আগের পর্ব……
আগের পর্বে শেষ করেছিলাম এই বলে যে কোন লেখার আহরিত বা নিঃসৃত বোধই বলে দেবে সেটি কবিতা কি কবিতা নয়। কবিতার আর একটি উপমা হল চিত্রশিল্পীর বিমূর্ত ছবি। বিমূর্ত ছবি দেখে কোন নির্দিষ্ট কিছুর অবয়ব হয়ত পাওয়া যাবেনা কিন্তু রং-এর কম্বিনেশন এবং এর প্রয়োগ একটা কিছু ভাবাতে বা একটা আবেশ মনে ছড়িয়ে দিবে ওটাই ওই ছবির সার্থকতা ঠিক যেমনটি পাওয়া যায় আধুনিক কবিতা গুলোতে।
এবার আসি একটা কবিতার সাথে একজন পাঠক কি কি আচরন করতে পারেন?
১। কবিতার নামটা ভালো করে লক্ষ্য করতে পারেন এবং মাথায় রাখতে পারেন,
২।
কবিতাটা একবার বা একাধিকবার পড়তে পারেন,পড়তেই থাকলেন,কেননা সাধারনত একবারে একটি কবিতা পড়ে তার মর্ম উদ্ধারের নজির খুব কমই আছে,
৩। পড়তে পড়তে শব্দের প্রয়োগ গুলো হয়ত একটু খেয়াল করলেন, শব্দগুলো কতটা সঠিক জায়গায় কতটা নিপুনতার সাথে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যাবহৃত হয়েছে তা অনুধাবন করলেন,
৪। ছন্দের মিল গুলো খেয়াল করলেন,মনে মনে একটু গুন গুন করলেন,
৫। উপমা গুলো মন দিয়ে লক্ষ্য করলেন – কতটা কাছাকাছি হয়েছে,বুঝতে পারলে দারুন মজা লাগবে এবং ওখানেই কবিতার রস পঞ্চাশ ভাগ লুকানো,
৬। কবিতার স্টাইলটা লক্ষ্য করলেন,যেমন , ধরুন কোন কোন কবিতা প্রথম কয়েকলাইন হালকা তালের ছন্দ দিয়ে, তার পর হয়ত দ্রুত তালের ছন্দ দিয়ে , তারপর হয়ত একেবারে ছন্দ ছেড়ে, গদ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ।
এই স্টাইলটা বিশেষ কাজে দেবে হয়ত আবৃত্তির সময়। যেকোন কবিতা আবৃত্তি করার সময় এর সুষমা স্পষ্ট চোখে পড়ে।
৭। একেবারে ছন্দ ছাড়া কবিতা গুলো বুঝতে হলে, আবৃত্তি ( হতে পারে মনে মনে)করে করে ভাবার্থ বের করার চেষ্টা করা যেতে পারে। ব্যাবহার কৃত য্যতিঃ চিহ্ন গুলোর সঠিক ব্যাবহার করতে হবে কেননা লেখক যখন সেগুলো দিয়েছেন সেগুলো তার মনের ভাবগুলো ঠিক যেভাবে যেভাবে পড়লে ঠিক ঠাক বোঝা যাচ্ছে ঠিক সেভাবেই দিয়েছেন,
৮।
কবিতাটা কোন প্রক্ষাপটে রচিত হতে পারে – এরকম একটা কল্পনা মনে নিয়া আসা, প্রক্ষাপটটা দিব্য চোখে কল্পনা করা। এক্ষেত্রে আবারও ওই উপমাগুলোকে আনতে হবে , উপমা গুলোই কবিতার প্রেক্ষাপটে পৌছানোর বড় ক্লু। এখানে বলে রাখা ভালো যে পাঠক যে প্রক্ষাপটটা ভাবছেন সেটা হুবহু লেখকের সাথে এক না ও হতে পারে!
৯। এছাড়াও লেখক অনেক সময় অনেক ছোট-খাটো ধাধার মধ্য দিয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করেন , সেটাকে খুজে বের করা,
১০। কবিতার নাম টাকে পুরো কবিতা জুড়ে খোঁজা।
নামটা কবিতার ভিতরে লেখা আকারে খুঁজে না পেলেও ভাবের সাথে অবশ্যই কোন না কোন সম্পর্ক তো রাখবেই।
আপাতত আলোচনা এখানেই সমাপ্ত করছি। এই বিষয় নিয়ে অনেক বড় কলেবরে, আরো অনেক খুটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারত । বিশেষ করে এমন কিছু কবিতার কথা বাদ থেকে গেল যেগুলোর শব্দ সমূহ এতই কঠিন যে কবিতার ভাব ধরা মুশকিল হয়ে পড়ে। সাধারন পাঠকরা এধরনের কবিতার প্রতিই বেশি বিরক্ত হন এবং এই বিরক্তি গুলোই ছিল এই লেখাটির শানে-নুযূল।
এককথায় বললে বলতে হয়, সে ঐ কবিতাগুলো শুধুমাত্র পড়ার চেষ্টাই করা যেতে পারে ,না বুঝতে পারলে মন খারাপ করে কবিতা পড়া বন্ধ করাটা ঠিক হবে না। সহজবোধ্য অথচ ভাব-গাম্ভীর্যে বাংময় অনেক কবিতাই অনেক জায়গায় চোখে পড়ে। সেগুলো পড়ে ,আসলেই মনে হয় আহা কি সুধা…! এর লেখককে জানাতে ইচ্ছা করে অন্তরিক শুভাশিষ- কোন সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে! আর এভাবেই পূর্ন হয় লেখক ও পাঠকের অন্তঃমিল। কবিতা পায় তার সার্থকতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।