বেরুবার আর কোনও রাস্তা খোলা নেই : লেখক ছিলো, আছে এবং থাকবে , বে-মিশাল এক প্রতিবাদী।
হৃষ্ট, তুষ্ট, খুশি, এমন লোক লিখতেই জানে না; বাস্তব দশাকে যে মেনে নেয়, তাতে যে সায় দেয়, সে যেন কখনও ভাষার বাস্তবতাকে উদ্ভাবন করে নেবার উচ্চাশা না-করে।
সাহিত্যের উৎকাঙ্খা জন্মায় শুধু তখনই যখন মানুষ জগতের দশা দেখে অসন্তোষে ভরে ওঠে, সাহিত্য জন্মায় তার চারপাশের শূন্যতা নোংরামি আর ক্রুটিবিচ্যুতির স্বজ্ঞাপ্রসূত বোধ থেকে। সাহিত্য হলো চিরস্থায়ী বিক্ষোভেরই প্রকরণ, সে কোনও শেকলবাকল কড়াবেড়ি মানে না। তার ক্রদ্ধ শাসন না-মানা স্বভাবকে বদলাবার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হতে বাধ্য।
সাহিত্য ধ্বংস হয়ে যাবে, তাও সই, তবু সে কখনও পোষ মানবে না।
.....এটা এই শেষবারের মত বোঝা উচিত যে, কোনও লেখকের লেখা যখন তার দেশের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছে, ততই তীব্র আর প্রচণ্ড তার দেশের জন্য ভালোবাসা, যেটা তাকে তার দেশের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। অন্তত সাহিত্যের ক্ষেত্রে, হিংস্রতাই ভালোবাসার পরীক্ষা।
....সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে, চেঁচিয়ে বলতে হবে : না, বিদ্রোহ করতে হবে, অসম্মতি জানাবার অধিকার অর্জন করতে হবে- আর তাকে দেখাতে হবে ওই একই মায়াবি পদ্ধতিতে, যার হদিশ রাখে কেবল সাহিত্যই।
....বাতিল বা স্বীকৃত, নির্যাতিত বা পুরস্কৃত- লেখক নামের যোগ্য যে মানুষ সে সব সময়েই মানুষের মুখে ছুঁড়ে মারবে তাদের দুর্দশা আর যন্ত্রণারই অপ্রীতিকর অরুচিকর সব দৃশ্য।
___________
মারিও ভার্গাস জোসা : ( জন্ম : ১৯৩৬, পেরু) ; ২০১০ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার জয়ী পেরুভিয়ান স্পেনিশ লেখক, রাজনীতিক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।